স্মার্টফোনের জন্যে কিবোর্ড প্রয়োজন। কিবোর্ড না থাকলে তো স্মার্টফোনই অচল। যদিও এমন স্মার্টফোন এখনো দেখা যায়নি যার কিবোর্ড নেই। প্রতিটি স্মার্টফোনেই বিল্ট-ইন কিবোর্ড থাকে। কিন্তু সেটা সকলেরই যে পছন্দ হবে এমন নয়। তাই, অনেকেই এক্সটার্নাল কিবোর্ড বা কিবোর্ড অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন।
স্মার্টফোনের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নাম। Statista এর তথ্য অনুয়ায়ী, এপ্রিল ২০১৯ সালে বাংলাদেশ এ ব্যবহৃত মোবাইলের ৯৬.৬৯% ই হল অ্যান্ড্রয়েড ফোন। বর্তমানে এসব ইউজারদের অনেকেই লেখালেখির জন্য অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড ব্যবহার করে থাকেন।
তবে, ইংরজীতে লেখালেখির জন্যে বেশিরভাগ মানুষই তার ফোনের কিবোর্ডের উপরই নির্ভর করে, যেগুলো আগে থেকেই তাদের ফোনে ইনস্টল করা থাকে। অথচ গুগল প্লে-স্টোরে হাজার হাজার কিবোর্ড পাওয়া যায়, যে-সব সম্পর্কে বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ইউজারই জানে না। এ-সব কিবোর্ডে আছে অনেক নতুন ফিচার, ভালো থিম, সুন্দর লে-আউট। আসুন, এ রকম ৫টি কিবোর্ডের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য কিবোর্ড
আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একদম ফ্রি, সব থেকে বেশি সুবিধাযুক্ত এবং বিশ্বস্ত কয়েকটি কিবোর্ড। এগুলো আপনারা আপনাদের ফোনের ডিফল্ট কিবোর্ডের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি এই কিবোর্ডগুলো যে-কোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইন্সটল করতে পারবেন। হতে পারে আপনার ফোন শাওমী, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, সনি বা অন্য কোনো ব্র্যান্ড, সমস্যা নেই।
Gboard – the Google keyboard
আপনি যদি ফ্রি কোনো কিবোর্ড ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে Gboard হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। এটি গুগলের অফিসিয়াল কিবোর্ড। এটিতে রয়েছে অসংখ্য নতুন নতুন ফিচার, যেগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। যেমন, অটো-কারেকশন, মাল্টি-লিংগুয়াল টাইপিং, অসংখ্য ইমোজি, দারুন সব স্টিকার , GIF search, অসংখ্য থিম। আর সাথে থাকছে কাস্টমাইজ করার সুবিধা।
আরো সুবিধা হিসাবে আছে ভয়েস টাইপিং, হ্যান্ড রাইটিং, সরাসরি ট্রান্সলেট করার সুবিধা। এই কিবোর্ড প্রায় ১০০ এর উপরে ভাষা সাপোর্ট করে। এক কথায়, আপনি একটা কিবোর্ডে যা যা ফিচার পছন্দ করেন, তার প্রায় সবই রয়েছে গুগলের এই কিবোর্ডে।
আমার মতে ২০১৯ এর সেরা কিবোর্ড ছিল Gboard এবং আশা করা যায় ২০২০-এ ও এটি সেরা তালিকাতেই থাকবে। চাইলে নিচে দেওয়া প্লে স্টরের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করতে পারেন আপনার কাঙ্খিত এই কিবোর্ড।
FancyKey
কিবোর্ডের দুনিয়ায় আরো একটি জনপ্রিয় নাম হলো FancyKey কিবোর্ড। এটিও একটি ফ্রি কিবোর্ড, তবে আপনি চাইলে এটি কিনেও ব্যবহার করতে পারবেন। জনপ্রিয় ফিচারের মধ্যে রয়েছে ৩০টির ও উপরে থিম, ৩০ এর উপরে বিভিন্ন ফন্ট, দারুন সব স্টিকার এবং প্রায় ১৬০০ এর উপরে ইমোজি। এটিতে পেতে পারেন কিছু অটো কারেকশন এবং কিছু অটো সাজেশনের সুবিধা এবং সেই সাথে পেতে পারেন প্রায় ৩০টির উপরে বিভিন্ন ভাষা সাপোর্ট।
FancyKey কিবোর্ডটি হতে পারে আপনার প্রিয় কিবোর্ডগুলির একটি। ব্যবহার করতে পারেন আপনার ফোনের কিবোর্ডের বিপরীতে। আর কিবোর্ডটিতে তেমন কোনো পারমিশন দিতে হয় না। সুতরাং, ডেটা চুরির ভয় থেকে সম্পুর্ন মুক্ত থাকতে পারেন। যদি এটি আপনার ভাল না লাগে, তাহলে চিন্তার কোনো কারন নাই। আমাদের লিস্টে আছে আর ৪টি কিবোর্ড, যেগুলো আপনার ভাল লাগবেই।
Grammerly
টাইপ করতে গিয়ে কি আপনার প্রচুর ভুল হয়? তাহলে আর আপনার চিন্তা করতে হবে না। আপনার জন্য নিয়ে এসেছি দারুন একটি কিবোর্ড। Gammarly হলো নতুন একটি কিবোর্ড, এটি তার পথ চলা শুরু করে ক্রোমের এক্সটেনশন হিসাবে। পরবর্তীতে এটি কিবোর্ড হিসাবে আত্ম:প্রকাশ করে।
আপনার যে কোনো ভুল ধরার দায়িত্ব এখন Grammerly কিবোর্ডের। হোক সে ভুল ব্যাকরণগত ভুল, বানানের ভুল বা যতি চিহ্নের ভুল। ইংরেজী টাইপিং এর জন্য বেস্ট একটি কিবোর্ড হতে পারে Grammerly কিবোর্ড। আপনি যদি খুব দ্রুত কোনো মেইল পাঠাতে চান, ফেসবুকে কোনো গূরুত্বপূর্ণ পোস্ট করতে চান, বা লিংকড ইনে কাউকে প্রফেশনাল মেসেজ পাঠাতে চান, তাহলে Grammerly কিবোর্ড হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। এছাড়াও এতে রয়েছে অনেক অনেক ফিচার, যেমন বিভিন্ন থিম, ফন্ট, দারুন সব স্টিকার, GIFs ও ইমোজি।
আর এত কিছু ব্যবহার করতে পারবেন কোনো টাকা ছাড়াই, একদম ফ্রিতে। নিচে দেওয়া প্লে স্টোরের লিংক থেকে নামিয়ে নিন গ্রামারলি কিবোর্ডটি।
SwiftKey
অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্যে কিবোর্ড হিসেবে SwiftKey অন্যতম। উপরের ৩ টি কিবোর্ড আপনার ভাল না লাগলেও এটি ভাল লাগবেই। আজকের পর থেকে হয়ত SwiftKey কিবোর্ড জায়গা করে নিতে পারে আপনার সেরা কিবোর্ডের তালিকায়। কে জানে, হয়ত আপনি একটি কিবোর্ডে যা কিছু চান, তার সব কিছুই আছে এই কিবোর্ডে! ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত SwiftKey ছিল স্বতন্ত্র। কিন্তু ২০১৬ সালের পর SwiftKey চলে যায় মাইক্রোসফট এর অধীনে।
অন্যগুলোর মত এটিও একট ফ্রি কিবোর্ড, তবে কিছু থিমের জন্য আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে। এটি মোটামুটি ১০০ এর উপরে বিভিন্ন ভাষা সাপোর্ট করে, রয়েছে শত শত ইমোজি, দারুন সব স্টিকার ও GIF। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে, আপনি কি টাইপ করতে চান, সেটি আপনার আগের লেখা দেখে নিজে থেকেই অনুমান করে ফেলতে পারে SwiftKey কিবোর্ড। আপনার টাইপিং এর ধরন এটি মনে রাখতে পারে এবং সেটি পরেরবার ব্যবহার করে আপনাকে হেল্প করতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, আপনার জন্য কতটা সুবুধাজনক হতে পারে SwiftKey কিবোর্ড।
সবমিলিয়ে SwiftKey কিবোর্ড অন্যতম সেরা কিবোর্ড। ব্যবহার করে দেখতে পারেন এই ফ্রি কিবোর্ডটি। ডাউনলোড করার জন্য কষ্ট করতে হবে না, নিচে দেওয়া আছে গুগল প্লে স্টোরের লিংক।
Facemoji Emoji Keyboard
১৯৯৯ সালে জাপানের শিল্পী Shigetaka Kurita প্রথম ইমোজি তৈরি করেন। লেখার মাধ্যমে যতটুকু মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, তার থেকে কয়েকগুন বেশি কাজে দেয় ইমোজি। আপনি যদি ইমোজি পাঠাতে ভালবাসেন, তাহলে Facemoji Emoji Keyboard টি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
ফিচারের মধ্যে Facemoji Emoji Keyboard তে রয়েছে ৩৬০০+ ইমোজি, ইমোটিকন, GIF, সিম্বল, অসংখ্য স্টিকার আরো অনেক কিছু। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য থিম। যেহেতু এটি ইমোজি সম্পর্কিত কিবোর্ড, সেহেতু ২০১৯ এ সেরা ইমোজি কিবোর্ড হওয়ার খেতাব অর্জন করে Facemoji Emoji Keyboard টি।
আরেকটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে এই কিবোর্ড এর। সেটি হলো, আপনি নিজে নিজে ছবি দিয়ে ইমোজি তৈরি কতে পারবেন। Gboard কিবোর্ড অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন ইমোজি তৈরি করতে পারলেও সংখ্যার দিক থেকে Facemoji Emoji Keyboard রয়েছে অনেক এগিয়ে। আর দেরি না করে এখন ই ডাউনলোড করে ফেলুন নিচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে।
আশা করি, স্মার্টফোনের জন্যে কিবোর্ড হিসেবে দেয়া এই ৫টির মধ্যে কোন না কোনটি আপনার ভাল লাগবেই। আপনি চাইলে উপরের ৫টি কিবোর্ডের সবগুলোই ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এরপর যেটি বেশি ভাল লাগে সেটি রেখে দিতে পারেন। যদি চান যে, আপনার স্মার্টফোনটি অন্যদের হাত থেকে নিরাপদ থাকুক, তবে এই ৫টি ফ্রি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপস্ থেকে যে কোনটি ব্যবহার করতে পারেন।
Leave a Reply