পথেঘাটে কিংবা চারপাশে এখন সহজেই খুব স্মার্টওয়াচ চোখে পড়ে। সাধারণ হাতঘড়ির মতো দেখতে স্মার্টওয়াচগুলো ক্রমশই সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনের পাশাপাশি স্মার্টওয়াচ এখন ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য প্রযুক্তি পণ্যতে।
স্মার্টওয়াচ কী?
সহজ ভাষায় কিংবা একবাক্যে যদি স্মার্টওয়াচ কী জিনিস সেটার সংজ্ঞা দিতে চাই, তাহলে বলতে হবে— এটি সাধারণ হাতঘড়ির মতো দেখতে টাচস্ক্রিন ও নানারকম সেন্সর যুক্ত এবং বিভিন্ন কাজে সক্ষম ডিজিটাল একটি ডিভাইস।
স্মার্টফোনের মতো এটিতেও অ্যাপস ব্যবহার করা যায়, ট্র্যাক করা যায় সাইকেলিং বা হাঁটাহাটির মতো বিভিন্ন আউটডোর এক্টিভিটিস। এমনকি শরীরের বিভিন্ন অবস্থা যেমন, হার্টরেট, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি রেকর্ড করা যায় এর মাধ্যমে। হাতে পরে থাকার মতো ছোট কিন্তু কাজের কম্পিউটারও বলা যায় একে। আসলে স্মার্টওয়াচের অসংখ্য ব্যবহার রয়েছে। জেনে নিন যে ১০টি বিশেষ কারণে আপনার অবশ্যই স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করা উচিৎ। আশা করি, জেনেছেন; এবার আসুন, স্মার্টওয়াচের ইতিহাস সম্পর্কে জানি।
স্মার্টওয়াচ কখন এলো?
ডিজিটাল ঘড়ির প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা পরিচিত। সময়ের সাথে কিছু ঘড়িতে ক্যালকুলেটর বা ইউনিট কনভার্টারও যুক্ত ছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্মার্টফোনের মতো ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্টওয়াচের দেখা মেলে এই দশকেই। স্মার্টফোনের যাত্রা ২০০৭ সালে শুরু হলেও স্মার্টওয়াচ সে তুলনায় যথেষ্টই নবীন বলা যায়।
বর্তমানে স্মার্টওয়াচের বাজারে অ্যাপল, গুগল বা অ্যামাজনের মতো টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগীতা চললেও এটিকে সর্ব প্রথম বাজারে আনার কৃতিত্বটুকু দেওয়া যায় Pebble Technology Corporation কে। একদম স্টার্ট-আপ এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে প্রথমবারের Pebble স্মার্টওয়াচ বাজারে নিয়ে আসে। নতুন কোম্পানির প্রথম প্রোডাক্ট হিসেবেই এটি রেকর্ড সংখ্যক ১ মিলিয়ন কপি বিক্রয় হয়। এরপর বাজারে বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর স্মার্টওয়াচ ধীরে ধীরে আসা শুরু করলে তা সত্যিকার অর্থে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে।
স্মার্টওয়াচের কাজ-কারবারঃ
স্মার্টওয়াচ যেহেতু একটি নিত্য পরিধানযোগ্য একটি ডিভাইস, তাই সময় দেখানোর পাশাপাশি এর নানা রকম ফিচার দৈনন্দিন বিভিন্ন রকম কাজ আরও সহজে করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। মূলত স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত হয়ে এটি নোটিফিকেশন, ভয়েস ইনপুট, মিডিয়া ম্যনেজমেন্ট বিভিন্ন রকম অ্যাপস ব্যবহারসহ চমৎকার সব সেন্সর ব্যবহার করে ফিটনেস ট্র্যাকিং করে, সেগুলো দেখায় এবং স্মার্টফোনে সেগুলো জমা করে।
স্মার্টওয়াচের কাজ সম্পর্কে আরেকটু ভালোভাবে জানতে চলুন ঝটপট কিছু ফিচার সম্পর্কে জেনে নিই!
নোটিফিকেশনঃ
স্মার্টফোনে সারাদিন বিভিন্ন অ্যাপস থেকে অসংখ্য নোটিফিকেশন আসে। আর সেই নোটিফিকেশনগুলো খুব চমৎকারভাবে দেখা এবং অ্যাক্সেস করার সুবিধা রয়েছে স্মার্টওয়াচে। এর মধ্য থাকা ছোট্ট ভাইব্রেটরটি নোটিফিকেশন আসা মাত্রই ভাইব্রেশন করে জানিয়ে দিতে পারে।
অ্যাপসঃ
স্মার্টওয়াচের সাইজ এবং স্ক্রিন সবই স্মার্টফোনের তুলনায় খুবই ছোট। তারপরও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো স্মার্টওয়াচের জন্য স্বতন্ত্র অ্যাপ তৈরীর চেষ্টায় বসে নেই। ছোট স্ক্রিনে ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস তৈরী করে প্রায় প্রতিদিনই চমৎকার সব অ্যাপ মিলছে এখন স্মার্টওয়াচে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচের জন্য উবারের অ্যাপ রিলিজ করে। যার ফলে শুধুমাত্র হাতে থাকা স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করেই এখন এর ব্যবহারকারীরা ট্যাক্সি বা ক্যাব ডাকতে পারেন।
কল রিসিভিং ও ভয়েস ইনপুটঃ
কল রিসিভ করে কথা বলা সম্ভব স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে। তবে এর জন্য স্মার্টওয়াচটি সিমকার্ড সাপোর্টেড না হলে অবশ্যই একে স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। শুধু কথা বলাই নয়, যেহেতু এতে নোটিফিকেশন দেখা ও অ্যাক্সেস করা যায়। তাই এসএমএস বা মেসেঞ্জারের উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এতে।
ভয়েস ইনপুট কীবোর্ড ব্যবহার করে এতে কথা বলে যে কোন মেসেজ লিখে ফেলা সম্ভব। একই পদ্ধতিতে নোট লেখার ব্যবস্থাও রয়েছে স্মার্ট ওয়াচে।
ফিটনেস ট্রাকিংঃ
স্মার্টওয়াচের যে ফিচারটি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেটি ফিটনেস ট্র্যাকিং। আপনি হয়তো অ্যান্ড্রয়েডের জন্য সেরা কিছু ফিটনেস অ্যাপ এর কোন না কোনটি ব্যবহার করছেন। এই জাতীয় অ্যাপগুলোকেই স্মার্টওয়াচে ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে। দিনে কতোখানি হাঁটলেন, কতোখানি ঘুমালেন বা কতোখানি ওয়ার্কআউট করলেন সবকিছুই সুন্দরভাবে জানিয়ে দেবে স্মার্টওয়াচ। শুধু তাই নয় এর ভেতরে থাকা চমৎকার সব সেন্সরের কল্যাণে ব্যবহারকারীর হার্টরেট, ব্লাডপ্রেশার ইত্যাদি পরিমাপ করার কাজও করে খুব দক্ষতার সাথে।
জিপিএসঃ
যারা একটু ঘোরাঘুরি পছন্দ করেন তারা জিপিএস এর গুরুত্বটি জানেন। স্মার্টওয়াচের সাথে থাকা জিপিএস যেকোন মূহুর্তের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করতে পারে। সেই সাথে সার্বক্ষণিক স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত থাকায় এটি হারিয়ে ফেললে খুঁজে বের করা যায় স্মার্টফোন ব্যবহার করেই।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারীঃ
দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির সেরা কিছু স্মার্টফোন এর মতো, স্মার্টওয়াচের ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাটারি ব্যাকআপের ব্যাপারটি। বর্তমানের স্মার্টওয়াচগুলো প্রায় একদিনের মতো ব্যাটারী ব্যাক-আপ দিয়ে থাকে। স্মার্টওয়াচের সাইজ এবং সুবিধার কথা বিবেচনা এটি বেশ দীর্ঘস্থায়ী। তবে ব্র্যাণ্ড ভেদে এটি কমবেশী হয়ে থাকে। অ্যাপলের স্মার্টওয়াচগুলো যেখানে একবার চার্জ দিলে ১৮ ঘন্টা যায় সেখানে Pebble এর স্মার্টওয়াচগুলো যায় ২-৩ দিন।
এছাড়া বহুল ব্যবহৃত MI Band এর নতুন সংস্করণ MI Band 3 ব্যটারী ব্যাক-আপ দেয় প্রায় ৩০ দিন। তবে এটি শুধু ফিটনেস ট্র্যাকিং বা কল অ্যালার্টের মতো কিছু কাজ ছাড়া স্মার্ট ওয়াচের বিশেষ কোন সুবিধা দেয় না বলে একে কমন স্মার্টওয়াচের কাতারে ঠিক ফেলা যায় না।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরণের স্মার্টওয়াচ রয়েছে। আর এসব স্মার্টওয়াচকে প্রধানত কমন বা সাধারণ স্মার্টওয়াচ এবং ডেডিকেটেড বা বিশেষ উদ্দ্যেশ্য ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচ এই দুইভাগে ভাগ করা যায়।
অ্যাপল ওয়াচ, অ্যামাজফিট, টাইজেন ওয়াচ বা গুগলের ওয়্যার ওএস (Wear OS) ব্যবহৃত স্মার্টওয়াচগুলো কমন স্মার্ট ওয়াচ। এগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য খুবই উপযোগী। উপরে বর্ণিত ফিচারগুলো মূলত এই স্মার্টওয়াচগুলোর জন্যই প্রযেজ্য।
অন্যদিকে ডেডিকেট স্মার্টওয়াচের মধ্য রয়েছে Garmis’s D2 Delta PX, Garmin’s Decent Mk1, Garmin Fenix 5 Plus, Suunto’s DX, Suunto’s 9 Baro, TomTom Adventure ইত্যাদি। যেগুলো হাইকিং, ডাইভিং বা শুধু মাত্র ফিটনেস ট্র্যাকিং ও নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ কাজের জন্য এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
স্মার্টওয়াচ নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করি স্মার্টওয়াচ কী এবং এটি কী কী কাজ করে সেটি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন। স্মার্টওয়াচ সম্পর্কে যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন, আমি চেষ্টা করব যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে জানাতে।
Leave a Reply