যে মেয়েটি আপনার স্বপ্নের রাজকন্যা, তাকে বাস্তবে পাওয়াটা নিঃসন্দেহে যে কারো জন্যেই সৌভাগ্যের ব্যাপার। যখন কোন মেয়েকে দেখে আমরা তার প্রেমে পড়ে যাই, তখন আমাদের মন প্রাণ সব সময় তার চিন্তাতেই ডুবে থাকে। তাকে জীবনে পাওয়ার জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকি। কিন্ত সমস্যাটা হয় তখন, যখন তাকে পাওয়ার জন্যেও আমরা শুধু ভাগ্যের উপরই নির্ভর করে বসে থাকি।
সময়ের শুরু থেকে ছেলেরা তাদের জন্য এমন একজন সঙ্গীর সন্ধান করেন, যার সাথে সে তার সমস্ত জীবন সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবেন। বিভিন্ন রোমান্টিক মুভি, গল্প, উপন্যাস আমাদেরকে বিশেষ কাউকে পাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনেকে আবার ভালোবাসার মানুষটিকে কিভাবে মনের কথা জানান দেবেন তার আইডিয়াটাও এসব গল্প বা সিনেমা থেকে নিয়ে থাকেন।
গল্প-সিনেমার আইডিয়া যে সব সময় বাস্তবে কাজ করে না সেটা আমরা সবাই জানি। তাই, স্বপ্নের মানুষকে জীবনে পেতে সিনেমার মত চিন্তা না করে বাস্তবমূখী চিন্তা করুন। এক্ষেত্রে, কিছু সাইকোলোজিক্যাল ট্রিকস্ ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো ভালবাসার মানুষটিকে আপনার প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে।
কিন্তু আমি আজকে ভালোবাসার মানুষকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া নিয়ে নয়, বরং কিভাবে তাকে পেতে হবে সেই বিষয়ে কথা বলতে চলেছি। এখন অনেকেই ভাবতে পারেন যে, এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়। পার্থক্য এখানেই যে, আপনার স্বপ্নের মেয়েটিকে পাওয়ার পথে তাকে প্রস্তাব করা একটি ধাপ মাত্র।
আপনি প্রস্তাব দিলেই সে রাজী হয়ে যাবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যেহেতু সম্ভব নয়, সেহেতু আমাদের জানতে হবে সেই কাজগুলি, যা তাকে আপনার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করতে সাহায্য করবে। তাহালে চলুন জেনে নিই প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার দারুণ উপায়গুলো।
আপনার চেহারা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে ভাবুন:
একজন সুন্দর এবং ব্যক্তিত্ববান পুরুষকে যে কোন মেয়েই তার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে চাইবে। আপনাকে কোন মেয়ে পছন্দ করবে কিনা এটা সে প্রথমে নির্ধারণ করবে আপনাকে দেখে এবং পরবর্তীতে আপনার ব্যক্তিত্ব দেখে।
এজন্য অবশ্যই নিজেকে যথাসম্ভব সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি ব্যাক্তিত্ব বা পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ করুন। নিজেকে স্বপ্নের মেয়েটির কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার উপায় জানুন এবং তার মাঝে যেগুলো ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহযোগীতা করবে, সেগুলো আপনার জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করুন।
নিজেকে পরিপাটি রাখুন:
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে ১০০জন নারীর উপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে ৮৫ জনই ধনী কারো পরিবর্তে এমন একজন ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী, যার পোশাক পরিধান সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। এটা থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব যে, শুধু টাকা থাকলেই আপনি কোন মেয়েকে পাবেন, এর কোন নিশ্চয়তাই নেই।
হ্যাঁ, জীবন ধারনের জন্য অর্থের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু শুধু তার উপর ভিত্তি করে কোন মেয়েই নিজের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করেন না। আর পোশাক পরিচ্ছদই একজন ছেলের বাইরের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তাই পোশাকের প্রতি যত্নবান হতে শিখুন।
নিজেকে তুলে ধরুন:
যদি সে সত্যিই আপনার প্রকৃত ভালোবাসা হয়ে থাকে বা আপনার মতো সেও আপনাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে, তাহলে অবশ্যই সে আপনার প্রকৃত স্বত্বাকেই ভালোবাসবে। এ কারণে আপনি যা নন, ভুলেও তার সামনে সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করবেন না।
অনেক ছেলেদের মধ্যেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, তারা কোন মেয়েকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ ধরনের কাজে হয়তো আপনি সাময়িকভাবে লাভবান হতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে আপনাদের সম্পর্কের স্থায়ীত্ব কত দিনের হবে তা বলা কঠিন।
অতিরিক্ত নয়, বরং নিজের ভালো মন্দ সব কিছুই তার সামনে তুলে ধরুন এতে আপনাদের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক থাকুন:
শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্যি যে, আমরা ছেলেরা মোটেও আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের প্রতি যত্নবান নই। যখন তখন যা ইচ্ছে আমরা পোষ্ট করি। তাছাড়া কোন ছবি বা ষ্ট্যাটাসে কমেন্ট করার সময়ের আমরা ভাষাগত সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে পারি না। আর হরহমেশাই বিভিন্ন অপরিচিত মেয়ের প্রোফাইলে কমেন্ট বা ট্যাগ করার মত অভ্যাস তো আছেই।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ৪৮ শতাংশ সিঙ্গেল মেয়েরাই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের সঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করে। এমনকি, তারা কাউকে পছন্দ হলে আগে ঐ ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের মাধ্যমে তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে। তাই অবশ্যই নিজের প্রোফাইলের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
সর্বদা হাসিখুশি থাকুন:
কলেজে পড়ার সময় আমরা দেখেছি যে ক্লাসে এমন একটি ছেলে থাকে যার সাথে সব মেয়েই বন্ধুত্ব করতে চায়। সবাই তার সাথে গল্প করে, আড্ডা দেয়, যা দেখে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যেরা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন এর কারণ কি?
৯৭ শতাংশ মেয়েরা একজন হাসিখুশি ছেলেকে ততটাই মূল্যায়ন করেন, যতটা তারা একজন সুন্দর ছেলেকে করেন। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় যে, যে-সব ছেলেদের মধ্যে সেন্স অফ হিউমার বেশি কাজ করে, তারা অধিকাংশ মেয়েরই প্রিয়পাত্র হয়ে থাকেন। তাই অযথা ভাব দেখানো থেকে বিরত থাকুন। তার পরিবর্তে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ও হাস্যোজ্বল থাকার চেষ্টা করুন।
আপনার জীবনে আপনার স্বপ্নের রাজকন্যার পদাগমন করবে কিনা তা যে আপনার ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনারা বুঝেছেন। উপরে যতগুলি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মোটামুটি সবগুলিই আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত।
আর ব্যক্তিত্বই হল কাউকে পাওয়ার চাবিকাঠি। ব্যক্তিত্বহীন কাউকে কোন মেয়েই তার সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় না। বরং এ ধরনের মানুষকে তারা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এ কারণে কাউকে পছন্দ হলে বা ভালো লাগলেও ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে তার সাথে কথা বলুন বা যোগাযোগ করুন।
আপনার আচার আচরণে যদি আপনার ব্যক্তিত্ব নিয়ে তার মনে কোন প্রকার সন্দেহ তৈরী হয়, তাহলে আপনি যে তাকে আর পাবেন না, এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আপনি নিজেকে যতটা ব্যক্তিত্ববান করে গড়ে তুলতে পারবেন, ততটাই আপনার স্বপ্নের মেয়েটিকে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। তাই আজ থেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
Leave a Reply