লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা স্ট্রোকের টেস্ট করিয়ে থাকেন। মেডিকেল হিস্ট্রি, অন্যান্য ফিজিক্যাল এক্সাম এবং টেস্ট রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রোগীকে কী ধরণের চিকিৎসা দেয়া হবে।
চিকিৎসার জন্যে ডাক্তার কিছু টেস্টের মাধ্যমে প্রথমে জেনে নেবেন স্ট্রোকের ধরণ, ব্রেনের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে, কতটা গুরুতর। কিংবা, ব্রেনের ভেতর কোন ধরণের রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা।
ইত্যাদি সকল কিছুই জানা যায় টেস্টের মাধ্যমে। সুতরাং, ডাক্তার আপনাকে বিশেষ কিছু টেস্ট দেবেন, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য-
স্ট্রোকের টেস্ট
কিছু সাধারণ টেস্ট
ডাক্তার প্রথমেই সাধারণ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন, যেগুলোর সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। যেমন, হার্ট বিট পরীক্ষা, ব্লাড প্রেশার চেক করা। সেই সাথে কিছু নিউরোলোজিক্যাল টেস্ট থাকতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা – Blood Test
যেসব রোগ নির্ণয়ের জন্যে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে স্ট্রোক ও হার্ট রিলেটেড সমস্যা। তবে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন, রক্ত কতটা বা কত দ্রুত জমাট বেঁধেছে তা পরীক্ষা যেটাকে Blood Clots বলা হয়ে থাকে। পরীক্ষা করে আরো দেখা হয় ব্লাড সুগার বেশি হাই বা লো অবস্থায় রয়েছে কিনা। এমনকি, রক্তে কোন ইনফেকশন রয়েছে কিনা সেটাও রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয়।
সিটি স্ক্যান – Computerized Tomography Scan
যেসব কারণে সিটি স্ক্যান করা হয়, তার মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে স্ট্রোক বা ব্রেন স্ট্রোক। ব্রেনের ভেতরের বিস্তারিত অবস্থা দেখার জন্যে একসঙ্গে কয়েকটি এক্স-রে (A Series of X-rays) করা হয়ে থাকে। আর এটাকেই সিটি স্ক্যান বলে।
সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ব্রেনের ভেতরের ব্লাড ফ্লো দেখে বোঝা যায় কী ধরণের স্ট্রোক হয়েছে। আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্যে ডাক্তাররা আপনার রক্তের প্রবাহে একটি রঞ্জক ইনজেকশন পুশ করতে পারেন, যেটাকে কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি (CTA) বলা হয়।
এমআরআই – Magnetic Resonance Imaging
স্ট্রোকের রোগীর ব্রেনের ভেতরের অবস্থার বিস্তারিত জানার জন্যে এমআরআই বা ম্যাগনেটিক রিসোন্যান্স ইমেজিং একটি পাওয়ারফুল ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও রেডিকেল রেডিও ওয়েভ।
ইস্কেমিক স্ট্রোক (ischemic stroke) এবং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ (brain hemorrhage) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্রেন টিস্যু সনাক্ত করতে এমআরআই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ডাক্তার স্ট্রোক করা রোগীর ধমনী এবং শিরা দেখতে এবং রক্ত প্রবাহ হাইলাইট করতে রক্তনালীতে একটি রঞ্জক ইনজেকশন পুশ করে থাকেন যাকে চৌম্বকীয় অনুরণন এনজিওগ্রাফি (Magnetic Resonance Angiography) বা চৌম্বকীয় অনুরণন ভেনোগ্রাফি (Magnetic Resonance Venography) বলে।
ক্যারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড (Carotid Ultrasound)
স্ট্রোক করেছে বা আশংকা করা হচ্ছে এমন ব্যক্তির ঘাড়ের ক্যারোটিড ধমনীর ভিতরের বিশদ ইমেজিং তৈরি করতে সাউন্ড ওয়েভ ব্যবহার করে এই টেস্টটি করা হয়। ক্যারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড দ্বারা ক্যারোটিড আর্টারিজের ব্লাড ফ্লো এবং ফ্যাটি প্লাক দেখা যায়। ফলে, স্ট্রোকের পরবর্তী অবস্থা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
সেরিব্রাল এনজিওগ্রাম (Cerebral Angiogram)
এটি একটি আনকমোন টেস্ট যা বিশেষভাবে স্ট্রোকের রোগীদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। এই টেস্ট করার জন্যে ডাক্তার একটি ছোট ছেঁদের মাধ্যমে একটি পাতলা নমনীয় টিউব সাধারণত কুঁচকিতে প্রবেশ করান, যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় ক্যাথেটার বলা হয়। এটি প্রধান ধমনী এবং ক্যারোটিড বা মেরুদণ্ডের ধমনীতে পরিচালনা করা হয়।
তারপর ডাক্তার এক্স-রে ইমেজিংয়ের মাধ্যমে ভেতরের অবস্থা দেখার জন্য রক্তনালীতে একটি রঞ্জক ইনজেকশন দেন। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্ক এবং ঘাড়ের ধমনীগুলোর বিস্তারিত অবস্থা বিশদভাবে দৃশ্যমান হয়। ফলে, ডাক্তারের পক্ষে রোগীর জন্যে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যায়।
ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram)
Sound Wave বা শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে হার্টের অবস্থা ডিটেইলস্ জানার জন্যে ইকোকার্ডিওগ্রাম একটি অসাধারণ টেস্ট। এই টেস্ট হার্টের ব্লক খুঁজে বের করতে ভীষণ কার্যকরী। হার্টে তৈরি হওয়া ব্লক ব্রেনে গিয়ে অধিকাংশ সময়ই স্ট্রোকের সৃষ্টি করে। ফলে, ইকোকার্ডিওগ্রাম করে দেখা হয় হার্টের মাধ্যমে রোগী স্ট্রোক করেছে কিনা।
Leave a Reply