বহুকাল আগে থেকেই হলিউডে থ্রিলারধর্মী মুভিগুলি তৈরী হয়ে আসছে। আমাদের দেশে ভিনদেশীয় যে-সব মুভি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, হলিউড থ্রিলার মুভি তার মধ্যে অন্যতম। ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প ও ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশনার কারণে এ ধরনের মুভিগুলো দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
যদিও আমাদের দেশে এসব মুভির জনপ্রিয়তা লাভের সময়কাল খুব বেশি দীর্ঘ নয়, তবুও হাল সময়ে হলিউডে নির্মিত অন্যান্য ধাঁচের মুভির সাথে সাথে হলিউড থ্রিলার মুভিগুলিও আমাদের দেশের দর্শকদের কাছে সমাদৃত হচ্ছে।
একটি ভালো মানের থ্রিলার মুভি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে নির্মিত এসব ছবিগুলি সমাজে ঘটাচলা বিভিন্ন অসংগতি ও মারাত্বক অপরাধ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের সামনে নিয়ে আসে।
আর এই কারণেই রোমান্টিক, সায়েন্স ফিকশন বা সুপারহিরো মুভিগুলোর সাথে টক্কর দিয়েই থ্রিলার মুভিগুলি ব্যবসা সফল হয়ে চলেছে। আপনি হয়তো এর আগে আমাদের এখানে সেরা কিছু হলিউড রোমান্টিক মুভির তালিকা দেখেছেন এবং এগুলো থেকে কিছু মুভি আপনি হয়তো দেখেও ফেলেছেন। এবার দেখুন হলিউডে নির্মিত সেরা কিছু থ্রিলার মুভি।
হলিউড থ্রিলার মুভি
হলিউড থ্রিলার মুভিতে এমন সব ঘটনা কেন্দ্রিক বিপদের সম্ভাবনাগুলি তুলে ধরা হয় যা হয়তো এখন পর্যন্ত আপনি নিরাপদ বলে ভাবতেন। বিগত কয়েক দশক ধরে হলিউডে বিভিন্ন ধরনের থ্রিলার মুভি তৈরী হয়ে আসছে। যার মধ্যে এমন বেশ কিছু মুভি রয়েছে যা আজও দর্শকদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। চলুন জেনে নিই এমনি কিছু সেরা থ্রিলার মুভি সম্পর্কে।
সেভেন:
আমার দেখা হলিউড থ্রিলার মুভিগুলির মধ্যে এই ছবিটিকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। ছবিটির আইকনিক উপস্থাপনার জন্য এটি মুভিপ্রেমীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। নামকরণের স্বার্থকতাকে ধরে রেখে সাতটি জঘন্য অপকর্মের সূত্র ধরে একের পর এক খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবিটির গল্প গড়ে ওঠে।
একজন সিরিয়াল কিলার এবং তাকে খুঁজে বের করার জন্য দুজন গোয়েন্দার বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার মুহুর্তগুলি দর্শকদের লোমহর্ষিত করে তোলে। থ্রিলার মুভি দেখতে যারা ভালোবাসেন, তাদের অবশ্যই এই মুভিটি দেখা উচিত।
সাইকো:
১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যালফ্রেড হিচককের সাইকো ছবিটি সেই সময়ে দারুন জনপ্রিয়তা লাভ করে। ওই সময়ের ব্যবসা সফল ছবিগুলির তালিকায় এই মুভিটি প্রথম সারিতে নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়। ছবির নাম শুনেই আন্দাজ করতে পারা যায় যে ছবিটিতে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন খুনির বিভৎস তান্ডবলীলা দেখানো হয়েছে।
ছবিতে অংশগ্রহনকারী কলাকৌশলীদের অসাধারণ অভিনয়ে বিভিন্ন খুনের দৃশ্যগুলিকে এতটাই আসলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে আপনি ভয় পেয়ে যেতে বাধ্য।
দ্যা সাইলেন্স অফ দ্যা ল্যাম্বস:
ছবিটিতে চোর পুলিশ খেলাটা দারুনভাবে জমে উঠেছে। থ্রিলার ছবির জগতে এটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরী করা হয়েছে। শহরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন এফবিআই এজেন্টকে একজন সিরিয়াল কিলারের সাহায্য নিয়ে খুনীকে ধরার প্রচেষ্টা করতে দেখা যায় ছবিটিতে, যা দর্শকদের মনে অন্যস্বাদের থ্রিলার অনুভুতির জন্ম দেয়।
একই সাথে অভিনেতাদের দুর্দান্ত অভিনয় বা অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছবিটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে ধরে রাখতে সক্ষম।
দ্যা ইউজুয়াল সাসপেক্টস:
ছবিটি থ্রিলার হওয়ার সাথে সাথে দারুন মজাদারও বটে। পাঁচজন অপরাধী পুলিশের সন্দেহভাজন তালিকায় থাকা স্বত্বেও তারা একটি বড় ধরনের অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি পুলিশ ঘটনাটি ঘটবে বলে আশংকা করলেও প্রমাণের অভাবে অপরাধীদের সরাসরি গ্রেপ্তার করতে না পারায় কিভাবে তা প্রতিরোধ করবে সেই পরিকল্পনা করতে থাকে।
এভাবে ইঁদুর বিড়ালের দৌড়াদৌড়ির খেলাটা গল্পের মধ্যে দারুন জমে উঠেছে যা নিঃসন্দেহে ভালো লাহতে বাধ্য।
রেয়ার উইন্ডো:
আপনার পেশা যখন আপনার জীবন হুমকীর মুখে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন কেমন অনুভুতি হয় বলতে পারেন। জি হ্যাঁ, এমনি কিছু ঘটনা নিয়েই দর্শকদের চমকে দিয়েছে এই থ্রিলার ছবিটি।
একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার হঠাৎ করেই তার প্রতিবেশীদের উপর ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারী করা শুরু করে। আর সেই সময় সে এমন কিছু দেখতে পায়, যা তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। জানতে চান সে কি দেখেছিল? তাহলে এখনই মুভিটি দেখে ফেলুন।
রোপ:
এই পুরো ছবিটাই মাত্র দুইটি কক্ষে চিত্রায়িত করা হয়েছে। দুইজন অপরাধী হঠাত করেই জানতে আগ্রহী হয়ে পড়ে যে, তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের পরিচিত মানুষরা অবগত কিনা। আর সেগুলোকে ঢাকা দিতে ঘটে চলা সব অপরাধকে কেন্দ্র করে ছবিটির গল্প গড়ে উঠেছে।
ছবিটিতে অভিনেতাদের সংলাপগুলি ছিল দারুন উপভোগ্য যা দর্শকদের ছবির গল্পের সাধে বেঁধে রাখে।
ভার্টিগো:
এই মুভিটিকে অ্যালফ্রেড হিচককের সেরা থ্রিলার মুভিগুলির মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। থ্রিলারমুভি প্রেমীদের জন্য এটি তার এক অনবদ্য উপহার। ছবিতে অ্যাক্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত গোয়েন্দা স্কটকে তার কায়েন্টের স্ত্রীর অদ্ভুত সক আচরণের পেছনের রহস্য উন্মোচনের জন্য নিয়োগ এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাকে নিয়ে ছবিটির কাহিনী এগিয়ে চলে।
সবচেয়ে মজার অংশটি হচ্ছে ছবিটি দেখার সময় পরবর্তী দৃশ্যে কি ঘটতে চলেছে তা কোনভাবেই অনুমান করা যায় না। ফলে প্রতিটি দৃশ্যই দর্শকদের চমকে দিতে থাকে।
হলিউড থ্রিলার মুভি মানেই মুভিপ্রেমীদের কাছে এক অন্যধরনের উত্তেজনা। বিগত কয়েক দশক ধরেই সিনেমা প্রেমী লাখো দর্শকদের বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে এই মুভিগুলি।
ব্যক্তিগতভাবে অন্যান্য যে কোন দেশের মুভির তুলনায় হলিউডে নির্মিত থ্রিলার মুভিগুলি আমার কাছে বেশি প্রিয়। কাহিনী, অভিনয় আর সংলাপের সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এই মুভিগুলি দর্শকদের অবসর কাটানোর সেরা মাধ্যমে পরিণত হয়।
আমরা আসলে মুভি রিভিউ নিয়ে সিরিজ লেখা প্রকাশ করছি যাতে আপনারা পছন্দের মুভিগুলো দেখতে পারেন। কিংবা কোন মুভি দেখবেন, তা নিয়ে খোঁজুখুঁজি করতে না হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এর আগে আমরা চাইনিজ রোমান্টিক মুভি ও জাপানিজ রোমান্টিক মুভি নিয়ে লিখেছিলাম, চাইলে এই মুভিগুলোও দেখে নিতে পারেন।
Leave a Reply