ক্যালকুলেটর, ঘড়ি কিংবা ক্যালেন্ডারের চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় নোট টেকিং অ্যাপ বা নোটবুক অ্যাপ বা ডিজিটাল নোটবুক। তাই স্মার্টফোনে তো বটেই, ফিচার ফোনেও পাওয়া যায় নোট টেকিং অপশনটির দেখা।
মোবাইল ফোন যেহেতু এখন আমাদের সব সময়ের সঙ্গী, তাই নিত্য দিনের বাজার তালিকা থেকে শুরু করে কোন মিটিং এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এতে নোট করে রাখা সময় সাশ্রয়ী এবং সহজ একটি কাজ। তাই নোট টেকিং অ্যাপের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে।
নোট টেকিং অ্যাপ কি, সেটা এখন আর কোন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অজানা নয়। তবু, ২/১জন থাকতে পারেন যারা এ ডিজিটাল টুল সম্পর্কে বিস্তারতি জানেন না।
ডিজিটাল প্রত্যেকটা প্লাটফর্মের জন্যই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নোটবুক অ্যাপ। সব অ্যাপ এর সুবিধা অবশ্যই এক রকম নয়। একটি হয়তোবা ডিজাইন আর ইউজার ইন্টারফেসের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, অন্যটি দিচ্ছে নিরাপত্তা বা ফিচারের মতো বিষয়গুলোর উপর।
এতসব কিছুর মধ্য থেকে সঠিক নোটবুক অ্যাপটি বেছে নেওয়া বেশ ঝামেলার। আমরা এখানে আজকে তাই এমন ৫টি নোটবুক অ্যাপ নিয়ে কথা বলবো, যেগুলো ইতিমধ্যে প্রচুর জনপ্রিয় এবং প্রায় সবদিক দিয়ে অন্য অ্যাপগুলোর চেয়ে এগিয়ে।
সেরা ৫টি নোটবুক অ্যাপ
কাগজের নোটবুক নাকি ডিজিটাল নোটবুক ব্যবহার করবেন, এ নিয়ে আপনার হয়তো এখন আর কোন সংশয় নেই। তবে, স্মার্টফোনে ডিজিটাল্লি নোট নেয়ার জন্যে কোন অ্যাপটি ব্যবহার করবেন, তার নিয়ে হয়তো কিছুটা সংশয় থাকতে পারে।
আসলে, শত শত অ্যাপ থেকে পাঁচটি অ্যাপের তালিকা করা খুব সহজ নয়, অনেক দারুণ অ্যাপই হয়তোবা বাদ পড়বে এখান থেকে। তবে, আমরা চেষ্টা করেছি নিরাপত্তা, ফিচার, ডিজাইন, সহজ ইউজার ইন্টারফেস, সহজ প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয়কে যারা গুরুত্ব দেন তাদের সবার জন্যই যেন কাজে লাগে এমন একটি সর্ট লিস্ট করবার।
Evernote
বিগত কয়েক বছর ধরে ফিচার, নিরাপত্তা, সহজ ইউজার ইন্টারফেস এভারনোটকে এগিয়ে রেখেছে অন্যগুলোর চেয়ে। অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ আইওএস, ম্যাক ওএস জনপ্রিয় এই চারটি অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ স্টোরেই পাওয়া যাবে এভারনোটকে। ব্যবহার করা যাবে যে কোন ব্রাউজার থেকেই এদের ওয়েব সাইটটি ব্যবহার করে। যে সুবিধাটিকে আমরা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বলে থাকি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্রাউজারের এক্সটেনশন।
এভারনোটের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাঃ
- এভারনোটের নিজস্ব ক্লাউড স্টোরেজে নোটগুলো জমা হয়ে থাকে।
- নোট লেখার সময় প্রতিটি নোটের সাথে সময়, তারিখ এবং স্থান স্বয়ংক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এডিট করা হলে সে সময়টিও আলাদা ভাবে যুক্ত হয়।
- আলাদা আলাদা নোটবুক তৈরী করে নোট রাখা যায় সেগুলোতে।
- সার্চ সিস্টেম খুবই উন্নত।
- টেক্সট ফরম্যাটিং অর্থাৎ বোল্ড, ইটালিক, কালার ইত্যাদি করা যায়।
এভারনোটের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধাঃ
- অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটিতে নোট নেওয়ার সময় অনেক সময় অক্ষর ভেঙে যায়। যা প্রচণ্ড বিরক্তিকর।
- ফ্রী একাউন্টে বেসিক ফিচারগুলো বেশ সীমাবদ্ধ। প্রতি মাসের জন্য ৬০ মেগাবাইট জায়গা বরাদ্ধ থাকে ফ্রী একাউন্টে। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মোটেই কোন কারণ নেই। পারসোনাল ইউজে ৬০ এমবি আমি কোন মাসেই শেষ করতে পারি নি।
- প্রিমিয়াম কিংবা বিজনেস একাউন্টে খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি।
এভারনোট ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায় তবে এর প্রিমিয়াম ফিচার বা বিজনেস ফিচার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে খরচ করতে হবে ৮ থেকে ১৫ ডলার প্রতিমাসে।
Google Keep
ব্যাক্তিগতভাবে এভারনোটের চেয়ে গুগল কীপের ইউজার ইন্টারফেস এবং ডিজাইন আমার অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে। গুগলের অন্যান্য অ্যাপের মতোই খুবই স্মুথলি ইউজ করা যায় একে। বর্তমানে গুগল কীপের অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টওয়াচে। তবে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্রাউজার এক্সটেনশন থাকায় সব ব্রাউজার থেকেই এটি ব্যবহার করা যাবে।
গুগল কীপের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাঃ
- সাইজে ছোট, মাত্র ১৪ মেগাবাইটের হালকা একটি অ্যাপ্লিকেশন এটি।
- দৃষ্টিনন্দন কালারফুল নোট টাইলস এবং লিস্ট কিংবা গ্রাইড ভিউ।
- আনলিমিটেড স্টোরেজ।
- ক্যাটাগরি, লেবেল এমনি কালারের ভিত্তিতে নোট অর্গানাইজ করা যায়।
- ডেট কিংবা প্লেস অনুযায়ী রিমাইন্ডার সেট করার অপশন।
গুগল কীপের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধাঃ
- সর্বোচ্চ ৫০টি লেবেল অ্যাড করা যায় এতে।
- ওয়েব ক্লিপার হিসেবে এটি শুধু মাত্র ইউআরএল সেভ করে, সম্পূর্ণ পেজ নয়।
- কোন ধরণের টেক্সট ফরম্যাটিং অপশন নেই।
গুগল কীপ সম্পূর্ণ ফ্রি একটি অ্যাপ। অর্থাৎ এটি ব্যবহার করতে কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না।
OneNote
মাইক্রোসফট এর ডেভেলপ করা ওয়াননোট উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের নিকট খুবই পরিচিত। স্মার্টওয়াচসহ আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েডে বিনামূল্যে ইন্সটল করা যাবে অ্যাপ্লিকেশনটি। নোট টেকিং অ্যাপের জগতে এটি একটি পাওয়ারফুল অ্যাপ।
ওয়ান নোটের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধাঃ
- অনেক বেশি ফিচার সমৃদ্ধ। প্রফেশোনাল বা বিজনেস ওয়ার্কের জন্য যা খুবই চমৎকার একটি বিষয়।
- সুন্দর ডিজাইন।
- সব ধরণের প্লাটফরমের জন্য অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে।
ওয়ান নোটের উল্লেখযোগ্য কিছু অসুবিধাঃ
- সার্চ সিস্টেম এভারনোট বা গুগল কীপের মতো উন্নত নয়।
- অনেক বেশি প্রফেশনাল ফিচার থাকায় সাধারণ ব্যবহারের জন্য অনেকের কাছেই বিরক্তিকর লাগবে।
স্মার্টফোনে ওয়াননোট ফ্রিতে ব্যবহার করা গেলেও কম্পিউটারে ব্যবহার জন্য কিনতে হবে মাইক্রোসফট অফিস এর কোন একটি প্যাকেজ।
Simplenote
উপরের তিনটি নোট অ্যাপ থেকে সিম্পল নোট একটু আলাদা। এতে জোর দেওয়া হয়েছে সহজ ইউজার ইন্টারফেস এবং একদমই বেসিক ফিচারের উপর। ট্যাগ যুক্ত করে সার্চ করা যাবে এতে। এর বাইরে একটি ইউনিক ফিচার আছে। একটি নোটের আগে এডিট করা ভার্সনগুলো রিস্টোর করা যায় এতে।
সিম্পলনোটের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাঃ
- একদম সাদামাটা মিনিমাল ডিজাইন। নামের মতোই ব্যবহার করা। তাই একদমই সিম্পল।
- জনপ্রিয় সব অপারেটিং সিস্টেমে এর অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। তাই, অফলাইনে থাকলেও কাজ করতে পারবেন। যখন অনলাইন হবেন, তখন এটি ক্লাউড স্টোরেজে সেভ হয়ে থাকবে।
সিম্পলনোটের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধাঃ
- শুধু মাত্র টেক্সট নোট নেওয়া যায়।
- কোন ছবি, ভিডিও বা অডিও নোট যুক্ত করার সুবিধা নেই এতে।
- এ কারণে কিছু ব্যবহার কারীর নিকট খুব বেশিই সাদামাটা মনে হবে।
Automattic Inc এর ডেভেলপ করা এই নোট টেকিং অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে একদম বিনামূল্য।
Notebook
Notebook এর নির্মাতা Zoho Corporation। যাদের চমৎকার কিছু অনলাইন অফিস অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। নিজস্ব ক্লাউড স্টোরেজে Zoho Corporation নোটবুকের নোট সংরক্ষণ করে। গুগল কীপের কালারফুল টাইলের ডিজাইন যাদের পছন্দ, তাদের ভালো লাগবে এটি। পাশাপাশি এতে নোটবুক তৈরী করার সুবিধাও রয়েছে।
নোটবুক এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাঃ
- ডিজাইন কাস্টমাইজেশনের অনেক সুবিধা! একটু স্টাইলিশ সাজানো গোছানো নোটবুক চাইলে এটা পছন্দ হবে।
- টেক্সট ফরম্যাটিং এর অনেক অপশন রয়েছে।
- উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের জন্য আলাদা অ্যাপ্লিকেশন। রয়েছে ওয়েব থেকেও ব্যবহারের সুযোগ।
- সাইন ইন না করেও ব্যবহার করা যায়।
নোটবুকের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধাঃ
- ক্রিয়েটিং টাইম দেখার ব্যবস্থা নেই।
- টাইল সিস্টেম গুগল কীপের মতো উন্নত নয়।
গুগল কীপ বা সিম্পলনোটের মতো এটিও ব্যবহার করা যাবে ফ্রিতে।
সেরা ৫টি নোটবুক অ্যাপ নিয়ে এই ছিলো আমাদের আলোচনা। কোন নোটবুকটি আপনার পছন্দ এবং কেন তা জানিয়ে আমাদের কমেন্ট করুন। ডিজিটাল নোটবুক নিয়ে কোন প্রশ্ন, মতামত থাকলে তাও জানাতে পারেন আমাদের।
Leave a Reply