আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি প্রতিদিন কতটি সেলফি তুলেন? আপনার কাছে হয়তো সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যার উত্তর থাকবে না। উত্তর না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ মানুষ দিনে এত অসংখ্য বার সেলফি তোলে, যে গণনা করার সময় নেই।
এখন প্রশ্ন হল, আপনার সবগুলো সেলফি কি খুব গুড লুকিং হয়! প্রতিটি সেলফিতে কি আপনাকে কিংবা আপনার আশে-পাশের পরিবেশ কি আকর্ষণীয় মনে হয়!
আপনার স্মার্টফোনের ফটো গ্যালারিতে খুঁজলে ৫০ থেকে ৬০টি ছবির মধ্যে ১টি ছবি পাওয়া যাবে নিখুঁত এবং আকর্ষণীয়। এ রকম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়!
কারণ, আপনি প্রতিটি ছবি তোলার সময় আশে-পাশের আলো, দূরত্ব, ক্যামেরা সেটিংস, ফটো ফিল্টার কিংবা আশে-পাশের পরিবেশকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু একটি ছবি তোলার ক্ষেত্রে এ-সব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ আর সেলফি তোলার ক্ষেত্রে এ রকম আরো অনেক কৌশল রয়েছে।।
সেলফি তোলার কৌশল
কিভাবে একটি নিখুঁত এবং আকর্ষণীয় সেলফি তুলবেন, এ নিয়ে আমি বেশ কিছু ফটোগ্রাফি বিশেষজ্ঞের লেখা পড়েছি। এখন সেখান থেকে আমি সুন্দর ও আকর্ষণীয় সেলফি তোলার ১০টি দারুণ কৌশল আলোচনা করব।
১. আলো এবং ছায়ার প্রতি গুরুত্ব দিন
কৌশলটাকে খুব সাদাসিধে মনে হচ্ছে কিন্তু একদম পারফেক্ট সেলফি তোলার জন্য আলো এবং ছায়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কম আলোতে ছবি তুললে অনেক সময় আপনার চেহারা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে না।
সব সময় চেষ্টা করবেন প্রাকৃতিক আলো অর্থাৎ সূর্যের আলো ব্যবহার করে সেলফি তুলতে। সূর্যের আলো যে দিকে পড়বে, তার বিপরীত দিক থেকে সেলফি তোলার। তবে মাঝে মাঝে আপনার ফোনের ছায়া আপনার উপর পড়তে পারে, সে দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
বিখ্যাত ফটোগ্রাফার এবং ব্লগার ক্যান্ডিস লেক বলেন-
“মুখের উপর বিশাল আকারের ছায়া পড়ার থেকে খারাপ অবস্থা আর নেই।”
তাই সূর্যের আলোর এবং আপনার ছায়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। আর এজন্য সেলফি তোলার উত্তম সময় হচ্ছে বিকেল বেলা।
২. সঠিক অ্যাঙ্গেল নির্বাচন করুন
ভুল অ্যাঙ্গেল আপনার পুরো ছবিটা, এমনকি আপনাকে পরিবর্তণ করে দিতে পারে।
বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট নিক বারোস বলেন-
“অধিকাংশ মানুষের জন্য সেরা অ্যাঙ্গেল হল, তার চোখ থেকে একটু উপরে অর্থাৎ তার সরাসরি দৃষ্টি যেন ক্যামেরার দিকে না পড়ে।
৩. পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে প্রকাশ করুন
সেলফিতে যেহেতু মুখমণ্ডলকে বেশি ফোকাস করা হয়, তাই একটি ভালো সেলফিতে আপনার মুখের অভিব্যক্তি এবং প্রকাশ ভঙ্গি কেমন হয়, সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
আর গ্রুপ সেলফি তোলার সময় হাসির ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যখন সবাই মুচকি হাসিতে থাকবে, তখন আপনিও মুচকি হাসি দিবেন। আবার যখন সবাই অট্ট হাসি দিবে, তখন আপনার মুখ গোমরা করে রাখবেন না।
৪. ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডকে গুরুত্ব দিন
সেলফির ক্ষেত্রে কেবল মুখমণ্ডলকে গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই আপনি ঘরে কিংবা বাইরে যেখানে ছবি তোলেন, অবশ্যই ব্যাকগ্রাউন্ড কে গুরুত্ব দিন। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশ হচ্ছে সবচাইতে উত্তম ব্যাকগ্রাউন্ড।
আপনি যদি আপনার রুমে সেলফি তুলে থাকেন, তবে আপনার রুমে থাকা আকর্ষণীয় বস্তুকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তুলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার পড়ার টেবিলের বুক সেলফকে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
৫. নতুন কিছু দেখান
আপনি যদি আপনার কোন কিছু দেখাতে চান যেমন: আপনার নতুন হেয়ার কাট কিংবা নতুন ফোন, সে ক্ষেত্রে সেলফি তোলার সময় বস্তুটিকে ফোকাস করুন। এর ফলে সেলফি আরও বেশি আকর্ষণীয় হবে।
৬. সেলফি স্টিক ব্যবহার করুন
গ্রুপ সেলফি তোলার সময় অথবা অনেক বস্তুকে ফোকাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সেলফি স্টিক ব্যবহার করুন। তা না হলে, সেলফিতে আপনি সব কিছুকে একই ফ্রেমে বন্দী করতে পারবেন না। ব্যাপারটি আরো ভালভাবে বোঝার জন্যে জেনে নিন সেলফি স্টিক কি ও কিভাবে কাজ করে। সেই সাথে আরো জানুন ছবি তোলার সময় সেলফি স্টিক ব্যবহারের সুবিধাগুলো।
৭. ভালো ক্যামেরা এবং ফিল্টার অ্যাপ ব্যবহার করুন
ছবি তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো মানের ক্যামেরা এবং ফিল্টার ব্যবহার করবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি ভালো সেলফি নির্ভর করে একটি ভালো ক্যামেরা অ্যাপের উপর। সুতরাং, হাই-কোয়ালিটি ছবি তোলার জন্যে সেরা ৫টি ক্যামেরা অ্যাপ থেকে যে কোনটি ডাউনলোড করে নিন।
এছাড়া আপনার পরিস্থিতি এবং পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে অ্যাপের ফিল্টার ব্যবহার করুন। বাহিরের পরিবেশে লাভ ফিল্টার বা এ ধরণের কোন ফিল্টার ব্যবহার করবেন না।
৮. অতিরিক্ত এডিট করবেন না
অনেককে দেখা যায় সেলফি তোলার পর এত বেশি পরিমাণ এডিট করে যে, পরবর্তীতে ছবির স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং দেখতেও সেটিকে আর প্রফেশনাল মনে হয় না।
এডিটের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, কারণ বেশি এডিটের ফলে কখনো আপনার সেলফি আকর্ষণীয় হবে না।
৯. প্রফেশনাল বনাম ক্যাজুয়াল
সেলফি কেবল বন্ধুদের সাথে তোলা হয় না বরং মাঝে মাঝে আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক বা অফিসের বসের সাথে তোলা হয়। বন্ধুদের ক্ষেত্রে সব সময় ক্যাজুয়াল থাকার চেষ্টা করবেন। তবে অফিসের বস বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অবশ্যই ছবিতেও প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করবেন।
১০. সেলফি তুলতে থাকুন
সেলফি তুলতে থাকুন, এক সময় আপনি নিজেই অনুধাবন করতে পারবেন আপনার সেলফি তোলার সময় কোন কোন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
আর প্রচুর পরিমাণে সেলফি তোলার দ্বারা আপনার সেলফি তোলার স্কিল বৃদ্ধি পাবে। আস্তে আস্তে আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন, আপনার সেলফির মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেষ কথা
সেলফি তোলার সময় উপরে উল্লেখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারেন। এছাড়া আপনি প্রচুর পরিমাণে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের সেলফিগুলো দেখুন। আপনার সেলফির ব্যাপারে অন্যের মন্তব্য শুনুন।
Leave a Reply