স্মার্টফোন আবির্ভাবের পর থেকে গত ১০ বছরে সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য অ্যাপস ব্যবহার করে আসছে ব্যবহারকারীরা। এদের মধ্যে অনেকগুলো অ্যাপস এতটাই জনপ্রিয় যে ধারণা করা হচ্ছে এই অ্যাপসগুলো আরও অনেক বছর ধরেই চলতে থাকবে। আর তাই সারা বিশ্বে এই দশকে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস এর একটি তালিকা তৈরি করেছে ‘অ্যাপ অ্যানি’ নামক একটি সংস্থা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এর তথ্যমতে, অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে ২ মিলিয়ন অ্যাপস্ রয়েছে যেগুলো মূলত আইওস অপারেটিং সিস্টেমের ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়। আর স্টেটিসটা এর তথ্য মতে, গুগলের প্লে স্টোরে অ্যাপের সংখ্যা প্রায় ২.৯ মিলিয়ন যেগুলো অ্যান্ডয়েড অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা চালিত ডিভাইসগুলোতে ব্যবহার করা হয়।
মানুষ কি এতগুলো অ্যাপের মধ্যে সব অ্যাপই ব্যবহার করে? সব অ্যাপই কি দরকারি? সব অ্যাপই কি ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয়?
আপনার উত্তর হবে নিশ্চয়ই, না। আমারও তাই। আসলে, এই লক্ষ লক্ষ অ্যাপের মাঝ থেকে মানুষ অল্প কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে থাকে। তবে, এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার ডাউনলোড করা হয়েছে। আর সেগুলোর মাঝে সিরিয়ালে থাকা প্রথম ১০টি অ্যাপ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস
নাম্বার ১০: টুইটার
২০০৬ সালে অ্যামেরিকা থেকে মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম ‘টুইটার’ এর যাত্রা শুরু হয়। আর এটি বর্তমানে সারা পৃথিবীর তাবৎ মোবাইলেই দেখতে পাওয়া যায়। শুরুতে ১৪০ ওয়ার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে ২৮০ ক্যারেক্টারের মধ্যে যে কোন স্ট্যাটাস টুইট করা যায়। মূলত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে টুইটার ইনকর্পোরেশন তাদের ইউজারদের জন্যে এই সুবিধা চালু করে।
টুইটারে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের সেলিব্রেটিরা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ টুইটার ব্যবহার করেন।
নাম্বার ৯: ইউটিউব
ভিডিও দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্লাটফর্মটি হচ্ছে ইউটিউব যা থেকে কেউ কেউ ১৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকেন। ইউটিউবে যে কেউ ভিডিও আপলোড করতে পারে, ভিডিউ ভিউ করতে পারে, শেয়ার করতে পারে এবং ভিডিওতে রেটিং দিতে পারে। শুধু তাই নয়, একজন ইউজার যে কোন ভিডিওতে কমেন্টের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রদান করতে পারে, কোন একটা চ্যানেল ভাল লাগলে সেটি সাবস্ক্রাইব করতে পারে।
আপনি জানেন কি ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হওয়া ইউটিউব প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিলেন একজন বাংলাদেশী? তিনি হচ্ছেন জাওয়েদ করিম, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন জাভেদ করিম। তার দুই সহযোগী ছিলেন পে-পাল কর্মকর্তা। ইউটিউবের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে গুগল ২০০৬ সালে ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এটি কিনে নেয়।
নাম্বার ৮: ইউসি ব্রাউজার
সিঙ্গাপুরের মোবাইল বেইজড্ ইন্টারেনট কোম্পানী ইউসি ওয়েবের এই ইউসি ব্রাউজিং অ্যাপটি ডাউনলোডের তালিকায় রয়েছে আট নাম্বারে। তবে, এটি এখন আর তাদের আন্ডারে নেই। কারণ, চীনের আলিবাবা গ্রুপ এটি কিনে নেয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে গুগল ক্রোমের থেকেও ইউসি ব্রাউজার অ্যাপটি বেশি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে, সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস এর তালিকায় এটি অষ্টম।
নাম্বার ৭: টিকটক
২০১৭ সালে চীনের বাইরের বাজারে আসে বাইট ডান্সের তৈরি জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক। যদিও শুরুর দিকে এই ভিডিও শেয়ারিং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপসটির নাম ছিল মিউজিক্যাল.লি। বর্তমানে এটি বিশ্ব জুড়ে প্রায় সকল তরুণদের কাছেই তুমুল জনপ্রিয়। একজন ইউজার শুধু ভিডিও শেয়ারিংই নয়, এটি দিয়ে ভিডিও তৈরি, এডিট এবং শেয়ার করতে পারে। তবে, প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই অ্যাপটিতে মানুষের রুচিহীন ভিডিও সামাজিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।
নাম্বার ৬: স্কাইপ
টেলিকমিউনিকেশন ভিত্তিক এই অ্যাপটি এখন পর্যন্ত কলিং অ্যাপ হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে, বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ভিডিও কনফারেন্সের জন্যে বেশি জনপ্রিয়। তবে, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে স্কাইপ।
নাম্বার ৫: স্নাপচ্যাট
২০১১ সালে বাজারে আসে স্নাপচ্যাট যা তৈরি করেছিল স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির তিন বন্ধু। পরবর্তীতে এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটি পূর্নাঙ্গ রূপ পায় স্ন্যাপ ইনকর্পোরেশনের হাতে। ফটো শেয়ার ভিডিও ফিল্টারিংয়ের জন্য এই অ্যাপটি অনেক জনপ্রিয়। ডাউনলোডের দিক থেকে এটি পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
নাম্বার ৪: ইন্সটাগ্রাম
ফেইসবুকের এই অ্যাপটি সারা বিশ্বের সেলিব্রেটিদের পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে। ২০১০ সালে এই অ্যামেরিকান ফটো ও ভিডিও শেয়ারিং সোশ্যাল নেটওয়ার্কটি যাত্রা শুরু করে। এতে, মূলত ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা যায়।
মূল উদ্যোক্তা Kevin Systrom ও Mike Krieger এর তৈরি ইন্সটাগ্রামের অন্যতম গ্রহণযোগ্যতা হল ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে ছবি তুললে সেটি আরও সুন্দর ও কোয়ালিটিপূর্ণ ছবি হয়ে উঠে। আর এ জন্যেই এটি এখন সব অ্যান্ড্রয়েব এবং আইওএস ইউজারের কাছেই খুব প্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস এর কাতারে এটি ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে।
নাম্বার ৩: হোয়াটসঅ্যাপ
ফেইসবুকের আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। এটি তৈরি করেন Brian Acton ও Jan Koum নামক ইয়াহুর দুই কর্মকর্তা। টেক্সট মেসেজ প্রদান করা ছাড়াও অডিও, ভিডিও, ছবি এবং ডকুমেন্ট ফাইল সেন্ড করা যায় হোয়াটসঅ্যাপে। এক বিলিয়েনরও বেশি ইউজার নিয়ে প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
নাম্বার ২: ফেইসবুক মেসেঞ্জার
ফেইসবুকের আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ফেইসবুক মেসেঞ্জার। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ইউজারদের চ্যাট করার জন্যে এই অ্যাপটি তৈরি করে ফেসবুক ইনকর্পোরেশন। এটি হোয়াটসঅ্যাপের থেকেও বেশি ডাউনলোড হয়েছে এবং এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিপুল।
২০১১ সালে প্রথমে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য তথা গুগল প্লে-স্টোরের জন্য, পরে আইওস (অ্যাপ স্টোরে) এর যাত্রা শুরু হয়। ফেইসবুকে থাকা সমস্ত বন্ধুদের সাথে ফেইসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট করা ছাড়াও, ছবি ও ভিডিও এমনকি ডকুমেন্টও সেন্ড করা যায়।
নাম্বার ১: ফেইসবুক
অ্যাপ ডাউনলোডের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে ফেইসবুক। এটা শুধু অ্যান্ড্রয়েডের জন্যেই নয়, আইওএস তথা আইফোনের গ্রাহকদের মাঝেও এ যাবৎ সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস এর তালিকায় এটিই সবার শীর্ষে রয়েছে। আমেরিকান নাগরিক মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে নিজেদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ফেইসবুক ডেভেলপ করেন। ঘটনাটি ২০০৪ সালের যা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জগতের ইতিহাস হয়ে আছে।
এরপর, এই সোশ্যাল ওয়েবসাইটটি আস্তে আস্তে আমেরিকান অনেকগুলো ইউনিভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে এটি অ্যামেরিকায় তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। পরবর্তী মার্ক জাকারবার্গ এটিকে সারা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন। বর্তমানে ফেইসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৪৫ কোটিরও বেশি (২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)।
এই ছিল গত ১০ বছরে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস ডিভাইসে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস এর তালিকা। এগুলোর মাঝে হয়তো সবকটিই আপনি ইতিমধ্যে ব্যবহার করেছেন। যদি, কোনটি বাদ পড়ে থাকে, তবে অ্যাপটির বর্ণনার নিচে দেয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করে দেখুন।
Leave a Reply