কথায় বলে সকালের নাস্তা হবে রাজার মতো। দুপুরের খাবার হওয়া চাই প্রজার মতো। আর রাতের খাবার হবে ফকিরের মতো। কথাগুলো সর্বাংশে সত্য না হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। বোঝানো হয়েছে, যেহেতু দিনের শুরুতে খাওয়া এবং সকালের কাজে নিজেকে নিয়োগ, তাই সকালের নাস্তায় হরেক রকমের খাদ্য ও পানীয় থাকা উচিত।
যেমন- ময়দার চেয়ে আটার রুটি, ডিম, ফলমূল, কমলা বা মাল্টার রস ও ননিবিহীন এক গ্লাস দুধ। সবশেষে লাল বা সবুজ চা বা কফি।
আমরা আঙ্গুর, বেদানা, আপেল, ইত্যাদি বিদেশি ফল বুঝি। আসলে এসব ফল অপেক্ষা দেশী ফল কলা. পেয়ারা, জাম ইত্যাদি অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী। আমরা আর কিছু না পারি প্রতিদিন নাস্তায় একটি কলা খেতে পারি। কলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা হার্টের জন্যে উপকারী।
ময়দার চেয়ে গমের আটার রুটি বেশি উপকারী ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। পাউরুটিও এত বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ নয়। সকালে হাতরুটির সাথে বিভিন্ন প্রকারের সবজি খাওয়া ভালো, ভাজা পোড়া না খাওয়াই ভালো।
যাদের সামর্থ্য আছে, তারা মুরগির স্যুপ খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন নয়। সবজি প্রতিদিন খাওয়া চলে। তবে এতে তেল কম দিতে হবে। এখন বিভিন্ন ফলের সমারোহ। আমরা যেকোন একটা ফল খেতে পারি।
যাদের হৃদরোগ আছে, তারা ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ খেতে পারি। এরপর এক গ্লাস ননীবিহীন দুধ ও শেষে এক কাপ সবুজ চা বা কফি। তবে, চা বা কফির পরিবর্তে এক গ্লাস কমলা বা মালটার রস বেশি উপকারী। সকালের নাস্তা আমদের দুপুর পর্যন্ত শক্তি যোগাতে পারে, এমন হওয়া দরকার। কমলা ও মালটা ছাড়া সব ফল কামড়ে ও চিবিয়ে খাওয়া প্রয়োজন। এসব ফল রস করে পান করলে খাদ্যগুণ কমে যায়।
সকালের নাস্তায় চিনিসমৃদ্ধ খাবার ভালো নয়। তবে, কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে সিরিয়াল খাওয়া চলে। যাদের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল আছে, তাদের সকালের নাস্তায় খাসি বা গরু বা ভেড়ার গোশত খাওয়া নিষেধ।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, সবাই হরেক রকমের নাস্তা তৈরি করতে সক্ষম নয় বিদায় প্রতিদিন আমরা গমের আটার হাতরুটি ও যে কোন প্রকারের সবজি কম তেলে রান্না করে খেতে পারি। মাঝারি সাইজের তিনটি রুটিতে ১২৫ ক্যালরি থাকে, আমরা এমন তিনটি-চারটি রুটি খেতে পারি। তবে, ৩টি বা ৪টির বেশি নয়।
একটা ডিমের সাদা অংশ থাকতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে তারা সাদা অংশ এবং যাদের এ-সব সমস্যা নেই, তারা একটা ডিম পোচ বা ডিম সেদ্ধ খেতে পারেন।
একটা পাকা কলা বা যে-কোনো একটা দেশি ফল। এরপর এককাপ টকদই বা ননীবিহীন দুধ। এরপর ইচ্ছে হলে এক কাপ সবুজ চা অথবা এক কাপ কফি খাওয়া যায়। তবে, গরমকালে যথাসম্ভব চা বা কফি এড়িয়ে চলা ভালো।
দুপুরের খাওয়া: দুপুর যেহেতু কাজের সময়, তাই অল্প সময়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করতে হয়। দুপুরে দুটি চাপাতি বা দু মুঠো ভাত, একটু সবজি, মাছ বা দুই টুকরো গোশত- যেকোনো একটি এবং ডাল দিয়ে খাওয়া শেষ করা ভাল।
দুপুরে অতিরিক্ত ভজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, ছুটির দিন ছাড়া বিশ্রাম নেয়া যায় না। আর পেট ভরে খাবার গ্রহণের পর বিশ্রাম প্রয়োজন।
রাতের খাওয়া: আমাদের দেশে রাতে খাওয়া হয় রাত দশটা বা তারপর। এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য কত ক্ষতিকর তা আমরা জানি না। পাশ্চাত্যে রাত আটটার আগেই রাতের খাওয়া শেষ হয়, যাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই খাবার হজম হয়ে যায়। আমরা রাতে খেয়েই বিছানায় যাই এবং শুয়ে পড়ি। এটা খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে পেটে গ্যাস হয়। বদ হজম হয়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
জাপানিরা বেলা ডোবার পরই ডিনার করে। তারপর রাতে শোয়ার আগে সামান্য কিছু খেয়ে ঘুমোতে যায়। রাতের খাবারে গরম মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এতে হজমে বিঘ্ন ঘটে। কারণ, রাতে কোন চলাফেরা বা হাঁটাহাঁটি থাকে না। রাতের খাবার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি ভালো।
Leave a Reply