ভিটামিন বি বা বি কমপ্লেক্সে সাধারণত রিবোফ্লেভিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, নায়াসিন, বায়োটিন, ফলিক অ্যাসিড ও থিয়ামিন থাকে। অধিকাংশ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তাদের ডায়েটের মাধ্যমে অর্থ্যাৎ বিভিন্ন ধরণের খাদ্য দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে ভিটামিন বি গ্রহণ করে থাকে।
যেসব মানুষদের অন্যান্য রোগের কারণে অল্প ডায়েট গ্রহণ করতে হয় কিংবা যেসব মানুষ নির্দিষ্ট কিছু মেডিকেল কন্ডিশনের মধ্যে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সচরাচর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন।
নোট: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া উচিৎ নয়। এতে হিতে বিপরীত অর্থাৎ কখনো কখনো উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হতে পারে।
আসলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়ার ব্যাপারটি একমাত্র তাদের জন্যে যারা কোন কারণে প্রাকৃতিক খাবার থেকে ভিটামিন গ্রহণ করতে অপারগ। কিংবা এত বেশি ভিটামিনের অভাব যে খাদ্য খেয়ে সেটা ফিল আপ করা সময় সাপেক্ষ। একজন সুস্থ্য মানুষ কিংবা এমন একজন যার ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা এত সিরিয়াস নয় যে এখন না হলেই মরে যাবে, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া ঠিক নয়। আর একান্তই যদি নিতে হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শের মাধ্যমে নিতে হবে।
যাইহোক, ভিটামিন বি কি আর কেন প্রয়োজন, সেটা আমরা অনেকেই জানি। এবার চলুন জানা যাক প্রতিদিন একজন মানুষের ঠিক কতটুকু ভিটামিন বি প্রয়োজন।
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন বি প্রয়োজন
এটা পারসন টু পারসন ভেরি করে। যেমন, বৃদ্ধ এবং বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ভিটামিন বি অধিক পরিমাণে প্রয়োজন হয়। আবার শারীরিক অসুস্থতাজণিত কিছু কারণেও বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি প্রয়োজন হয়। যেমন, সেলিয়াক ডিজেজ বা যেসব রোগ হজমে সমস্যা করে, বিশেষ করে গ্লুটেনের জন্যে হাইপার সেনসেটিভ, সেসব রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি এর প্রয়োজন বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্রনিক রোগ এবং এইচআইবি’র ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ ভিটামিন বি এর প্রয়োজন হয়।
আসলে, বয়স ও বিভিন্ন অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন বি বা বি কমপ্লেক্সের প্রয়োজন হয়। তবে, একজন মানুষের কোনভাবেই দৈনিক ১০০% আরডিএর বেশি ভিটামিন বি এর প্রয়োজন নেই, সে অল্প বয়স্ক বা বয়স্ক হোক, পুরুষ কিংবা মহিলা হোক।
যত ধরণের ভিটামিন বি রয়েছে তার সবই ওয়াটার সলিউবল। যার মানে হচ্ছে অতিরিক্ত ভিটামিন বি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় এবং শরীর কোন ভিটামিন বি’ই জমা করে রাখে না, রাখতেও পারে না। এ কারণে কিছু লোক ভুলভাবে বিশ্বাস করে যে, অতিরিক্ত ভিটামিন বি গ্রহণ শরীরে তেমন কোন প্রভাব ফেলে না।
শরীরের জন্যে অতিরিক্ত ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন, যেমন ভিটামিন ‘এ’ কিংবা ভিটামিন ‘ই’ গ্রহণ করা কিছুটা রিস্কি। কিন্তু ভিটামিন বি যেহেতু ওয়াটার সলিউবল, তাই কোন কারণে এটি অতি মাত্রায় গ্রহণ করলেও বড় ধরণের কোন রিস্ক থাকে না।
যাইহোক, মূল কথায় আসা যাক। অর্থাৎ কতটুকু ভিটামিন বি দরকার, তাই নিয়ে কথা বলা যাক।
মেডিকেল সায়েন্টিস্টরা, বিশেষ করে বিশ্ব বিখ্যাত হেলথ্ অর্গানাইজেশনগুলো ভিটামিন বি গ্রহণের মোটামুটি একটা অ্যামাউন্ট নির্ধারণ করে দিয়েছে।
সাধারণভাবে, প্রায় সব প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের জন্যে প্রতিদিন নিচের মাত্রা অনুযায়ী ভিটামিন বি গ্রহণ করতে হবে-
- ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৫ বা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড
- ১.৩ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি৬ বা পিরিডক্সাইন
- ৩০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন
- ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি৯ বা ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড
- ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ বা সায়ানোকোবালামিন
এটা হচ্ছে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন বি গ্রহণের মাত্রা। অন্যান্য ভিটামিন বি গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলাদের বেলায় পরিমাণের ভিন্নতা রয়েছে। নিচে সেই পরিমাণ আলাদা করে দেয়া হল-
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন-
- পুরুষের প্রয়োজন ১.২ মিলিগ্রাম
- মহিলার প্রয়োজন ১.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাবিন-
- পুরুষের প্রয়োজন ১.৩ মিলিগ্রাম
- মহিলার প্রয়োজন ১.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন-
- পুরুষের প্রয়োজন ১৬ মিলিগ্রাম
- মহিলার প্রয়োজন ১৪ মিলিগ্রাম
উপরের ভিটামিন বি গ্রহণের মাত্রাগুলো সুস্থ্য আর স্বাভাবিক মানুষের জন্যে। যেসব মহিলা গর্ভবতী কিংবা ডাক্তারের তত্বাবধানে রয়েছেন, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ভিটামিন বি গহণের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে।
অতিরিক্ত ভিটামিন বি গ্রহণের পরিণাম
ডায়রিয়াসহ পেটের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হবে অতিরিক্ত ভিটামিন বি গ্রহণ করলে। এটিই হচ্ছে সাধারণ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। আর বড় ধরণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে শরীরের ত্বক লালচে ও বিবর্ণ হয়ে যাওয়া এবং কখনো কখনো নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া।
তাই, ভিটামিন বি এর অভাব যেমন রাখা যাবে না, কোন না কোনভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে; তেমনই অতিরিক্ত ভিটামিন বি’ও গ্রহণ করা যাবে না। একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের সব সময়ই ভিটামিনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
Leave a Reply