আমাদের স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা সর্বদাই চিন্তাগ্রস্থ থাকি। যদি কোন কারণে আমাদের আকষ্মিক মৃত্যু হয়, তবে তাদের কি কি অসুবিধা ভোগ করতে হতে পারে, এ-সব ভেবে অনেকেরই রাতের ঘুমও ঠিকমত হয় না। লাইফ ইন্সুরেন্স হলো আপনার এই দুশ্চিন্তার একটি যুগোপযোগী কার্যকর সমাধান।
লাইফ ইন্সুরেন্স আমাদের ব্যক্তিগত অর্থনীতির একটি অংশ। আপনি যাদের ভালোবাসেন বা যারা আপনার উপর নির্ভশীল, তাদের ভবিষ্যতে সুরক্ষিত রাখার একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। আপনি যদি হঠাৎ করে মারা যান, তাহলে আপনার দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত ব্যক্তি ইন্স্যুরেন্সের ধরনের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লাভ করেন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
তবে আপনি জীবিত থাকা কালিন প্যাকেজের উপর নির্ভর করে আপনিও এর বেশ কিছু সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। যখন আপনি একটি লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসি ক্রয় করেন, তখন আপনি যে ধরনের পলিসি ক্রয় করেছেন তার উপর ভিত্তি করেই আপনার মনোনিত ব্যক্তিকে আপনার মৃত্যুর পর অর্থ প্রদান করা হয়। আবার কিছু কিছু পলিসি আপনার মৃত্যুর পূর্বেও অর্থনৈতিক সুবিধাদি দিয়ে থাকে। পৃথিবীতে অসংখ্য কোম্পানী আছেন যারা এ ধরনের সেবা প্রদান করে থাকেন। কোম্পানী ভেদে এই ইন্সুরেন্সের বিভিন্ন ধরণও পরিলক্ষিত হয়। তাই, পলিসি ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই সবকিছু জেনে নিন। লাইফ ইন্সুরেন্স কি ও কেন করবেন? সেটা আগে জেনে নিতে পারেন।
লাইফ ইন্সুরেন্স সম্পর্কে জানুন
লাইফ ইন্সুরেন্স মানেই মৃত্যুর পর টাকা নয়:
লাইফ ইন্সুরেন্স অর্থই যে আমার বা আপনার মৃত্যুর পর মনোনীত কেউ টাকা পাবে এই ধারণাটি আজ থেকে কয়েক বছর আগে সত্যি হলেও বর্তমান সময়ে এর সংজ্ঞাটা একটু বদলেছে। বিশ্বের নামকরা কোম্পানীগুলো এই ধরনের বীমার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের সহযোগী বিমার সেবা দিয়ে থাকে।
সহযোগী বিমার সুবিধাটা হলো আপনি মৃত্যুর পরবর্তীতে যে পরিমাণ অর্থের জন্য বীমা করেছেন তার পাশাপাশি আপনার জীবদ্দশায় আরও বাড়তি কিছু সুবিধা ভোগ করার সুযোগ।
সহযোগী বিমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে চিকিৎসা বীমা, শিক্ষা বীমা ইত্যাদি। এগুলির মাধ্যমে আপনার জীবদ্দশায় আপনি যদি কোন গুরুত্ব রোগে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসার জন্য সহায়তার প্রয়োজন হয় অথবা আপনার সন্তানের উন্নত শিক্ষার জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে ঐ সময়ে এই সহযোগী বীমাগুলি আপনার জন্য কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়। এর আগে আমরা ১০ প্রকারের লাইফ ইন্সুরেন্স নিয়ে আলোচনা করেছি। বীমা পলিসি নেওয়ার আগে এগুলি সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা নিয়ে নিন।
জীবিত থাকাকালীন সময়েও বীমার সুফল ভোগ করা যায়:
আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, ফিক্সড ডিপোজিট বা সঞ্চয়পত্রের মত জীবন বীমাতেও একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা গ্রহণ করা যায়। জি হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। বহু সুনামধণ্য কোম্পানী যাতে তাদের গ্রাহক জীবিত থাকাকালীনও বীমার সুফল ভোগ করতে পারে তার জন্য কিছু অন্তর্বতীকালীন পরিকল্পনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছেন। এসব প্যাকেজের আওতায় থাকা গ্রাহকগণ নির্দিষ্ট সময় পর পর তাদের প্যাকেজ অনুযায়ী মুনাফা উত্তোলন করার সুবিধা পেয়ে থাকে।
বয়সের সাথে বীমার সম্পর্ক:
আপনি কোন বয়সে এসে বীমা গ্রহণ করতে পারবেন আর কোন বয়সে পারবেন না, এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে কোম্পানীর পলিসি অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাকেজের বীমার জন্য বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
সহজভাবে বলতে হলে আপনার বয়স যদি অনেক বেশি হয় এবং আপনি যদি কোন গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তখন অবশ্যই আপনি বীমা করতে পারবেন না। আর যদি করতেও পারেন, তাহলে খুব বেশি লাভবান হবেন না।
কোন একটি বীমা পলিসি থেকে আপনি কি পরিমাণ লাভবান হবেন এটা নির্ভর করে ওই বীমার সম্ভাব্য মেয়াদ কালের উপর ভিত্তি করে।
অফিশিয়াল বীমা এবং ব্যক্তিগত বীমা এক নয়:
আমাদের দেশের অনেক কোম্পানীই তাদের কর্মচারীদের মোট বাৎসরি বেতনের ২ থেকে ৩ গুন বেশি পরিমাণ অর্থ এককালীন পরিশোধের জন্য বীমা পলিসি প্রদান করে থাকে। বীমার জন্য নির্ধারিত টাকা ওই ব্যক্তির বেতন থেকে কর্তন করে রাখা হয়ে থাকে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই পরিমাণ টাকা কোন পরিবারকে যথেষ্ঠ পরিমাণে অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে পারে না। এজন্য আপনি যে কোম্পানীতে চাকরী করেন, সে কোম্পানী আপনাকে বীমা পলিসি প্রদান করলেও এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী বীমা করিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
প্রতারণা থেকে সাবধান থাকা:
সব বীমা কোম্পানীই বিশ্বাসের উপযুক্ত নয়, এটি বীমা করার আগেই মাথায় রাখতে হবে। এদেশে বহু নাম সর্বস্ব বীমা কোম্পানী রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে আপনাকে বীমা করার প্রস্তাব দিলেও আপনার প্রয়োজনে আপনি কখনোই তাদের পাশে পাবেন না। এমনকি আপনার মৃত্যুর পরেও এদের থেকে বীমার টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি আপনার পরিবারের জন্য অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
তবে, ভালো কোন কোম্পানী নেই এটা ভাবাটাও ঠিক নয়। অনেক এমন কোম্পানী রয়েছে যারা বছরের পর বছর ধরে সুনামের সাথে তাদের গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই বীমা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ইন্টারনেট, প্রথম আলো, যুগান্তরের মত স্বনামধ্যম জাতীয় পত্র পত্রিকা ও পূর্বে বীমা গ্রহণ করে লাভবান হয়েছেন এমন কোম্পানী খুঁজে বেরে করে তাদের কাছ থেকেই পলিসি ক্রয় করা উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি বাংলাদেশের সরকারি বীমা কোম্পানী থেকে পলিসি গ্রহণ করেন।
আপনি যদি অবিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে এ সময় আপনার জন্য ইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। মোটকথা, যখন আপনার উপর কোন নির্ভরশীল ব্যক্তি থাকবে না, সে সময় এটি আপনার কোন উপকারেও আসবে না। এ সময় আপনি চাইলে শিক্ষা বা চিকিৎসা ভিত্তিক অন্যান্য ইন্সুরেন্স করতে পারেন।
পরবর্তীতে যখন আপনি বিয়ে করবেন এবং সন্তানের পিতা হবেন, তখন আপনার এটির প্রয়োজন হবে। যেহেতু এই লাইফ ইন্সুরেন্স আপনার মৃত্যু পরবর্তীতে আপনার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষিত রাখে, সেহেতু এটির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে নিজ স্ত্রী-সন্তানের পাশাপাশি আপনি আপনার বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের ভবিষ্যত চিন্তা করেও এটি করতে পারেন।
Leave a Reply