বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে এবং উম্মুক্ত কর্মব্যবস্থায় মানুষকে যুগোপযোগীভাবে টিকে থাকতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আমরা নেতৃ্ত্বগুন, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি অনেক বেশি আলোচনা শুনি বা শুনেছি।
কিন্তু এই দক্ষতাগুলো অর্জণ করার পেছনে “লাইফলং লার্নিং” এর ভূমিকা সম্পর্কে আমরা খুব একটা অবগত নই। লাইফলং লার্নিং বাংলায় “আজীবন শিক্ষন”। এটি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা বা জ্ঞানের সন্ধান যার মাধ্যমে একজন নিজেকে ব্যক্তিগত বা পেশাদার যে-কোন কারণে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতার প্রতিনিয়ত উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট হয়ে থাকেন।
বিশ্বজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তণ সাধিত হচ্ছে। এর মাঝে যুগান্তকারি একটি ব্যবস্থা হচ্ছে ব্লেন্ডেড লার্নিং যা এডুকেশনাল টেকনোলজির পথচলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বর্তমান কর্মব্যবস্থায় সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা, বিশেষ করে কারিগরি দক্ষতার চাহিদা ব্যাপক। আর এখানেই “লাইফলং লার্নিং” ধারনাটি একজনকে কারিগরি দক্ষতা অর্জণে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে পারে।
উল্ল্যেখ্য যে, সাধারন শিক্ষা যা আমরা সাধারনত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিখি, তার গুনগত পরিবর্তন হয়ত কয়েক বছরেও হবে না। কিন্তু কারিগরি দক্ষতা যা পাঁচ বছর আগে আমরা শিখেছি, তার বেশিরভাগই বর্তমানে প্রাসঙ্গিক নাও থাকতে পারে। কারন প্রতিদিনই আরও নতুন নতুন কারিগরি ধারণা বাজারে আসছে। তাই, আমাদেরকেও তার সাথে সমানতালে শিখে নিতে না পারলে বর্তমান কর্মব্যবস্থায় আমাদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রীও কোন কাজে আসবে না, আমরা অচল বলে বিবেচিত হতে পারি।
সাধারনত দু-তিনটি উপায়ে একজন মানুষ নিজেকে প্রতিনিয়ত উৎকর্ষ সাধনে সক্ষমতা অর্জণ করতে পারে। প্রথমত, ব্যক্তিগত উদ্যোগে “লাইফলংলার্নিং” ধারনাটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনয়ত নিজেদের উৎকর্ষ সাধন করা। এক্ষেত্রে, আমরা বিবেকানন্দের শিক্ষার দর্শনকে কাজে লাগাতে পারি। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সবার ভেতরেই কিছু স্বকীয় জ্ঞান বিদ্যমান, যা আমাদের কাজে লাগানো উচিৎ। অর্থাৎ, লেখাপড়ার পাশাপাশি যা আমাদের করতে ভালো লাগে, তাকে গুরত্ব দেয়া। হতে পারে তা গিটার বাজানো, ছবিআঁকা, কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, যা কিনা আমাদেরকে স্বকীয়ভাবে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে!
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে যুগের চাহিদা মেটাতে দেশে-বিদেশে এবং অন-লাইনে সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি প্রচুর ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট বিদ্যমান। যারা কিনা কারিগরি শিক্ষার উপর ট্রেইনিং দিয়ে থাকে। আমরা চাইলে আমাদের দক্ষতা উন্নয়নে এসব ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট থেকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা অর্জন করতে পারি। আর এগুলো কর্মক্ষেত্রে আমাদেরকে অধিকতর উপযুক্ত করে তুলতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এর একটি হ’ল ট্রেইনিং ইন্সটিটিউটটি ভালো হওয়া জরুরি। আরেকটি হ’ল যা শিখলাম তার প্রতিনিয়ত আপডেট জানা, বোঝা এবং সময় চর্চা করে বিষয়টিকে নিজের আয়ত্বে রাখা। আর এখানেই “লাইফলং লার্নিং”এর গুরুত্ব অনঃস্বীকার্জ।
এছাড়াও, অনেক প্রতিষ্ঠান মার্কেটে টিকে থাকতে, বিভিন্ন তথ্য দিয়ে এবং প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তার কর্মীদের উপযুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকে। আমরা যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, সময় সময় আমাদেরও এই সব সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও বেশি করে দক্ষ, যোগ্য করে তুলতে সচেষ্ট থাকতে পারি। এতে প্রতিষ্ঠানে যেমন আমাদের কর্ম পরিধির ব্যাপ্তি বাড়াবার সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি বর্তমানের প্রতিযোগীতামূলক কর্মবাজারেও আমাদের ভালোভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।
পরিশেষে উপরিউক্ত বিস্তারিত লেখাকে বিবেকানন্দ’র একটি উল্ল্যেখযোগ্য উক্তি’র মাধ্যমে আমাদের বর্তমান কর্মজীবনের পাথেয় হিসেবে বিবেচনায় নিতে পারি, আর তা হ’ল “আসল শিক্ষা হল তা’ই যা কাউকে নিজের পাঁয়ে দাঁড়াতে সক্ষম করে”।
Leave a Reply