রাত্রে ঘুমোতে যাচ্ছেন কিন্তু মশারি টানাতে খুব আলসেমী লাগছে। সমস্যা নেই, আপনার রোবটটিকে বলে দিন, সে-ই আপনার মশারি টানিয়ে দেবে। আপনার আলসেমী ধরলেও, রোবটের একটুও আলসেমী লাগবে না। কারণ, তার মধ্যে মানবিক এই ব্যাপারটি নেই।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো কিন্তু বিছাড়া ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ভাবছেন, কেউ যদি এখন গরম গরম এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসতো, তবে কী যে ভাল লাগতো! এখানেও রোবটকেই বলে দিতে পারেন, এটিই আপনার জন্যে কপি বানিয়ে নিয়ে আসবে!
বিছানা ছেড়ে উঠলেন, শীতের ভয়ে গোসলে যেতে ইচ্ছে করছে না অথচ গোসল না করে অফিসে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। একটু গরম পানি হলে খুব আরামের সাথেই গোসলটা সেরে নিতে পারতেন! সমস্যা নেই, রোবটটাকেই বলে দিন না, গরম পানি রেডি হয়ে যাবে।
ঘুম থেকে উঠে ঘুমোনো পর্যন্ত আপনার সকল কাজই করে দিতে পারবে মানুষের তৈরি রোবট যাকে আপনি যন্ত্রমানব বলতে পারেন। আসুন, এই যন্ত্রমানব, রোবট সম্পর্কে জানি।
রোবট কি?
রোবট একটি মেশিন বা যন্ত্র যা কারো দ্বারা কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা হয় এবং যা নানা ধরণের জটিল কাজ করে দিতে পারে। ইন্টারনাল অথবা এক্সটারনাল কন্ট্রোলিং ডিভাইসের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। রোবটকে সাধারণত মানুষের আকৃতিতে তৈরি করা হলেও অন্যান্য অনেক আকৃতিতেই রোবট দেখা যায়।
- আরো জানুন: ডিপ ওয়েব নিয়ে ২০টি অজানা তথ্য
রোবটের উৎপত্তি
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯২৩ সালে চেক নাট্যকার কারেল কাপেক তাঁর ‘রসামস ইউনিভার্সাল রােবটস’ বইতে চেক ভাষায় ‘রােবট’ শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৪০ সালে বিখ্যাত মার্কিন কল্পবিজ্ঞান গল্পকার আইজ্যাক অ্যাসিমভ রােবট সংক্রান্ত বিষয়ের নাম দেন রােবটিক্স।
রোবটের প্রকারভেদ
রােবট প্রধানত দুই রকম- সার্ভো কন্ট্রোলড এবং নন-সার্ভো কন্ট্রোলড। নন-সার্ভো কন্ট্রোলড রােবটের ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত সহজ। এই ধরনের রােবটের কাজকর্মও একটু স্থুল ধরনের। সাধারণত এই ধরনের রােবট একটা নির্দিষ্ট অক্ষ বরাবর সমবেগে সামনে বা পিছনে চলাচল বা নড়াচড়া করে। বাঞ্ছিত জায়গায় থামানাের জন্যে নিয়ন্ত্রণ সুইচ ব্যবহার করা হয়। নন-সার্ভো কন্ট্রোলড রােবটে সাধারণত যে অংশগুলাে থাকে, তা হলাে-
শক্তি উৎস, প্রােগ্রামার, ক্রম নির্ধারক, রােবট ড্রাইভ, রােবট প্রত্যঙ্গ, নিয়ন্ত্রণ সুইচ, ইন্টারলক।
- আরো জানুন: ইন্টারনেট সম্পর্কে ১৫টি অজানা তথ্য
সার্ভো কন্ট্রোলড রােবট অনেক জটিল এবং উন্নতমানের। এই ধরনের রােবট অনেক দিকে নানান জটিল প্রক্রিয়ার সূক্ষ্ম সূক্ষ কাজ করতে পারে। অনেক রােবটই নানা ধরনের সংবেদক ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের একটা রােবটের মূল অংশগুলাে অনেকটা এই রকম-
সমবর্তী প্রবাহ বিভব উৎস, রােবট প্রত্যঙ্গ নির্দেশক পােটেনসিওমিটার, রােবট প্রত্যঙ্গের সংবেদক পােটেনসিওমিটার, তৌলিক, প্রবর্ধক এবং শােধক, শক্তি উৎস, কপাটক, হাইড্রোলিক বেলন, রােবট প্রত্যঙ্গ।
বর্তমান যুগে রোবট বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারে। কাজেই রোবটের কার্য্য-প্রণালীর উপর ভিত্তি করে এর প্রকারভেদ করা হয়। এ যাবৎ প্রোগ্রামড্ করা রোবটের মধ্যে রয়েছে-
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট
- ডোমেস্টিক রোবট
- হাউজহোল্ড রোবট
- মেডিকেল রোবট
- সার্ভিস রোবট
- এন্টারটেইনমেন্ট রোবট
- মিলিটারি রোবট
- স্পেস রোবট
- হবি বা কম্পিটিশন রোবট
রোবট কি কাজ করে?
রােবট হচ্ছে এমন এক যন্ত্র, যাকে আগে থেকে ঠিকমতাে প্রােগ্রাম করে দিলে নানা ধরনের কাজ সুষ্ঠভাবে ক্রমানুসারে বা অবস্থানুসারে করে ফেলতে পারে। যেমন- কারখানায় স্কু লাগানাে, ওয়েল্ডিং করা, ছাঁদ্যা করা, ভারী জিনিস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের মতাে তেজস্ক্রিয় জায়গায় রােবট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আগুন নেভানাে, মহাকাশ গবেষণা, বিস্ফোরণ অনুসন্ধান, এসবেও ব্যবহার করা হচ্ছে রােবট। জাপান এবং বিটেনে এমন রােবট বানানাে হয়েছে যা অন্ধ লােককে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
রোবট কিভাবে কাজ করে
নন-সার্ভো কন্ট্রোলড রােবট কীভাবে কাজ করে সেটা আগে দেখা যাক। শক্তি উৎস বৈদ্যুতিক, হাইড্রোলিক বা বাত-তিন রকমই হতে পারে। শক্তি উৎসই প্রয়ােজনীয় শক্তির যােগান দেয়। কাজের ক্রম বা ধারাবাহিকতা ঠিক করা হয় প্রােগ্রামার দিয়ে। রােবট প্রত্যঙ্গ সাধারণভাবে সর্বাধিক ছয়রকম নড়াচড়া করতে পারে। নিয়ন্ত্রণ সুইচ সঠিক সময়ে নড়াচড়া বন্ধ করে। বিভিন্ন রােবট ড্রাইভে পর্যায়ক্রমে শক্তি যােগান দেয় ক্রম নির্ধারক। নিয়ন্ত্রণ সুইচ থেকে আসা সংকেত ক্রম নির্ধারককে সক্রিয় করে। ক্রম নির্ধারক রােবটের বিভিন্ন ড্রাইভে শক্তি যুগিয়ে কাজের পুরাে পর্যায়টা সমাধা হয়। ইন্টারলক ব্যবস্থা থাকার ফলে ধাক্কা লেগে ক্ষতি হওয়ার ভয় কম থাকে।
সার্ভো কন্ট্রোলড রােবটের কার্যপদ্ধতির মূল পার্থক্যটা হলাে, এই ধরনের রােবট দুটো সংকেতের তুলনার দ্বারা এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনাে একটা নির্দেশের জন্যে যে সংকেত থাকা উচিত, তার সঙ্গে রােবট-প্রত্যঙ্গের প্রকৃত অবস্থানজনিত সংকেতের তুলনা করা হয় তৌলিকে। এর ফলে উৎপন্ন ভ্রম সংকেতকে পাঠানাে হয় প্রবর্ধকে। প্রবর্ধিত সংকেতকে পাঠানাে হয় প্রবর্ধকে। প্রবর্ধিত সংকেতকে বলা হয় নির্দেশ সংকেত। নির্দেশ সংকেত কপাটককে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই অনুযায়ী হাইড্রোলিক বেলন রােবট প্রত্যঙ্গকে নাড়াচড়া করে।
রােবটের মূল অংশ হচ্ছে প্রােগ্রামার। এটা আসলে এক ধরনের কম্পিউটার। এছাড়া রােবট প্রত্যঙ্গও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে থাকে নানান ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থা। সংবেদক হিসাবে থাকে ভিডিকন নল, ক্যামেরা ইত্যাদি। কোনাে কোনাে রােবট আবার অতি-বেগুনী বা অবলােহিত রশ্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
Leave a Reply