রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ আর কয়েকদিন পরেই অতীত হয়ে যাবে। যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শো বলা হয়ে থাকে। মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ হচ্ছে এই বিশ্বকাপ আসরে। আপনি কি জানেন বড় তারকার খেলোয়াড়দের সাপ্তাহিক বেতন কত?
দীর্ঘ একমাস ধরে চলা এই খেলায় আমরা অনেক নামীদামি খেলোয়াড়কেই খেলতে দেখেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আগামী বিশ্বকাপে খেলবে না। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে।
সবচেয়ে বেশি বেতনের ১০ জন খেলোয়াড়
চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বেতনের খেলোয়াড় সম্পর্কে।
লিওনেল মেসি
ফুটবল নিয়ে কথা হবে আর মেসি থাকবে না সেটা কীভাবে হয়? পায়ের জাদু বলেন আর বাড়ি, গাড়ি, ধন-সম্পদ যাই বলেন, মেসির কোন তুলনা হয় না। সব দিকেই তিনি সেরা। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি বেতনে খেলছেন আমাদের সবার প্রিয় তারকা খেলোয়াড়, আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি।
মেসির সাপ্তাহিক বেতন শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। বার্সেলোনার এই তারকার সাপ্তাহিক বেতন ৫ লাখ পাউন্ডের চেয়েও বেশি। এই বেতন কেবল মেসিকেই দেয়া হচ্ছে, এটাই সর্বোচ্চ বেতন। যদিও লীগের তুলনায় এই বেতন কিছুই না, যেখানে বার্সার হয়ে তিনি এর থেকে অনেক বেশি ইনকাম করেন।
২০০৫ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে মেসি খেলা শুরু করেন। সেই ২০০৫ এ অভিষেক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলের হয়ে মেসি ১২৪টি ম্যাচে অংশ নেন। এই ১২৪ টি ম্যাচে মেসি ৬৪টি গোল করেন। আর সেই সাথে আছে মেসির জিতা গোল্ডেন বুট, ব্যালন-ডি সহ আরও অনেক পুরস্কার।
এবারের মৌসুমেও তিনি স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্যতার সাথে খেলেন। অন্যদিকে মেসি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৭ টি ম্যাচে ৪৫ টি গোল করেন কাতালানদের হয়ে।
নেইমার
মেসির নাম যেখানে থাকবে, সেখানে নেইমার থাকবে না তা কি করে সম্ভব? এবারের আসরের বেশি বেতনে খেলোয়াড়দের তালিকায় এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড আছেন দ্বিতীয় নম্বরে। এক সময়ের বার্সোলোনার এই বড় তারকা বর্তমানে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে সংক্ষেপে পিএসজি তে খেলেন।
নেইমারের সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড। যা মেসির তুলনায় ৫৫ লাখ পাউন্ড কম। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল যে হেক্সা মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল সেই মিশনের মুল নায়ক ছিল ২৬ বছর বয়সী নেইমার। বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয়বারের মত খেলছেন। এর আগে ২০১০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলেন।
ব্রাজিলের জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মোট ৮৫টি ম্যাচ খেলেছেন। এই ৮৫টি ম্যাচে তার মোট গোল সংখ্যা ৫টি। ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর বা পিএসজিতে এই মৌসুমে তিনি সবচেয়ে সেরা পারফর্ম করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে চোট পেয়ে তিনি ইনজুরিতে যান নেইমার। ইনজুরিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পিএসজির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০ ম্যাচে ১৯ গোল করেন।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
মেসি, নেইমারের সাথে এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। রিয়েল মাদ্রিদের এই হিরো এ তালিকায় আছেন তিন নম্বরে। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের ৩৩ বছর বয়সী তারকা রোনালদোকে প্রতি সপ্তাহে দিতে হচ্ছে বেতন ৩ লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ড। যা নেইমারের তুলনায় প্যার ৮০ লাখ পাউন্ড কম।
শোনা যাচ্ছে তিনি এ বেতনে সন্তুষ্ট নন। ২০০৩ সালে পর্তুগাল জাতীয় দলে তিনি খেলা শুরু করেন। অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫০ ম্যাচ খেলেন তিনি। এই ১৫০টি ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ৮১টি। অন্যদিকে এবারের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তিনি ৪৪টি ম্যাচে গোল করেন ৪৪টি।
মেসুত ওজিল
জার্মানির খেলোয়াড় মেসুত ওজিল যিনি ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের হয়ে খেলে থাকেন। ২৯ বছরের এই তারকার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ৩ লাখ পাউন্ড। ২০০৯ সালে জার্মান জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। সেই অভিষেক থেকে এখন পর্যন্ত তিনি ৯০টি ম্যাচ খেলেন। এই ৯০টি ম্যাচে তিনি ২৩টি গোল করেন। আর্সেনালের হয়ে তিনি ৩৫ টি ম্যাচে ৫ গোল করেন ওজিল তাও এই মৌসুমে।
লুইস সুয়ারেজ
বার্সেলোনায় এবং উরুগুয়ে দুই জায়গায় যিনি সমানভাবে খেলেন, তার নাম লুইস সুয়ারেজ। যার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড। ২০০৭ সালে উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেলা শুরু করেন। তার অভিষেকের পর থেকে ৯৪টি ম্যাচে তিনি ৫১ গোল করেন। বার্সেলোনায় তিনি ৫১ ম্যাচে ৩১ গোল করেন।
পল পগবা
ফাইনালে খেলা ফ্রান্সের তারকা ওম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার পল পগবা যার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড। ২০১৩ সালে যার অভিষেক ঘটে জাতীয় দলে। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি ৫৪টি ম্যাচ খেলে ৯টি গোল করেন। ক্লাবে তিনি ৩৭ ম্যাচে ৬ গোল করেন।
কিলিয়ান এমবাপ্পে
সেরাদের তালিকায় পিছিয়ে নেই এমবাপ্পেও। তালিকায় তিনি আছেন ৭ নম্বরে। ফরাসি এই ফরোয়ার্ড পিএসজিতে খেলেন। যার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার পাউন্ড। ২০১৭ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলে তিনি অভিষেক করেন। যিনি দলের হয়ে ১৫টি ম্যাচে ৪টি গোল করেন। আর নিজের দেশের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই বা পিএসজিতে এই মৌসুমে ৪৪টি ম্যাচে ৩১টি গোল করেন।
রোমেলু লুকাকু
বেলজিয়ামের রোমেরু লুকাকু যাকে এখন সবাই চিনে। এবারের বিশ্বকাপ যিনি একাই কাপিয়েছেন সেই ২৫ বছর বয়সী লুকাকু। যিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও খেলেন তার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। ২০১০ সালে তিনি বেলজিয়াম জাতীয় দলে আসেন। অভিষেকের পর থেকে তিনি ৬৮টি ম্যাচে গোল করেন ৩৪টি। এবারের ম্যানইউর খেলায় ৫১টি ম্যাচে গোল করেন ২৭টি।
ফিলিপ্পে কুটিনহো
বার্সেলোনার ও ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডার এই তালিকায় আছেন ৯ নম্বরে। তার সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড। ২০১০ সালে তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলে আসেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩৬টি ম্যাচ খেলেন তিনি এবং গোল করেছেন ১০টি। এই বছরের শুরুতেই তিনি লিভারপুল ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন।
ডেভিড সিলভা
স্পেনের এই তারকা ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডারের সাপ্তাহিক বেতন প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড। ২০০৬ সালে স্পেন জাতীয় দলে অভিষেক হয় সিলভার। এ পর্যন্ত তিনি জাতীয় টিমে ১২১টি ম্যাচে ৩৫টি গোল করেন। অন্যদিকে এই বছরেই ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে তিনি ৪০টি ম্যাচে ১০টি গোল করেন।
Leave a Reply