ঘরের জন্য হোক কিংবা অফিসের জন্যই হোক রাউটার কেনার আগে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক কোন রাউটারটি আমাদের জন্য উপযুক্ত হবে, সেটি বিবেচনা করতে ভুলে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, দোকানিরাই আমাদের হয়ে রাউটার নির্বাচন করে দেয়। আর আমরাও চোখ-কান বন্ধ করে সেটি কিনে বাসায় চলে আসি যা ঠিক নয়।
অনেকের ক্ষেত্রে আবার ব্র্যান্ড ভিত্তিক দূর্বলতাও লক্ষ্য করা যায়। সেটি হতেই পারে, কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা থাকাটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু একই ব্র্যান্ডের মধ্যেও যে বিভিন্ন মডেল থাকে, সেটি কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। সবগুলি মডেলের স্পেসিফিকেশন ও আমারদের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তার উপযোগিতা কতটুকু তা বুঝেই সঠিক রাউটারটি নির্বাচন করতে হবে।
রাউটার কিনতে আগ্রহীরা কম দামে ১০টি ভাল রাউটার সম্পর্কে এখান থেকে জেনে নিতে পারেন। এছাড়া Pickaboo ডটকম বা আজকের ডিল ডটকমের মত অনলাইন শপগুলির মাধ্যমেও দাম যাচাই করতে পারেন।
রাউটার কেনার আগে যা বিবেচনায় রাখবেন
আপনি নতুন নেটওয়ার্ক সেটআপ করেন বা পুরাতন নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করেন, উভয় ক্ষেত্রেই রাউটার ক্রয় করা অনিবার্য। রাউটার কেনার আগে বেশি কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় যেমন-
- রাউটারের স্ট্যান্ডার্ড কেমন?
- রাউটারটি সিংগেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড?
- এটির লাইফস্প্যান কেমন?
- নেটওয়ার্ক রেঞ্জ কতটুকু?
রাউটারের স্ট্যান্ডার্ড:
অফিস হোক কিংবা বাসা হোক, বর্তমানে 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের রাউটারগুলি সব থেকে ভালো পারফর্মেন্স দিয়ে থাকে। এটি সর্বশেষ আপগ্রেডেড স্ট্যান্ডার্ড যা পূর্বের 802.11n থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ধরে নিন, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনাকে ১০ এমবিপিএস স্পীড দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও আপনি আপনার কাঙ্খিত স্পীড পাচ্ছেন না। কারণটা কি বলতে পারেন?
সবচেয়ে বেশি সম্ভাবণা হলো আপনার রাউটার 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের না। এ কারণে নতুন রাউটার কেনা বা পুরাতন রাউটার আপগ্রেড করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সবসময় 802.11ac স্ট্যান্ডার্ডের রাউটারই ক্রয় করুন।
সিংগেল ব্যান্ড নাকি ডুয়াল ব্যান্ড:
ওয়্যারলেস রাউটার ২টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে থাকে। এর ১টি হচ্ছে 2.4 GHz এবং অপরটি হচ্ছে 5 GHz। সিংগেল ব্যান্ডের রাউটারগুলি 2.4 GHz অথবা ৫ GHz এর মধ্যে যে কোন ১টিকে সমর্থন করে। অপরদিকে ডুয়াল ব্যান্ড ব্যান্ডের রাউটারগুলি 2.4 GHz এবং 5 GHz উভয় ব্যান্ডকে সমর্থন করে এবং ২টি ব্যান্ডকেই একই সাথে ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে থাকে।
ভালো মানের কানেক্টিভিটি পাওয়ার জন্য সিংগেল ও ডুয়াল ব্যান্ডের মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একেক ধরনের ডিভাইস একেক ধরনের ব্যান্ডে কানেক্ট হয়। যেমন স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ 5 GHz ব্যান্ডে কানেক্ট হয়। অন্যান্য ডিভাইসগুলি 5 GHz ব্যান্ডের পাশাপাশি 2.4 GHz ব্যান্ডেও কানেক্ট হয়ে থাকে।
আপনি যে এলাকায় থাকেন, তার উপর নির্ভির করেও আপনার ব্যান্ড নির্বাচন করা উচিত। আপনি যদি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে থাকেন তাহলে ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটারগুলি আপনার জন্য বেশি উপযোগী। এই রাউটারগুলি আপনাকে ভালো মানের স্পীড ও নিরবিচ্ছিন্ন কানেশন প্রদান করবে।
কিন্তু যদি কোন কারণে আপনার হাই-স্পীড ইন্টারন্টে প্রয়োজন না হয়ে থাকে বা আপনার আশেপাশে থাকা প্রতিবেশীর যদি কোন রাউটার না থেকে থাকে, তাহলে আপনি সিংগেল ব্যান্ডের রাউটারও ব্যবহার করতে পারেন।
লাইফস্প্যান:
বাসায় ব্যবহৃত অন্যান্য হার্ডওয়্যারের তুলনায় নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যারগুলি অনেক বেশি চাপ নিয়ে থাকে। যার ফলে এগুলি খুব বেশি সময় ব্যবহারযোগ্য থাকে না। আপনিই ভেবে দেখুন, আপনার রাউটারটি একই সাথে ট্যাবলেট, স্ট্রিমিং ডিভাইস, স্মার্টফোন, গেমিং কনসোল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। ওভারলোড এবং ওভারটাইম ওয়ার্কিং এর কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাউটারের পারফর্মেন্স দুর্বল হতে থাকে।
যদি কোন কারণ ছাড়াই আপনার ডিভাইসগুলি বার বার নেটওয়ার্ক থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার রাউটার পরিবর্তণ করার সময় এসে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই এমন রাউটারগুলি কেনা উচিত, যেগুলি অনেক বেশি লাইফস্প্যান সমৃদ্ধ। এ ধরনের রাউটারগুলি অন্যান্যগুলি থেকে তুলনামূলক একটু বেশি দামের হয়ে থাকে। তবে আমার মতে সস্তা ও নিম্নমানের রাউটার কিনে ২দিন পরপর তা পরিবর্তন না করে হাই-কোয়ালিটি রাউটার কেনাই ভালো।
নেটওয়ার্ক রেঞ্জ:
আপনি রাউটার থেকে কেমন কানেশন স্পীড পাবেন তা নির্ভর করে আপনি কোথায় এটি স্থাপন করছেন তার উপর। রাউটার যতটা সম্ভব বাসার মধ্যবর্তী খোলামেলা স্থানে বসানো উচিত। একই সাথে জায়গাটি যেন কোন জানালার আশেপাশে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ জানালা বা বাইরের দিকে উন্মুক্ত কোন জায়গায় রাউটার বসালে সিগনাল লিক করার সম্ভাবণা অনেক বেশি থাকে।
আপনার বাসা কতটা বড় এবং কতজন ইউজার রাউটার ব্যবহার করতে পারবে, এটাও কিন্তু নির্ধারণ করা হয় রাউটারের রেঞ্জ এর উপর। রাউটারের রেঞ্জ কম হলে বড় বাসায় এগুলি ব্যবহার করতে সমস্যা হতে পারে। রেঞ্জ কম হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাউটারে কানেক্ট হতে সমস্যা দেখা দেয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কানেক্ট হলেও খুবই ধীর গতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। এ কারণে রাউটার কেনার আগে অবশ্যই রেঞ্জের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন কোন আইএসপি সংযোগ নিলে তারা আপনাকে তাদের কাছ থেকে রাউটার কেনার জন্য প্রস্তাব দিয়ে থাকে। আমার মতে আইএসপি থেকে রাউটার ক্রয় না করাটাই ভালো। অনেক আইএসপি ফ্রিতেও রাউটার দেবার অফারও দিয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে অফারটি লোভনীয় মনে হলেও পরবর্তীতে এর সমস্যাগুলি ধরা পড়তে শুরু করে।
ঠিক কি কি প্রয়োজনে আপনি রাউটার ক্রয় করছেন এটা প্রথমেই আপনাকে ভাবতে হবে। যদি ভিডিও কলিং, অনলাইন মুভি বা ভিডিও স্ট্রিমিং কিংবা ডাউনলোড করাটা আপনার প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ভালো স্পীড আপনার প্রথম গুরুত্ব হওয়া উচিত।
তাই রাউটার কেনার আগে এটির স্ট্যান্ডার্ড, ব্যান্ড, সিকিউরিটি, রেঞ্জ, স্পীড ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন রাউটারের রিভিউ দেখে নিতে পারেন। সব রাউটারেই যে সব সুবিধা থাকবে এমনটা ভাবা ভুল হবে। আবার বাজেটের সাথে মিল রেথে সব ফিচার পাওয়ার কষ্টসাধ্য। তাই সবদিক খেয়াল রেখে বাজেটের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিচারগুলি পাওয়া যায় এমন রাউটার কেনাই উত্তম। আর কেনার পর রাউটারের বেসিক অপারেশন জেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
আমার রাউটারটি মাঝে মাঝে একাই কানেক্ট ও ডিস্কানেক্ট হয়। সমাধান চাই।।
আপনার সমস্যাটির সমাধান নিয়ে নতুন একটি লেখা আসছে।