রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর লক্ষণ নিয়ে লক্ষণীয় কোনও ভাবনা আমাদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না। অথচ, এই লক্ষণগুলো জানা থাকলে আমরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারি। যেমন, উচ্চ মাত্রার কোলেষ্টেরল কমানোর উদ্যোগ নিতে পারি। স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলতে পারি।
হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক এর প্রধাণ কারণ রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর উপস্থিতি। উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল টিপিক্যাল্লি কোনও সিম্পটমের উৎপত্তি না’ও ঘটাতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা জরুরী ইভেন্টেস্ এর জন্ম দিতে পারে, অর্থাৎ জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে পারে।
এইসব ইভেন্সটস্ সচরাচর দেখা যায় না, যতক্ষণ না অতি মাত্রায় কোলেস্টেরল ধমনীতে প্লাক ফরমেশন করে। প্লাক ফরমেশন রক্তনালীকে সংকুচিত করে দিতে পারে, যা রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। রক্তে প্লাকের উৎপত্তি ও ফরেমেশন ধমনীর মেকাপ বা শেপ পরিবর্তণ করে দেয় যা বড় ধরণের জটিলতা তৈরি করে ফেলতে পারে।
আর প্লাক ফরমেশনের মূল কারণই হলো অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। তাই, আমাদের জানা প্রয়োজন রক্তে স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কত। আর এই মাত্রা কম বা বেশি হলে কি কি সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেই সাথে, এটা জানা আরো বেশি জরুরী যে, অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের লক্ষণগুলো কী কী।
রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর ১০ লক্ষণ
আমাদের শরীরে হেলদি সেলস্ বিল্ডআপের জন্যে কোলেস্টেরলের প্রয়োজন। কিন্তু, কোলেস্টেরলের লেভেল যদি হাই হয়ে যায়, তবে হার্ট অ্যাটাকসহ নানা রকম ঝুঁকি দেখা দেয়। কাজেই, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে যাওয়ার আগেই লক্ষণগুলো জেনে রাখা ভাল। আসুন, আজ জেনে নেই রক্তে হাই কোলেস্টেরলের উপস্থিতির লক্ষণগুলো।
স্ট্রোক রিলেটেড লক্ষণ
উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের কারণে প্লাকের বিল্ডআপের ফলে ব্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে। কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সাধারণত, স্ট্রোক হলেই এমনটি ঘটে। এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায়-
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা: হঠাৎ করে যে যদি কেউ নিজের উপর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, তবে ধরে নেয়া যেতে পারে হাই কোলেস্টেরলের কারণে সে হয়তো স্ট্রোকের শিকার হয়েছে।
সমন্বয় করতে না পারা: যদি দেখেন যে, কেউ একজন তার চিন্তা বা কাজ-কর্মের সমন্বয় করতে পারছে না। একটা সাধারণ বিষয় ধরতে পারছে না, কিংবা বারবার ভুল করছে, তবে ভাবতে পারেন যে সে স্ট্রোক করেছে।
হঠাৎ মাথা ঘোরা: একটা সুস্থ্য মানুষ হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। কিংবা, পড়ে যায়নি, কিন্তু মাথা ঘোরার কারণে বারবার ভিরমি খাচ্ছে, এক্ষেত্রেও ডাক্তার হিসেবে আমরা তার উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল জণিত স্ট্রোক নিয়েই প্রথমে ভেবে থাকি।
মুখের অসম্পূর্ণতা বা অসামঞ্জ্যস্যতা: অতি মাত্রার কোলেস্টেরলের থাকার ফলে কেউ যদি স্ট্রোক করে, তবে তার মুখের মাঝে কিছুটা অসামঞ্জ্যস্যতা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি, কারো কারো বেলায় দেখা যায় যে, চোখের পলক এবং মুখ কেবল একপাশে ঝুঁকে রয়েছে।
নড়া-চড়া করতে না পারা: যদি দেখেন রোগী ঠিক মতো মুভ করতে পারছে না। বসা থেকে নিজে নিজে উঠতে পারছে না, কিংবা দাঁড়ানো থেকে বসতে কষ্ট বোধ করছেন, এমনকি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কারো সাহায্য ছাড়া যেতে পারছেন না। অর্থাৎ, মুখ, বাহু বা পায়ে অসাড়তা বোধ করছেন, বিশেষত দেহের একপাশে, তবে ধরে নেয়া যায় যে সে স্ট্রোক করেছে। আর এ ধরণের স্ট্রোক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হয়ে থাকে।
কনফিউন বা বিভ্রান্তি বোধ: যদি মনে হয় যে, রোগী কোনও সাধারণ বিষয় নিয়ে কনফিউশনে ভুগছেন, যা আগে ভুগতেন না, তবে প্রাইমারিলি বোঝা যায় যে সে স্ট্রোক করেছে।
দৃষ্টি বিভ্রম: রোগী যদি দৃষ্টি বিভ্রমে ভুগতে শুরু করেন, যেমন সবকিছু ঝাপসা দেখা, কিংবা আগের চেয়ে অনেক বেশি ষ্পষ্ট দেখা, অথবা সবকিছু কালো কালো দেখছেন বলে মনে হয়, তখন আমরা ধরে নেই তিনি হয়তো নিজের অজান্তেই স্ট্রোক করে বসে আছেন।
হার্ট অ্যাটাক রিলেটেড লক্ষণ
হার্টে ব্লাড সাপ্লাই কমে যাওয়া, বিশেষত প্লাকের কারণে পরিপূর্ণভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে না পারার কারণে ঘটিত হার্ট অ্যাটাক উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। মেডিকেলের ভাষায় হার্টের এই অবস্থাটিকে বলা হয় এথেরোস্ক্লেরোসিস।
এটি রোগীর হার্টে ধীরে ধীরে গ্রো করে থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু, ডাক্তার হিসেবে আমরা যখন টের পাই, তখন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেই। হার্ট অ্যাটাক জণিত অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-
বুক বা বাহুতে ব্যাথা: যদি কেউ উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক করে, তবে সে বাহু বা বুকে ভীষণ ব্যথা অনুভব করে। ব্যথাটা হালকাও হতে পারে, যা থেমে থেমে দেখা দিতে পারে। অনেক সময় বুক কিংবা বাহুতে সংকোচন অনুভব হতে পারে, কিংবা মনে হতে পারে যে বুক শক্ত হয়ে গেছে। যদিও বুক ব্যথার টেস্ট ও ট্রিটমেন্ট এর ক্ষেত্রে আলাদা কিছু লক্ষণ রয়েছে, তবু এটাকে হার্ট অ্যাটাকের মতো লক্ষণগুলো থেকে আলাদা করে দেখা হয় না।
নি:শ্বাস নিতে কষ্ট: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতি মাত্রার কোলেস্টেরলের কারণে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাকের রোগী নি:শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করেন। তার কাছে মনে হতে পারে যে, নি:শ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।
উদ্বেগ বা উৎকন্ঠা অনুভব: কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক রোগীর আরেকটি কমোন লক্ষণ হচ্ছে, সে উদ্বেগ বোধ করবে।
মাথা ঘুরে উঠা: স্ট্রোকের মতোই হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠলে সেটা হার্ট অ্যাটাকেরও লক্ষণ হতে পারে যা কিনা বেশিরভাগ সময়ই কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রার কারণে ঘটে থাকে।
বদ হজম: অবাক করা তথ্য মনে হলেও এটা অনেকাংশেই সত্যি যে বদ হজমও উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত।
বমি বমি ভাব: খুব সাধারণ সমস্যা হলেও এটা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে সৃষ্ট হার্ট অ্যাটাকের রোগীর হঠাৎ বমি বমি ভাব হতে পারে।
জ্বালা-পোড়ে অনুভব: হার্টে যদি অত্যাধিক জ্বালা-পোড়া অনুভব করেন, তবে ধরতে পারেন যে হার্টে সমস্যা হয়েছে এবং সেটা কোলেস্টেরলের প্রভাবে।
শেষ কথা
রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এর লক্ষণগুলো জানলেন। এখন, চেষ্টা করুন সব সময়ই এই লক্ষণগুলোকে এড়িয়ে চলতে। যেসব খাবার কোলেস্টেরল কমায়, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সেগুলো রাখার চেষ্টা করুন এবং সুস্থ্য সবল জীবন-যাপন করার চেষ্টা করুন।
Leave a Reply