উচ্চতর ডিগ্রি বিত্তশালী হওয়ার একটা বিশেষ অংশ। বিশেষ করে, যখন আপনি সঠিক ডিগ্রি বাছাই করে নিতে পারেন। আপনি যদি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট হন কিংবা হন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির অধিকারী, তাহলে আপনি ততটুকুই আয় করতে পারবেন যতটুকু একজন সাধারণ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী আয় করে থাকেন।
সব ডিগ্রি সমান নয়; অর্থাৎ, যে কোনও বিষয়ের উপর উচ্চতর ডিগ্রি নিলেই যে কেউ ধনী হয়ে যাবেন, এমন নয়। তাই, কী ধরণের ডিগ্রি অর্জণ করলে ভবিষ্যতে বিত্তশালী হওয়া যাবে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যেমন, বিদেশে ক্রিমিনাল জাস্টিস ডিগ্রি একটা মানুষকে অল্প সময়েই বিত্তশালী করে তোলে। আবার, দেশে এমন কিছু ডিগ্রি আছে যেগুলোর মাধ্যমেও একজন সাধারণ ব্যক্তি অর্থ বৈভবের দিক থেকে অসাধারণ হয়ে যেতে পারেন।
অনেকে মনে করেন, বিত্তশালী হওয়ার জন্যে বিবিএ কিংবা এমবিএ ডিগ্রি প্রয়োজন। তাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও এমন অনেক বিত্তশালী রয়েছেন, যাদের কোন ডিগ্রি নেই। এমনকি, কেউ কেউ আছেন, যারা স্কুলের গন্ডিই পার হতে পারেননি অথচ পাহাড় পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়ে বসে আছেন।
তবে, এটা ঠিক রূপকথার গল্পের মতো যা শুরু হয়- Once upon a time দিয়ে। আসলে, এই যুগে, বিশেষত এই বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া ধনী হওয়া প্রায় অসম্ভবই বটে। তাই, বিত্তশালী হওয়ার জন্যে বিশেষ কিছু ডিগ্রির প্রয়োজন। আসুন, দেখে নেয়া যাক সেই ডিগ্রিগুলো কি কি-
শিপিং ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি
শিপে চাকরি, হোক সেটা একজন ক্লিনার কিংবা লেবার, সবার কাছেই অত্যন্ত দামী। শিপে যারা সাধারণ চাকরি করেন, তাদের অর্থ-বিত্তের অবস্থা আমরা হয়তো অনেকেই স্বচক্ষে দেখেছি। যারা দেখিনি, তাদের জন্যে বলছি শিপের চাকরি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি। আর যারা শিপে চাকরি করেন, তারা খুব দ্রুত বিত্তশালী হয়ে উঠেন। শিপে একজন সাধারণ চাকরিজীবির বেতন ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা হয়ে থাকে।
আর যারা শিপিং ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রির অধিকারী তাদের বেতন মিনিমাম ২০ লাখ টাকা। কি! চোখ কপালে উঠে গিয়েছে? চোখ কপালে উঠুক আর না উঠুক, আপনি যদি শিপিং ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি অর্জণ করতে পারেন, তবে একদিকে যেমন শিপে চাকরি পাওয়া আপনার জন্যে পান্তাভাত হয়ে যাবে, অন্যদিকে বিত্তশালী হওয়া খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার হবে। কোথা থেকে কিভাবে শিপিং ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি নেবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট আসছে শীঘ্রই, হৈচৈ বাংলার সঙ্গেই থাকুন।
টেলিকমিউনিকেশন ডিগ্রি
টেলিকমিউনিকেশন বর্তমান শতাব্দির সর্বাধিক আলোচিত আবিস্কার। এর শুরুটা যদিও হয়েছিল টেলিফোন আবিস্কারের মাধ্যমে। বর্তমানে আমরা পারস্পরিক যোগাযোগের জন্যে যে টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করছি তার শুরুটা হয়েছিল টেলিফোনের আবিস্কারক আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর হাত ধরে।
আভিজাত্য আর সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে বর্তমানে যত চাকরি রয়েছে, তার মাঝে অন্যতম হলো টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরের জব। তবে, এই সেক্টরে চাকরি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই টেলিকমিউনিকেশনের উপর গ্র্যাজুয়েশন কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। আমি বলছি না যে এই ধরণের ডিগ্রি ছাড়া আপনি এই সেক্টরে জব করতে পারবেন না। কিন্তু, এই সেক্টরে ভাল পজিশন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই উচ্চতর ডিগ্রি অর্জণ করতে হবে।
উচ্চতর ডাক্তারি ডিগ্রি
ডাক্তাররা কেমন আয় করে থাকে তা আপনাদের অজানা নয়। কখনো কোন ডাক্তারকে গরীব থাকতে দেখেছেন? বিশেষ করে কোন উচ্চ ডিগ্রিধারী ডাক্তারকে? নিশ্চয়ই দেখেননি। কারণ, সব বড় বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তারই বড় বড় হাসপাতালে চাকরি করেন এবং নিজস্ব চেম্বারেও বসেন। আর এসব ডাক্তারের ভিজিট শুনে এককালে চোখ কপালে উঠার উপক্রম হলেও এখন এটাকে বেশ স্বাভাবিকই মনে হয়।
তাহলে, বুঝতেই পারছেন ডাক্তারি ডিগ্রি আপনাকে বিত্তশালী করে তুলবেই। তবে, অবশ্যই সেটি কোন উচ্চতর ডাক্তারি ডিগ্রি হতে হবে। সাধারণত এমবিবিএস শেষ করার পর একেক জন একেক রকম ডিগ্রি নিয়ে থাকেন। আর যারা একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে থাকেন, তাদের চাহিদাই অন্যরকম। সব হাসপাতালই তাদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগে যায়। ফলে, এ ধরণের উচ্চ ডিগ্রিধারী ডাক্তার একদিকে যেমন, হাসপাতাল থেকে উচ্চ পেয়ে থাকেন, অন্যদিকে প্রাইভেট ক্লিনিক, নিজস্ব চেম্বারসহ আরো নানা খাত থেকে আয় করে থাকেন।
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি
সাপ্লাই চেইন ছাড়া একটা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীর কথা চিন্তাই করা যায় না। কারণ, একটা কোম্পানীর কাঁচা মাল থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য ও সার্ভিসের ফ্লো ম্যানেজমেন্ট এই সাপ্লাই চেইনের উপরই ডিপেন্ড করে। তাই, প্রতিটি বড় কোম্পানীতেই সাপ্লাই চেইন নামে আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট থাকে। আর এই ডিপার্টমেন্টে প্রায় সবাই উচ্চ বেতনে চাকরি পেয়ে থাকেন।
আমাদের এক দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয় নেসলে গ্রুপের সাপ্লাই চেইন ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার ছিলেন। তখন উনার বেতন ছিল ১৮ লক্ষ টাকা। সেই সাথে, আরো অন্যান্য অনেক সুযোগ সুবিধা ছিল বলে জানতাম। পরবর্তীতে তিনি ২২ লক্ষ টাকায় আরেকটি কোম্পানীতে জাম্প করেন যেখানে কোম্পানী তাকে অতিরিক্ত হিসেবে অ্যাপার্টমেন্ট এবং গাড়ি দিয়েছে। অবশ্য, এই সেক্টরে তিনি অনেক অভিজ্ঞ এবং নামকরা।
ডিগ্রি নিয়েছেন অ্যামেরিকা থেকে। আবার চাকরিও করেছেন কয়েকটি বিদেশী কোম্পানীতে। যারফলে, তার একটি আলাদা মার্কেট ভেল্যু দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখন তার বিত্ত-বৈভবের অভাব নেই। যাইহোক, আপনিও চাইলে তার মতো বিত্তশালী হতে পারেন, যদি আপনি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের উপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করতে থাকেন।
উচ্চতর ল’ ডিগ্রি
আইনজীবিদের জীবিকা নির্বাহের ধরণই বলে দেয় তারা কতটা বিত্তশালি। বিলাস বহুল জীবন যাপনের জন্যে যা কিছু প্রয়োজন, তার সবই আইনজীবিরা অর্জণ করে থাকেন তাদের পেশা থেকে। সারা পৃথিবীতেই আইনজীবিদের রমরমা অবস্থা।
মানুষ অপরাধ করে আইনের হাতে ধরা পড়ে এবং ছাড়া পেতে আইনজীবিদের শরণাপন্ন হয়। আর আইনজীবিরা তাদের পক্ষ হয়ে লড়ার জন্যে অনেক টাকা ফি নিয়ে থাকে। আপনি যদি বিত্তশালী হতে চান, তবে উচ্চতর ল’ ডিগ্রি নিতে পারেন। আর ডিগ্রিটি যদি নিতে পারেন, বিদেশী কোন রাষ্ট্র থেকে, তাহলে তো কথাই নেই।
এছাড়া আরো কিছু ডিগ্রি রয়েছে যেগুলো যে কাউকে বিত্তশালী করে তুলতে যথেষ্ট্য-
- পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি
- ফার্মাসিউটিক্যালস্ সায়েন্স ডিগ্রি
- মাইনিং এন্ড মিনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি
- অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি
- জুলোজিক্যাল এন্ড জিওফিজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি
Leave a Reply