আমাদের সবার জন্যেই স্ক্যামিং ওয়েবসাইট চেনার উপায় জানা জরুরী। নানা প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমরা কোন না কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করে থাকি। অনেক সময় ফেসবুকে থাকা কোনও লিংকে ক্লিক করে বিশেষ কোনও ওয়েবসাইট ভিজিট করি। মাঝে মাঝে ই-মেইলে আসা লিংক ধরেও আমরা কোন চেনা বা অচেনা ওয়েবসাইট ভিজিট করি।
কিন্তু যে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করছি সেটি স্ক্যাম কিনা তা জানাটা জরুরী। নৈলে স্ক্যামারের হাতে পড়ে অনেক কিছু খোয়ানোর খুব সম্ভাবণা থেকে যায়। যদিও স্ক্যামারের হাত স্মার্টফোন রক্ষা করার ১২টি ব্রিলিয়ান্ট টিপস্ আছে, তবু আগে জানা জরুরী যে, আমি যে ওয়েবসাইটে আছি সেটি স্ক্যাম কিনা।
কারণ, ইন্টারনেট ভরে আছে বহু রকমের ওয়েবসাইট দিয়ে। আর এ-সব ওয়েবসাইটের মধ্যে কিছু আছে ফেইক, কিছু আছে প্রতারণায় পরিপূর্ণ এবং অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো বিভিন্ন রকমের স্ক্যামিং-এ ভরা।
ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে যেমন সহজ ও শোভণীয় করেছে, তেমনই এখানে জালের মতো জড়িয়ে থাকা অসংখ্য ওয়েবসাইট আমাদের জীবন নিয়ে চিনিমিনি খেলছে। স্ক্যামিং এর মাধ্যমে এ-সব ওয়েবসাইট আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে প্রায়ই আমাদের ট্র্যাফে ফেলছে। তাই, এই ধরণের সাইটগুলো চেনার উপায় জানা জরুরী।
স্ক্যামিং ওয়েবসাইট চেনার উপায়
১. অ্যাড্রেসবার বা ইউআরএল দেখুন
একটা ওয়েবসাইট স্ক্যাম কিনা তা বোঝার প্রথম ধাপই হচ্ছে অ্যাড্রেসবার বা ইউআরএল চেক করা। অর্থাৎ, যে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করছেন তার ইউআরএল বা অ্যাড্রেসবার দেখে নিতে হবে। যদি ওয়েবসাইটের ইউআরএল এর শুরুতে https:// থাকে যার মানে Hypertext Transfer Protocol Secure, তবে ধরে নিতে পারেন যে এ ওয়েবসাইটটি স্ক্যাম নয়।
ওয়েবসাইটের ইউআরএল বা অ্যাড্রেসবারে থাকা S এর মানে হচ্ছে Secure যা ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এনক্রিপশন ইউজ করে। অর্থাৎ, ওয়েবসাইট ভিজিট করে আপনি যে ডাটাগুলো দেখতে পানে, সেগুলো একটা সিকিউরড্ সার্ভার হয়ে আপনার কাছে আসছে যা আপনাকে হ্যাকার বা স্ক্যামারের হাত থেকে রক্ষা করছে। যেমন, যে ওয়েবসাইটে আপনি এই লেখাটি পড়ছেন, অর্থাৎ হৈচৈ বাংলা ওয়েবসাইটের ইউআরএল দেখুন, এটির শুরুতে https://hoicoibangla.com/ রয়েছে।
যদি দেখেন যে, কোনও ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসের শুরুতে https:// নাই, শুধু http:// আছে, তবে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিতে পারেন যে, এই ওয়েবসাইটটি সিকিউরড্ সার্ভার ব্যবহার করছে না। কাজেই, এটি স্ক্যামিং ওয়েবসাইট হতে পারে। আর এ ধরণের ওয়েবসাইট ভিজিট করা থেকে বিরত থাকাই ভাল।
২. ডোমেনই নেম চেক করুন
স্ক্যামারদের একটি প্রিয় এবং পাওয়ারফুল টেকনিক হচ্ছে তারা কোনও বিখ্যাত কোম্পানীর ডোমেইনের সঙ্গে মিল রেখে স্ক্যামিং ওয়েবসাইটের ডোমেইন নিয়ে থাকে। যেমন-
- yah00.com
- amaz0n.net
- Daraj.com
খেয়াল করে দেখুন, yah00.com এর ডাবল ও (oo) এর বদলে ডাবল শূন্য (00) যা সহজেই স্ক্যামিং ইন্ডিকেট করে। একইভাবে amaz0n.net-এ ও এর জায়গায় শূণ্য। আবার, Daraj.com-এ z এর জায়গায় j দেখা যাচ্ছে।
যখনই কোনও পরিচিত ওয়েবসাইটে এ-রকম ব্যতিক্রমী কিছু দেখবেন, তখন সহজেই বুঝে নেবেন যে এটি একটি স্ক্যামিং সাইট। প্রয়োজনে ডোমেইনের নাম দুইবার চেক করুন। আর এ ধরণের ওয়েবসাইটকে ওভারটেক করে চলে যান।
৩. ডোমেইনের বয়স চেক করুন
ডোমেইনের বয়স চেক করা স্ক্যামিং ওয়েবসাইট চেনার উপায় হিসেবে অন্যতম কার্যকরী পদ্ধতি। স্ক্যামাররা জানে যে, মানুষ সাধারণত বন্ধের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি শপিং করে থাকে। তাই, তারা যেটা করে সেটা হচ্ছে ছুটির মওকা বুঝে খুব দ্রুত একটি ওয়েবসাইট দাঁড় করিয়ে ফেলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একদিনের ভেতরই তারা ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট রান করে ফেলে এবং স্ক্যামিং শেষ হওয়া মাত্রই আবার বন্ধ করে দেয়।
আপনি যে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, সেটিও এ-রকম কিনা তা যাছাইয়ের জন্যে ডোমেইনের বয়স চেক করা দরকার। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন তারা কবে থেকে ব্যবসা করছে, অর্থাৎ ডোমেইনের বয়স আপনাকে তাদের ব্যবসা সম্পর্কে ভাল ধারণা দেবে।
Whois Lookup ব্যবহার করে আপনি অনায়াসেই যে কোনও ওয়েবসাইটের এইজ জানতে পারবেন। জাস্ট লিংকটিতে যান এবং ওয়েবসাইটটির ইউআরএল পেস্ট করে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন।
৪. নিম্নমানের গ্রামার ও ভুল বানান
অধিক পরিমাণে বানান, পাংচুয়েশন, বর্ণের ক্যাপিটালাইজেশন এবং গ্রামার মিসটেক দেখে সহজেই বুঝে নিন যে ওয়েবসাইটটি অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছে। আপনি একটি প্রপেশনাল ওয়েবসাইটে কখনোই এই ধরণের ভুল দেখতে পাবেন না।
যদি আপনার ব্রাউজকৃত ওয়েবসাইটটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাপিটাল লেটার দেখতে পান, অর্থাৎ প্রায় শব্দের শুরুর লেটারটি ক্যাপিটাল হয়, তবে নিশ্চিত হয়ে নিন এটি একটি স্ক্যামিং সাইট।
৫. যোগাযোগ করে দেখুন
সব ওয়েবসাইটেরই কন্টাক্ট ইনফরমেশন থাকে। যেমন, অফিসের ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ই-মেইল এবং লাইভ চ্যাট। অফিসের ঠিকানায় গিয়ে চেক করে আসা তো আর সম্ভব না। তাই, ফোন করে দেখুন। যদি কেউ ফোন না ধরে কিংবা ফোন ধরে স্ক্যামিং টাইপের কথা বলে, তবে তো বুঝতেই পারবেন এটি কেমন সাইট।
মাঝে মাঝে দেখবেন এমন অনেক ওয়েবসাইট পাবেন যেগুলোর কন্টাক্ট ইনফরমেশন সবই এক। আবার, কিছু ওয়েবসাইটের লাইভ চ্যাটের ডিফল্ট মেসেজও একই থাকে।
৬. কমেন্ট ও রিভিউ পড়ুন, ফিডব্যাক দেখুন
ভাল মানের যে কোনও ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের নিচে কমেন্ট অপশন থাকে এবং সেখানে আপনি অনেকের কমেন্ট দেখতে পাবেন। কমেন্টগুলো পড়ে দেখুন কে কি লিখেছে। আবার, অনেক সময় দেখা যায় যে স্ক্যামাররা নিজেই নিজেদের গুনগান গেয়ে ভাল ভাল কমেন্ট দিয়ে থাকে।
কি করে বুঝবেন কমেন্ট বা রিভিউগুলো রিয়েল না ফেইক? হুম, উপায় আছে; আপনি নিজেই একটি কমেন্ট করুন। যদি দেখেন যে আপনার কমেন্ট বা রিভিউটি পাবলিশ করা হয়েছে এবং রিপ্লেও দেয়া হয়েছে, তবে বুঝে নিন এটি রিয়েল সাইট, স্ক্যাম নয়।
৭. ভাইরাস স্ক্যান করে দেখুন
বেশিরভাগ স্ক্যামিং ওয়েবসাইটে কন্টেন্টের চেয়ে বেশি অ্যাড দেখা যায়। আর বেশিরভাগ অ্যাডই পপ-আপ স্টাইলে থাকে। এ ধরণের ওয়েবসাইটে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখবেন একটার পর একটা পপ-আপ অ্যাড আসছে। সাধারণত, অতিরিক্ত এবং পপ-আপ অ্যাড থাকা ওয়েবসাইটগুলো স্ক্যাম হয়ে থাকে।
ওয়েবসাইটি স্ক্যাম কিনা জানার জন্যে ভাইরাস স্ক্যান রান করে দেখতে পারেন। অনলাইনে প্রচুর পরিমানে ভাইরাস স্ক্যানিং টুল আছে যেগুলো ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়। এ-রকম কয়েকটি টুলের লিংক দেয়া হলো যেগুলো থেকে যে কোনটি দিয়ে আপনি ওয়েবসাইট স্ক্যান করতে পারেন।
আশা করি, উপরোক্ত ৭টি স্ক্যামিং ওয়েবসাইট চেনার উপায় ব্যবহার করে আপনি অনায়াসেই জানতে পারবেন, যে ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন সেটি স্ক্যাম কিনা। এরপরও যদি আপনার আরো কোনও হেল্প দরকার হয়, তবে আমাদের জানান।
MD.Milon says
দারুণ একটা বিষয় জানলাম, মাঝে মাঝে অজান্তেই এই রকম স্ক্যাম ওয়েবসাইটের খপ্পরে পড়তে হয়; আশা করি এখন আর ওদের স্ক্যামিং বুঝতে বেগ পেতে হবে না।