বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম হল পাবজি। পাবজি নিয়ে আমাদের গেম লাভারদের মাতামাতির শেষ নেই। কিন্তু, পাবজির সহিংসতা ও রক্তারক্তির জন্য বর্তমানে কিছু কিছু দেশে পাবজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আমাদের সবারই ভিডিও গেমের উপর কম-বেশি আসক্তি রয়েছে। পাবজি আসার পর অনেকেরই গেম সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যায়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়রা পর্যন্ত এই গেমে আসক্ত হতে থাকে। সবাই নিজের মূল্যবান কাজ বাদ দিয়ে, রাতে না ঘুমিয়ে পাবজি খেলতে শুরু করে।
যার ফলস্বরূপ পাবজি প্লেয়াররা নিজেদের দায়িত্ববোধ ভুলে গেমের পিছনে সময় নষ্ট করতে থাকে যা তাদের জন্যে নানা রকম ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাতজাগা আর সময় নষ্ট করা ছাড়াও পাবজি গেমের ৭টি ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যা সব পাবজি লাভারেই জানা উচিত।
পাবজির নেতিবাচক দিকের কারণে ৫টি দেশ পাবজিকে নিষিদ্ধ করেছিল। পাবজি নিষিদ্ধ করার পেছনে মূল কারণ ছিল, শিক্ষার্থীরা এই গেমে চরম আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের পড়াশুনা না করে পাবজিতে সময় দেয়। যার কারণে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়। এছাড়া এনিমিদের মারতে অস্ত্র ও কৌশল ব্যবহার করার জন্য তাদের মনের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছিল।
আজ আমরা পাবজি নিষিদ্ধ ৫ দেশ সম্পর্কে জানব এবং দেশগুলো কেন পাবজি নিষিদ্ধ করেছিল সেটি নিয়ে আলোচনা করব।
যেসব দেশে পাবজি নিষিদ্ধ
১. চীন
চীনের অনলাইন গেমিং এথিক্স রিভিউ কমিটি ২০১৮ সালে তৎকালীন চীনে বিদ্যমান অনলাইন গেমগুলো রিভিউ করেছে। এর মধ্যে ৯টি গেমের উপর কমিটিটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই ৯টি গেমের মধ্যে ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ২টি গেম পাবজি ও ফোর্টনাইট।
গেম নিষিদ্ধ করার পিছনে মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, গেমগুলো আমাদের মাঝে অত্যধিক পরিমাণে সহিংসতা সৃষ্টি করছে। আরও বলা হয়, গেমে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ ও রক্তারক্তি নেতিবাচক আবেগকে জাগিয়ে তুলছে। যার কারণে দেশে শান্তি নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া চীনের মানুষেরা অনেক পরিশ্রমী হয়। তারা নিজের কাজকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। কিন্তু, পাবজির কারণে মানুষ সারাদিন পাবজিতে সময় দিচ্ছিল। ফলে দেশের উন্নতিতে বাধা আসার সম্ভবনা ছিল। মূলত এই কারণেই চীনে পাবজি নিষিদ্ধ করা হয়।
২. ভারত
পাবজিকে ভারত সরকার সারাদেশে নিষিদ্ধ করেনি, কিছু কিছু শহরে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাবজি নিষিদ্ধ করা ভারতের প্রথম স্থানটি ছিল, তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ভেলোর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ভিআইটি)। এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভেতরে পাবজি খেলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির কতৃপক্ষের দাবি ছিল, গেমটি বন্ধ করে দিলে সবাই আবার ঠিকমত লেখাপড়া করবে। কিন্তু, শিক্ষার্থীদের কাছে এই সিদ্ধান্তটি অনেক সমালোচিত হয়।
এরপর ভারতের আরও অনেক জায়গাতেই পাবজিকে নিষিদ্ধ করা হয়। গুজরাটে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে, কেউ সবার সামনে পাবজি খেললে বা কেউ পাবজি খেলে এই তথ্য পেলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। রাজকোট পুলিশ গুগলকে বলে প্লে-স্টোর থেকে পাবজি গেমটি সরিয়ে দিতে। এরপর ভাওয়ানগর, গির সোমনাথ, সুরাট, ভাদোদারা ও আরভাল্লিতে কয়েকমাস পাবজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
৩. নেপাল
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নেপাল পাবজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর কারণ হিসেবে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাচ্চারা তাদের নিজের কাজকে ভুলে চিকেন ডিনার পাওয়ার নেশায় ব্যাস্ত থাকত। এই কারণে, নেপালের টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ পাবজিসহ সকল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার জন্য দেশের সকল মোবাইল পরিষেবা সরবরাহকারী এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারীদের আদেশ দেয়।
কিন্তু, কিছুদিন পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সরকার আবার পাবজি চালু করে দেয়।
৪. ইরাক
নেপালে পাবজি বন্ধের একই সময়ে ইরাকেও একই আদেশ জারি করা হয়। ইরাক সরকার পাবজি ও ফোর্টনাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ হিসেবে উল্লখ করা হয়, পাবজি শিশু ও যুবকদের জন্য সামাজিক এবং নৈতিকভাবে হুমকিস্বরূপ। এছাড়া গেমগুলো ইরাকের সামাজিক ও সংস্কৃতির অবক্ষয়ের কারণ।
৫. বাংলাদেশ
বাংলাদেশেও ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর পাবজি বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশের বাচ্চা, বালক, যুবক সবাই পাবজিতে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে, তাদের পড়াশুনাতে এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া অনেকে অফিসে বসেও পাবজি খেলতে থাকত। এইসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার এটি বন্ধ করে।
কিন্তু, পাবজি বন্ধের পর বাংলাদেশের যুবসমাজ উত্তাল হয়ে পড়ে। তারা সামাজিক নানা মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকে। এইজন্য একই দিন রাতেই বাংলাদেশে আবার পাবজি চালু করে দেয়া হয়।
তাহলে আপনার কি মনে হয়? পাবজি নিষিদ্ধ করা উচিৎ নাকি উচিৎ নয়? আপনি যদি একজন পাবজি প্লেয়ার হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বলবেন উচিৎ নয়। পাবজি সম্পর্কে অজানা বিষয় না জানলে সেগুলো জেনে নিন। আসলে সবকিছু একটি লিমিটের মধ্যে ভাল, বেশি করলে কোন কিছুই ভাল না। তেমনি পাবজিও একটি লিমিটের মধ্যে বিনোদনের জন্য খেললে সেটি ভাল। তাই, আমাদের সবারই উচিৎ পাবজিতে আসক্ত না হয়ে অল্প সময় বিনোদনের জন্য খেলা।
Leave a Reply