মোবাইল বা ল্যাপটপে গেমস খেলার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। কারও কারও ক্ষেত্রে বরং অভ্যাস শব্দটার বদলে নেশা শব্দটা বেশি প্রযোজ্য। তবে, সে যাই হোক না কেন, বর্তমানকালের তরুণ প্রজন্মের ৮০% এরও বেশি লোক কম-বেশি ভিডিও গেমস যে খেলেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। সত্যিকার অর্থে এমন ৫টি কারণ আছে, যে পাঁচটি কারণে আপনার অবশ্যই গেমস খেলা উচিত।
কিন্তু গেমস খেলার এই কমন নেশাটার পাশাপাশি আরেকটা কমন ব্যাপার যে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, তা হল গেমস খেলা নিয়ে গেমস পছন্দ না করা শ্রেণীর লোকেদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব। অধিকাংশ লোকই যারা নিজেরা গেম খেলেন না, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গেমস খেলার ব্যাপারটার চেয়ে, না খেলার ব্যাপারটাকে তুলনামূলক অধিক পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখেন।
যে-সব কারণে অবশ্যই গেমস খেলা উচিৎ
সময় অপচয়ের কথা বললে, অবশ্যই এটা ঠিক যে গেমস মাঝে মাঝে আমাদেরকে এতটা ব্যস্ত করে ফেলে যে, অনেক সময় আমরা প্রয়োজনীয় কাজ করা বাদ দিয়ে গেমস খেলাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু, সবকিছুরই ভাল-মন্দ দুইটা দিকই থাকে। গেমসের এই মন্দ দিকগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে গেমস খেলা আসলে ভাল একটি ব্যাপার। তো চলুন, আপনার কেন অবশ্যই গেমস খেলা উচিত তা এক নজরে দেখে নেই।
১) গেমস খেলা বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে
সত্যিই গেমস খেলা বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এক রিসার্চে দেখা গেছে, আমেরিকায় ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষেরা গড়ে ২৫ কি.মি. গতিতে গাড়ি চালান, যদিও ম্যাক্সিমাম স্পীড লিমিট ৪৫কিমি/ঘন্টা। আরও দেখা যায়, পরিমিত ব্যায়াম আপনার ৬০ বছরের শরীরকে ৫০ বছরের শরীরের অনুভুতি দিতে পারে। একই ভাবে, মানসিক চর্চাও আপনার মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়ার হার কমিয়ে আনতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ লোয়া ৬৮১ জন ষাটোর্দ্ধ বছরের বৃদ্ধকে নিয়ে একটা স্টাডি করে। স্টাডির ফল হিসেবে তারা বলে, প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে গেমস খেলা এই বৃদ্ধদের বুড়িয়ে যাওয়ার হার কমিয়ে দিয়েছে।
২) গেমস খেলা চোখের জন্যে উপকারী
জ্বি ঠিকই পড়েছেন, অপকার না বরং উপকার হতে পারে গেমস খেললে এমনই বলছে একটা রিসার্চ। ছোটবেলা থেকে যদিও আমরা শুনে এসেছি, গেমস খেললে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ রোচেস্টারের বেশ কিছু অভিজ্ঞ কল অফ ডিউটি খেলা গেমারদের নিয়ে করা একটা স্টাডিতে দেখা যায়, ফার্স্ট পার্সন শ্যুটিং গেইমস প্রকৃতপক্ষে আমাদের চোখের কন্ট্রাস্ট সেন্সিটিভিটি ফাংশন বাড়ায়, যা আমাদের চোখের জন্য উপকারী।
এই কন্ট্রাস্ট সেন্সিটিভিটির বর্ধনের ফলে আমাদের চোখ গ্রে-এর শেডগুলো সহজে আলাদা করতে পারে, যা আমাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে দেখার জন্য বেটার ভিশন দেয়। এটা রাতে ড্রাইভিং করার জন্য বা ধোঁয়ার মধ্যে কিছু খুঁজে বের করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩) গেমস খেলা সঠিক ডিসিশন নিতে সাহায্য করে
গেইমে পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে খুব দ্রুত ডিসিশন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। যা আমাদের প্র্যাক্টিক্যাল লাইফে বেটার ডিসিশন মেইক করতে সাহায্য করে। আর এই ডিসিশন মেকিং স্কিল নেতৃত্বের গুণাবলীর মধ্যেও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা গুণ, যা প্রফেশনাল লাইফে কাজে আসে। ইউনিভার্সিটি অফ লোয়ারই অন্য আরেকটি রিসার্চে দেখা যায়, অ্যাকশন টাইপ ভিডিও গেইমের মত দ্রুত গতির গেমসগুলো সত্যিই বাস্তব জীবনেও ভাল ডিসিশন নিতে সাহায্য করে।
তারা একদল গেইমারকে ৫০ ঘন্টা অ্যাকশন টাইপ ফাস্ট-পেইসের গেইম খেলতে দেন। আর আরেকদল গেইমারদেরকে ৫০ ঘন্টা স্লো-পেইসের গেইম খেলতে দেন। এদের কেউই আগে তেমন একটা গেইমস খেলেননি। পরে তাদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন তারা।
৪) গেমস খেলা শেখার ক্ষমতা বাড়ায়
ইংল্যান্ডের এক দল রিসার্চার রিসার্চের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে গেমস খেলা মানুষের নতুন জিনিস শেখার ক্ষমতা বাড়ায়। তাদের এই রিসার্চের জন্য তারা বেছে নেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি লন্ডনের ৭২ জন ছাত্রকে। এখানেও একটা গ্রুপকে তারা ফাস্ট-পেইসের স্ট্র্যাটেজি গেইমস খেলতে দেন এবং আরেকটা গ্রুপকে তারা স্লো-পেইসের সিম্যুলেশন টাইপ গেইম খেলতে দেন।
এরপর ৪০ ঘন্টা গেমস খেলানোর পর তাদের উপর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, স্লো-পেইসের গেইমস ব্রেইনের তেমন উন্নতি না করলেও, ফাস্ট পেইসের গেমসগুলো সত্যিকার অর্থেই শেখার ক্ষমতা বাড়ায়।
৫) গেমস খেলা এটেনশন আর ফোকাস বৃদ্ধি করে
অনেক গেমস আছে যেখানে যথেষ্ট মনোযোগ এবং ফোকাসের দরকার হয়। খুব দ্রুত গেমসের সিচ্যুয়েশন পার্সিভ করে সেই অনুযায়ী ডিসিশন নিতে হয় অনেক গেমসে। সাধারণত প্রায় সব অ্যাকশন আর বাইক বা কার রেসিং গেমস আর বেশির ভাগ স্ট্র্যাটেজি গেমসগুলতেই কিন্তু এটেনশন আর ফোকাস দুইটাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত গেইমিং এটেনশন আর ফোকাসও বৃদ্ধি করে। ভিকরান্থ বেজ্জানকি নামে একজন রিসার্চার তার স্টাডিতে এটা প্রমাণ করেন।
তিনি কয়েকটা গ্রুপ এক্সপেরিয়ান্সড গেমার এবং আরও কয়েকটা গ্রুপ ইনএক্সপেরিয়ান্সড গেমার নেন। এরপর তাদের কিছু ছোট-খাট কাজ দেন, যেমন প্যাটার্ন রিকগনিশন ইত্যাদি। এরপর তিনি দেখেন এক্সপেরিয়ান্সড গেমারদের গ্রুপগুলোর রেজাল্ট প্রায় সব সময়েই ইনএক্সপেরিয়ান্সড গেমারদের গ্রুপগুলোর রেজাল্টের চেয়ে ভাল। এরপর তিনি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, গেমস খেলা মানুষের এটেনশন, ফোকাস, পার্সিভ করার ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।
তো এই ছিল আজকের আলোচনা, যেই পাঁচটি কারণে আপনার অবশ্যই গেমস খেলা উচিৎ নিয়ে। অর্থাৎ, মূলকথা হল, সব গেমস আপনার জন্যে ভাল না হলেও, ফাস্ট পেসের গেমসগুলো বা যেসব গেমসে প্রচন্ড মনোযোগ বা চিন্তা শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই গেমসগুলো আপনার ব্রেইনের জন্য আসলেই খুব ভাল।
Rimon hossain says
বাহ্। চমৎকার! খুব ভালো লাগলো গেম খেলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি। তবে, গেম্স্ এর মধ্যে কিছু কিছু এক্সাইটেট মোমেন্ট আছে, ওই জায়গায় হেরে গেলে মন চায় মোবাইল ভেঙে ফেলি।