মোবাইল অফিস অ্যাপস্ সাধারণত অফিস কিংবা ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে আমরা ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের প্রচুর ব্যাবহার করে থাকি। আর এর জন্য মূলত ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপই ব্যাবহার করি। কিন্তু হাতে যেহেতু একটি স্মার্টফোন আছে, তাই শুধুমাত্র কম্পিউটারের ভরসায় বসে না থেকে যে কোন সময় কিংবা জরুরী মুহূর্তে এই কাজগুলো সেরে নেওয়া যেতে পারে ফোনেই।
এর জন্য শুধু ফোনে ডকুমেন্ট এডিট করার মতো প্রয়োজনীয় অ্যাপস থাকা দরকার। প্লে স্টোরে স্মার্টফোনের জন্য খুব বেশি এরকম অ্যাপস নেই। তাই সেখান থেকে ৫ টি অ্যাপ খুঁজে বের করা সহজ হলেও সেরা মোবাইল অফিস অ্যাপস বের করা একটু কষ্ট সাধ্য।
আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটা অ্যাপ নিজে ব্যবহার করে সুবিধা অসুবিধাগুলো তুলে ধরতে। ফিচার সাধারণত অ্যাপের ডাউনলোড লিংকে গেলেই পাওয়া যায়। তাই গতানুগতিক ফিচারের কথা না বলে নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলোই এখানে বলেছি।
মোবাইল অফিস অ্যাপস্
সবগুলো অ্যাপেরই ডেক্সটপ ভার্সন আছে, সাথে আছে নিজস্ব এবং এক্সটারনাল ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা। এখানে সবকিছু বিশদভাবে রিভিউ করতে গেলে পোস্টটি অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই শুধু ওয়ার্ড সেকশনটি নিয়ে কথা বলেছি। তবে বিষয়গুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রত্যেকটা অ্যাপের স্ক্রিনশট এখানে যুক্ত করে দিচ্ছি। যাইহোক, চলুন তাহলে দেরী না করে দেখে নেওয়া যাক সেরা ৫টি মোবাইল অফিস অ্যাপস্।
WPS Office
WPS Office সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় এটা হচ্ছে একের ভিতর সব! মোবাইল ফোনের জন্য সার্বিক দিক বিবেচনায় সেরা অফিস অ্যাপ কোনটি? চোখ বন্ধ করে বলব, WPS Office! মাত্র ৩৫ মেগাবাইটের একটি অ্যাপের মধ্যই ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ার পয়েন্ট, PDF সবকিছু আছে একসাথে।
যাদের ফোনের স্টোরেজ কম তাদের জন্য মোবাইল অফিস অ্যাপস্ এর তালিকায় একদম পারফেক্ট অফিস অ্যাপ। একেবারে সিম্পল আর প্রোফেশনাল অফিসের মাঝামাঝি সাদামাটা একটি অফিস অ্যাপ এটি। যেখানে বেসিক কাজগুলোর পাশাপাশি একটু প্রো লেভেলের কাজও করা যাবে অনায়েসে।
WPS Office অ্যাপটি সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে পিডিএফ এডিটিং, অ্যাড রিমুভ, আলমিলিটেড টেম্পলেট ইউজিং এসব ফিচারের জন্য আপনাকে মাসে খরচ করতে হবে ৩২০ টাকা। বিভিন্ন ফন্ট ডাউনলোড করে ব্যবহার করার সুবিধা থাকায়, বাংলায় ডকুমেন্ট লেখার ক্ষেত্রে এটি যোগ করে অন্যমাত্রা। বাংলায় ডকুমেন্ট লেখার জন্য দেখে নিতে পারেন, চমৎকার ৫টি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কি-বোর্ড।
সুবিধাঃ
- এক্সট্রা যেকোন ফন্ট ব্যবহার করা যায়। আমার মতে এটি একমাত্র এই অফিস অ্যাপটি ইউনিক ফিচার, যা অন্য কোনটিতে নেই।
- যেকোন ওয়েবসাইট থেকে থার্ডপার্টি ফন্ট ডাউনলোড করে নিয়ে অনায়েসে ব্যবহার করা যায়, ডকুমেন্টে। সরাসরি পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ করা যায়।
- ল্যাগিং ফ্রি এবং সহজবোধ্য ইন্টারফেস!
অসুবিধাঃ
- সেরকম কোন অসুবিধা আমার চোখে পড়েনি। পাওয়ার পয়েন্টের ক্ষেত্রে একেবারেই অল্প স্বল্প অপশন থাকাটা আমার কাছে অপছন্দ হয়েছে। এ ছাড়া ডকুমেন্ট এডিটের বেসিক কাজ গুলোর জন্য এটি একেবারে পারফেক্ট।
Google Docs
গুগলের ডেভেলপ করা অফিস অ্যাপ! গুগলের অ্যাপগুলোর পারফর্মেন্স নিয়ে কোন কথা চলে না। একদম হাইপ্রোফেশনাল কাজ না হলে, সাধারণ ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমি চোখ বন্ধ করে একে বেস্ট অ্যাপ বলবো। পুরোপুরি ফ্রি এই অ্যাপটি মোবাইলে সিম্পল অফিস ওয়ার্ডের কাজ করার জন্য, একেবারেই পারফেক্ট। সাথে সেভ হওয়া ফাইলগুলো আপনার গুগল ড্রাইভে আপলোড করার সুবিধা।
কম্পিটার বা অন্য যেকোন ডিভাইস থেকে কোন যন্ত্রণা ছাড়াই ফাইলগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আবারও বলছি, ওয়ার্ড অফিসে যদি আপনার কাজটি একটু প্রো লেভেলের হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার কোন কাজেই আসবে না। তার জন্য মোবাইল অফিস অ্যাপস্ এর তালিকার পরের অ্যাপটি দেখুন।
সুবিধাঃ
- সিম্পল, ল্যাগিং ফ্রি এবং স্মুথ।
- আনলিমিটেড ক্লাউড স্টোরেজ। ( গুগলের নিজস্ব ডক ফরম্যাটে সেভ করা কোন ফাইল ড্রাইভের জায়গা নেয় না।)
বেসিক ফিচার সমৃদ্ধ। - সাইজ একটা অ্যাপস হিসেবে ঠিক আছে। তবে তিনটাই ইন্সটল করতে গেলে বড় হয়ে যাবে।
অসুবিধাঃ
- এক্সট্রা ফন্ট ব্যবহার করার অপশন নেই।
- অফিস ওয়ার্ডের সবকাজ এতে করা যাবে না। ফিচার খুবই সীমিত।
- অটোসেভের অপশন নেই।
- ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট তিনটি বেসিক কাজের জন্য তিনটি আলাদা অ্যাপস ইনস্টল করতে হবে।
Microsoft Word
মাইক্রোসফট্ অফিস নিয়ে আসলে কোন কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। কম্পিটার ব্যবহার করা শুরু করার সাথে সাথেই এটির সাথে সবার পরিচয় হয়ে যায়। বহুল ব্যাবহৃত সেই মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ডেরই অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন এটি যা সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে এক্সট্রা কিছু ফিচার এবং ১ টেরাবাইট ওয়ানড্রাইভ ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করতে হলে মাসে ৫০০ টাকা হারে দিয়ে এর সাবস্ক্রিপশন কিনে নিতে হবে।
সুবিধাঃ
- মাইক্রোসফট এর নিজস্ব সব ফন্টই ব্যাবহার করা যাবে। এর মধ্য কয়েকটি বাংলা ফন্টও রয়েছে।
- পিসি তে মাইক্রোসফট অফিসে যে যে ফিচার গুলো আছে, তার প্রায় সবগুলোই এখানে ব্যাবহার করতে পারবেন। এই ব্যাপারটি এককথায় দারুণ। টেবিল কাস্টমাইজ, ড্রয়িং, ইকুয়েশন, ফরম্যাট পেইন্টিং, কলাম, ফুটনোট/এন্ডনোট, স্পেলিং চেকার সবকিছুই চমৎকার ভাবে এতে ব্যাবহার করা সম্ভব!
- অটোসেইভের অপশন আছে। তবে এটা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে কতটুকু দরকারী সেটা ভেবে দেখার মতো।
অসুবিধাঃ
- সাইজে অনেক বড়।
- এডিটিং করার সময় অল্প কিছু ল্যাগ দেখতে পেয়েছি। আপনার ফোনের র্যাম দুই জিবি হলে মাঝেমাঝে আটকে যেতে পারে।
- ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল তিনটি কাজের জন্য তিনটি আলাদা আলাদা অ্যাপ ইন্সটল করা লাগবে। যাতে কম করে হলেও ফোনের ৭০০ এম বি জায়গা দখল করে নেবে। অবশ্য এটা করা হয়েছে ভালোর জন্যই। এতো চমৎকার সব ফিচার দিয়ে বড় একটি অ্যাপস তৈরী করলে তাতে ল্যাগিং এর সম্ভাবনা থাকতো।
- ডাউনলোড করা কোন ফন্ট এতে সাপোর্ট করে না।
- সরাসরি পিডিএফ এ সেভ করার উপায় নেই। পিডিএফ করতে হলে প্রিন্ট অপশন ব্যাবহার করে করতে হবে।
- .doc ফরম্যাটে ডকুমেন্ট সেভ করা সম্ভব নয়। সবসময় *.docx ফরম্যাটে সেভ হবে, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা মনে হতে পারে।
Office Suite
অ্যান্ড্রয়েডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে পুরোনো অফিস অ্যাপ্লিকেশনটির নাম Offie Suite। অ্যাপটির প্রো ভার্সনের পাশাপাশি অ্যাপটির একটি ট্রায়াল প্রো ভার্সনও আছে। যাদেরকে পিডিএফ নিয়ে কাজ করতে হয়, তারা এটিকে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। প্রো ভার্সনটি ডিসকাউন্টের কারণে এখন ৪২০ টাকায় কিনতে পারবেন।
সুবিধাঃ
ইউজার ইন্টারফেস অনেকটা মাইক্রোসফট অফিসের ডেক্সটপ ভার্সনের মতো। যার ফলে ব্যবহার করার সময় খুব সহজেই সবকিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়।
একটি অ্যাপের মাধ্যমেই পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল আর ওয়ার্ডের কাজ করা যায়।
সাইজ অনেক কম। অল্প স্টোরেজের ফোনের জন্য যেটা খুবই ভালো দিক।
সরাসরি টেক্সট টু স্পিচ অপশন।
অসুবিধাঃ
- ইংরেজি ছাড়া অন্যকোন ভাষার স্পেলিং চেক, সিম্বল ইউজ, PDF এক্সপোর্ট, ফরম্যাট পেইন্টিং এর মতো সাধারণ ফিচার গুলো ব্যাবহার করার প্রো ভার্সন ইউজ করা লাগবে।
- প্রচুর অ্যাড। ডকুমেন্ট লেখার সময়ে কীবোর্ডের উপরে অযাড শো করে, যা যথেষ্ট বিরক্তি কর।
- ফন্ট নেই বললেই চলে। ফন্ট প্যাকেজ কিনতে হলে খরচ করতে হবে ৮৫০ টাকা।
Polaris Office
মোবাইল অফিস অ্যাপস্ এর লিস্টে আরো একটি All in one অ্যাপ! এটি নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। মোটামুটি সিম্পল। তবে ফ্রি ভার্সনে অতিরিক্ত অ্যাডের কারণে এটি ৫ নম্বরে রেখেছি। ইন্টারফেস অনেকটা WPS Office এর মতো। বেসিক কাজগুলো পাশাপাশি কাস্টমাইজেশনের বেশ অনেকগুলো সুবিধা এতে আছে। তবে ফন্ট এর সংখ্যা খুবই সীমিত।
সুবিধাঃ
- মোটামুটি কাস্টমাইজেশন সুবিধা আছে। এদিকে বিবেচনা করে WPS আর Microsoft office এর মাঝে রাখা যেতে পারে একে।
- এটিও একটি All in One অ্যাপ।
- এসবের বাইরে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সুবিধা আমার চোখে পড়েনি।
অসুবিধাঃ
- অ্যাডের পরিমাণটা বেশি।
- ফন্ট স্বল্পতা।
- অন্য কোন ফন্টে করা বাংলা ডকুমেন্ট ওপেন করলে অক্ষর এবং লাইন ভেঙে যায়।
সব অ্যাপে সব ধরণের সুবিধা সাধারণত থাকে না। আবার স্টোরেজের কথা চিন্তা করে একসাথে সবগুলো অ্যাপস ফোনে ইন্সটল করে রাখাও আসলে সম্ভব নয়। তাই কাজের ধরণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী যেন একটি বা দুইটি অ্যাপ বেছে নিতে পারেন, সেই লক্ষ্য নিয়েই মোবাইল অফিস অ্যাপস্ এর পুরোটা লেখা হয়েছে।
চেষ্টা করেছি মোটামুটি সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে সেরা মোবাইল অফিস অ্যাপস এর একটা রিভিউ দেওয়ার। সব খুঁটিনাটি তুলে ধরতে পারি নি। তাই কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট বক্সে, অপেক্ষায় থাকলাম।
Leave a Reply