বিভিন্ন জরিপে প্রমাণিত হয়েছে যে মেয়েদের জন্যে অনলাইন ব্যবসা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কারণ, এখানে বিনিয়োগ কম, লাভ বেশি; ঝুঁকি কম, সম্ভাবণা বেশি। এছাড়া, অন্যান্য ব্যবসায় যে পরিমাণ প্রেশার নিতে হয়, অনলাইন ব্যবসায় ততটা নিতে হয় না। তাই, মেয়েরা যাতে ঘরে বসে করতে পারেন এমন ৩টি অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে জানাবো আজ।
মেয়েদের জন্যে অফলাইনে করার মতো কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবসা আইডিয়া থাকলেও অনলাইনে আয় করার সুযোগই সবাই খুঁজে থাকে। কারণ, অনলাইন ব্যবসার দ্রুত প্রসার হচ্ছে। চলতি বছরেই চালানো একটা জরিপ থেকে দেখা গিয়েছে যে বিগত ২ বছরে অনলাইন ব্যবসা ২৪.৮ পারসেন্ট বেড়েছে। এমনকি, গত বছর অনলাইনে জিনিসপত্রের বিক্রির পরিমাণ ২.৩০৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, এ পরিমাণ বিক্রির ৫৮.৯ পার্সেন্টই সংঘঠিত হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ গ্লোবাল বিজনেসের ৮০% চলে যাবে অনলাইনে। আর এর মাঝে কমপক্ষে ৭৫% অপারেট করা হবে স্মার্টফোনের মাধ্যমে। যেহেতু, ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে কেনা-কাটার হার বেড়েই চলেছে এবং মানুষ নিত্য নতুন প্লাটফর্মের দিকেই বেশি ঝুঁকছে, সেহেতু মেয়েদের জন্যে বাস্তবকিই কোনও ভাল ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে অনলাইনে আসা উচিৎ। কিন্তু কী ধরণের বিজনেস শুরু করা যায়! মেয়েদের জন্যে কী ধরণের বিজনেস বেশি সুবিধাজনক হবে!
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে আজকে আমার এই ব্যবসা বিষয়ক লেখা। আর এ লেখা থেকেই আপনি ৩টি ভাল অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া পাবেন যেখান থেকে যে কোনটি শুরু করে নিজেকে সফল নারী ব্যবসায়ীদের তালিকায় স্থান দিতে পারবেন।
মেয়েদের জন্যে অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া
১. অনলাইন কসমেটিক ব্যবসা
মেয়েদের ত্বকের পরিচর্যা এবং সাজ-সজ্জ্বার অন্যতম অনুষঙ্গ কসমেটিক্স। আর এ খাতে খরচ করতে মেয়েরা মোটেই কার্পণ্য করে না। দেশী-বিদেশী সব ধরণের কসমেটক্স কেনার পেছনেই মেয়েরা দুই হাতে খরচ করে থাকে। তাই, কসমেটিক্স ব্যবসা হতে পারে যে কোনও মেয়ের জন্যেই একটি লাভজনক আয়ের উৎস।
প্রথমে জেনে নিন কসমেটিক্স ব্যবসা শুরু করবেন কিভাবে, এরপর নেমে পড়ুন নতুন উদ্যমে। এ ব্যবসায় সফল অনেক নারী রয়েছে যাদের কয়েকজন বিখ্যাত সেলিব্রেটি। যেমন, Kyle Cosmetics এর প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকার কাইলি জেনার, Fenty Beauty এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যামেরিকার বিখ্যাত শিল্পী রিহান্না, Naked এর প্রতিষ্ঠাতা অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত অভিনেত্রী Lisa Haydon। তবে, এ ব্যবসার জন্যে আপনাকেও যে সেলিব্রেটি হতে হবে, এমন নয়। বরং, আপনাকে হতে হবে উদ্যমী, চিন্তাশীল এবং অদম্য।
২. মেয়েদের জন্যে অনলাইন ফ্যাশন শপ
আপনি নিশ্চয়ই কখনো না কখনো নিউমার্কেট কিংবা গাউছিয়া থেকে কিছু না কিছু কেনা-কাটা করেছেন। মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা যখন একটু কম দামে ভাল মানের জামা-কাপড় কেনার জন্যে অনেক কষ্ট করে গাউছিয়ায় গিয়েছিলেন? অনেক ভীড় ঠেলে ঢুকেছিলেন নিউমার্কেটে?
আপনি হয়তো এখন আর সেই আগের মতো কষ্ট করতে চান না। তাই, একটু বেশি দাম নিলেও কাছাকাছি কোনও শপিং মল থেকেই কিনে নেন। কিংবা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বাসায় বসেই রিসিভ করেন পছন্দের জামা-কাপড়। অনলাইনে কেনা-কাটার সুবিধার ফলে আপনার মতো আরো অসংখ্য নারীই এখন আর মার্কেটের ভীড় ঠেলতে চান না।
এই সব নারীরাই হবে আপনার অনলাইন ফ্যাশন শপের কাস্টোমার। বিশেষ করে যারা জামা-কাপড় কিনতে এখন আর মার্কেটে যেতে চান না, ভীড়ের ভেতর গা গলাতে পছন্দ করেন না, তাদের জন্যেই শুরু করতে পারেন একটি ফ্যাশন শপ যেখানে থাকবে নিত্য-নতুন ফ্যাশনেবল জামা-কাপড়ের পসরা।
৩. অনলাইন ফুড বিজনেস
কেউ খাওয়ার জন্যে বাঁচে, আর কেউ বাঁচার জন্যে খায়। মোট কথা, মানুষ খেতে ভালবাসে এবং চিরকালই খেয়ে যাবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের খাওয়ার চাহিদা শেষ হবে না। সুতরাং, কেউ যদি ফুড বিজনেস করে, সেও নিশ্চিত হতে পারে যে তার ব্যবসাও কোনদিন শেষ হবে না।
এক সময় মানুষ বাসায় রান্না করা একই ধরণের খাবার থেকে বের হওয়ার জন্যে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতো। কেউ আবার শখ করে বাইরের খাবার খেতো। এখন শখে হোক আর বাধ্য হয়ে হোক কিংবা ব্যস্ততার জন্যে হোক, অনেক মানুষই খাওয়ার জন্যে রেস্টুরেন্টের উপর নির্ভরশীল।
এসব মানুষের জন্যে আপনি মজার মজার খাবার তৈরি করতে পারেন। সবার জন্যে না হলেও অন্তত তাদের জন্যে যারা সৌখিন, ব্যতিক্রমী খাবার খেতে পছন্দ করেন। ব্যতিক্রমী আর মজাদার খাবার তৈরির অনেক রেসিপি পাবেন অনলাইনে। আবার সেই খাবার তৈরির প্রক্রিয়া লাইভও দেখতে পারবেন বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে। সুতরাং, খাবার তৈরি শিখুন আর অনলাইনে বিক্রি করুন।
কিভাবে অনলাইন ফুড বিজনেস শুরু করবেন?
প্রথমেই সব খাবার তৈরির প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি অল্প কিছু খাবার দিয়েই শুরু করুন, হতে পারে সেগুলো অকেশন বেইজড্। যেমন, কেক। কেকের প্রয়োজন সব সময় হয় না, তাই আপনাকেও সব সময় ব্যস্ত থাকতে হবে না। আপনি জাস্ট জন্মদিনের কেক, বিবাহ-বার্ষিকী কেকসহ যে কোনও অনুষ্ঠানের জন্যে কেক বানানো শুরু করুন।
ফেসবুকে একটি বিজনেস পেজ খুলুন। ফুড রিলেটেড কোনও একটা নাম দিন। আপনার সব বন্ধুদের ইনভাইট করুন আপনার পেজটিতে লাইক দিতে। এরপর, প্রথম দিকে নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্যে কেক বানান। সেগুলোর ছবি আপনার পেজে আপলোড করুন। আর উল্লেখ করে দিন যে কেউ এ রকম কিংবা যে কোনও টাইপের কেক চাইলে, আপনার কাছে অর্ডার করতে পারে। ব্যস্, ১/২টা করে আপনি অর্ডার পেতে শুরু করবেন।
শেষ কথা
যেহেতু অনলাইন বিজনেস বলতে গেলে অফলাইন ব্যবসা বাজারের চেয়ে ডাবল ডিজিট রেটে বাড়তে থাকে, সেহেতু মেয়েদের জন্যে এখনই অনলাইনে কোন একটা বিজনেস শুরু করার মোক্ষম সময়।
এম.এম. নবী says
ধন্যবাদ লেখক। আপনার লেখা ব্যবসা আইডিয়াগুলোর সাথে প্রেরণাও দিচ্ছে।