পেশাগত দিক থেকে আপনি একজন ডাক্তার অথবা নার্স হলে আজকের এই লেখাটি হবে আপনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ডাক্তার বা নার্স হন অথবা আপনার পেশাটি যদি মেডিকেলের সাথে সামান্যতম হলেও জড়িয়ে থাকে, তাহলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো এমন ৫টি মেডিকেল সায়েন্স মুভি নিয়ে যা আপনাদের জন্য দেখা আবশ্যক।
অন্য পেশার মানুষরাও অবশ্যই মুভিগুলো দেখতে পারবেন। এই মুভিগুলো আপনাকে উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস জোগাবে, আপনার ভিতরের মানুষ স্বত্তাকে জাগিয়ে তুলবে। বিভিন্ন মুভি ডাউনলোড সাইটে আপনি খুব সহজেই এই মুভিগুলো পাবেন।
তাই আর দেরি না করে বসে পড়তে পারেন মেডিকেল সাইন্সের চমৎকার এই পাঁচটি মুভি দেখতে। দেখার আগে মুভিগুলো সম্পর্কে এই সংক্ষিপ্ত বিবরণটুকু অবশ্যই পড়ে নিবেন।
মেডিকেল সায়েন্স মুভি
মেডিকেল সায়েন্স রিলেটেড যে ৫টি মুভির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছি, সেগুলোর সবক’টি হলিউডের তৈরি। এর আগে হয়তো আপনি হলিউডের সেরা ৭টি থ্রিলার মুভি দেখেছেন। এবার দেখুন মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে হলিউডের ৫টি অসাধারণ মুভি।
১. The Good Doctor
মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে অসাধারণ একটি মুভি “The Good Doctor”. থ্রিলারধর্মী এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন ল্যান্স ড্যালি। ৯১ মিনিট রানিং টাইমের এই মুভিটি ২০১১ সালের ২৩ এ এপ্রিল মুক্তি পায়।
The Good Doctor মুভির অভিনয়ে যারা ছিলেন-
- Orlando Bloom
- Riley Keough
- Taraji P Henson
- Michael Pena
- Rob Morrow
- Molly Price
ওরল্যান্ডো ব্লোম এই মুভিতে ডাক্তার মার্টিন ব্লেকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মুভিতে তিনি বেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার গাড়ি, বাড়ি, অর্থ, প্রভাব সবই আছে। তবে তিনি বেশ একাকী। এরুপ অবস্থায় তার সাথে পরিচয় হয় তার এক রোগীর যিনি কিডনীজনিত সমস্যায় আক্রান্ত।
এই রোগীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিলে কিউফ। এই মুভিতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করা ডাক্তার মার্টিন ব্লেক চরিত্রের ভালো খারাপ দুই দিকই বেশ স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক ল্যান্স ড্যালি। ৬২৮৮ ভোটে ৫.৫ আইএমডিবি রেটিং পাওয়া এই মুভিটিকে আপনার ওয়াচলিস্টে রাখতে পারেন। ভিন্ন ধারার এই চলচ্চিত্রে অভিনেতা ওরল্যান্ডো ব্লোমের অভিনয় আপনাকে বিমোহিত করবে।
২. Wit
২০০১ সালে আমেরিকান টেলিভিশনে মুক্তিপ্রাপ্ত এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন পরিচালক মাইক নিকলস। ২০০১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এই মুভিটি বার্লিন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয় ও সেখানে এই মুভিটি ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। পরবরতীতে এই মুভিটি এডিনবার্গ ফিল্ম ফেস্টিভালেও প্রদর্শিত হয়।
Wit মুভিতে অভিনয় করেছেন-
- Emma Thompson
- Christopher Lloyd
- Eileen Atkins
- Audra Mcdonald
আপনি যদি মেডিকেল সাইন্সের সাথে সম্পর্কিত কোন পাওয়ারফুল ও হৃদয় জুড়ানো মুভি দেখতে চান, তাহলে বিনা বাক্য ব্যয়ে দেখে ফেলতে পারেন “Wit” মুভিটি।
মুভিটি পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালক মাইক নিকলস অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি এই মুভিতে সুখ, দুঃখ ও ইমোশনাল অনুভূতির দৃশ্যগুলো যেভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তা সহজেই দর্শককে মুভির মধ্যে আটকে ফেলতে পারবে।
এই মুভিটির পুরো ভিত্তিটা হয়তো মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে গড়ে উঠেনি, তবে আপনি মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কিত কোন কিছুতে জড়িত থাকলে এই মুভিটি আপনার জন্য মাস্ট ওয়াচ। এই মুভি সম্পর্কে কোন স্পয়লার দিচ্ছি না। মাত্র ৯৯ মিনিটের এই মুভিটি বদলে দিতে পারে আপনার মুভি দেখার দর্শন। ৮৭০২ ভোটে এই মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.০।
৩. The Waiting Room
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “The Waiting Room” মূলত একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম এবং একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্রজেক্ট। এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন পিটার নিক্স। মুভিটিতে হাসপাতালের রোগী ও ডাক্তারদের জীবনপ্রণালী ও পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এই ডকুমেন্টারি ফিল্মে মূলত ওয়েটিং রুমের কিছু কাহিনী ও বার্তালাপ দেখানো হয়েছে এবং এই ডকুমেন্টারি শুট করার সময় ক্যামেরার পিছনের কিছু কাহিনীও বলা হয়েছে।
যেহেতু পূর্বেই বলা হয়েছে এটি কোন সাধারণ মুভি নয়, এটি একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম। তাই এই ফিল্ম দেখার সময় আপনি অন্য সব মুভির মতো উপাদান আশা করলে আশাহত হতে পারেন। তবে, শিক্ষামূলক দিক বিবেচনা করলে এই মুভির গুরুত্ব অনেক।
The Washington Post ও San Francisco Chronicle এই ডকুমেন্টারি ফিল্মকে ২০১২ সালের সেরা ১০টি মুভির মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আপনি যদি মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কিত মুভি দেখতে আগ্রহী হন ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম যদি আপনার পছন্দের জনরার মুভি হয়ে থাকে, তাহলে এই মুভিটি আপনার জন্যই।
৮১ মিনিটের সংক্ষিপ্ত এই মুভিটি দিতে পারে আপনাকে এক চমৎকার মুভিস্বাদ। আন্ডাররেটেড এই মুভিটি ৭৪৯ ভোট নিয়ে আইএমডিবি রেটিং পেয়েছে ৭.০ ।
৪. Philadelphia
যদি বলি ‘ Philadelphia’ এমন একটি মুভি যা হলিউডের মুভির ধরনই বদলে দিয়েছিলো, তাহলে তা মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। এটিই হলিউডের প্রথম মেইন্সট্রিম ধারার মুভি যা HIV AIDS, হোমো সেক্সুয়ালিটি ও হোমোফোবিয়া নিয়ে নির্মিত হয়েছে। অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস এই মুভিতে এণ্ড্রে ব্যাকেট চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছিলেন। মুভিটি পরিচালনা করেছেন জোনাথন ডেম।
Philadelphia মেডিকেল মুভিতে অভিনয় করেছেন-
- Tom Hanks
- Denzel Washington
- Jason Robards
- Mary Steenburgen
টম হ্যাংক্স এই মুভিতে একটি স্বনামধন্য কর্পোরেট কোম্পানীতে চাকরিরত। তবে, সেখানে তিনি তার হোমোসেক্সুয়ালিটি ও এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটা সকলের কাছে গোপন করে রাখে। তাই, তাকে তার চাকরী থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে অভিনেতা কোর্টে আপিল করে। তবে তার পক্ষে লড়াই করার জন্য সে কোন আইনজীবি পায় না।
এভাবেই এগোতে থাকে এই মুভিটির কাহিনী। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই মুভির রানটাইম ১২৫ মিনিট। এই মুভিতে ডাক্তারদের চরিত্র মুখ্য হিসেবে না দেখালেও মেডিকেল সায়েন্স টার্মের অনেক কিছু শিখার আছে। ২,১৯,৪৭০ ভোটে এই মাস্ট ওয়াচ মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৭ ।
৫. Patch Adams
১৯৯৮ সালে আমেরিকান সেমি বায়োগ্রাফিকাল কমেডি ড্রামাধর্মী এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন থমাস পিটার শেডিক। ১৯৬০-৭০ দশকের আধারে নির্মিত এই মুভিটি মূলত হান্টার প্যাচ এডামসের জীবনী অবলম্বনে তৈরী হয়েছে।
মুভিতে হান্টার এডামসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবিন উইলিয়ামস। এই মুভিতে রবিন উইলিয়াম এমন একজনের চরিত্রে অভিনয় করেন যিনি ডাক্তারদের চিন্তাভাবনা ও রোগীদের প্রতি ডাক্তারদের মানসিকতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণরুপে বদলাতে চান।
তবে, মজার ব্যাপার হলো যে প্যাচ এডামসের জীবনী অনুসরণে এই মুভিটি নির্মাণ করা হয়েছিলো সেই প্যাচ এডামসই এই মুভিটি দেখে খুশি হতে পারেননি। তার মতে, তার চরিত্রকে এখানে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। তবে মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কিত মুভি দেখার আগ্রহ থাকলে আপনি অবশ্যই দেখে নিতে পারেন এই মুভিটি। ১,০২,৩০০ ভোট পেয়ে এই মুভির আইএমডিবি রেটিং ৬.৮ ।
শেষ কথা
চলচ্চিত্র দুনিয়ায় মেডিকেল সায়েন্স মুভি নেহায়েত কম নয়। তবে, এখানে আমি চেষ্টা করছি এমন ৫টি মুভি নিয়ে আলোচনা করার যা মূলত আন্ডাররেটেড। তবে এই মুভিগুলো দেখলে আপনি একদিকে যেমন মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন, অন্যদিকে এই মুভিগুলো আপনার বিনোদনের খোরাকও পূর্ণ করবে।
আপনি যদি মেডিকেল সায়েন্সের ছাত্র হন অথবা যদি আপনি পেশাগত দিক থেকে মেডিকেলের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে এই ৫টি মুভি অবশ্যই আপনার মনের উপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং হৃদয়ে জায়গা করে নিবে। তাই, আর দেরী না করে অবশ্যই দেখে নিতে পারেন এই মুভিগুলো।
ডাক্তার এবং যারা ডাক্তারি পড়ছেন, তাদের সবারই মুভিগুলো দেখা দরকার, দেখা দরকার নার্সদেরও। পাশাপাশি, সাধারণ দর্শকরাও উপভোগ করতে পারেন অসাধারণ এই মুভিগুলো।