মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সুবিধা-অসুবিধা দুটিই আছে। কিন্তু মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট খোলার কোন অসুবিধা নেই বরং অসুবিধা কোন কোন ক্ষেত্রে হবে সেটা নির্ভর করে আপনার ব্যবহারের উপর। আপনি কোন কাজে আপনার মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করবে এর সুবিধা এবং অসুবিধা।
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট হল গুগল আকাউন্টের মত। গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে আপনি যেমন গুগলের এবং অ্যান্ড্রোয়েডের সেবা সূমহ ব্যবহার করার সুযোগ পান। একইভাবে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করলে আপনি তাদের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এবং মাইক্রোসফটের অন্যান্য সেবা ব্যবহারের সুবিধা পাবেন।
আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করবো মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার এবং উইন্ডোজ পিসিতে ব্যবহার করলে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন আর অসুবিধার সন্মুখীন হবেন। তার আগে জেনে নিন মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট কি ও কেন প্রয়োজন? আর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ লেখাটি খুব ধৈর্য সহকারে পড়ে নিতে হবে।
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সুবিধা-অসুবিধা
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সুবিধা
উইন্ডোজ অ্যাপ স্টোর
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি উইন্ডোজ ১০ এ থাকা তাদের অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করতে পারবেন। তাদের অ্যাপ স্টোরে যে শুধু অ্যাপ থাকে তা নয়, বরং গেম, ই-বুক, গান এবং মুভিও রয়েছে। সুতরাং এসব সুযোগ সুবিধা যদি আপনি ব্যবহার করতে চান, তবে একটি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
বিল্ট ইন অ্যাপ ব্যবহার
উইন্ডোজ ১০ এ বেশ কিছু বিল্ট ইন অ্যাপ রয়েছে যেমন গ্রুভ মিউজিক, মুভিজ এন্ড টিভি, ম্যাপ, পিপল ইত্যাদি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এসব অ্যাপে যদি আপনি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করেন, তবে এসব অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
বিশেষ ভাবে বলতে গেলে, গ্রুভ মিউজিকে যদি আপনার অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করেন, তবে আপনার ক্রয় করা গান এবং আপলোড করা গান, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে শুনতে পারবেন।
সেটিং সিঙ্ক
আপনি যখন উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেন, তখন স্বাভাবিকভাবে ডিফল্ট সেটিংকে আপনার ইচ্ছামত পরিবর্তণ করে নেন। এখন আপনি যদি আপনার পিসিতে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করে রাখেন, তবে আপনার সেটিংগুলো আপনার অ্যাকাউন্টে ব্যাক আপ থাকবে। সুতরাং, নতুন করে যখন আবার পিসি সেটআপ দিবেন, তখন সেই সেটিং রিস্টোর করতে পারবেন।
ওয়ান ড্রাইভ
ক্লাউড ড্রাইভের সুবিধার কথা নতুন করে কিছু বলার নেই। আমাদের ব্যক্তিগত হার্ড ডিস্কে থাকা ফাইল যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে ক্লাউড ড্রাইভে থাকলে তা নষ্ট হবার সম্ভাবনা খুব কম। এছাড়া ক্লাউড ড্রাইভে ফাইল থাকলে যে কোনো সময় অ্যাক্সেস করা সম্ভব।
আর আপনার যদি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে আপনি ফ্রিতে পাবেন ৫ জিবি জায়গা আর টাকা খরচ করে এটা আরও বৃদ্ধি করতে পারবেন, যদি প্রয়োজন মনে করেন।
ইমেইল
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকার আরেকটি সুবিধা হল আপনি একটি ফ্রি ইমেইল পাবেন। এই ইমেইল আপনি Hotmail কিংবা Outlook দুটি ডোমেইনই ব্যবহার করতে পারবেন।
স্কাইপ
স্কাইপ মাইক্রোসফট ২০১১ সালে কিনে নেয়ার পর এই সেবাটি ব্যবহার করতে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়। স্কাইপের সবগুলো সুবিধা উপভোগ করতে হলে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকাটা জরুরি। স্কাইপের মাধ্যমে আপনি যেমন অ্যাপটি দিয়ে ফ্রি কথা বলতে পারবেন, পাশাপাশি টাকা খরচ করে আপনি যে কোনো মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়েও কথা বলতে পারবেন।
মাইক্রোসফট অফিস
মাইক্রোসফট অফিসের কথা নতুন করে কিছু বলার নেই, কমবেশি সবাই এটা ব্যবহার করেছেন। আপনি যদি আপনার মাইক্রোসফট অফিসে অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করেন, তবে আপনার ফাইল এবং সেটিং ব্যাক আপ করে রাখতে পারবেন।
কর্টনা
কর্টনা মাইক্রোসফটের একটি এআই ফিচার। অর্থাৎ, এটাতে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কর্টনা আপনার হয়ে আপনার ডিভাইস ব্যবহার করতে সক্ষম। যেমন, আপনি যদি বলেন হেই কর্টনা একটা গান চালু করো তো, দেখবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গান চালু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার আর হাত ব্যবহার করতে হবে না। আর এই কর্টনার সুবিধা পেতে হলে আপনার মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট থাকা জরুরি।
এক্সবক্স
এক্সবক্স হল গেমারদের জন্য। আপনি যদি একজন গেমার হন এবং আপনার গেমিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে চান, তবে এক্সবক্সে আপনার অ্যাকাউন্ট যোগ করতে হবে।
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের অসুবিধা
গোপনীয়তা
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসবে এর গোপনীয়তার নীতিমালা নিয়ে। এই অ্যাকাউন্ট আপনার পিসিতে সাইন ইন করা থাকলে আপনার তথ্য নিরাপদ থাকবে কিনা এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
তাদের গোপনীয়তার নীতিমালাতে খুব স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে যে, আপনি যখন আপনার অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করবেন, তখন তারা আপনার ডিভাইসের ডাটা, সময় এবং আইপি অ্যাড্রেস সংগ্রহ করবে। এছাড়া আপনার সাইন ইন নাম, ব্যক্তিগত কিছু তথ্য, অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার তথ্য সংগ্রহ করবে।
আবার, আপনি যদি স্যোশাল মিডিয়াতে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন, তবে তাদের সার্ভারে আপনার স্যোশাল মিডিয়ার বেশ কিছু তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার অধিকার রাখে তারা।
নিরাপত্তা
ডিজিটাল যে কোনো সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় সকল ডিজিটাল সেবার মধ্যেই নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। হ্যাকাররা যে কোনো সময় আপনার তথ্য হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ রাখে।
আপনি যদি আপনার মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট আপনার কোন ডিভাইসে ব্যবহার করেন, আর আপনার অ্যাকাউন্ট যদি কখনো হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে আপনার অনেক স্পর্শকাতর তথ্য হয়তো হ্যাকারদের হাতে চলে যাবে। যদি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের অধীন নয় বরং আপনার উপরেও অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে সংক্ষিপ্তভাবে মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা। সুবিধা যদিও অনেক, তবে সবার শেষে থাকা দুটি অসুবিধার কথাও অবশ্যই মাথায় রাখবেন, আশা করি।
Leave a Reply