দ্রুত গতি একটা কম্পিউটার শুধু যে কাজের সময় কমিয়ে আনে তাই নয়, কাজের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতেও দারুণভাবে সাহায্য করে। অন্যদিকে স্লো কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ঘটে উল্টো ঘটনা; কাজের গতি যেমন কমে, তেমনি বিরক্তি চলে আসে ফলে, কমে যায় কাজের মান। আর কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি পালন করে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা।
ভালো বাজেটের একটি কম্পিউটারে গতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না, সব রকম সফটওয়্যার স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমরা যারা অল্প কিংবা মাঝামাঝি বাজেটের কম্পিউটার ব্যবহার করি, তাদের জন্য এটি বেশ চিন্তার বিষয়। ভারী কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করার আগে কয়েকবার ভাবতে হয়।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত কম্পিউটারের সবচেয়ে কমন এবং বহুল ব্যবহৃত এরকম একটি সফটওয়্যার হচ্ছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। প্রয়োজনের দিক বিবেচনা করে কম্পিউটারের একটি বেসিক টুলস বলা যায় একে।
কম্পিউটার থাকলে সেখানে ওয়ার্ড প্রসেসিং এর জন্য একটি সফটওয়্যারের প্রয়োজন সবসময়ই থাকে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় একটু লো কনফিগারের কম্পিউটারে মাইক্রোসফট অফিস ইনস্টল করার পর সেটি ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করা যায় না অথবা ব্যবহার করতে হয় ২০০৭ কিংবা আরও ব্যাকডেটেড ভার্সন। অনেক ভারী একটা সফটওয়্যার হওয়ায় মাল্টি টাস্কিংও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং কম্পিউটার হয়ে যায় স্লো।
তবে একটুখানি ভিন্ন পথে হাঁটলেই এই সমস্যাগুলোর খুব চমৎকার সমাধান হয়ে যেতে পারে। কারণ ওয়ার্ড প্রসেসিং, হিসাব নিকাশ বা প্রেজন্টেশনের জন্য এখন মাইক্রোসফট অফিসই শেষ কথা নয়। অনলাইনে যেমন ব্রাউজার থেকেই লেখালিখি, হিসাব নিকাশ বা প্রেজেন্টেশনের কাজ সেরে ফেলা সম্ভব, তেমনি মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প সফটওয়্যার রয়েছে অফলাইনেও!
মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প সফটওয়্যার
হ্যাঁ, এরকম একটি সফটওয়্যার হচ্ছে WPS Office। দারুণ সব ফিচারে সমৃদ্ধ চমৎকার এই সফটওয়্যারটি খুব স্বাছন্দেই ব্যবহার করতে পারেন মাইক্রোসফট অসিফের বিকল্প সফটওয়্যার হিসেবে। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ঝটপট এর সেরা ফিচারগুলো সম্পর্কে জেনে নিই!
ডাউনলোড করুন ফ্রিতে, ব্যবহার করুন ফ্রিতে!
মাইক্রোসফট অফিস একটি পেইড সফটওয়্যার, লিগ্যালি এটিকে ব্যবহার করতে হলে বছরে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা অপবশ্যই গুণতে হবে। চাইলে সারাজীবনের জন্যও একবারে কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেজন্য খরচ করতে হয় পুরো ২৫০ ডলার।
কিন্তু WPS Office কোন রকম টাকা পয়সা ছাড়াই অফিসিয়ালি একদম ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এর জন্য খুবই সীমিত পরিসরে কিছু অ্যাড দেখতে হতে পারে মাঝেমধ্য। তবে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি, সেটি মোটেই বিরক্তিকর নয়।
তবে আপনি যদি চান, তাহলে অ্যাড ফ্রি প্রিমিয়াম কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এতে অ্যাড বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে পিডিএফ টুলকিট, আনলিমিটেড টেমপ্লেট, ওসিআর সহ আরও বেশ কিছু ফিচার পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
বছরে WPS প্রিমিয়াম এর জন্য খরচ করতে হয় মাত্র ৩০ ডলার। আর যদি সারাজীবনের জন্য কিনতে চান তাহলে একবারে ৮০ ডলার পেমেন্ট করতে হবে।
সাধারণ, পরিচিত ইন্টারফেস!
নতুন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু করতে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, তা হচ্ছে এর ইন্টারফেসের সাথে পরিচিত হওয়া। নতুন একটা ইন্টারফেসের সাথে পরিচিত হতেই বেশ খানিকটা সময় চলে যায় সেই সাথে বিরক্তিকরও বটে। অনেকেই এই কারণে নতুন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান না।
WPS Office এর এই ঝামেলাটিতে আপনাকে একেবারেই পড়তে হবে না। ইন্টারফেস একদম আপনার পরিচিত মাইক্রোসফট অফিস মতোই, ব্যবহার করার সময় মনেই হবে না আপনি নতুন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন।
পিডিএফ সহ দারুণ সব ইউনিক ফিচার!
WPS এর একটি অন্যতম ইউনিক ফিচার হচ্ছে PDF পড়া, যে কোন ওয়ার্ড ফাইলকে PDF ফরম্যাটে সেভ করা এবং প্রিমিয়াম ভার্সনে পিডিএফ এডিটিং এর ব্যবস্থা! মাইক্রোসফট অফিস ২০১০ ভার্সন থেকে পরের ভার্সনগুলোতে পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ করার সুযোগ থাকলেও সেখানে এডিটিং এর কোন ব্যবস্থা নেই।
এছাড়া প্রিমিয়াম ইউজারদের জন্য রয়েছে বিল্টইন ওসিআর, ফলে যে কোন ছবি থেকে খুব সহজেই টেক্সট আলাদা করে ফেলতে পারবেন যে সুবিধাটি মাইক্রোসফট অফিসে একবারেই অনুপস্থিত।
শুধুমাত্র সাইন আপ করেই ১ জিবি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন ডকুমেন্ট এডিটিং এর হোমপেজ থেকেই। এসবের বাইরে এমএস অফিসের রেগুলার ফিচারগুলো তো রয়েছেই!
অল্প মেমরি খরচ করে!
আমার কাছে এটিই হচ্ছে WPS Office এর সবচেয়ে বড় সুবিধা। লেখার শুরুতেই কম্পিউটারের গতি নিয়ে কথা বলেছি। র্যা মের জায়গা পর্যাপ্ত না থাকলে বেশি মেমরি ব্যবহার করে এরকম সফটওয়্যার স্বাভাবিকভাবেই কম্পিউটারকে স্লো করে ফেলে।
তবে WPS Office এর বেলায় এটি নিয়ে একদমই নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। ৮০ মেগাবাইট সাইযের WPS Office সফটওয়্যারটি রান করার জন্য প্রয়োজন মাত্র ১২৮ মেগাবাইট র্যা মের এবং সি ড্রাইভের ২০০ মেগাবাইট ফ্রি স্পেস!
নিচের এই ছবিটি থেকে দেখে নিতে পারেন এটি আসলেই কী পরিমাণ কম মেমরি ব্যবহার করে!
ব্যবহার করতে পারেন স্মার্টফোনেও!
কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোনের জন্যও রয়েছে WPS Office এর দারুণ একটি অ্যাপ। অন্য সব মোবাইল অফিস অ্যাপ্লিকেশনের সাথে এর বেশ বড়সড় পার্থক্য রয়েছে। একদিকে যেমন খুবই হালকা একটি সফটওয়্যার, ১ জিবি র্যা মের মোবাইলেও খুব আরামে ব্যবহার করা যায়।
অন্যদিকে সাধ্যের মধ্য প্রয়োজনীয় সব ফিচারই পাওয়া যায় এতে। এমনকি নিজের ইচ্ছেমত বাংলা ইংরেজি যে কোন ফন্ট ডাউনলোড করে তা ব্যবহার করার সুবিধাটিও খুব চমৎকারভাবে এতে রয়েছে। যেটি অন্য কোন মোবাইল অফিস অ্যাপ্লিকেশনে নেই!
মোবাইল ভার্সনটিও সম্পূর্ণ ফ্রি; আপনার যদি কম্পিউটারের জন্য প্রিমিয়াম ভার্সন কেনা থাকে তাহলে সেই আইডি দিয়ে লগ ইন করে মোবাইলেও অ্যাড ফ্রি ভার্সন এবং প্রিমিয়াম ফিচারগুলো উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া ফ্রি অবস্থায় আপনি ক্লাউড স্টোরেজটি ব্যবহার করে যে কোন সময় কম্পিউটার থেকে ফাইল ট্রান্সফার না করেই আইফোন বা অ্যান্ড্র্যেড ফোনে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে পারবেন।
স্কিন ও ডিজাইন কাস্টমাইজেশন!
একটু সৌন্দর্য্যপ্রেমী মানুষ হলে আপনার নিশ্চয়ই জানার কথ্যা, একটি ভালো ইউজার ইন্টারফেস কাজ করার মানসিকতাকে কতখানি চাঙা রাখতে সাহায্য করে! সেদিক দিয়ে WPS Office কে আরেকবার এগিয়ে রাখা যেতেই পারে। চমৎকার চারটি বিল্টইন স্কিন রয়েছে এতে, যার ফলে মূহুর্তেই চাইলে এর ইন্টারফেসকে একটু পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
যেহেতু স্কিনগুলো বিল্টইনভাবেই দেওয়া আছে, তাই এর জন্য কোন বাড়তি মেমরি খরচের দরকার পড়ে না।
বিল্টইন স্কিন ছাড়াও এতে রয়েছে নাইট মোড এবং আই প্রোটেকশন মোড। যেটা রাতে বা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার বেলায় আপনাকে দারুণ স্বস্তি দেবে।
চমৎকার কাস্টমার সাপোর্ট!
একটি ভালো সফটওয়্যারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার কাস্টমার সাপোর্ট! কাস্টমার সাপোর্ট ভালো হলে একটি সফটওয়্যার দেখতে দেখতে একসম্য সাফল্যের চূড়ায় উঠে যায়।
WPS Office এর এই চমৎকার Help পেইজটাতে আপনি আপনার প্রায় সবধরণের সমস্যা বা প্রশ্নেরই উত্তর পাবেন; শুধু সার্চ বক্সে আপনার কথাটি লিখে সার্চ করলেই হবে।
এছাড়া আপনার যদি কোন ইন্সট্যান্ট সাপোর্ট এর প্রয়োজন হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি জানানোর জন্য ওদের অফিশিয়াল WhatsApp গ্রুপও রয়েছে!!
WPS Office সফটওয়্যারটিতে আপনি লেখালিখি, প্রেজেন্টেশন আর হিসাব-নিকাশ করার করার জন্য যথাক্রমে Writer, Powerpoin এবং Spreedsheet নামের তিনটি প্রোগ্রাম পাবেন। এটিকে একটি সীমাবদ্ধতা বলা যেতে পারে।
WPS Office কে দেখে আসলে মাইক্রোসফট অফিসের বিকল্প বলে বিশ্বাস হওয়া কষ্টকর। বিশাল একটা সফটওয়্যারের পুরোপুরি বিকল্প এতো ছোট সাইযের একটা সফটওয়্যারের হওয়ার কথাও না। তবে কথা হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিসের যে তিনটি প্রোগ্রাম আমরা দৈনন্দিন কাজে ও ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আমাদের ব্যবহার করে থাকি সেগুলোর বিকল্প এখানে পুরোপুরিভাবেই রয়েছে।
এতোসব দারুণ ফিচারের পাশাপাশি কাজের জিনিসগুলো যদি ঠিকঠাক মতো থাকে তাহলে তো সেটাকে বিকল্প সফটওয়্যার বলা যেতেই পারে!
Rashedul Islam Pavel says
বহুদিন পর হৈ চৈ তে আবার নিয়মিত পোষ্ট দেয়া হচ্ছে দেখে ভাল লাগল। আশা করি আবার আগের মত নিয়মিত ভাবে অনেক ভালো ভালো লেখা পড়ার সুযোগ হবে। সকল লেখক এবং পাঠকদের জন্য শুভকামনা রইল।
মাকসুদ says
হ্যাঁ। আসলেই খুব ভালো লাগছে! আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা, পাভেল ভাই। 🙂
Abdul Goni says
বিজয় বাহান্ন দিয়ে লেখা যায় না। ভালো লাগেনি এপ্লিকেশনটা। দুঃখিত।
মাকসুদ says
কমেন্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! 🙂
আমি বিষয়টি চেক করে দেখলাম। বিজয় বাহান্ন দিয়ে যে সমস্যাটি হয়, সেটি খুবই বিরক্তিকর একটি সমস্যা। একটি অক্ষর লিখে শিফট চেপে অন্য একটা অক্ষর লিখলে সাধারণত এই সমস্যাটি হয় না। কিন্তু এই সমাধান সত্যিকার কোন কাজের নয়।
আমি অভ্র ব্যবহার করি তো, সেজন্য বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না।
এতো দেরিতে রিপ্লাই দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!