মশা সম্পর্কে মজার তথ্য আছে অনেক। তার মাঝে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি ২০টি মজার ও ব্যতিক্রমী তথ্য যেগুলো আপনি আগে জানতেন অথবা জানতেন না। কিছু তথ্য আগে জানা থাকলেও এমন কিছু তথ্য পাবেন যা আগে জানতেন না আর এখন জেনে সত্যিই মজা পাবেন।
মশা আমাদের মারাত্মক শক্রু। এরা আমাদের শরীরে বসে রক্ত শোষণ করে আর সেই সাথে আমাদের শরীরে জীবাণু ঢুকিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে আমাদের নানা রকম রোগ হয়। বিশেষ করে ১০টি মারাত্মক রোগ রয়েছে যেগুলো কেবল মশার কামড় থেকেই হয়ে থাকে। তবে, মশা যত বড় শত্রুই হোক না কেন, মশা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা আপনাকে অবাক করে দেবে।
মশা সম্পর্কে মজার তথ্য
জানেন কি মশা মারতে কামান দাগিয়েছে দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল ও মাইক্রোসফট্? জানেন আর না জানেন, সমস্যা নেই; জীবনে মশার কামড় খায়নি এমন লোক আছে কি? থাক আর না থাক, মশা সম্পর্কে জানে না এমন তো হতে পারে না। তবে, মশা সম্পর্কে এমন কিছু মজার তথ্য রয়েছে যা সবাই জানে না। আসুন, আমরা জেনে নেই সেই অবাক করা তথ্যগুলো-
১. কেবল মাত্র স্ত্রী মশারাই কামড়ায়
অন্যান্য প্রাণীর মতো মশার মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ রয়েছে। আর মজার বিষয় হচ্ছে পুরুষ মশারা কখনো কামড়ায় না, কামড়ানোর প্রয়োজন হয় না। কেননা, তারা মানুষ বা প্রাণীর রক্ত খেয়ে বাঁচে না। মূলত স্ত্রী মশাদের ডিমকে ডেভেলপ করার জন্যে রক্তে থাকা প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। তাই, স্ত্রী মশা রক্তের জন্যে কামড়ায় আর সেই রক্ত দিয়ে তাদের ডিম উন্নত করে বাচ্চা দেয়।
২. ৩৫০০ প্রজাতির মশা রয়েছে
অ্যান্টার্টিকা ছাড়া সারা পৃথিবী জুড়েই মশা রয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর আনাচে কানাচে সবখানেই মশাদের বংশ বিস্তার ও আধিপত্য রয়েছে। আর পৃথিবীতে এ যাবৎ মোট ৩ হাজার ৫শ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা গিয়েছে। আর এদেরকে ৩৯টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতিতে ভাগ করা হয়েছে।
৩. মশাদের দাঁত নেই
মশাদের যদি দাঁতই না থাকে, তবে কামড়ায় কিভাবে? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সেটা আপনার ব্যাপার, তবে মশাদের সত্যিই কোন দাঁত নেই। মশাদের মুখের সঙ্গে যুক্ত এক ধরণের লম্বা টিউব আছে যা দেখতে সূঁইয়ের মতো। এই টিউবকে বলা হয় Proboscis আর এটির সাহায্যেই মশারা আমাদের চামড়া বা ত্বক ফুঁটো করে রক্ত শোষন করে থাকে। সেই সাথে আমাদের শরীরে নানা রকম জীবাণু ঢুকিয়ে দেয় যেগুলো থেকে উপরোল্লেখিত ১০টি মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে। তাই, মশা থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর এই ৫টি অ্যাপ থেকে যেকোনটি ব্যবহার করুন, নিরাপদ থাকুন।
৪. মশা তার ওজনের চেয়ে ৩ গুণ বেশি রক্ত খেতে পারে
একটা মশার ওজন কত হবে? যতই হোক, একটা মশা তার শরীরের ওজনের চেয়েও তিন গুণ বেশি রক্ত শোষণ করতে পারে। আর এ পরিমাণ রক্ত নিয়ে উড়তেও তাদের কোন সমস্যা হয় না। অবাক করা তথ্য নয় কি? এর চেয়েও অবাক করা তথ্য হচ্ছে একটি মশা ১২ লক্ষ কামড় দিতে পারে এবং প্রতিটি কামড় থেকেই রক্ত শোষণ করতে পারে।
৫. স্ত্রী মশা একসঙ্গে ৩০০ থেকেও বেশি ডিম পাড়তে পারে
কখনো কি ভেবে দেখেছেন এত মশা কোথা থেকে আসে! কিভাবে এ রকম হাজার হাজার মশা উৎপন্ন হয়! একটি স্ত্রী মশা যদি একবারেই ৩০০ থেকে বেশি ডিম দিতে পারে, তবে হাজার হাজার কেন, লাখ লাখ কোটি কোটি মশা দেখতে পাওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়, কি বলেন? আশ্চর্য্যের বিষয় মাত্র এক ইঞ্চি জায়গা পরিমাণ পানিতেই একটি স্ত্রী মশা এই পরিমাণ ডিম উৎপন্ন করে বাচ্চা ফোটাতে পারে। আর একটা স্ত্রী মশা মৃত্যুর আগে কমপক্ষে ৩ বার বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে।
৬. মশারা জীবনের প্রথম ১০ দিন পানিতেই থাকে
ডিম ফোটানোর জন্যে স্ত্রী মশার পানি প্রয়োজন। আর ডিম ফোটানোর পর, অর্থাৎ বাচ্চা হওয়ার পর পরই কিন্তু মশারা পানি থেকে উঠে আসে না। পরিপূর্ণ ডেভেলপের জন্যে বাচ্চা মশাদেরকে কমপক্ষে ১০ দিন পানির ভেতরই থাকতে হয়। অ্যাডাল্ট হওয়ার আগে পানি থেকে উঠলেই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং বাচ্চা মশা মারা যায়।
৭. মশারাও প্রেমে পড়ে
মানুষের মতো মশাদের মধ্যেও ভালবাসাবাসির সম্পর্ক তৈরি হয়। আর যখনই কোন পুরুষ মশা কোনও স্ত্রী মশার প্রেমে পড়ে, তখন থেকেই স্ত্রী মশাটিকে সে চোখে চোখে রাখে। হঠাৎ চোখের আড়াল হয়ে গেলে পুরুষ মশা তার প্রেমিকা স্ত্রী মশাকে খুঁজে বের করে স্ত্রী মশার পাখার শব্দ দ্বারা। একটি স্ত্রী মশা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার পাখা ঝাপটাতে পারে। আর পুরুষ মশা পাখা ঝাপটানোর প্রিকোয়েন্সি থেকেই তার সঙ্গীনিকে খুঁজে বের করে ফেলে।
৮. মশারা মানুষের নি:শ্বাসের গন্ধ পায়
মশাদের মাথায় এক ধরণের ব্যাটারি সেন্সর থাকে যা মূলত অ্যান্টেনার মতো কাজ করে। এই অ্যান্টেনায় এক ধরণের রিসিপটর রয়েছে যা কার্বনডাই অক্সাইড ডিটেক্ট করতে পারে। মানুষ যখন নি:শ্বাসের সঙ্গে কার্বনডাই অক্সাইড ত্যাগ করে, মশারা তখন খুব সহজেই তার গন্ধ পায় এবং সেই সোর্স ফলো করে মানুষকে রক্ত খাওয়ার জন্যে খুঁজে নেয়।
৯. মানুষের শরীরের ঘাম মশাদের সাহায্য করে
আমাদের শরীরের ত্বক ৩৪০ এর চেয়েও বেশি ধরণের রাসায়নিক গন্ধ উৎপন্ন করে থাকে। আর সেগুলোর মাঝে কিছু গন্ধ আছে যা মশাদেরকে ডিনারের দাওয়াত দিয়ে থাকে। অর্থাৎ, ঘামের সঙ্গে নির্গত সেই বিশেষ গন্ধগুলো পেলেই মশারা বুঝে ফেলে তাদের জন্যে দারুণ ডিনারের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে শরীর থেকে নির্গত ঘামের সঙ্গে অকটেনল নামের এক ধরণের বিশেষ কেমিক্যাল রয়েছে যা মশাদের অত্যন্ত প্রিয়। এটির গন্ধ পেলেই মশা দ্রুত চলে আসে এবং রাতের ডিনার সেরে নেয়।
১০. মশারা হিট সেন্সর ব্যবহার করে
সাধারণত রক্তের চেয়ে উষ্ণ রক্ত মশাদের বেশি প্রিয়। আর আমাদের শরীরের ভেতর ঠিক কোন কোন স্থানে উষ্ণ রক্ত রয়েছে তা ডিটেক্ট করার জন্যে মশারা তাদের শরীরে থাকা এক ধরণের হিট সেন্সর ব্যবহার করে থাকে।
আশা করি, মশা সম্পর্কে মজার তথ্য গুলো আপনাদের ভাল লেগেছে। কিছু তথ্য আপনি আগে থেকে জানলেও নিশ্চয়ই সবগুলো জানতেন না। আপনার মতো আরো অনেকেই এখানকার সবগুলো তথ্য জানে না। সুতরাং, বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকংখীদের মশা সম্পর্কে এসব মজার তথ্য জানাতে লেখাটি শেয়ার করুন।
Leave a Reply