মশার কয়েল চেনে না বা দেখেনি এমন মানুষ বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। তবে, মশার কয়েল আবিস্কার সম্পর্কে হয়তো সবার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ধারণা থাকুক আর না থাকুক, মশার জন্যে অভয়ারণ্য আমাদের দেশ। আর মশার কামড়ের কথা আর কি বলবো, যারা খেয়েছেন তারা জানেন এর জ্বালা।
আমরা প্রায় সবাই জানি মশা কি আর এটি কিভাবে কামড়ায়। যেটা আমরা অনেকেই জানি না সেটা হচ্ছে এই মশা মারার জন্যে যে কয়েল ব্যবহার করা হয়, সেটি আসলে কি আর কে আবিস্কার করেছেন।
মশার কয়েল কি?
মশা সম্পর্কে অনেক মজার তথ্য আমাদের জানা। এবার জানুন, মশার কয়েল জিনিসটা আসলে কি। কয়েল মানে কুন্ডলী। মশা মারার জন্যে প্রয়োজনীয় মেডিসিন দিয়ে তৈরি এক ধরণের কুন্ডলী পাকানো বস্তুকে কয়েল বলে। এই কুন্ডলীর একটি মাথা থাকে যেখানে আগুন ধরাতে হয়। আর এই মাথা থেকে মশা তাড়ানোর জন্যে এক ধরণের ধূপ দেয়া ধোঁয়া বের হয়।
একটি সাধারণ মশার কয়েল প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে আর এটি প্রায় 7-12 ঘন্টা স্থায়ী হয়। মশার কয়েল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এশিয়ায়। এরপর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও মশার কয়েলের ব্যবহার দেখা যায়।
মশার কয়েল আবিস্কার করেন কে?
মশার কয়েল যা যা দিয়ে তৈরি করা হয় তার মাঝে অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে পাইরেথ্রাম। ইউরোপ ও পারস্যে এই পাইরেথ্রাম মূলত কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। মশা মারার জন্যে কিংবা মশা তাড়ানোর জন্যে এই পাইরেথ্রামের ব্যবহার শুরু হয় ১৮০০ সালে।
Eiichiro Ueyama নামের একজন জাপানি ব্যবসায়ী সর্ব প্রথম মশা তাড়াতে পাইরেথ্রাম ব্যবহারের ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি সর্ব প্রথম চালের সাথে পাইরেথ্রামের গুঁড়ো মিক্স করে সেই চাল পোড়া শুরু করেন এবং দেখেন যে চাল থেকে নির্গত ধোঁয়া মশা তাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যস্, ব্যবসায়ীক আইডিয়া পেয়ে গেলেন তিনি।
ম্যান্ডারিন বা কমলার চামড়া থেকে তৈরি গুঁড়ো, স্টার্চ পাইডার এবং পাইরেথ্রামের গুঁড়ো একত্রিত করে তিনি এক ধরণের ধূপের কাঠি তৈরি করেন। এই কাঠিতে আগুন ধরানোর পর এটি প্রায় ৪০ মিনিটের মতো জ্বলেছিল। ১৮২০ সালে Eiichiro Ueyama মশা তাড়ানোর এই কাঠিগুলো বাজারজাত করতে শুরু করেন।
১৮৮৫ সালে Eiichiro Ueyama এর স্ত্রী কাঠিগুলোকে আরো লম্বা এবং দীর্ঘস্থায়ী করার পরামর্শ দেন। সুতরাং, লম্বা লম্বা কাঠি বানানো শুরু হয়। কিন্তু বেশি লম্বা হওয়ার কারণে সেগুলো বহন এবং সংরক্ষণে সমস্যা দেখা দেয়।
১৯০২ সালে এই লম্বা কাঠিকে সাপের মতো মোড়ানোর পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়। তবে, কাঠিগুলো কুন্ডলী পাকানোর আগে একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় এবং প্রথম দিকে বারবার ব্যর্থতা আসে। অবশেষে একটা সময় কুন্ডলী পাকানো সম্ভব হয়। ধূপের কাঠি কুন্ডলী পাকানোর এই পদ্ধতি ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর Eiichiro Ueyama এর কোম্পানী ডেইনিহন জোকুগিকু কো লিমিটেড চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আধুনিক কয়েল উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর সঙ্গে মার্জ হয়ে Eiichiro Ueyama এর প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে কয়েল উৎপাদন শুরু করে।
মশার কয়েল আবিস্কার হওয়ার এই ছোট্ট ইতিহাস আপনার নিশ্চয়ই ভাল লেগেছে। তাহলে, এই লেখাটি শেয়ার করে মশার কয়েল সম্পর্কে আপনার বন্ধুদের বিস্তারিত জানান।
ochena manush says
জেসিকা জেসমিন, খুব ভালো লিখেছেন। বাট কোয়েল এর বিস্তার ৬ ইঞ্চি, এটা একটু আপডেট করুন।