বর্তমান যুগে স্মার্টফোন ছাড়া যে কোনও মানুষ আনস্মার্ট হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। আর একটি ভালো মানের স্মার্টফোন হলে তো কথায়ই নেই, পুরো স্মার্ট তকমা নিয়ে চলতে পারে। বাজারে ফোন নির্মানকারি কোম্পানিগুলো তাই সব স্মার্ট মানুষদের কথা চিন্তা করে নেমেছে নতুন নতুন স্মার্টফোন তৈরি করার প্রতিযোগীতায়। চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি ভিভো এই প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে নেই। আগের কয়েকটি ফোনের জনপ্রিয়তার পর এবার তারা নিয়ে এসেছে ভিভো ভি৯ স্মার্টফোন যাতে রয়েছে আইফোনের মত ফুল ডিসপ্লে।
ভিভো কোম্পানি সম্প্রতি বাজারে অনেক ভালমানের স্মার্টফোন তৈরি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে। বাজারে ভিভো ফোনের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বাড়ছে। এই চাহিদায় যাতে কোন রকম ঘাটতি না থাকে তার জন্য একের পর এক দুর্দান্ত ফোন বাজারে নিয়ে আসছে ভিভো।
২০১৭ সালের শেষের দিকে যখন অ্যাপেল তাদের আইফোন ১০ নামে বাজারে নচ ডিসপ্লে যুক্ত আর শক্তিশালি ডুয়েল ক্যামেরার দারুন এক স্মার্টফোন এনেছে। তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা কোম্পানিগুলা নচ ডিসপ্লে যুক্ত মোবাইল ফোন বাজারে আনতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাজারে এলো নচ ডিসপ্লে যুক্ত ভিভো ভি৯ নামে স্মার্টফোন। যারা মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে সেলফি উঠাতে এবং ফটোগ্রাফী করতে ভালবাসেন তাদের কথা ভেবে বিশেষভাবে এই ভিভো ভি৯ স্মার্টফোনটি তৈরি করা হয়েছে। ২৪ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরার ফোনটির অসাধারন স্টাইলিশ ডিজাইন যে কাউকে সেটটির প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে।
ভিভো ভি৯ স্মার্টফোন রিভিউ
তো আর দেরি না করে জেনে নেই ভিভো ভি৯ স্মার্টফোনটিতে কি কি আকর্ষনীয় ফিচার থাকছে, জানা যাক ফোনটির ভেতরের সকল ভাল-মন্দ খুঁটি নাটি।
ভিভো ভি৯ ডিসপ্লে
ভিভো ভি৯ ফোনটিতে ৬.৩ ইঞ্চি, ১৯:৯ অনুপাত, এলসিডি নচ ডিসপ্লের সাথে ২২৮০X১০৮০ রেজুলেশন থাকছে, যা ফোনটিকে দেখতে অনেক আকর্ষনীয় করেছে। এই ফোনটিতে পিপিআই ঘনত্ব আছে ৪০০, তাই ডিসপ্লে শার্পনেস আশা করি ভালোই পাওয়া যাবে। তবে দুঃখের বিষয় এই যে প্রটেকশন হিসেবে কি গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে ভিভো তা নিশ্চিত করে উল্লেখ করেনি। তারপরও, প্রটেকশন হিসেবে বাজার থেকে ভালো গ্লাস পেপার ব্যবহার করে নিলে আর চিন্তা নেই।
ভিভো ভি৯ ফোনটির ডিজাইন বলতে গেলে এক কথায় চোখে পড়ার মত। হঠাৎ আপনার হাতে ফোনটি দেখে কেউ মনে করতে পারে আইফোন ১০। আইফোন ১০ এর নচ ডিসপ্লের মত এই ফোনটির ডিসপ্লে নচ যা দেখতে অনেক সুন্দর। তবে অনেকে বলে আইফোন ১০ এর কপি। যাইহোক, এর ফ্রন্টে রয়েছে ২৪ মেগাপিক্সেলের একটি ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং প্রক্সিমিটি, এম্বিয়েট লাইট সেন্সর আর একটি ছোট নটিফিকেশন লাইট।
ফোনটির ব্যাক পার্ট সম্পূর্ন অ্যালমুনিয়াম মেটাল দিয়ে তৈরি করা। এর ব্যাক পেনেলের বাম পাশে ভার্টিকেলি ডুয়েল ক্যামেরার নিচে রয়েছে সিংগেল এলইডি ফ্লাশ। ব্যাকপেনেলের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ফিংগার প্রিন্ট সেন্সর, তার নিচে ভিভোর অফিসিয়াল লোগো।
ফোনটির বাম পাশে রয়েছে একটি হাইব্রিড সিম স্লট যেখানে দুটি নেনো সিমের পাশা পাশি একটি মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করা যাবে এবং ডান পাশে যথারীতি পাওয়ার বাটন ও ভলিওম রকার রয়েছে। ফোনটির বটম সাইডে রয়েছে স্পিকার, মাইক্রো ইউএসবি টাইপ সি (USB Type-C) পোর্ট এবং চিরচেনা হেডফোন জ্যাক। ভিভো ভি৯ স্কিন টু বডি রেশু ৯০% এবং ওজন ১৫০ গ্রামের, ফোনটি গোল্ড ও ব্ল্যাক এই দুটি কালারে পাওয়া যাবে।
ভিভো ভি৯ ক্যামেরা
ভিভো ভি৯ প্রাইমারি ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়েল (16 MP + 5 MP ), যার অ্যাপাচার f/2.0 এবং 24 MP, ফ্রন্ট ক্যামেরা অ্যাপাচার f/2.0 । ফেস ডিটেকশন, অটোফোকাস, জিও ট্যাগিং, এইচডিআর, পেনোরেমা সেন্সর রয়েছে এই ফোনটিতে। ফোনটি প্রাইমারি ক্যামেরায় 2160@30fps, 1080@30fps এবং ফ্রন্ট ক্যামেরায় 1080p ভিডিও করতে সক্ষম।
ফোনটির ১৬ মেগাপিক্সেল হল প্রাথমিক সেন্সর আর ৫ মেগাপিক্সেল হল ডীপথ সেন্সর যা ব্যবহার করা হয়েছে বোকে এফেক্ট এর জন্য। ভিভো তার আগের সেটগুলোর তুলনায় এর ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তণ এনেছে। ভিভো ভি৯ এআই বোকে অ্যালগরিদম দ্বারা সমর্থিত। এই অ্যালগারিদম বৃহৎ পরিমানের তথ্য মেশিন লার্নিং উপর ভিত্তি করে অপ্টিমাইজ করা হয়েছে। ফলে আপনি অনেক নিখুঁত আর সুন্দর বোকে শট নিতে পারবেন এবং প্রথমে শট ও পরে বোকে করা যাবে।
নিচে ভিভো ভি৯ এর কিছু ক্যামেরা সেম্পল দেওয়া হলো-
ভিভো ভি৯ ব্যাটারি
ভিভো ভি৯ ফোনটিতে ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Non-removable LiIon 3260 mAh ব্যাটারি যা সাপোর্ট করবে কোয়ালকম’স কুইক চার্জ ৩.0। এই ব্যাটারিতে নরমাল ইউজে আপনি অনায়াসে একদিন চালিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু হেভি ইউজে তা সম্ভব নয়। বর্তমান হারে ভিভো ভি৯ ব্যাটারি mAh কমই হয়ে গেল।
ব্যাটারিটি আরও কিছু বাড়ালে স্মার্টফোনটি সকলের বেস্ট চয়েসের জায়গা দখল করতে পারত নি:সন্দেহে। যেখানে ২০১৮ তে অন্য কোম্পানিগুলা ব্যাটারি অনেক বেশি দিচ্ছে।
ভিভো ভি৯ স্পেসিফিকেশন
ভিভো ভি৯ এর স্পেসিফিকেশনে দেখা যাচ্ছে অক্টা কোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬২৬ সাথে ৪জিবি র্যাম এবং ৬৪জিবি স্টোরেজ সহ রান করছে। কিন্তু ২০১৮ তে এসে ভিভো এক বছরের পুরোনো চিপ সেট কেন ব্যবহার করল তা বুঝলাম না। যাইহোক, কাস্টম রোম হিসেবে পাচ্ছেন ফানটাচ ওএস ৪.০ এর উপর অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও সাথে সিপিও Octa-core 2.2 GHz Cortex-A53 যা ভালোই বলা যায়।
ব্লুটুথ হিসাবে থাকছে 4.2 ওয়াই ফাই জন্য থাকছে 2.4 গিগাহার্জ এবং 5 গিগাহার্জ সাপোর্ট ব্যান্ড, জিপিএস, ইউএসবি 2.0 সাথে ওটিজি সাপোর্ট এবং এফএম রেডিও। আর সেন্সর হিসেবে আছে এম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, এক্সেলেরোমিটার, কম্পাস এবং জাইরোস্কোপ। নেটওয়ার্ক হিসাবে পাবেন 4G এবং VoLTE কিন্তু সমস্যা হলো একটি সিম 4G কানেক্ট থাকা অবস্থায় অন্যটি 4G কানেক্ট করা যাবে না। অন্য সিমটি 3G বা 2G তে কানেক্ট করা যাবে। ফোনটিতে স্টোরেজ বাড়ানোর সুবিধা আছে আপ টু 256 গিবি পর্যন্ত।
ভিভো ভি৯ পারফোমেন্স
ভিভো ভি৯ এর অক্টা কোর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬২৬ চিপসেট পারফোমেন্স ভাল ছিল এবং স্টার্চ অনেক স্মুথ । ব্যাক ক্যামেরা লো লাইটে অনেক ভালো পিকচার পাওয়া গেছে। ছবির কোয়ালিটি কালার এডজাস্ট এক্সপ্লোরার সব ঠিক ছিল কিন্তু পোট্রেট মোডে ব্যাকগ্রাউন ব্লারের ইডজগুলা ক্লিয়ার ছিল না। ডে লাইটে অনেক ভালো ছবি দেখা যায় এবং এই ক্যামেরায় ইনডোর ও আউটডোরেতে অনেক ভাল ছবি পাওয়া যায়।
ফ্রন্ট ক্যামেরা পারফোমেন্স ঠিক ছিল। ফিংগার প্রিন্ট ও ফেইস আনলক ফাস্ট দেখা যায় । এই চিপসেটে গ্রেমিং পারফোমেন্স অনেক ভাল দেখা যায়। লাইট এবং হেভি গেমগুলাতে কোনো রকম লেগের দেখা যায়নি । তবে ব্যাটারিতে হিটিং ইস্যু পাওয়া গেছে, হেভি ইউজে ব্যাটারি একদিন ব্যাকাপ দিতে সক্ষম নয়। সব কিছু বিবেচনায় পারফোমেন্স এভারেজ বলা যায়।
শেষ কথা
একটি মিড রেঞ্জ ফোন হিসেবে ভিভো ভি৯ স্মার্টফোন তার ডিজাইন ও ডিসপ্লে আর ক্যামেরা পারফোমেন্সে অনেক ভাল, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে এই সময়ে এরকম চিপসেট আর ব্যাটারি ব্যাকাপ সত্যিই হতাশজনক।
Leave a Reply