ভিপিএন শব্দের সাথে কম বেশী সবাই পরিচিত। ইন্টারনেট দুনিয়ায় যারা নিজেকে নিরাপদ এবং লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ভিপিএন প্রধান হাতিয়ার। ভিপিএন দিয়ে অনেকে ব্লক করা ওয়েবসাইট ভিজিট করলেও ভিপিএন সম্পর্কে খুব বিস্তারিত অনেকেরই অজানা।
আসলে ইন্টারনেটের যে কোনো বিষয় ব্যবহার করার পূর্বে সে সম্পর্কে সামান্য কিছু হলেও ধারণা রাখা দরকার। তা না হলে দুষ্ট হ্যাকারদের খপ্পরে পড়ে আপনার সর্বস্ব হারাতে হবে। তাই, ভিপিএন আসলে কি এবং এটা কিভাবে কাজ করে সেটা জানা খুব জরুরি।
আজকের এই লেখায় আমরা ভিপিএন কি ও কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আলোচনা করবো ভিপিএন নিয়ে আপনাদের মনের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে। অনলাইনে অনেক ফ্রি ভিপিএন পাওয়া যায়। যেমন আইপি লুকিয়ে কাজ করার জন্যে ৫টি প্রি ভিপিএন নিয়ে আমাদের হৈচৈ বাংলায় আগেই একটি পোস্ট পাবলিশ করা হয়েছে।
তবে, এগুলো ব্যবহারের আগে আমাদের অবশ্যই জানা উচিৎ ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ। যদিও প্রায়ই আমাদের ভিপিএন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তবু এর নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করেই ব্যবহার করা উচিৎ। যাইহোক, এবার চলুন জানা যাক ভিপিএন কি।
ভিপিএন কি
ভিপিএন এর পূর্ণরূপ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। ভিপিএনের শব্দের মধ্যেই এর উত্তর বিদ্যমান। অনেকে ভিপিএনকে সুরক্ষিত সুড়ঙ্গের সাথে তুলনা করে থাকেন। আমিও এটাকে সুরক্ষিত সুড়ঙ্গের সাথে তুলনা করবো। সুরক্ষিত সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে গেলে বাহির থেকে যেমন বোঝার কোন উপায় নিয়ে সুড়ঙ্গ দিয়ে কি যাচ্ছে, তেমনি ভিপিএনও।
আপাতত বই পুস্তকের মত প্রথাগত সংজ্ঞা না দিয়ে ভিপিএন কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। এটা জানলে আপনি নিজেই সংজ্ঞা তৈরি করে নিতে পারবেন।
ভিপিএন কিভাবে কাজ করে
আপনি যখন ইন্টারনেটে প্রবেশ করেন, তখন আপনার একটি ঠিকানা তৈরি হয় যেটাকে আইপি অ্যাড্রেস বলা হয়। এই আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে আপনার ঠিকানা এবং কি থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তার পরিচয় পাওয়া যায়। অপর দিকে আপনি যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোথাও প্রবেশ করছেন, তখন তা আপনার আইএসপির এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি যাদের থেকে ইন্টারনেট নিচ্ছেন তাদের মধ্য দিয়ে।
আইএসপি চাইলে আপনার তথ্য দেখতে পারেন। যেমন, আপনি কখন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন তা জানতে পারেন এবং এনক্রেপটেড না হলে পাসওয়ার্ডও দেখতে পারেন। তবে, এই কাজ শুধু আইএসপি নয়, চাইলে অনেক হ্যাকারও দেখতে পারে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এসব থেকে বাঁচার উপায় কি! এক কথায় উত্তর হল ভিপিএন।
পূর্বেই বলেছি, ভিপিএন হল সুরক্ষিত সুড়ঙ্গের মত। ভিপিএন একটি প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এটার অর্থ হল আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে যাবেন, তখন প্রথমে এটা যাবে ভিপিএনের ক্লায়েন্টের নিকট। আর এই ক্লায়েন্ট এটাকে এনক্রিপ্টটেড করে আইএসপির নিকট প্রেরণ করবে। আর সবার শেষে ভিপিএন সার্ভার এটাকে এনক্রিপটেড অবস্থায় ঐ কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটের সার্ভারে ঢুকে ওয়েবসাইটটি আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের ব্রাউজারে দেখাবে।
প্রশ্ন আসতে পারে, এনক্রিপটেড জিনিসটা আবার কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এনক্রিপটেড হল আপনার ডাটা এলোমেলো হয়ে যাওয়া। যেমন ধরুন, আপনার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড হল Amar@Bangla। এখন এটা যখন এনক্রিপটেড হবে, তখন এটা হবে sadklfjhaskljfquaej। অর্থাৎ, এটা ভিন্নভাবে যাবে যেটাকে পুনরায় কনভার্ট করতে হলে ভিপিএন সার্ভারের অনুমতি লাগবে। আর ভিপিএন সার্ভার এ অনুমতি কেবল ফেসবুককে দিবে। মাঝখান দিয়ে যদি কোন হ্যাকার বা আইএসপি জানতে বা দেখতে চায়, তারা জানতেও পারবে না, দেখতেও পারবে না।
আরেকটা মজার ব্যাপার হল, ভিপিএন যেহেতু অন্য একটি নেটওয়ার্ক তথা ভিপিএনে প্রবেশ করার সাথে সাথে ভিপিএন কোম্পানি আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে ফেলে এবং তারা ভিন্ন একটি আইপি অ্যাড্রেস তৈরি হয়ে যায়, ফলে আপনার লোকেশন হাইড হয়ে যায়।
আইএসপি বা ওয়েবসাইট আপনার সঠিক লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে না। ফলে, কোন দেশের সরকার কোন ওয়েবসাইট বন্ধ করলেও ভিপিএনের মাধ্যমে ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হয়। তাহলে এই আলোচনার দ্বারা আমরা দুটি বিষয় বুঝতে পারলাম, ভিপিএন ২টি কাজে ব্যবহার করা হয়। যথা:
- নিরাপত্তার জন্য: আপনার তথ্য নিরাপদভাবে কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে প্রেরণের জন্য। যাতে করে অপরিচিত কেউ আপনার ডাটা সংগ্রহ করতে না পারে।
- আন-ব্লক করার জন্য: যেহেতু ভিপিএন আইপি হাইড এবং আপনার পরিচয় লুকিয়ে ফেলে, তাই কোন ওয়েবসাইট বা আইপি বুঝতে পারে না আপনি আসলে কোথা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। তারা কেবল মাত্র ভিপিএন কোম্পানি যা দেখায় তাই দেখে। যার দরুন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে আর কোন বাধা থাকে না।
এবার আসুন জানি, ভিপিএনের মধ্য দিয়ে তো ডাটা এনক্রিপটেড হয়ে যায়, এটা কতভাবে যেতে পারে। ডাটা প্রেরণের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভিপিএন প্রোটোকল। সাধারণত ৫ ধরনের প্রোটকল দেখা যায়। যথা:
- PPTP: PPTP এর পূর্ণরূপ Point-To-Point Tunneling Protocol। এই প্রোটোকলটি তৈরি করেছেন মাইক্রোসফট। খুব পুরাতন ভার্সন এটি, তাই পুরাতন কম্পিউটারে এটা ভাল কাজ করে। এটা ব্যবহার করা বেশ সহজ এবং ফাস্ট। তবে ভিপিএন হিসাবে এই প্রোটোকল বর্তমানে তেমন কার্যকর এবং নিরাপদ নয়।
- L2TP/IPsec: L2TP এর পূর্ণরূপ Layer 2 Tunneling Protocol। মাইক্রোসফট PPTP প্রোটকল যখন খুব একটা কাজের না বর্তমান সময়ে, তাই তারা Cisco এর L2F সাথে PPTP প্রোটোকল যুক্ত করে তুলনামূলক শক্তিশালী প্রোটকল তৈরি করে। কিন্তু এটাও বর্তমানে দুর্বল প্রোটকল হিসেবে বিবেচিত।
- SSTP: SSTP এর পূর্ণরূপ Secure Socket Tunneling Protocol। এটাও মাইক্রোসফটের তৈরি একটি প্রোটোকল। এটা SSL/TLS এনক্রিপশনের মাধ্যমে সংযোগ তৈরি করে। এছাড়া SSL এবং TLS এর রয়েছে বিল্ট ইন সেমেটিক কি কিপ্টোগ্রাফি। ফলে, এটা কেবল আপনার আর আপনার কাঙ্ক্ষিত সার্ভারের মাঝে তৃতীয় কোন পক্ষকে ডাটা দেখার সুযোগ দেয় না। এই প্রোটকলটি বেশ শক্তিশালী।
- IKEv2: IKEv2 এর পূর্ণরূপ Internet Key Exchange, Version 2, মাইক্রোসফটের আরেকটি বিল্ট ইন প্রোটকল। পূর্বের থেকে এটা আরও বেশী শক্তিশালী প্রোটোকল।
- OpenVPN: এটা একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট। এটা অনেক বেশী নিরাপদ এবং শক্তিশালী প্রোটোকল। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে মূলত ভিপিএনের মধ্য দিয়ে ডাটা প্রেরিত হয়। আর ভিপিএন অর্থ হল, আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে ভিন্ন আরেকটি কম্পিউটার প্রবেশ করে সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন। তাই, এর জন্য একটি ভিপিএন ক্লায়েন্ট লাগবে। আর এই ভিপিএন ক্লায়েন্ট পাবেন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে।
শেষ কথা
আপনি যদি শুধু ব্লক ওয়েবসাইটে প্রবেশের চিন্তা করেন, তবে ফ্রি ভিপিএন যথেষ্ট। কিন্তু, ব্লক এবং নিরাপত্তা দুটি খুঁজে থাকলে পেইড ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, ভিপিএন কিন্তু আপনার ডাটা দেখতে পারে।
Leave a Reply