পিসিতে ভিডিও এডিট করার জন্য অনেক সফটওয়্যার আছে এবং সেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো চাই নির্ঝঞ্ঝাটে হাতের এনড্রয়েড ফোনটা দিয়ে চটপট এডিটিঙের কাজটা সেরে ফেলতে। তখন কি করা যাবে? চিন্তার কোন কারণ নেই। অ্যান্ড্রয়েডের জন্যও ভাল ভিডিও এডিটিং অ্যাপস এখন সহজেই পাওয়া যায়।
গুগল প্লেস্টোর থেকেই কোন খরচ ছাড়াই আপনি ডাউনলোড করে নিতে পারেন এই অ্যাপগুলি। এগুলো ব্যবহার করাও সহজ। কারণ, এতে অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর ফিচার দেওয়াই থাকে। এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনি শুধু সুন্দরভাবে ভিডিও এডিট করতেই যে পারবেন তা নয়, ইউটিউব, ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে সেগুলো আপডেটও করতে পারবেন।
তাই আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম সেরা ১০টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ্লিকেশনের তালিকা।
সেরা ১০টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপস
এমন ৩টি কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্যে আপনার অবশ্যই ভিডিও এডিটিং শেখা উচিৎ। কিন্তু আপনার হাতে তো যথেষ্ট্য সময় নেই, যদিও ইচ্ছে রয়েছে। কাজেই আপনার প্রয়োজন এমন কিছু অ্যাপস্ যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই যেখানে সেখানে বসে হাতের অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি দিয়েই ভিডিও এডিট করতে পারবেন।
সুতরাং, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ডাউনলোড করে নিন নিচের যে কোনও একটি কিংবা একাধিক এডিটিং অ্যাপ্লিকেশন।
১। ফিল্মোরাগো (FilmoraGo)
চমৎকার ডিজাইনের জন্য অনেক ইউজারের প্রিয় এই অ্যাপটি। ভিডিও ট্রিমিং, কাটিং, থিম অ্যাড করা, মিউজিক দেয়া এই সমস্ত ফিচারগুলোই আছে এখানে। ইন্সটাগ্রামের জন্য 1:1 ভিডিও ওবং ইউটিউবের জন্য 16:9 ভিডিও, রিভার্স ভিডিও, স্লো মোশন, টেক্সট দেয়া, এগুলোও এই অ্যাপ থেকেই করতে পারবেন।
এছাড়াও, অনেক ধরনের টেমপ্লেট আর ইফেক্ট পাবেন এই অ্যাপে। আরও আনন্দের কথা এই ফিচারগুলো বেশিরভাগই ফ্রি।
২। এডোবি প্রিমিয়ার ক্লিপ (Adobe Premiere Clip)
এর সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকেই সরাসরি ভিডিও এডিট করা যাবে। কাজ হবে খুব দ্রুত। এই অ্যাপটার সবচেয়ে ভাল দিকটা হল এর অটোমেটিক ভিডিও ক্রিয়েশন। অর্থাৎ আপনি ছবি বা ক্লিপ বেছে নিলে এই অ্যাপটি তা অটোমেটিকালি ভিডিও রূপে তৈরি করে দেবে।
এছাড়া ভিডিও ট্রিমিং, কাটিং, ফিলটার, থিম অ্যাড করা, মিউজিক দেয়া এইসব ফিচারগুলো তো আছেই। এই অ্যাপটি ফ্রি, এবং কোন বিজ্ঞাপনও দেখাবে না। এর থেকে আপনি সরাসরি ভিডিও শেয়ারিং করতে পারবেন ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটারে।
৩। ভিডিওশো (Videoshow)
প্লেস্টোরে ফ্রি যে ভিডিও এডিটিং অ্যাপস গুলো আছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম সেরা। অনেকগুলো এওয়ার্ড পেয়েছে এই ভিডিও এডিটিং অ্যাপটি। ভিডিওশো এর সবচেয়ে ভাল দিক হল এটি ব্যাবহার করা খুব সহজ । সাধারণ ফিচারগুলো ছাড়াও এটি ব্যাবহার করে আপনি টেক্সট, ইফেক্ট, মিউজিক এবং সাউন্ড ইফেক্ট দিতে পারবেন। এমনকি লাইভ ডাবিংও করতে পারবেন।
ভিডিও, স্লাইডশো বা ভিলগে ব্যবহারের উপযোগী ৫০টির বেশি থিম আছে এই অ্যাপটিতে। আপনার ভিডিওর সাইজ ছোট করে নিতে কম্প্রেসও করতে পারবেন। এমনকি, এতে ভিডিও কোয়ালিটির কোন ক্ষতি হবে না। প্রায় সব এনড্রয়েড ডিভাইসেই ভিডিওশো সাপোর্ট করবে।
৪। পাওয়ার ডিরেক্টর ভিডিও এডিটর অ্যাপ (Power Director Video Editor App)
এই অ্যাপটিতে সকল প্রয়োজনীয় ফিচারসহ ভিডিও এডিট করার সুযোগ আছে। যদিও প্রথম প্রথম এর ব্যবহার শিখতে আপনার একটু কষ্ট হতে পারে। কিন্তু একবার শিখে নিলে একেবারে প্রফেশনাল কোয়ালিটির ভিডিও তৈরি করতে পারবেন এটি দিয়ে।
পাওয়ার ডিরেক্টর ভিডিও এডিটর অ্যাপ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর সবগুলো ফাংশন দেখে দেখে শেখার জন্য টিউটোরিয়াল আছে। ফ্রি ভার্সণে প্রায় সব ফিচার পাওয়া যাবে। আর আপগ্রেড করলে 1080P এবং 4K রেসোল্যুশোন পাবেন। ওয়াটারমার্ক মুছে ফেলতে পারবেন এবং স্লো-মোশন ভিডিও বানাতে পারবেন।
৫। কিনেমাস্টার (KineMaster)
চমৎকার ফিচারের পাশাপাশি এই অ্যাপটির ইন্টারফেসও খুব সুন্দর করে ডিজাইন করা। মিডিয়া ফাইল ইমপোর্ট করতে শুধু ড্র্যাগ করে এনে ছেড়ে দিলেই হবে। এই সহজ সুবিধাগুলো থাকায় আপনি খুব দ্রুত ভিডিও ফাইল এডিট করে প্রফেশনাল ভিডিও বানাতে পারবেন।
ভিডিও ফ্র্যাগমেন্টের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ট্রানসিশন যোগ করতে পারবেন। টেক্সট অ্যাড করতে পারবেন বা সাবটাইটেল দিতে পারবেন। এমনকি, হ্যান্ড রাইটিং দিতে পারবেন এবং প্রিভিউ ফিচার থাকায় চেঞ্জগুলো সহজেই দেখতে পারবেন।
৬। কুইক (Quik)
কুইক নাম শুনলেই যা মনে হয় তাই, এটি খুবই দ্রুত কাজ করে। আপনার প্রিয় ছবি ও ভিডিও ক্লিপগুলো জোড়া দিয়ে কুইকের সাহায্যে প্রফেশনাল ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারেন। ভিডিও ক্রপ করা, বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়া, টেক্সট যোগ করা – সবই করতে পারবেন কুইক অ্যাপের সাহায্যে। এমনকি মিউজিকের সাথে ভিডিও অটোমেটিকালি সিংক করা হয়ে যাবে।
ভিডিও তৈরি করে সেটা আপনি 1080P বা 720P ফরম্যাটে সেভ করতে পারেন বা সরাসরি আপলোড দিতে চাইলে তাও পারবেন। এমনকি ড্রাফট হিসেবে চাইলে সেভ করেও রাখতে পারেন পরে এডিট করার জন্য। কুইকের বড় সুবিধা হচ্ছে এতে কোন বিরক্তিকর অ্যাড নেই। দ্রুত ও সহজ ব্যবহারের জন্য এটি প্লেস্টোরের সেরা অ্যাপগুলোর একটি।
৭। ভিভাভিডিও (VivaVideo)
অনেক চমৎকার ফিচার পাবেন ভিভাভিডিওতে। খুব চিন্তাভাবনা করে এমনভাবে এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে যাতে সহজেই মোবাইল থেকে প্রফেশনাল ভিডিও তৈরি করা যায়। এর গ্যালারি থেকে আপনি শত শত ফিল্টার, এনিমেটেড ক্লিপ ও সাবটাইটেলের টেমপ্লেটের মধ্য থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন।
একটি স্লো মোশন ভিডিও মেকার ও স্লাইডশো মেকারও দেয়া আছে এই অ্যাপে। ভিডিও কাট ও পেস্ট করা, ট্রিম করা, একাধিক ক্লিপ একসাথে মার্জ করা, এগুলো খুবই সহজে করা যাবে। ভিভাভিডিওতে তৈরি করা ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে সরাসরি শেয়ার করতে পারবেন। সুতরাং, একটি ভাল মানের ভিডিও এডিটিং অ্যাপস হিসেবে ভিভাভিডিও ব্যবহার করতে পারেন।
৮। ফানিমেট (Funimate)
ফানি ভিডিও তৈরির কাজেই মূলত ব্যবহার হয় এই অ্যাপটি। অটোমেটিক শেয়ারিং অপশনও আছে এটিতে। ১০০টির বেশি অ্যাডভান্সড ভিডিও ইফেক্ট আছে এবং ছোট ছোট ভিডিওতে এগুলো খুব সহজেই মানিয়ে যায়। শর্ট ভিডিও লুপও বানানো যাবে মজা করার জন্য।
এটি ফ্রি হলেও ব্যবহারের আগে আপনাকে সাইন ইন করতে হবে। ইন্সটাগ্রামের মতই এখানে ফলোয়ার সিস্টেমও রয়েছে। তাই সহজেই আপনার ভিডিওর জন্য দর্শক পাবেন। একমাত্র সমস্যা হল বিজ্ঞাপনের সংখ্যা এখানে একটু বেশি।
৯। ম্যাজিস্টো ভিডিও এডিটর অ্যান্ড মেকার (Magisto Vedio Editor and Maker)
আপনার যদি কোন ভিডিও এডিটিং এর অভিজ্ঞতাই না থাকে, তবে ম্যাজিস্টো ব্যবহার করতে পারেন সাচ্ছন্দে। খুব সহজে ভিডিও ক্লিপ, ফটো, মিউজিক টেক্সট এবং বিভিন্ন ভিডিও ফিল্টার ও ইফেক্ট ব্যবহার করে আপলোডের উপযুক্ত ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
আপনি শুধু ভিডিও ক্লিপ আর সাউন্ডট্র্যাক সিলেক্ট করলেই অ্যাপটি আপনার জন্য অটোমেটিকালি ভিডিও বানিয়ে দেবে। কারণ ম্যাজিস্টোর একটি AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আছে যা ভিডিও থেকে ইন্টারেস্টিং অংশগুলো বেছে নিতে পারে। ভিলগার বা মারকেটারদের জন্য তাই এটা খুবই উপযুক্ত।
১০। মুভি মেকার ফিল্মমেকার (Movie Maker Filmmaker)
মুভি মেকার ফিল্মমেকার অ্যাপটি পুরোপুরি ফ্রি, এবং এর এডিটিং টুলগুলো ব্যবহার করা খুবই সোজা। 16:9 সাইজে বা ইন্সটাগ্রামের জন্য স্কোয়ার ফরম্যটে এটা দিয়ে ভিডিও বানাতে পারবেন। এতে টেক্সট এনিমেশন এবং মিউজিক স্লাইডশো দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অনেকগুলো ফিল্টার ও সিনেমাটিক ইফেক্ট পাবেন।
ছোট ভিডিও বানানোর জন্য খুবই ভাল অ্যাপ এটি, কিন্তু এতে অনেকগুলো অ্যাড দেখায় বলে একটু বিরক্তিকর।
এই লিস্টের সবগুলো অ্যাপই ফ্রিতে ব্যবহার করা যাবে। আশা করি অ্যানড্রয়েড ফোনে এই ১০টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপস এর লিস্টটি আপনাদের ভাল লেগেছে। তাহলে আর দেরি কেন? শুরু করে দিন চমৎকার সব ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করার কাজ। আর হ্যাঁ, ইউটিউব ভিডিও তৈরি জন্যে ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পাবেন এই ৫টি ওয়েবসাইটে। এগুলো থেকে যে কোনও মিউজিক ব্যবহার করতে পারবেন একদম ফ্রিতে।
Leave a Reply