ভিটামিন-ই এর অভাবে পেশি ও স্নায়ুর দুর্বলতা দেখা যায়। ছোট কিংবা বয়স্ক সবারই কমবেশি পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই, সবারই ভিটামিন ই যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। তবে, সব বয়সের জন্য সমান ভিটামিন-ই দরকার নেই। বয়স অনুযায়ী দৈনিক ভিটামিন-ই কতটুকু প্রয়োজন দেখে নিন-
- ০-৬ মাস — ৪ মিলিগ্রাম
- ৭-১২ মাস — ৫ মিলিগ্রাম
- ১-৩ বছর — ৬ মিলিগ্রাম
- ৪-৮ বছর — ৭ মিলিগ্রাম
- ৯-১৩ বছর — ১১ মিলিগ্রাম
- ১৪+ বছর — ১৫ মিলিগ্রাম
আমাদের দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি উৎপাদনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি এই ছয় উপাদান মিলে সুষম খাদ্য গঠিত হয়। সুষম খাদ্যের অন্যতম একটি উপাদান হলো ভিটামিন। দুধ কিংবা দুগ্ধজাত অনান্য খাবার কে আদর্শ সুষম খাদ্য বলা যায়।
সুষম খাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ লবণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা আমাদের হাড় গঠন, ক্ষত সারানো ছাড়াও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলে থাকবে ভিটামিন-ই যুক্ত ৮টি খাবার যেগুলো আপনার ইমিউনিটি বাড়াবে, পেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
ভিটামিন-ই এর অভাবে কম আলোতে দেখার জন্য চোখে যে রিসেপ্টর থাকে তা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এছাড়া এর অভাবে নার্ভ সিগনাল ঠিকমতো ট্রান্সমিট হয় না। ফলে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন: Peripheral Neuropathy দেখা যায়। তাই, আপনার অব্যশই ভিটামিন আছে এমন সব খাবার সম্পর্কে জানা উচিত।
ভিটামিন ই যুক্ত খাবার
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বের হয়েছে ভিটামিন-ই কিছু রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। যেমন-
- ক্যান্সার
- পারকিন্সন ডিজিজ
- অ্যালঝেইমার ডিজিজ
- ডায়াবেটিস
- কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
সূর্যমুখীর বীজে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-ই
স্নেকস হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ জনপ্রিয়। এছাড়াও ইয়োগার্ট কিংবা সালাদে সূর্যমুখীর বীজের গুঁড়া ছড়িয়ে দেয়া হয়। এতে করে এই খাবারগুলো মুখরোচক হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে ৩৫.১৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে।
এছাড়াও, সূর্যমুখীর বীজে আরো রয়েছে-
- ৮.৬ গ্রাম ফাইবার বা তন্তু
- ২০.৭৮ গ্রাম প্রোটিন
- ৬৪৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ৩২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম
- ৫ মিলিগ্রাম জিংক থাকে।
সূর্যমুখীর বীজের উপকারিতা:
- ওজন কমায়
- শরীরে শক্তি যোগায়
- ত্বকের স্মুথনেস বাড়ায়
- দেহের ভিতরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
কাজুবাদাম ভিটামিন ই সমৃদ্ধ
ওজন কমাতে, হাড় গঠনে সাহায্য করা এই বাদামটির প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৫.৩৬ গ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। বেকিং করা রুটি, দুগ্ধজাত রান্না করা খাদ্যের ব্যবহার হিসেবে কাজুবাদাম বহুল ব্যবহৃত।
ভিটামিন-ই ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে থাকবে:
- ২১.১৫ গ্রাম প্রোটিন
- ১২.৫ গ্রাম ফাইবার বা তন্তু
- ৭৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ২৭০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম
কাজুবাদাম খেতে মচমচে এবং প্রধানত চাষ হয় ক্যালিফোর্নিয়ায়। তবে, আমাদের দেশে কাজু বাদাম খুব সহজেই পাওয়া যায়। যে কোন বড় মুদি দোকানে খুঁজলেই আপনি কাজু বাদাম পেয়ে যাবেন। আমরা এইটাকে বাদাম বললেও মূলত এটি এক ধরনের গাছের বীজ।
কাজুবাদামের উপকারিতা:
- হাড় গঠনে সহায়তা করে। এক আউন্স কাজুবাদামে যে পরিমান ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ঐ পরিমান ক্যালসিয়াম পেতে ১/৪ কাপ দুধ খেতে হয়।
- সহজে হাড় মচকানো বা ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে
- ব্লাড প্রেশার কমায়
- কোলেস্টেরল লেভেল কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখে
- ওজন কমায়
কিছু তেল ভিটামিন-ই এর উৎস
কিছু তেলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই থাকে। এক টেবিল চামচ পরিমান বিভিন্ন তেলে ভিটামিন-ই কতটুকু থাকে তা দেখানো হলো-
Wheat Germ Oil: প্রতি টেবিল চামচে থাকে ২০.৩২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই। এই তেল ত্বক জ্বালা, রোদ থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সোরিয়াসিস রোগের জন্যও এটি উপকারী।
Rice Bran Oil: প্রতি টেবিল চামচে ৪.৩৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। এটিকে চালের তুষ তেল বলা হয়। এটি মিষ্টান্ন তৈরি, উদ্ভিজ্জ ঘি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি কিডনির পাথর কমাতে, ইনসুলিন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
Grapeseed Oil: এক টেবিল চামচে ৩.৯২ গ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। এটি হলো আঙুরের বীজের থেকে তৈরি তেল। ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে। ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহ, হৃদপিণ্ডের রোগ,মাইক্রোবিয়াল রোগের সম্ভাবনা কমায়।
এখন ভাবছেন এইসব তেল কোথায় পাবো?
বর্তমান ই-কমার্সের যুগে সবই পাওয়া যায়। Evaly , Daraz এইসব সাইট থেকে সহজেই কিনতে পারবেন। এছাড়াও, স্বপ্ন, পিকিউএস, আগোরাসহ সব ধরণের চেইন শপেই এই ধরণের প্রায় সব তেলই পাওয়া যায়।
অ্যাভোকাডো ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন ই
অ্যাভোকাডো হলো ভার্সেটাইল ফল যাতে খুব কম পরিমাণ শুগ্যার এবং খুব বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে। ডিম্বাকৃতির এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে যা ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন হিসেবে বিবেচিত। প্রায় সারা বছর জুড়েই আমাদের দেশের বড় বড় ফলের দোকানগুলোতে এই ফলটি পাওয়া যায়।
ইউনাইটেড স্টেটস্ ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (USDA) এর তথ্য মতে, ১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডোতে ২.০৭ গ্রাম ভিটামিন-ই থাকে।
একটি পূর্নাঙ্গ অ্যাভোকাডো ফলে (raw) ৪.১৬ মিলিগ্রাম আলফা-টোকোফেরল থাকে যা ভিটামিন ই এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফর্ম। অফিস অব ডায়েট্রি সাপ্লিমেন্ট এর মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের যে পরিমাণ ভিটামিন ই প্রয়োজন, তা একটি অ্যাভোকাডো ফলই পূর্ণ করতে পারেন।
অ্যাভোকাডো ফলে আরো যা যা আছে-
- ডায়েটারি ফাইভার – ১১% ডিভি
- ফলিক অ্যাসিড – ১০% ডিভি
- আয়রণ – ২% ডিভি
- ম্যাগনেশিয়াম – ৪% ডিভি
- পটাশিয়াম – ৬% ডিভি
- নায়াসিন বা ভিটামিন বি৩ – ৬% ডিভি
অ্যাভোকেড ফলের অন্যান্য উপকারিতা-
- এই ফলটি খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে।
- অ্যাভোকাডো চোখের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা প্রদান করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- মুড ভাল রাখে।
- হার্টের জন্যে উপকারী।
পালং শাকে ভিটামিন ই
সব ধরনের শাকেই প্রচুর ভিটামিন থাকে। তবে, প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ২.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণ করতে চাইলে সহজে প্রাপ্য এই দেশীয় শাকটি খেতে পারেন নিয়মিত। এটি আপনাকে ভিটামিন ই ছাড়াও আরো অনেক পুষ্টি সরবরাহ করবে। পালং শাকে আরো যা কিছু আছে-
- ৯৩৭৭ IU (International Unit) ভিটামিন-এ
- ২৮.১ গ্রাম ভিটামিন-সি
- ২.২ গ্রাম ফাইবার বা তন্তু
- ৫৫৮ গ্রাম পটাশিয়াম
এটি ডায়বেটিস রোগীদের নিয়মিত খাবার। এছাড়া ব্লাড প্রেশার কমাতে, শ্বাসকষ্ট রোধে, ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা রয়েছে।
চিনাবাদামে ভিটামিন ই আছে অনেক
আমাদের খাওয়া সাধারণ বাদামই চিনাবাদাম। প্রতি ১০০ গ্রাম ভাজা চিনা বাদামে ৪.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। কিন্তু লবণ, কৃত্রিম ফ্লেভার দেয়া চিনাবাদাম থেকে শুধু ভাজা বাদাম বেশি উপকারী। ১০০ গ্রাম বাদামে ভিটামিন-ই ছাড়াও নিম্নোক্ত উপাদানগুলো থাকে-
- ২৪.৩৫ গ্রাম প্রোটিন
- ৮.৪ গ্রাম ফাইবার বা তন্তু
- ৬৩৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ১৪.৩৫৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন
এটি ওজন কমায়, পিত্তথলির পাথর গঠন রোধ করে। কিন্তু অতিরিক্ত বাদাম খেলে অনেকের ক্ষেত্রেই এলার্জির সমস্যা দেখা যায়। তাই, একসঙ্গে অনেক বেশি বাদাম না খেয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে অল্প অল্প বাদাম খান। এতে আপনার ভিটামিন ই এর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আরো অনেক উপকার করবে।
Swiss Chard
এক ধরনের বিট জাতীয় সবজি গাছ যার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। দেখতে এটি আমাদের দেশের পুঁই শাকের মতো। কিছুটা লাল আভার এই শাকটি এখন আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। এর প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমানের মাঝে ১.৮৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই থাকে।
এতে থাকা অনান্য উপাদানগুলো হলো-
- ৬১১৬ IU ভিটামিন-এ
- ৮১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
- ৩০ গ্রাম ভিটামিন-সি
- ১.৮০ মিলিগ্রাম আয়রন
- ৩৭৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ১.৬ গ্রাম ফাইবার বা তন্তু
এতে ফাইবারের আধিক্য থাকায় এটি ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে, ব্লাড শুগার কমায়। পটাশিয়াম বেশি থাকে বলে এটি খেলে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
Beet Greens
অনেকেই Beetroot এর সাথে পরিচিত কিন্তু সবাই জানে না এই বিটের পাতাকে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়! একে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায় অথবা তেলে পরিনত করেও ব্যবহার করা যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম বিট গ্রীনে ১.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই ছাড়াও আরো থাকে-
- ২৪.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
- ৯০৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম
- ২.৯ ফাইবার বা তন্তু
- ১.৯০ মিলিগ্রাম আয়রন
- ১১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
এটি Anaemia বা রক্তশূন্যতা রোধে এবং এর চিকিৎসায় কাজে লাগে। দাঁত, ত্বক সুস্থ রাখতে; মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটির ভূমিকাও রয়েছে।
আশা করি, এই আর্টিকেল থেকে আপনি ভিটামিন ই যুক্ত খাবার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। খাবারের পাশাপাশি কোন খাবার কোন রোগ প্রতিরোধ করে তা ও দেয়া হয়েছে। ভিটামিন ই সহযোগে আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
Masud Rana says
Good to get these important information about the the foods that contain lots of Vitamin C.