যারা নতুন ব্লগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বা করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন করার কিছু উপায় নিয়ে আজকের পোস্ট। নতুনরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না তারা কিভাবে কাজ শুরু করবে বা কিভাবে ব্লগের মাধ্যমে আয় করবে। নতুনদের মধ্যে সহজে এবং অল্প সময়ে সফলতা পাওয়ার এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
কিন্তু কোন সাফল্যই সহজে ধরা দেয় না বা আসে না। প্রত্যেকটা সফলতার পিছনে একটা কঠোর মেধা, শ্রমের ও সময়ের গল্প থাকে। সেই গল্পটাকে আগে জানতে হবে, বুঝতে হবে, তারপর চেষ্টা করতে হবে। যখন যে কাজ করবেন তখন সেই কাজের পিছনে পূর্ণ মেধা ও শ্রম দিয়ে করার চেষ্টা করবেন। সব সময় সহজ আর শর্টকাটের পিছনে না ছুটে একটু পিছনের গল্পটা জানার চেষ্টা করবেন। তাহলেই ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে উপার্জণ করতে পারবেন।
ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন করার উপায়
আজ আমি ওয়েব সাইট থেকে আয়ের কিছু সেরা উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার বা পরিচয় করিয়ে দিব। যেটা আপনাকে কাজ শুরু করতে সুন্দরভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু সবগুলো উপায় একবারে ধরতে যাবেন না। নিচের তালিকা থেকে একটা বা দুইটা বিষয় বাছাই করে দৃঢ়তার সাথে কাজ করে শুরু করবেন। আর যে কোন একটা বিষয়ের উপর বেশি ফোকাস দিবেন।
১. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে হচ্ছে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অন্যের পণ্য বা সেবা প্রচার করবেন আর ভিজিটর যদি আপনার লিংক এর মাধ্যমে কিছু কিনে তাহলে আপনি তার থেকে কিছু কমিশন পাবেন। এক এক কোম্পানি এক এক রকম কমিশন দিয়ে থাকে। সেরা ১০টি এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক থেকে একটি বা একের অধিক প্লাটফর্ম বেছে নিন আর আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এফিলিয়েট শুরু করুন।
এ সব নেটওয়ার্কের মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ আমাজন একটি বড় প্লাটফর্ম। তাদের পণ্য আপনার ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য তারা ভাল পেমেন্ট দিয়ে থাকে। যে সব পণ্য বা সেবার চাহিদা আছে সেই পণ্য বা সেবা নিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে কাজ করতে পারেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করার কিছু কৌশল জেনে নিন আর সেগুলো সুন্দরভাবে অ্যাপ্লাই করুন। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং কিছু সাধারণ ভুল থাকে যা শুরুর দিকে অনেকেই করে থাকে। আপনাকে সেই ভুলগুলো জেনে নিতে হবে এবং সেগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, এফিলিয়েট মার্কেটিং এ সাফল্য পেতে হলে আপনার মাঝে একদিকে যেমন অনেক ধৈর্য্য থাকতে হবে, অন্যদিকে থাকতে হবে যে প্রোডাক্টের খুব ভাল রিভিউ লেখার যোগ্যতা। একটা প্রোডাক্টের রিভিউ এমনভাবে লিখতে হবে যাতে পাঠক আপনার লেখাটি পড়ে এতই মুগ্ধ হয় যে, প্রোডাক্টটি কেনার জন্য সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে বিক্রিটাই আপনার আয়ের একমাত্র পথ, প্রোডাক্ট যদি বিক্রি করতে না পারেন, তো আপনার আয় হবে না। আর প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ ইঞ্জিনের র্যাংকিয়ে থাকা। সুতরাং, শুরুর দিকে বিক্রির চিন্তা না করে খুব ভাল মানের রিভিউ লিখুন আর সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে এসইওর কাজ করুন।
একটি উদাহরণ দিয়ে এ বিষয়টি পরিস্কার করা যাক। ধরুন, আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর প্রোডাক্ট রিভিউ লিখেছেন। কিন্তু সার্চ রেজাল্টে একটি লেখাও র্যাংকিংয়ে নেই। তাহলে, ভিজিটর আসবে কোথা থেকে আর কেনার প্রশ্ন তো তারও অনেক পরে।
ধরুন, আপনি আসুস ব্র্যান্ডের একটি ল্যাপটপের রিভিউ লিখেছে, লেখাটিও অসাধারণ হয়েছে, যে কেউ লেখাটি পড়লেই ল্যাপটপটি কিনতে চাইবে। কিন্তু আপনার রিভিউটি সার্চ ইঞ্জিনের র্যাংকিংয়ে নেই অর্থাৎ ওই ল্যাপটপের নাম লিখে যারা সার্চ দিচ্ছে তারা আপনার লেখাটি কখনো পাচ্ছে না, পাচ্ছে বড় বড় ব্লগ বা ওয়েবসাইটগুলোর লেখা। তাহলে, আপনার ওয়েবসাইট থেকে আসুসের এই ল্যাপটপটি কখনোই বিক্রি হবে না, আপনিও আয় করতে পারবেন না।
সুতরাং, শুধু লিখলেই হবে না, লেখাগুলোর পেছনে প্রচুর এসইও করে সেগুলোকে র্যাংকিংয়ে নিয়ে আসতে হবে। আপনার যদি ওই পরিমাণ ধৈর্য্য আর অর্থ ব্যয় করার মত অবস্থা থাকে, তবে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আপনি অবশ্যই সফলতা পাবেন।
২. গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense)
ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন করার সেরা মাধ্যম গুগল অ্যাডসেন্স। গুগল অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজে আপনি কপি এবং পেস্ট কোড এর মাধ্যমে আপনার সাইটে বিজ্ঞাপন সেট আপ করতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভিজিটরা ইন্টারনেট যে সব বিষয় অনুসন্ধান করছে এমন বিজ্ঞাপনগুলো সেট আপ করতে পারেন।
একজন ভিজিটর প্রত্যেকবার একটি বিজ্ঞাপন (CPC) বা প্রতি 1000টি ইমপ্রেশন (CPM) -এ ক্লিক করলে এই নেটওয়ার্ক আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার উপায় জেনে নিন আর অ্যাডসেন্সের অ্যাড বসিয়ে ব্লগ থেকে আয় করুন। গুগল অ্যাডসেন্স থেকে কি পরিমাণ আয় করা যায় তা আপনার চিন্তারও বাইরে। তবে, এটির ক্ষেত্রেও আপনার ব্লগের লেখাগুলো র্যাংকিংয়ে না থাকলে, অ্যাডসেন্স থেকে আপনি আয় করতে পারবেন না।
সুতরাং, আপনার ব্লগের পোস্টগুলো র্যাংকিংয়ে আনার জন্য নিয়মিত এসইও করুন। এসইও এমনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আপনি সেটাকে কোনভাবেই অবহেলা করতে পারবেন না। এমনকি, আপনাকে নিয়মিত এসইও করতে হবে, ব্রেক দিলে হবে না। এসইওর মূল কাজ ব্যাংলিংক তৈরি, আপনি যত এসইও করবেন, আপনার ব্লগ ততই র্যাংকিংয়ে আসতে থাকবে। মনে রাখবেন, আপনার ব্লগ পোস্টগুলো র্যাংকিংয়ে আনতে না পারলে আপনি অর্গানিক ভিজিটর পাবেন না এবং অাপনার ব্লগে প্রদর্শিত অ্যাডগুলোতে ক্লিক পড়বে না আর আপনারও উপার্জন হবে না।
৩. টেক্সট লিংক বিজ্ঞাপন(Text link advertising)
বিজ্ঞাপনদাতাদের ওয়েবসাইট থেকে বেসিক লিঙ্কগুলি বিক্রি করে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট হারের চার্জ বা প্রতি ক্লিকের চার্জ করতে পারেন। নিদিষ্ট ক্রেতা খুঁজে বের করার জন্য Backlinks.com এর মত প্রচুর বাজার রয়েছে। তবে, আপনার ব্লগ যদি র্যাংকিংয়ে না আসে, তাহলে কেউ আপনার ব্লগে টেক্সট লিংক বিজ্ঞাপন দেবে না।
ধরুন, ইউনিলিভার কোম্পানী তাদের একটি প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেবে, তাহলে তারা কি প্রথম আলো, কালের কন্ঠ কিংবা অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলো রেখে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেবে! নিশ্চয়ই না, সুতরাং বুঝতেই পারছেন এফিলিয়েট বলুন, গুগল অ্যাডসেন্স বলুন, ব্যানার সেল বা টেক্সট লিংকই বলুন, কোনটা দিয়েই কাজ হবে যদি না আপনি আপনার ব্লগ পোস্টগুলোকে র্যাক পাওয়াতে না পারেন।
৪. স্পন্সর পোস্ট (Sponsor Post)
বিজ্ঞাপনদাতা আপনাকে একটি নিবন্ধ আকারে একটি বিজ্ঞাপন লিঙ্ক প্রদান করবে যে লিঙ্কটা আপনি আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অর্থ আয় করতে পারেন। এটাও নির্ভর করে আপনার ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তার উপর।
৫. পণ্য রিভিউ
অনলাইনে কোম্পানীর সকল ধরণের পণ্য পর্যালোচনা করার জন্য কোম্পানী অর্থ প্রদান করে থাকে। আপনিও সেই সব পণ্য আপনার ওয়েবসাইটের পর্যালোচনা করার মধ্যমে অর্থ আয় করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইট যদি পজিশনে থাকে, তবে এখনই Toluna তে সাইন আপ করে সর্বশেষ সুযোগ গ্রহণ করুন।
৬. ডিজিটাল প্রোডাক্টস (Digital Product)
ডিজিটাল পণ্য বলতে Books, printables, গ্রাফিক্স, টেমপ্লেট এবং পডকাস্ট যা আপনার সাইটকে চলমান অর্থ আয় করতে সহায়তা করবে। আপনি ৫০০০ শব্দের একটি ইবুকের জন্য প্রায় £ 2.99 চার্জ করতে পারেন। আরও ভাল আইডিয়া বা অনুপ্রেরণার জন্য মার্কেটপ্লেস দেখুন।
৭.অনলাইন কোর্স (Online Course)
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি অ্যাড-অন হিসাবে একটি অনলাইন কোর্স তৈরি করুন। এটি অন্য ধরনের প্রিমিয়াম সামগ্রী যেখানে দর্শক অতিরিক্ত তথ্য অ্যাক্সেস করতে অর্থ প্রদান করে থাকে। যারা তাদের ইমেল মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব এবং অর্থ প্রদান করেছে তাদের কাছে AWeber এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিতরণ করা যায়। অনলাইন কোর্স তৈরি করে আপনি আপনার সাইটে কোর্স বিক্রি করেও অর্থ আয় করতে পারেন।
৮. আমাজন স্টোর পেজ ( Amazon Store Page)
সহজেই আপনি আপনার ওয়েবসাইটে একটি আলাদা আমাজন স্টোর পেজ যুক্ত করতে পারেন। তারপর আপনার ওয়েবসাইটের পাঠকদের সাথে প্রাসঙ্গিক পণ্যগুলি সম্পকে সুপারিশ করতে পারেন। যদি তারা কোন পণ্য আপনার ওয়েবসাইট থেকে কিনে সেক্ষেত্রে ১% থেকে ১০% কমিশন আয় করেতে পারবেন। এটা অনেকটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মত। আমাজন সাইট থেকে সহজেই আপনি আপনার সাইটে স্টোর পেজ যুক্ত করে নিতে পারেন।
৯. ইউটুবে ভিডিও কনটেন্ট (YouTube video content)
আপনি ভাল মানের ভিডিও তৈরি পারেন। এই ভিডিও কেবল আপনার দর্শকদের আনন্দ দিতে সহায়তা করবে না, সাথে সাথে এটি আপনাকে নগদ অর্থ উপার্জন করতে সহায়তা করবে। প্রথমে আপনি একটি ভাল মানের ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে উপলোড করেন। তারপর আপনার ব্লগে আপনার YouTube ভিডিওটির লিঙ্ক অ্যাড করে দিন। আপনার ভিডিও যদি ভাইরাল হয়ে যায়, তাহলে আপনি এখান থেকে বেশ ভাল আয় করতে পারবেন।
১০. কনসাল্টিং ( Consulting)
আপনি যদি কোন বিষয়ে দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ হন, তাহলে আপনি অনলাইনে সেই বিষয়ে কনসালট্যান্সি মাধ্যেমে অর্থ আয় করতে পারেন। এখন এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আপনি আপনার জ্ঞান কে আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচার করুন অথবা পডকাস্টের মাধ্যমে অথবা আপনার স্কাইপি কল এর মাধ্যমে আপনার দক্ষতা বন্টন করুন। যেখানে দর্শক আপনার জ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়ার পূর্বে আপনার কনসালট্যান্সি ফি প্রদান করবে বা করে থাকে।
ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জন করার এই ১০টি মাধ্যমের মধ্য থেকে আপনি যে কোন একটি বা দুটি মাধ্যমের উপর ফোকাস দিন। আর যে কোন একটিকে ভালভাবে আয়ত্ত করার চেষ্টা করেন। অনলাইনে আয়ের উপায়গুলো সহজ কিন্তু সেটা অর্জন করা বেশ কঠিন। তবে, যখন উপার্জণ শুরু হবে তখন আপনি সেই উপার্জণ খরচ করে শেষ করতে পারবেন না।
Leave a Reply