অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অন্যতম প্রধান সমস্যা এর চার্জের স্থায়িত্ব নিয়ে। ফোন একটু পুরনো হয়ে গেলেই শুরু হয় এই চার্জ না থাকার বিড়ম্বনা। আসলে কেন হয় এ রকম সমস্যা? সহজ কথায় বলতে গেলে, এই সমস্যাটি হয় স্মার্টফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর অ্যাপ আপনার ডিভাইসে ইন্সটল থাকার কারণে। এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো আপনার মোবাইল ফোনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে, আপনি তা বুঝতেও পারছেন না।
আপনি যদি খেয়াল করেন যে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চার্জ তুলনামূলক তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে, তবে আপনি খুঁজে বের করতে পারেন আসলে এই চার্জটা ঠিক কোন কারণে এত তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে। যে কারণটি খোঁজার কথা সাধারণ কারো মাথায় আসে না, সেটি হচ্ছে অ্যাপ। সুতরাং জেনে নিন কোন অ্যাপগুলো আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।
স্মার্টফোনের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর অ্যাপ
আমরা কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে দেখে নেব কোন কোন রাক্ষুসে অ্যাপ আমাদের প্রিয় ফোনটির চার্জ খেয়ে ফেলছে এবং ব্যাটারির আয়ু দ্রুত কমিয়ে দিচ্ছে।
অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাটারি স্ক্রিন অপশনটি আপনাকে দেখাবে আপনি শেষবার ফোন চার্জ দেওয়ার পর থেকে ফোনের অ্যাপ, সিস্টেম সার্ভিস এবং হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলো কে কতটুকু পরিমাণ চার্জ শেষ করেছে।
ব্যাটারি স্ক্রিন অপশনে কিভাবে যাবেন?
ফোনের সেটিংস অপশনে যান। তারপর “Device” সেকশনটি ওপেন করুন এবং সেখানে “Battery” অপশনটিতে প্রবেশ করুন।
আরেকটি উপায়ে আপনি এই অপশনটি খুঁজে পেতে পারেন। নোটিফিকেশন বারটি নিচের দিকে টানুন। এখানে ব্যাটারি আইকন অথবা ব্যাটারি সেভার (কিছু কিছু ডিভাইসের জন্য প্রযোজ্য) আইকনটিতে লং প্রেস করুন। দেখবেন সরাসরি ব্যাটারি স্ক্রিনটিতে প্রবেশ করেছেন আপনি।
শেষবার ফুল চার্জ হওয়ার পর থেকে আপনার ব্যাটারির ব্যবহার দেখাবে এই ব্যাটারি স্ক্রিন অপশনটি। যদি আপনি কিছুক্ষণ আগে আপনার ফোন/ ট্যাব চার্জে দিয়ে থাকেন, তাহলে এই অপশনটি এই মূহুর্তে আপনার জন্য খুব একটা কাজে লাগবে না। সেজন্য আপনাকে এই কাজটি করতে হবে আপনার ব্যাটারির চার্জ যখন মোটামুটি অনেকখানি লো থাকবে তখন। চার্জ লো থাকাকালীন সময়ে আপনি আসলে বুঝতে পারবেন কোন কোন অ্যাপগুলো আসলে আপনার ফোনের চার্জ খরচ করেছে।
অ্যান্ড্রয়েড ৭ বা এর চেয়ে পুরাতন ভার্সনগুলোতে আপনি ব্যাটারি ডিসচার্জের তথ্যগুলোর একটা চার্ট পাবেন, সেই চার্টটির নিচেই আপনি দেখতে পাবেন কোন কোন অ্যাপ আপনার ব্যাটারি ধ্বংস করছে। অ্যান্ড্রয়েড ৮ বা তার উপরের ভার্সনগুলোতে আপনি এই লিস্টের ঠিক উপরে বেশ কয়েকটি বাড়্রটি সেটিংস পাবেন। তাই এই ভার্সনগুলোতে আপনি কাঙ্ক্ষিত চার্টটি দেখতে হলে স্ক্রল করে নিচে নামতে হবে।
স্যামসাং এর ডিভাইসগুলোতে আপনাকে “Battery Usage” নামক বাটন চাপতে হবে তাহলে আপনি সেই লিস্টটি দেখতে পাবেন।
আমি আগেই বলেছি আপনার ডিভাইসটি চার্জ থেকে খোলার পর অনেকক্ষণ চালু অবস্থায় না থাকলে আপনি এই পর্যবেক্ষণের ভালো ফলাফল পাবেন না। তো আমি ধরে নিচ্ছি আপনার ফোনটি দীর্ঘসময় ধরে চালু আছে। এখন আপনি এই লিস্টে দেখছেন আপনার কোন অ্যাপটি কত সময় ধরে চলেছে এবং তার ফলে সেই অ্যাপ কত পার্সেন্ট চার্জ খেয়েছে। আপনি নির্দিষ্ট কোন অ্যাপের উপর টাচ করে সেই অ্যাপের ব্যাটারি ব্যবহারের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন।
কী কী কাজ করলে ফোনে দীর্ঘসময় ধরে চার্জ থাকবে?
আমাদের ফোনের একটা সিংহভাগ চার্জই নিয়ে নেয় ফোনের স্ক্রিণ। প্রয়োজন ছাড়া আপনার ফোনের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন।Bluetooth, Mobile data, Hotspot ইত্যাদি প্রয়োজন ছাড়া অন করে রাখবেন না।
একটু আগে যে অ্যাপগুলো দেখেছেন বেশি চার্জ খরচ করছে সেগুলো খুব বেশি দরকার না হলে আনইন্সটল করে দিন। হাই গ্রাফিক্সের গেমগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি চার্জ শেষ করে। আপনি খেয়াল করবেন ভারি গেমগুলো কিছুক্ষণ খেলার পরেই আপনার ফোন গরম হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটারির অতিরিক্ত পাওয়ার ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। তাই হাই গ্রাফিক্সের গেম একটানা বেশি সময় ধরে খেলবেন না।
কিছু কিছু অ্যাপ আছে যেগুলো আপনার অজান্তেই ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে। এই অ্যাপগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ আপনার ডিভাইসটি অন আছে। এ দিক দিয়ে সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো সবচেয়ে এগিয়ে। ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপটি একাই যথেষ্ট আপনার ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ করার জন্য। এটি একই সাথে প্রচুর চার্জ শেষ করে, অনেকটা র্যাম দখল করে রাখে এবং প্রচুর ইন্টারনেট খরচ করে থাকে। বিশেষ করে যারা মোবাইল ডাটা দিয়ে ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করেন তাদের ভোগান্তিটা সবচেয়ে বেশি। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনি ফেসবুকের অফিসিয়াল অ্যাপটির বদলে বিকল্প কোন হালকা অ্যাপ ব্যবহার করুন।
অনেক ফোনে ফেসবুক অ্যাপ বিল্ট-ইন থাকে। তাই আনইন্সটল করা যায় না। সেক্ষেত্রে অ্যাপটিকে “Disable” করুন। তারপর ফেসবুক লাইট অ্যাপটি ইন্সটল করতে পারেন। আর যদি এটি ভালো না লাগে তাহলে আমার পছন্দের মেটাল নামের এই অ্যাপটি নামিয়ে নিন গুগল প্লে স্টোর থেকে এবং নিশ্চিন্তে ফেসবুক ব্রাউজ করুন। একইভাবে আপনি চাইলে ফেসবুক মেসেঞ্জারের পরিবর্তে মেসেঞ্জার লাইট ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ব্যাটারির লাইফটাইম অনেক বাড়বে।
কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর গুগল ম্যাপ, গুগল প্লে সার্ভিস, গুগল হ্যাংআউট, লাইন, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, যে কোন ফটো এডিটর, ক্যান্ডি ক্রাশ বা ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস জাতীয় গেম বা অ্যাপগুলো আপনি ম্যানুয়ালি “Force stop” করে রাখুন।
যদি আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড ৮ হয়, তাহলে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখতে পারবেন কোন কোন অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে এবং ব্যাটারির চার্জ শেষ করছে। আপনি ইচ্ছা করলে এই অপশনটি বন্ধ করে রাখতে পারেন; তবে চালু রাখা ভালো।
এছাড়া অ্যান্ড্রয়েডের অন্যান্য ভার্সন এবং কিছু কিছু ডিভাইসে “Battery Saver” অপশন থাকে। আপনার ফোনে যদি এই অপশনটি থাকে, তাহলে সেটি অন করে রাখুন।
একদম শেষ টিপস হচ্ছে – আপনার ফোনটির ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা সবগুলো অ্যাপ একসাথে বন্ধ করতে Greenify অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি অত্যন্ত কাজের একটি অ্যাপ।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর অ্যাপ শনাক্ত করুন এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী ধাপগুলো মেনে কাজ করে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন। তো এখন থেকে ফোনের ব্যাটারির চার্জ নিয়ে আর বিড়ম্বনা নয়। আপনার কাছের মানুষদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করে ফেলুন এখনই যাতে তারাও নিজেদের ফোনের ব্যাটারি সেভ করতে পারেন উল্লেখিত উপায়গুলো ব্যবহার করে।
রাশেদুল ইসলাম পাভেল says
স্মার্টফোনে আর কি কি অ্যাপের জন্য কি ধরনের সমস্যা হয় এ নিয়ে কিছু পোষ্ট করলে ভালো হতো।
আশিক আকঞ্জি says
আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। এই বিষয়ে আরো পোস্ট করার ইচ্ছা আছে।