সব মানুষকেই জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ব্যর্থতার স্বাদ নিতে হয়। সেটা আজকে হোক কিংবা কাল। মানুষই এই দুনিয়াকে এই পর্যন্ত এনেছে। যখন আপনি শুনছেন মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, তখন আপনি জানেন না এর পেছনে কতবার ব্যর্থ হওয়ার গল্প আছে। মানুষ যখনই কিছু করতে এগিয়ে গিয়েছে, সমানভাবে এগিয়ে গিয়েছে ‘ব্যর্থতা’।
একজন মানুষ জীবনে বহুবার অথবা সহস্রবার ব্যর্থ হতে পারে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের ব্যর্থ হওয়ার বহু গল্প রয়েছে। এটা এমন কিছু নয়, বরং কিছু জিনিস নতুন করে জানার সুযোগ।
ব্যর্থতার মাধ্যমে আপনি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শিখতে পারবেন যা আপনার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কাজে লাগবে। কিন্তু, ব্যর্থ না হলে এসব কেউ শিখতে পারে না। তবে, এমন ১০টি খারাপ অভ্যাশ আছে যেগুলো মানুষকে বারবার ব্যর্থ করে দেয়। ব্যর্থতা কাটিয়ে সফল হতে হলে আপনাকে সেগুলো জানতে হবে।
আপনি হয়তো এটাও জানেন না, পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষরা কিভাবে তাদের ব্যর্থতার সময়গুলো কাটিয়েছে এবং কিভাবে আবার ফিরে এসে সফল হয়েছেন।
আপনি হয়তো এখনো জানেন না ব্যর্থতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে যা আমাদের সকলেরই জেনে রাখা জরুরী। আসুন, এখন জেনে নেই ব্যর্থতা আমাদের কী কী শিক্ষা দেয়।
১. ব্যর্থতা মানুষকে মানসিক শক্তি যোগায়
সঠিক চরিত্র গঠনের শিক্ষা একজন মানুষ সবকিছু থেকেই নিতে পারে, শুধুমাত্র ব্যর্থতা থেকেই নয়। তবে, ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে, মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে। জীবনে একবার ব্যর্থ হওয়া মানে আপনি নিজেকে জানার সুযোগ পাবেন, যে সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরো পরিণত করে তুলতে পারবেন।
মূল কথা হচ্ছে এই যে, ব্যর্থতা সব সময় ব্যর্থতাই নয়; বরং নতুন করে শুরু করার কিংবা আরো শক্তিশালী হয়ে সফলতায় ফিরে আসার সূবর্ণ সুযোগ।
২. ব্যর্থতা নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে
ব্যর্থ হলে আমরা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। নানা রকম নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা ঘিরে ধরে। হতাশা থেকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেই যা আমাদের জীবননাশের কারন হয়ে দাঁড়ায়। আমরা কখনো ভাবি না যে, আমাদের আবার নতুন করে শুরু করার সুযোগ আছে। একবার কিংবা দুইবার ব্যর্থ হলেই যে সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়, এমন নয়।
মনে রাখবেন, যখন আপনি একটি কাজে ব্যর্থ হচ্ছেন, তার মানে আপনার জন্য নতুন আরেকট কাজ আবার শুরু থেকে করার সুযোগ আছে। তাই, ব্যর্থতা সব সময় নতুন সুযোগের সৃষ্টি করে এটা মনে রাখতে হবে।
৩. ব্যর্থতা মানুষের বড় শিক্ষক
ব্যর্থতার ভাল একটি দিক হচ্ছে, এটি আপনাকে আপনার শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা সম্পর্কে ধারণা দেয়, যা জীবনে চলার পথে আলো হয়ে আপনাকে পথ দেখাবে। অথবা, যখন কোনো কিছু করতে যাবেন, তখন নিজের সম্পর্কে যা জানেন সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে পারবেন।
জীবনের বিভিন্ন স্তরে সেটা কাজের জায়গা হোক, সম্পর্কের জায়গা হোক, খেলার মাঠে হোক কিংবা রাস্তা-ঘাটে চলার সময় হোক; মনে রাখবেন, ব্যর্থতা সব সময় সফলতার দিকেই নিয়ে যায়।
৪. ব্যর্থতা সৃজনশীলতা তৈরি করে
একটি কথা প্রচলিত আছে যে, যদি প্রয়োজনীয়তাই নতুন নতুন আবিষ্কারের জননী হয়, তাহলে ব্যর্থতা হচ্ছে নতুন নতুন আবিষ্কারের জনক। ব্যর্থতা নতুন সুযোগ তৈরির পাশাপাশি নতুন জিনিস আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখে। শিল্পী ও প্রণেতারা এই বিষয়টি ভাল করে জানে যে, যদি একটা কাজ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ না হয়, তাহলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পথ আছে কাজটি সফল করার।
ধরেন, আপনি কোনো কাজ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন এবং বারবার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন অনবরত, এর মাধ্যমে নতুন কিছু আপনি পেয়েও যেতে পারেন, যেটা কখনো কেউ চিন্তাও করেনি।
৫. ব্যর্থতা সহনশীল হতে শেখায়
মানুষ হিসেবে উন্নত ও পরিপক্বতার শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি ব্যর্থতা আমাদের সহনশীল হতেও শিক্ষা দেয়। ব্যর্থ হওয়ার মতো অস্বস্তিকর বিষয় সহ্য করেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাও ব্যর্থতা থেকেই নিতে হবে।
এরকম অনেক গ্রেট ব্যাক্তিত্ব রয়েছেন যারা জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে বহুবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু, তাই বলে তারা থেমে থাকেননি। তারা নতুন উদ্যমে আবার শুরু করে ঠিকই কিন্তু সফলতার চূড়ায় উঠে গিয়েছেন। তাই ব্যর্থ হলেই যে আর সম্ভব না, এই ভুল শিক্ষাও ব্যর্থতা থেকেই নিতে হবে এবং সংশোধন করতে হবে।
৬. ব্যর্থতা ব্যক্তিসত্ত্বা নিয়ে ভাবতে শেখায়
ব্যর্থতা আপনার ব্যক্তিসত্ত্বা নিয়ে নতুন করে আপনাকে ভাবতে শেখাবে। ফলে, আপনার ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন হবে, আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে পারবেন। একেক জনের ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণ থাকে। কারো ক্ষেত্রে পরিকল্পনায় ভুল থাকে। কারো বেলায় উপযুক্ত সময়ে শুরু না করার কারণ থাকে। কিন্তু এরচেয়েও বড় কারন হতে পারে ব্যাক্তি নিজেও।
তাই, শুধু মাত্র কাজই নতুন করে শুরু করা নয় বরং নিজের ভুল-ভ্রান্তিগুলো খুঁজে সমাধান করে শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আর ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না কারো বেলাতেই।
৭. ব্যর্থতা সঠিক পরিকল্পণা সম্পর্কে ধারণা দেয়
কথায় আছে, পরিকল্পণা হচ্ছে যে কোনও কাজের অর্ধেক। একটি সঠিক পরিকল্পণা তৈরি করতে পারলে সেই কাজের অর্ধেক সারা হয়ে যায়। কিন্তু, একটি ভুল পরিকল্পনা আপনাকে অনেক পিছিয়ে দিতে পারে।
ব্যর্থতার অন্যতম কারন হলো ভুল কর্ম পরিকল্পনা। আপনি হয়তো নিজেও বুঝতে পারছেন না পরিকল্পনার ভুলের কারনেই ব্যর্থ হচ্ছেন। তাই, ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে পারেন। বারবার পরিকল্পনা নিয়ে ভাবলে নতুন কোনো ভুল ধরা পড়বে। কিংবা, যেটা বাদ পড়েছে সেটা বুঝতে পারবেন। পুরনো পরিকল্পনার ভুল দিকগুলো বের করে পুনরায় নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।
৮. ব্যর্থতা বন্ধু নির্বাচনেও সাহায্য করে
বিষয়টি একটু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ব্যর্থতা আপনার বন্ধু নির্বাচনে প্রভাব রাখে। আপনার আশেপাশে যারা আছে আপনার বন্ধু মতে, তাদের অনেকেই চায় আপনি সব সময় সফলতা পান। এটা বন্ধু হিসেবে চাওয়াই উচিৎ। কিন্তু, সমস্যাটি হচ্ছে যখন আপনি ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন এরা আপনাকে আর বন্ধু হিসেবে ভাবতে চাইবে না।
ব্যর্থতার সময়টা খুবই সংকটময় মনে হয়। কিন্তু ,যারা সত্যিকারের বন্ধু, তারা আপনাকে ভুলে যাবে না। আপনি ব্যর্থ হলেও এরা আপনার পাশে থাকবে, সফল হলেও আপনার পাশে থেকে আপনাকে উৎসাহ দিবে। কাজেই, ব্যর্থতা থেকে বন্ধু চিনে নেয়া বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ।
৯. ব্যর্থতা ভাবতে শেখাবে সফলতাই শেষ কথা নয়
যখন আপনি জীবনের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন আপনার মাথায় এই চিন্তা আসবে যে সফলতাই সবকিছু নয়। মূলত, এই উপলব্ধি তখনই হয়, যখন আপনার ইচ্ছা এবং মূল্যবোধের সাথে পারস্পরিক মিল না থাকে।
এরকম অনেক হয় যে, আপনার ইচ্ছা এক কিন্তু আপনি জোর পূর্বক অন্যকিছুতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার হারই বেশি। সব কাজই যে সফল হবে এমনও নয়। কোনো কোনো কাজ শুধু করা হয়ে থাকে অজানা উপলব্ধির জন্যে, নতুন চিন্তার জন্যে এবং আলাদা কিছু শেখার জন্যেও।
১০. ব্যর্থতা লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়
আপনার লক্ষ্য হয়ত অনেক কঠিন কিংবা লক্ষ্য সম্পর্ক আপনি একেবারেই অজ্ঞ। এই মুহুর্তে আপনার এগিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে। যখন আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকবে, তখন লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সুবিধা হবে।
ব্যর্থতা আপনাকে এক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে পারে। ব্যর্থ হলে আপনি আপনার লক্ষ্য নিয়ে আরেকবার ভাববার সুযোগ পাবেন। আবার ব্যর্থ হলে পুনরায় লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পাবেন। এভাবে আস্তে আস্তে লক্ষ্য সম্পর্কে আপনার সকল সম্ভাবণা পরিষ্কার হতে থাকবে। তখন লক্ষ্য অর্জনে আপনি অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারবেন, লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ হবে।
Leave a Reply