আপনি নিশ্চয়ই চান যে আপনার ব্যবসা সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলিতে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলুক। তাহলে এই মুহুর্তে আপনার যেটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো একটি শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান তৈরি করা। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেটি কার্যকর করার মাধ্যমে আজকের সময়ে ছোট বড় যে কোন ধরনের ব্যবসার জন্য খুব কম সময়ে লীড জেনারেট করা সম্ভব।
লক্ষণীয় বিষয় যে, যেখানে আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বেও সবার প্রশ্ন এটা ছিল যে, “আমরা কেন ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করবো?” সেখানে আজ সবাই এটাই ভাবে যে, “কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করলে আমাদের ব্যবসায়ীর প্রবৃদ্ধি দ্রুত হবে?”। এমন ৩টি কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে।
বিশ্বের ছোট বড় লক্ষ লক্ষ কোম্পানী তাদের প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন। এমনকি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানসহ অনলাইনেও বহু প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেছে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের মার্কেটিং প্ল্যান তৈরী ও কার্যকর করতে সহায়তা করে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান
একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসাবে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে কিছু দুর্দান্ত টিপস্ শেয়ার করতে চাই। আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু সাধারণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।
- মার্কেটিং এর জন্য যথেষ্ট সময় হাতে থাকতে হবে।
- যতটা সম্ভব তথ্য সমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে।
- ক্রেতার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
যে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে কাজের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে নেওয়াটা সবচেয়ে ভালো বিজনেস প্রাকটিস। লক্ষ্য স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনেরই হতে হবে। সময় অনুযায়ী আপনার গৃহীত পদক্ষেপের সাথে আপনি কি ফলাফল আশা করছেন তার উপর ভিত্তি করে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। একই সাথে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও গ্রহণ করুন।
ক্রেতাকে চিনতে শিখুন:
আপনি যত ভালো কন্টেন্টই প্রকাশ করুন না কেন, সেটা ততক্ষণ কোন কাজেই দিবে না যতক্ষন না সেটা উপযুক্ত ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সহজভাবে বোঝাতে গেলে, আমেরিকায় বসে আপনি যদি সেখানের অডিয়েন্স টার্গেট করে ইংলিশ লার্নিং কোর্সের উপর কন্টেন্ট পাবলিশ করেন, তাহলে সেটা আপনার কোন উপকারেই আসবে না। তাই অবশ্যই আপনার কন্টেন্ট যাতে উপযুক্ত ব্যক্তিরাই দেখতে পান. সেটি অডিয়েন্স টার্গেটিং এর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিক্রয়ত্তর সেবাকে প্রাধান্য দিন:
মার্কেটিং এর কাজে “ওয়ার্ড অফ মাউথ” হলো সবচেয়ে প্রভাবশালী মার্কেটিং। আর এটি তৈরীর ক্ষেত্রে আপনাকে বিক্রয়ত্তর সেবা প্রদানকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আপনার সেবা বা পণ্য ক্রয়কারী কোন ব্যক্তি যদি আপনার প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তবে সে অবশ্যই সেটি অন্যদেরকেও নিতে উৎসাহিত করবেন। এটিকেই “ওয়ার্ড অফ মাউথ” বলা হয়।
সবচেয়ে ভালো প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন:
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। অনেকেই এখনো এ ধরনের মার্কেটিং বলতে শুধুমাত্র ফেসবুকে কন্টেন্ট পাবলিশ করাকেই বোঝেন। তবে ইন্টারনেটের এই বিপ্লবকালে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে অসংখ্যা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে যারা ব্যবহারকারীদের বয়স, পেশা, স্থান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গুরুত্ব লাভ করেছে।
উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি টিনেজার অর্থাৎ ১৩-১৯ বছর বয়সী অডিয়েন্স টার্গেট করেন, তাহলে ফেসবুকের পাশাপাশি ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অপরদিকে কোন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে লিংকড ইন এর তুলনা নেই।
আবার এমন যেন না হয় যে আপনি কেবল একটি সোশ্যাল মিডিয়াকেই টার্গেট করে আপনার পণ্য বা সার্ভিসের প্রচার শুরু করেছেন। আমাদের দেশে যদিও ফেসবুকের ইউজার বেশি, তবু আপনাকে এর পাশাপাশি আরো কিছু সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। হয়তো ফেসবুক থেকে আপনি বেশি লিড পাবেন। কিন্তু অন্যান্য প্লাটফর্ম থেকেও ক্রেতা পাওয়ার সম্ভাবণাটাকে আপনি উড়িয়ে দিতে পারেন না।
সেরা মার্কেটার নির্বাচন:
এসএমএম এর ক্ষেত্রে সব সময় যে আপনাকে নিজ থেকে সব কিছু করতে হবে এমনটা নয়। অন্যান্য কোম্পানীরগুলির মত আপনিও চাইলে একজন দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার নিয়োগ করতে পারেন। তবে মার্কেটার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন একজন ব্যক্তিকে বাছাই করে নিন, যার এ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই সাথে যিনি কাজটিতে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন। আপনার যদি নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য থাকে, তাহলে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলুন এবং আপনার চাহিদা ও পরামর্শ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।
ক্রেতার আগ্রহ ধরে রাখুন:
এসএমএম এ সফল হতে হলে আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ক্রেতা তৈরী করতে হবে এবং একই সাথে পুরাতন ক্রেতাদেরকেও ধরে রাখতে হবে। আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ক্রেতাদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য নিয়মিত আপনার পণ্যের বিভিন্ন আপডেট ও তথ্যমূল্যক কন্টেন্ট প্রকাশ করুন।
যদি পণ্যটির পরবর্তী কোন সংষ্করণ বের হয়, তবে কেন ক্রেতার সেটি ক্রয় করা উচিত বা যদি সেটি ফ্রিতে হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে ক্রেতা সেই আপডেটটি পাবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনার পেজের মাধ্যমে ক্রেতাদের অবহিত করুন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ৩টি স্তরে কাজ করে:
- দেখা: আপনার আজকের অবস্থান দেখুন।
- চিন্তা করা: আপনার লক্ষ্য কি সেটা চিন্তা করুন।
- পরিকল্পনা গ্রহণ: আপনার লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
এসএমএম কোন একদিনের কাজ নয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যান একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনার সাথে আপনার অডিয়েন্সের বন্ধন ক্রমান্বয়ে দৃঢ় হতে থাকে। কখনও হঠাৎ করে সফলতা পাওয়ার আশা করবেন না। আপনি লক্ষ্য নির্ধারনের মাধ্যমে কত সময়ে কতটুকু অর্জন করতে চান তা আগে থেকেই বিবেচনা করে নিন। এভাবে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া অনেক বেশি সহজতর।
Leave a Reply