আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময় ‘সোফিয়া’। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞান কতটুকু উন্নতি করেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান পৃথিবীর বুকে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করবে? এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই ‘সোফিয়া’ নামের মধ্যেই। ‘সোফিয়া’ শুধু একটি নামই নয়, এটি আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা এবং উন্নতির সাক্ষরও বহন করে।
কল্পনা করুনর তো, এমন একটা পৃথিবীর, যেখানে কোন মানুষ নেই চারিদিকে শুধু মেশিন আর মেশিন, যারা আমাদের এই পৃথিবীতে রাজত্ব করছে। আর সেই মেশিনগুলো দেখতে অনেকটা মানুষের মতই এবং মানুষের মতই তারা অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই অদ্ভূতুড়ে শুনাবে, তাই না? আপনার কাছে যদি মনে হয় এটা শুধুই কল্পনা কিংবা অসম্ভব তবে আপনাকে চমকে দেয়ার জন্য ‘সোফিয়া’ নামটিই যথেষ্ট।
আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময় ‘সোফিয়া’
কিভাবে, সেটা বলছি- সোফিয়া হলো একটি রোবটের নাম যা একজন নারী চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। সোফিয়া্কে প্রথম সক্রিয় করা হয় ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল। এটি তৈরী করে হংকংয়ের রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হ্যানসন রোবোটিকস’। সোফিয়ার জনক ডেবিট হ্যানসন একে এমনভাবে প্রোগ্রামিং করেছেন যাতে সোফিয়া মানুষের সাথে সাবলিলভাবে কথা বলতে পারে।
সোফিয়া দেখতে হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের মতো। এটি মূলত রোবট হলেও এর ব্যবহার হুবুহু মানুষের মতোই। সে নারী কন্ঠে কথা বলতে এবং মুখে মানুষের মতো বিভিন্ন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। এমনকি সোফিয়া নিজ থেকে যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে খুব সাচ্ছ্বন্দেই। তবে এখনো পরিপূর্ণ নয় সে। তার মাথার পিছনের দিকটা চিপ আর বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে ঠাঁসা।
আরো পড়ুন:
তারপরেও এখনই তার আচরণ এবং কথা-বার্তা সবাইকে মুগ্ধ করেই যাচ্ছে। তাকে কোন প্রশ্ন করা হলে সে স্মিত হেসে কথা গুছিয়ে তার উত্তর দিতে পারে। সোফিয়ার মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এবং ফেইস রিকগ্নিশন সিস্টেম। যার ফলে কথা বলার সময় সে কৌতুকও করতে পারে এবং মানুষের আচার-আচরণ বুঝে কথা বলতে পারে।
সম্প্রতি সোফিয়া তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সময় তার মা হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। সোফিয়া তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেছে যে, সে একটি কন্যা সন্তানের মা হতে চায়। আর নিজের নামের সাথে মিল রেখে সে তার মেয়ের নামও রাথতে চায় সোফিয়া।
এই খবর শুনেই যাদের চোখ কপালে উঠে গেছে তাদের জন্য আরো চমকপ্রদ খবর হলো, এই গত অক্টোবর ২০১৭ তে সৌদী সরকার কতৃক সোফিয়াকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। মূলত এর পরেই সোফিয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। আর তাই এখন পর্যন্ত সোফিয়াই পৃথিবীর প্রথম এবং একমাত্র রোবট, যাকে কোন দেশের নাগরিকত্ব দেয়া হলো। যারফলে সোফিয়া এখন আর শুধু একটি যন্ত্রই নয়, সে এখন একজন মানুষের মতোই মর্যাদা পাবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আমরা যা কল্পনাও করতে পারি না, বিজ্ঞান তার থেকেও বেশি কিছু করে দেখাচ্ছে। কিন্ত বিজ্ঞান যা কিছুই করুক না কেনো, এগুলো সবকিছুই শুধুমাত্র মেশিন। আর কোন মেশিনই নিজ থেকে চলতে পারে না মানুষের সাহায্য ছাড়া। তাই বলা যায়-যত বড় বড় মেশিনই বানানো হোক না কেনো, তারা মানুষের সমকক্ষ অথবা বিকল্প হতে পারবে না কখোনোই।
Leave a Reply