বাজেটের মধ্যে ভাল স্মার্টওয়াচ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে, ঘড়ি বা ওয়াচ এর সম্পূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মার্টওয়াচ। নিবেই না কেন! এখন ভালো ব্র্যান্ড এর ঘড়ির দামেই কেনা যাচ্ছে চমৎকার ফিচারের সব স্মার্টওয়াচ। স্মার্ট ওয়াচ শুধু যে স্মার্টনেস প্রোভাইড করে তা কিন্তু না। পাশাপাশি এমন অনেক ফিচার প্রোভাইড করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই দরকারি।
স্মার্টওয়াচ কি আর এটি কিভাবে কাজ করে তা অনেকেরই জানা। এমনকি, আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা নিয়মিতই স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করে থাকেন। আর যারা স্মার্টওয়াচ কিনবেন বলে ঠিক করেছেন, তাদের জন্যে আমার সাজেশন হল HuaWise Y7 স্মার্টওয়াচটি।
HuaWise Y7 মুলত চাইনিজ ম্যানুফ্যাকচারারড একটি স্মার্ট ওয়াচ। যার সবচেয়ে অ্যাট্র্যাক্টিভ দিক হচ্ছে এর প্রিমিয়াম ডিজাইন। স্মার্টওয়াচটির ডিজাইনের ক্ষেত্রে অ্যাপলকে অনুকরণ করা হয়েছে বলে শোনা গেলেও আমার মনে হয়, অ্যাপলের চেয়ে Amazfit Bip এর সাথেই ওয়াচটির বেশি মিল।
মাত্র ১৪০০ টাকা বাজেটে এমন ওয়াচ কিছুদিন আগেও এক্সপেক্ট করা বোকামো ছিল। প্রোডাক্টি ১৪০০ টাকায় পারচেস করে ব্যবহার করেছি প্রায় ১৫ দিন এর মত সময় ধরে। স্মার্টওয়াচটি থাকছে চমৎকার একটি বক্সে। যার উপরের স্লট প্যানেলে বসানো রয়েছে ওয়াচটি। সবকিছু মিলিয়ে এটি কম বাজেটে একটি ভাল স্মার্টওয়াচ।
বাজেটের মধ্যে ভাল স্মার্টওয়াচ
প্রাইস অনুযায়ী আমি এত হাই ক্লাসি বক্স এক্সপেক্ট করিনি, টু বি ভেরি অনেস্ট। বক্সটি খুলে এর উপরের কম্পার্টমেণ্টটি সরালে প্রথমেই থাকছে ওয়াচটির চায়না এবং ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের ইউজার ম্যানুয়ালটি। যা পড়ে খুব ইজিলিই ওয়াচটি ইউজ করা যাবে।
এছাড়া, ইউজার ম্যানুয়ালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এর পেছনে থাকা কিউয়ার কোডটি স্ক্যান করলে ওয়াচটি অ্যাপ এর সাথে কানেক্ট করার জন্য দা ফিট অ্যাপের ডাউনলোড লিঙ্ক পাওয়া যাবে। এরপরই থাকছে চার্জিং ডক। চার্জিং ডকের ডিজাইনটা খুবই ইজি এবং আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আমি এমাজফিট বিপ ব্যবহার করেছি, এমাজফিট বিপ এর চার্জিং ডকের চেয়ে এই ওয়াচটির চার্জিং ডকটি বেশি পারফেক্ট। ডকটি যে-কোন চারজিং অ্যাডাপ্টারের সাথেই কানেক্ট করে চার্জ করা যাবে ওয়াচটি।
এন্ড ফাইনালি, The watch itself। ওয়ান পয়েন্ট থ্রি ইঞ্চি রেজুলেশনের ওয়াচটিতে থাকছে ২৪০ বাই ২৪০ লার্জ টিএফটি টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে। র্যাম স্লটে থাকছে ৬৪ কেবি র্যাম আর রম স্লটে থাকছে ৪৬০৮ কেবি রম। ওয়াচটিতে 24 Hours Continuous Heart Rate Monitoring Option থাকলেও তা খুব একটা কাজের না। এই বাজেটের ওয়াচে এমনটা এক্সপেক্ট করাও ঠিক না।
ওয়াচটির ব্যাটারি সেকশনে থাকছে বিল্টইন ১৭০ MAH ব্যাটারি। যা নরমাল ফিচার ইউজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ দিন এবং সব ফিচার ইউজের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ দিনের কিছুটা বেশি সময় ব্যাকআপ দিয়েছে। যদিও স্পেক্স অনুযায়ী এর ব্যাকআপ ডিউরেশন ১০ দিন এবং স্ট্যান্ডবাই ডিউরেশন থাকছে ৩০ দিন।
সবচে জোশ ফিচার হচ্ছে ওয়াচটি ওয়াটার এন্ড ডাস্টপ্রুফ। যার ফলে ওয়াচটি নিয়ে নিশ্চিন্তে শাওয়ার নেয়া যাবে বা দৈনন্দিন কাজ করা যাবে। এছাড়া স্লিপ টাইম মনিটরিং অর্থাৎ আপনি কতক্ষন ঘুমিয়েছেন সেটা ক্যালকুলেট করে শো করা, কতটুকু হেঁটেছেন, হার্ট রেট মনিটরিং, এসব ফিচার তো থাকছেই।
১৪০০ টাকার এই ওয়াচের সাথে যেই ম্যাটাল স্ট্রিপটি থাকছে, তার এক্সট্রা প্রাইস প্রায় ৬০০ টাকা। বিভিন্ন শপে এক্সট্রা স্ত্রেপ পাওয়া যাচ্ছে। তাই, চাইলে লেদার কিংবা রাবারের স্ত্রেপও ইউজ করা যাবে। চার্জে দেয়ার জন্য ডকটি যে কোন অ্যাডাপ্টারে কানেক্ট করে ওয়াচের পেছনের পাশ ডকের ওপর নিলেই ডকে থাকা ম্যাগনেটিক পয়েন্ট ডকটির সাথে ওয়াচকে কানেক্ট করে নিবে। চার্জিং স্ট্যাটাস শো করার জন্য রেড লাইট জ্বলবে। ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লেগেছে আমার ওয়াচটি ফুল চার্জ হতে।
ওয়াচটি অ্যাপের সাথে কানেক্ট করার জন্য প্রথমত নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ফোনে ব্লুটুথ অন করা আছে। এরপর, ম্যানুয়ালে থাকা কিউয়ার কোডটি স্ক্যান করুন আপনার ফোনের স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে। আপনার ফোনে যদি ডিফল্টভাবে কোন স্ক্যানার অ্যাপ ইনস্টল করা না থাকে, তবে প্লে স্টোরে স্ক্যানার লিখে সার্চ করলে অসংখ্য ফ্রি স্ক্যানার অ্যাপ পেয়ে যাবেন।
স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে কিউয়ার কোডটি স্ক্যান করলে একটি লিঙ্ক পাবেন। লিঙ্কটিতে ক্লিক করে যে-কোন ব্রাউজার দিয়ে ওপেন করলেই লিঙ্কটি প্লে স্টোরে রিডাইরেক্ট হবে এবং দা ফিট নামক অ্যাপসটি পেয়ে যাবেন। এছাড়া, আপনি চাইলেই এত জটিল প্রক্রিয়া ফলো না করে সরাসরি প্লে স্টোরে গিয়ে Da Fit লিখে সার্চ করলেও অ্যাপটি পেয়ে যাবেন। অ্যাপটি ইন্সটল করুন।
আমার ফোনে অ্যাপটি অলরেডি ইনস্টল করা আছে বলে নতুন করে ইনস্টল করছি না। অ্যাপটি ওপেন করেই প্রোফাইল সেকশনে আপনার জেন্ডার, জন্ম সাল, উচ্চতা এবং ওজন এই অপশনগুলো ফিল-আপ করে নিন। এরপর, প্রয়োজনীয় পারমিশনগুলো অ্যালাউ করে নিন। অ্যাপসের একদম নিচের দিকের মাজখানের ওয়াচ আইকনটিতে ক্লিক করে ADD A DEVICE লেখাটিতে ক্লিক করুন। সর্বোচ্চ ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই Y7 নামক ডিভাইস শো করবে। Y7 এ ক্লিক করলেই কানেক্টিং শো করবে এবং সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ডিভাইসটি অ্যাপের সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে।
কানেক্টেড হলেই উপরে ডান পাশে ওয়াচের আইকন দেখা যাবে। কানেক্টেড অ্যাপস্ থেকে ওয়াচটিতে কত পারসেন্ট চার্জ আছে, সেটা দেখা যাবে। ওয়াচ ফেচেস অপশনে ক্লিক করে ৩টি ওয়াচ ফেইসের যে কোন একটা ফেইস অ্যাকটিভ করা যাবে।
নোটিফিকেশন অপশনে গেলে পারমিশন চাইবে। পারমিশন অ্যালাউ করে কোন কোন অ্যাপের নোটিফিকেশন পেতে চাইছেন ওয়াচে, সেটা সিলেক্ট করে নিতে হবে। আমি এক্ষেত্রে ফোন আর মেসেজিং এই দুটো অপশনই জাস্ট অ্যানাবল করে নিচ্ছি। আপনি চাইলে অন্য অপশনগুলোও ইউজ করতে পারেন।
মনে রাখবেন, নোটিফিকেশান অপশনে যত বেশি অ্যাপের ইউজ করবেন, চার্জ ব্যাক-আপ তত কম পাবেন। এছাড়াও অ্যালার্ম অপশন থেকে ওয়াচে অ্যালার্ম সেট করে নেয়া যাবে। শাটার অপশন ইউজ করে ক্যামেরা শাটার কন্ট্রোল করা যাবে। আদার অপশন থেকে টাইম সেটিংস, ডু নট ডিস্টার্ব এবং ওয়েদারের মত সেটিংসগুলোর টুইক করা যাবে। আর সবশেষে আপডেট অপশন থেকে নতুন কোন আপডেট আসলে সেটা ডাউনলোড এবং ইন্সটল করা যাবে।
আপনি যদি জানেন যে ১০টি কারণে অবশ্যই স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করা উচিৎ, তবে নিশ্চয়ই আজই আপনি একটি স্মার্টওয়াচ কিনে ফেলতে চাইবেন। আর আপনার বাজেট যদি হয় অল্প, অর্থাৎ আপনি বাজেটের মধ্যে ভাল স্মার্টওয়াচ কিনতে চান, তবে আমি HuaWise Y7 রিকোমেন্ড করবো। কারণ, কম বাজেটে এই ওয়াচটির বিল্ড কোয়ালিটি খুবই প্রিমিয়াম। সলিড বিল্ড থাকায় কোন স্ক্রিন প্রটেক্টর ইউজ না করার পরও এখন পর্যন্ত কোন স্কেচ পড়েনি। এছাড়াও ওয়াচটি সম্পর্কে অন্য কোন ইনফো জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন। অবশ্যই রিপ্লাই করার চেষ্টা করবো।
Leave a Reply