শুধু বাইক কিনলেই হবে না, বাইকের জন্যে বাড়তি খরচ নিয়েও ভাবতে হবে। আমরা সাধারণত বাইক কেনার জন্যে পরিবারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে একটা বাজেট নির্ধারণ করে থাকি। অনেক সময় নিজের জমানো টাকা, বন্ধুদের কাছ থেকে সম্ভাব্য ধারের পরিমাণ এবং আত্মীয়-স্বজনের সহযোগীতা মিলিয়ে একটা বাজেট দাঁড় করানোর চেষ্টা করি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, নির্ধারিত বাজেটের মধেই বাইক কেনা হয়ে যায়। আর বাজেটের মধ্যে বাইক কিনতে পেরে আমরাও সাধারণ খুব খুশি হয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকেই জানে না যে, বাইক কেনার খরচ ছাড়াও আরো কিছু বাড়তি খরচ আছে।
বাইক কেনার পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের মধ্যে রয়েছে-
- রেজিস্ট্রেশন খরচ,
- জ্বালানি বা তেল খরচ,
- ইকুইপমেন্ট খরচ,
- ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি,
- ইন্সুরেন্স খরচ,
- মেইনটানেন্স খরচ, ইত্যাদি।
বাইক কেনার আগে যে-সব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়, সেগুলোর মাঝে হয়তো পরবর্তী খরচের বিষয়টা নেই। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই বাইক কেনার পরবর্তী সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কে ভাবতে হবে। নৈলে বাইক চালানোর শখ মিটে যাবে অল্প দিনেই।
কারণ, প্রায়ই দেখা যায় যে, নতুন হোক আর পুরনো হোক, একটি বাইক কিনতে যে পরিমাণ খরচ হয়, তার থেকে বেশি খরচ হতে থাকে পরবর্তী ধাপগুলোতে। বিশেষ করে, বাইক মেইনটানেন্সের পেছনে যে খরচ হয় তা প্রায়ই বাইক কেনার খরচের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
তাই, আমাদের সকলেরই বাইকের পেছনে বাড়তি খরচ সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন, জানা যাক বাইকের বাড়তি খরচ সমূহ সম্পর্কে-
বাইকের জন্যে বাড়তি খরচ
বাইকের রেজিস্ট্রেশন খরচ
বাইক কেনার পর প্রথম কাজটিই হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন করে নেয়া। আর এই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ)- এর আন্ডারে। বিআরটিএ বাংলাদেশে ৫০ সিসি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত বাইক বা মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে, তা অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে। রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়া দু’টি আর সেগুলো হলো-
- ১০ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন
- ২ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন
১০ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন: দীর্ঘ মেয়াদি এই রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে, আপনার বাইক যদি ৫০ থেকে ৮০ সিসির হয়, তবে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে খরচ হবে ১৩ হাজার ৯শ ১৩ টাকা। আর যদি আপনার বাইকটি ১০০ সিসি’র হয়, তবে রেজিস্ট্রেশন খরচ হিসেবে আপনাকে ব্যয় করতে হবে ১৯ হাজার ৬শ ৬৩ টাকা। যদি আপনার বাইকটি হয় ১৫০ সিসি’র, তবে খরচ আরেকটু বেশি হবে। সেক্ষেত্রে, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ গুনতে হবে ২১ হাজার ২শ ৭৩ টাকা।
২ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন: স্বল্প মেয়াদি এই রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে, ৫০ থেকে ৮০ সিসি’র বাইক হলে খরচ পড়বে ৯ হাজার ৩শ ১৩ টাকা। আর ১০০ সিসির বাইক হলে রেজিস্ট্রেশন খরচ পড়বে ১০ হাজার ৪শ ৬৩ টাকা। আর যদি আপনি ১৫০ সিসির বাইক কিনে থাকেন, তবে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে আপনাকে খরচ করতে হবে ১২ হাজার ৭৩ টাকা।
নোট-১: উপরোক্ত খরচের পরিমাণ বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট থেকে নেয়া। যে কোনও সময় বিআরটিএ এটা পরিবর্তণ করতে পারে।
নোট-২: উপরোক্ত রেজিস্ট্রেশন খরচের সাথে আরো কিছু হিডেন খরচ থাকতে পারে। যেহেতু, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন কিছুই এমনি এমনি করা যায় না, কিছু খরচ করতে হয়, সেহেতু এখানেও আপনাকে বাড়তি খরচ করতে হতে পারে।
বাইকের ড্রাইভিং লাইসেন্স খরচ
বাইকের রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলেই যে আপনি বাইক চালানোর অনুমতি পেয়ে গেলেন, তা কিন্তু নয়। আপনাকে অবশ্যই বাইকের ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নিতে হবে, অন্যথায় বাইক চালাতে গিয়ে আপনাকে ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা খেতে হবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা খাওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে।
বাইক বা মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরণের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে-
- অপেশাদার লাইসেন্স
- পেশাদার লাইসেন্স
অপেশাদার লাইসেন্সের ফি হচ্ছে ২ হাজার ৩শ টাকা আর পেশাদার মোটরসাইকেল লাইসেন্সের ফি হচ্ছে ১৪শ ৩৮ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই ১৫% ভ্যাট রয়েছে যা মূল ফি’র অন্তর্ভূক্ত।
নোট: অফিসিয়াল এই ফি এর বাইরে হয়তো আপনাকে আরো কিছু খরচ করতে হতে পারে। বুঝতেই পারছেন কিসের খরচ!!! এটা বাংলাদেশ, এখানে আপনাকে কেউ’ই এমনি এমনি সবকিছু করে দেবে না!
বাইক বা মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ
বাইকের ফুয়েল বা জ্বালানি খরচ বহন করতে গিয়ে অনেক বাইকারই হিমশিম খেয়ে থাকে। কারণ, প্রায়ই এই জ্বালানি তেলের দাম আকাশ ছাড়িয়ে যায়। অনেক বাইক চালকই খরচ পোশাতে না পেরে শেষমেষ বাইক বিক্রি করে দিয়ে থাকেন।
যেহেতু, বাইকের জ্বালানির দাম সব সময় উঠা-নামার মধ্যে থাকে, তাই প্রকৃত খরচটা দেয়া হলো না। তাছাড়া, চাইলেও প্রকৃত জ্বালানির খরচ দেয়া সম্ভব না। কারণ, এটা নির্ভর করছে কত সিসির বাইক এবং মাইলেজের উপর। কিন্তু আপনাকে ধরে নিতে হবে যে বাইক কেনার পর একটা বড় ধরণের খরচ চলে যাবে বাইকের ফুয়েলের পেছনে।
বাইকের সার্ভিসিং খরচ
এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে, বাইক কেনার পর আর কোনও সার্ভিসিং খরচ নেই। বরং, বাইকের সার্ভিসিং খরচটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খরচের খাত। কারণ, প্র্রায়ই আপনার শখের বাইকের কোনও না কোনও ইকুইপমেন্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একদিকে সেই ইকুইপমেন্ট কেনার খরচ বহন করতে হবে, অন্যদিকে সেটিকে লাগানোর জন্যে সার্ভিসিং খরচ বহন করতে হবে।
সাধারণত বাইক কেনার সময় আমরা বাড়তি খরচ হিসেবে সার্ভিসিং এর দিকটা বিবেচনায় রাখি না। কিন্তু কিছুদিন চালানোর পর যখন একের পর এক সার্ভিসিং করতে হয়, আর সেটার পেছনে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়, তখন আমাদের টনক নড়ে।
যাইহোক, বাইক চালাতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাসিক কিংবা বাৎসরিক একটা বাজেট ধরতে হবে বাইকের সার্ভিসিং এর পেছনে। আর যেহেতু, এটা নির্ভর করছে আপনার উপর অর্থাৎ আপনি কতটা যত্নের সঙ্গে বাইক ব্যবহার করছেন, তাই আমরা খরচে পরিমাণটা উল্লেখ করতে পারছি না।
বাইকের জন্যে বাড়তি খরচ হিসেবে আমরা এখানে ৫টি খাতের কথা উল্লেখ করেছি। তবে, এর বাইরেও আরো কিছু খাত থাকতে পারে যেগুলোতেও আপনাকে খরচ করতে হতে পারে। যেমন ধরুন, হঠাৎ করে ট্রাফিক মামলা খেলেন আর টাকা পয়সা দিয়ে ছাড়া পেলেন। এ জাতীয় কিছু খরচের খাত তো থাকতেই পারে।
Leave a Reply