অ্যাপস্ থেকে আয় করার বিষয়ে কথা বলার আগে চলুন একবার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোনের ব্যবহারের দিকে একটু নজর দেই। আপনি কি স্মার্টফোনের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন! আপনার ফোনের সাথে পার করা ব্যস্ত সময়ের বেশিরভাগেই আপনি হয়তো ভিডিও গেমস খেলেন, মুভি দেখেন, বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করেন অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন।
এই কাজগুলি আপনার সময় নষ্ট করে ঠিকই কিন্তু বিনিময়ে আপনাকে লাভজনক কিছু উপহার দিতে পারে না। কিছু কিছু গেমস বা অ্যাপ আপনাকে টাকার বিনিময়ে চালাতে হয়, যা একই সাথে আপনার আর্থিক অপচয়েরও কারণ হয়ে দাড়ায়।
কখনো কি আপনার এই মূল্যবান সময়ের লাভ-ক্ষতির হিসাব করে দেখেছেন? হয়তো আপনি এই মুহুর্তে এটিকে আপনার অভ্যাস বলতে পারেন, যা হয়তো অনেকের কাছেই ভালো বলে মনে হবে না। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার এই অভ্যাসকে কাজে লাগিয়েই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। হ্যাঁ, আমি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্ ব্যবহার করে আয়ের কথা বলছি।
অ্যাপস্ থেকে আয়
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্ মার্কেটে এমন অনেক অ্যাপই রয়েছে যা আপনাকে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে। এক একটি অ্যাপের কাজের ধরণ একেক রকম। এসব কাজের মধ্যে বেশিরভাগেই অন্য অ্যাপ ডাউনলোড করা, গেমস খেলা, ছবি তোলা, ভিডিও দেখা, বিজ্ঞাপন দেখা, অ্যাপ রিভিউ করা, বিভিন্ন সার্ভেতে অংশ নেয়া, বন্ধুদের ইনভাইট করার মত কাজগুলি বেশি থাকে।
- আরো জানুন: গুগল থেকে আয় করার ৫টি ইফেক্টিভ উপায়
প্লে-ষ্টোরে এমন অ্যাপের সংখ্যা কয়েক হাজারেরও বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো এর মধ্যে সবগুলি অ্যাপ আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ আজকে আমরা সেই অ্যাপগুলি সম্পর্কে জানবো যেগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ইনকাম করা যাবে। তাই দেরী না করে চলুন জেনে নিই বাংলাদেশের সেরা মানি মেকিং অ্যাপগুলি সম্পর্কে।
Sheba Bondhu:
সেবা বন্ধু হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিন বা কাজ ভিত্তিক সেবা প্রদানকারী অনলাইন প্লাটফর্ম sheba.xyz এর একটি বিশেষ অ্যাপ। এই অ্যাপটিতে মূলত আপনাকে আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত মানুষদের sheba.xyz এর বিভিন্ন সার্ভিস গ্রহণের জন্য রেফার করতে হবে, যার বিনিময়ে তারা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করবে।
যেভাবে কাজ করবেন:
- প্রথমেই গুগল প্লে-ষ্টোর থেকে সেবা বন্ধু অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।
- অ্যাপটি ইনষ্টল হবার পর সেটির ইউজার রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করুন। ফর্ম পূরনের সময় অবশ্যই আপনার প্রকৃত নাম, সক্রিয় মোবাইল নাম্বার এবং আপনি কোন ধরনের সেবাগুলিকে রেফার করতে চান তা উল্লেখ করুন।
- এরপর আপনার বন্ধুর নাম টাইপ করুন এবং সে যে ধরনের সেবা নিতে আগ্রহী হতে পারে বলে আপনার মনে হয় তা উল্লেখ করুন। আপনার বন্ধুর মোবাইল নাম্বারটি দিতে ভুলবেন না।
- আপনি রেফারেল সেন্ড করার পর সেবা কর্তৃপক্ষ আপনার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করবে। যদি সে সেবাটি গ্রহণ করে, তাহলে আপনি তাৎক্ষনিকভাবেই আপনার পারিশ্রমিক পেয়ে যাবেন। পারিশ্রমিক বা কমিশন ১০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার বন্ধুর গ্রহণকৃত সেবার উপর নির্ভরশীল।
- সেবা কর্তৃপক্ষ আপনাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ করবে। সাধারণত তারা সাপ্তাহিক ভিত্তিকে পেমেন্ট করে থাকে।
Chalao:
চালাও ডট কমের সাথে আপনি নিশ্চয়ই পরিচিত। এটি বাংলাদেশের সর্ব প্রথম এবং সর্ব বৃহত অনলাইন গ্রোসারী ষ্টোর যা খুব কম সময়ে ব্যাপক পরিমাণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। চালাও অ্যাপটি উক্ত কোম্পানীরই একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। কি ভাবছেন আবার রেফার করার কাজ?
হ্যাঁ, রেফার তো বটেই কিন্তু এখানে ব্যাপারটা আগের চাইতে আরো বেশি মজাদার। অন্যান্য অ্যাপের সাথে এই অ্যাপটির পার্থক্য এখানেই যে, এটি একটি অসাধারণ রাইড শেয়ারিং অ্যাপ হওয়ার পাশাপাশি একটি চমৎকার মানি মেকিং অ্যাপও বটে।
যেভাবে কাজ করবেন:
- প্রথমেই গুগল প্লে-ষ্টোর থেকে চালাও অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।
- অ্যাপটি ইনষ্টল হবার পর সেটির ইউজার রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করুন এবং তাদের “দোস্ত নেটওয়ার্ক” এর একজন সদস্য হয়ে যান।
- এবার আপনার একটি “দোস্ত কোড” এর প্রয়োজন হবে যা আপনি চাইলে চালাও এর যে কোন গ্রাহক কিংবা রাইডার এর কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া চালাও অফিশিয়ালদের কাছেও এই কোডটি পাওয়া যাবে।
- কোডটি পাওয়ার পরেই আপনি দোস্ত নেটওয়ার্কের সদস্য হয়ে গেলেন। এবার সময় এসেছে কিছু টাকা ইনকামের। আপনি চালাও অ্যাপটির ভেতরে আপনার নিজস্ব রেফারেল কোড পাবেন। পরিচিত সবাইকে চালাও অ্যাপ ডাউনলোড এবং রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ইনভাইট করুন।
এখন আপনার মনে হতে পারে যে, সেবা বন্ধু আর চালাও এর মধ্যে তাহলে পার্থক্য থাকলোটা কোথায়। পার্থক্যটা এখানেই যে, সেবা বন্ধুতে আপনাকে প্রতিবারই কোন না কোন সেবা গ্রহণের জন্য ইনভাইট করতে হবে। আর চালাও অ্যাপটিতে আপনি একবার কাউকে ইনভাইট করে রেজিষ্ট্রেশন করালে যতবার সে চালাও অ্যাপের মাধ্যমে কোন রাইড নেবে, ততবারই আপনি রাইডের বিলের একটি অংশ পাবেন। যত বেশি রেজিষ্ট্রেশন, তত বেশি টাকা।
আর সবচেয়ে মজার বিষয়টি হচ্ছে আপনার ইনকামটি পুরোপুরিই আপনার। চালাও এর জন্য আলাদাভাবে কোন কমিশন নেয় না। ৫০০/- টাকার সমপরিমাণ কমিশন হলেই আপনি বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।
ইন্টারনেটে টাকা ইনকাম করাটা আজকের দিনের বাস্তবতা হলেও এটি যতটা সহজে শোনা যায়, কাজটা ততটা সহজ হয় না। অনলাইনে কাজের মাধ্যমে টাকা ইনকামের জন্য দক্ষতা ও মেধা হচ্ছে পূর্বশর্ত। আপনি যদি কাজই না পারেন, তাহলে কোন কোম্পানী আপনাকে বিনা পরিশ্রমে টাকা দেবে এটা ভাবা চরম বোকামী।
আপনি হয়তো ইতিপূর্বে এমন অনেক অ্যাপের বিজ্ঞাপন দেখেছেন যারা দাবী করে যে, তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে কাজ করলে রাতারাতি আপনার ভাগ্য বদলে যাবে। কিন্তু এসব অ্যাপের প্রায় ৯৯ শতাংশই স্ক্যাম। কিছু দিন কাজ করার পরেই আপনি বুঝতে পারবেন যে তারা যেটা দাবী করে সেটা পুরোপুরি মিথ্যা।
ডিজিটাল বিপ্লবের এই যুগে অ্যাপস্ থেকে আয় করতে হলে আপনাকে এমন অ্যাপে কাজ করতে হবে যা বিশ্বস্ত এবং কোন স্বনামধন্য কোম্পানীর দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এসব অ্যাপ হয়তো আপনাকে অনেক বড় অংকের টাকার প্রতিশ্রুতি দেবে না কিন্তু তারা যে কাজের বিনিময়ে যত টাকা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছে তা আপনি অবশ্যই পাবেন।
আমি যে অ্যাপগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি তার বাইরেও অনেক অ্যাপ হয়তো রয়েছে যারা সত্যিকার অর্থেই কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে। আপনি যদি এমন কোন অ্যাপের কথা জেনে থাকেন, তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
md.nasiruddinnaim says
স্মার্টফোন অ্যাপস্ থেকে, বিশেষ করে বিদেশী অ্যাপগুলো থেকে আয় করার উপায় আছে। কিন্তু আমাদের দেশের অ্যাপগুলো অন্যদের আয়ের জন্যে পথ তৈরিতে এখনো হয়তো অতোটা ডেভেলপ করেনি। এর মাঝে এই দুটি অ্যাপ সম্পর্কে জেনে ভাল লাগলো যেগুলো থেকে এদেশের ইউজাররা আয় করতে পারবেন।