ভিপিএন সারা বিশ্বে ভৌগোলিক অবস্থান পরিবর্তণ করে বিভিন্ন দূরবর্তী নেটওয়ার্কে নিরাপদে প্রবেশ করা এবং অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার করা হয় । সোজা কথায়, এক জায়গা থেকে আইপি লুকিয়ে বা পরিবর্তণ করে অন্য জায়গার আইপি ব্যবহার করা যায় আর লোকেশন পরিবর্তণ করা যায়। আইপি এবং লোকেশন হাইড করে কাজ করার জন্যে প্রচুর ফ্রি ভিপিএন সফট্ওয়্যার রয়েছে।
আমি বাংলাদেশে বসেই দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তের প্রাইভেট নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারছি ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে। ভিপিএন বেশি ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানি, তদের বিভিন্ন জায়গার অফিস লোকেশন পরিবর্তণ করে তথ্য শেয়ার করার জন্য।
আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছু হাতের কাছে কিন্তু কিছু কিছু দেশের ওয়েবসাইটে ইচ্ছে করলেই প্রবেশ করা যায় না। আর এই সমস্যার সমাধান যখন কেউ খুঁজে, তাহলে সহজ সমাধান হল ভিপিএন। ভিপিএন কিনতেও পাওয়া যায়, আবার ফ্রিতে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা যায়।
যেহেতু মানুষ ফ্রি জিনিস বেশি খোঁজে, তাই অধিকাংশ মানুষ টাকা দিয়ে না কিনে ফ্রিতেই বেশি ডাউনলোড করে ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হল ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ? আমাদের কি উচিৎ ফি ভিপিএন ব্যবহার করা? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সত্যিই তারা ফ্রিতে সার্ভিস দিচ্ছে কিনা।
ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ডস ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন(সিএসআইআরও) সাম্প্রতিক এক গবেষণা করেছে। তারা ২৮৩ টি ভিপিএন অ্যাপ দিয়ে ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসী এবং সিকিউরিটি নিয়ে গবেষণা করে। যার ফলাফল ৭৫% অ্যাপ থার্ড পার্টি ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে আপনার তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যদিকে, ৮২% অ্যাপ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য অনুমতি চায়, যার ফলে আপনার ইউজার নাম কিংবা পার্সওয়াড চুরি হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, তারা ৩৮% অ্যাপে ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে।
কিছু জনপ্রিয় ফ্রি ভিপিএন যেমন-ভিপিএন ফ্রি, রকেট ভিপিএন, টাইগার ভিপিএন, সাইবারগোস্ট এবং ইজিওভিপিএন যেগুলো কয়েক লক্ষ্যবার ডাউনলোড করা হয়েছে সেগুলোতেও ভাইরাস পাওয়া গেছে।
ফ্রি ভিপিএন কি সত্যিই ফ্রি?
এর সোজা উত্তরঃ না। কোনো ভিপিএন সেবা দাতা কোম্পানিই আপনাকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে সারাজীবন সার্ভিস দিবে না। একবার ভাবুন তো, কেনো কেউ আপনাকে একদম ফ্রিতে কোনো সেবা প্রদান করবে? তাও যতদিন ইচ্ছা ততদিন। এতো ভাল নিশ্চয় কেউ নাই। আপনি যদি টাকা দিয়ে না কিনেন, তার মানে আপনি অন্য কোনোভাবে তাদের মূল্যে পরিশোধ করছেন। ফ্রি ভিপিএন এর মাধ্যমে কি কি ক্ষতি হতে পারে জেনে নেওয়া যাক।
১। আপনার ডাটা ট্র্যাক করে বিক্রি করে দেয়ঃ ভিপিএন আপনার আইএসপি পরিবর্তণ করে ফেলে। যার ফলে আপনি অনলাইনে কি করেন তা দেখা যায় না, কিন্তু ভিপিএন প্রোভাইডার যারা, তারা ঠিকই আপনার তথ্য ট্র্যাক করে। আপনার তথ্য কালেক্ট করে সেগুলো বিভিন্ন অ্যাড আজেন্সির কাছে বিক্রি করে দেয়।
২। ম্যালওয়ারঃ ম্যালওয়ার প্রবেশ করানো একটা কমন ঘটনা বর্তমানে। আর এটা সবচেয়ে বেশি ঘটছে ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে। এ-সব ম্যালওয়ার আপনার সংবেদনশীল ডাটা যেমন- ইউজার নাম কিংবা পাসওয়ার্ড চুরি করে।
৩। ব্যান্ডউইথ চুরিঃ ভিপিএন এর মাধ্যমে আপনার ব্যান্ডউইথ চুরি হতে পারে। আর এই ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে দেয় অন্য কোম্পানির কাছে। এরকম সম্প্রতি ঘটেছে ইজরাইলের একটি ভিপিএন কোম্পানি হোলা ভিপিএন থেকে।
৪। ব্রাউজার হাইজ্যাকিংঃ অনেক সময় আমরা যখন কোনো সাইটে ব্রাউজ করি, ক্লিক করলেই অন্য পেজ চলে আসে, আর অনেক ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে বসে। এটা অনেক সময় ভিপিএন এর মাধ্যমে হয়ে থাকে, আর আপনার তথ্য কালেক্ট করে। আমাদের উচিত এ-সব পেজে কোনো তথ্য না দেওয়া।
সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক আছে। সব ফ্রি ভিপিএন যেমন ব্যবহার করা নিরাপদ না, তেমনি কিছু ভিপিএন আছে যেগুলো ব্যবহার করা যায় নিরাপদে। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু অর্থ খরচ করতে হবে। অল্প পরিমাণ খরচ করে আপনি নিশ্চিন্তে ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন কোনো ডাটা হারানোর ভয় ছাড়াই।
অনেক প্রিমিয়াম ভিপিএন পাওয়া যায় অনলাইনে। আপনি যদি ভিপিএন ব্যবহার করার কথা ভাবছেন, তাহলে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারেন। অনেক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে এখন অনেক ভিপিএন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল-
১। প্রাইভেট ইন্টারনেট অ্যাসেস
২। এক্সপ্রেস ভিপিএন
৩। নর্ড ভিপিএন
আশা করব, ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করা কি নিরাপদ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পেয়েছি। ফ্রি জিনিস ব্যবহার করার আগে আমাদের একবার হলেও ভাবা উচিৎ, কেনো একজন তার জিনিস আপনাকে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিবে? আপনি, আমি হলে কি দিতাম? বর্তমান যুগে টেকনোলজি অনেক অ্যাডভান্স হলেও সিকিউরিটি ততটাও অ্যাডভান্স না। তাই আমাদের উচিৎ নিরাপদে থাকা, টেকনোলজির সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সময়।
Leave a Reply