ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা সকল ক্ষেত্রে জরুরি। ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নয়। তবে, ফ্রিল্যান্সিং থেকে ভাল আয় করতে হলে ভাল কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জণ করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং মানে হল ঘরে বসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন। ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি শুনলে সাধারণত মাথার মধ্যে লাখ টাকার স্বপ্ন চলে আসে। সত্যিকার অর্থে এগুলো রূপকথা নয় বরং বাস্তব। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক কাজে দক্ষতা।
অধিকাংশ মানুষ কোন কাজে দক্ষ না হয়েই টাকার লোভে ফ্রিল্যান্সিং করতে বসে যায়। এ-সব মানুষ নিজের যেমন ক্ষতি করে, পাশাপাশি ক্ষতি করে দেশের এবং অন্যান্য দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করার জন্য কোন কাজগুলো শেখা জরুরি! এ-রকম চিন্তা যদি আপনার মাথায় আসে, তাহলে এই লেখা আপনার জন্য। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো বর্তমান সময়ে সেরা ৭টি দক্ষতা নিয়ে। লেখাটি শুরু করার আগে জেনে নিন, ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে আপনার যে ১০টি জিনিস দরকার।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করতে হলে শিখুন…
১. প্রোগ্রামিং
বর্তমান সময়ে প্রায় সকল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট-প্লেসের তুমুল জনপ্রিয় কাজ প্রোগ্রামিং। এই খাতে কাজের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে, এই খাতে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের অনেক অভাব। যেহেতু প্রোগ্রামিং তুলনামূলক কঠিন একটি কাজ, তাই সবাই এই দক্ষতাটি অর্জন করতে পারে না।
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে একজন প্রফেশনাল প্রোগ্রামারের প্রতি ঘণ্টার মূল্য কমপক্ষে ১৫০ ডলার, তথা প্রায় ১৪ হাজার টাকা। বর্তমান সময়ে প্রোগ্রামিংকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়। যেমন –
- ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
- মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- গেম ডেভেলপমেন্ট
- ডাটাবেজ
- ডাটা সায়েন্স
প্রোগ্রামিং বেশ মজার একটি স্কিল। আপনি যদি সেলারি ও ইনকামের দিক থেকে ৫টি সেরা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে যে কোন একটি আয়ত্ত করেন, তবে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা আরও সহজ হয়ে যাবে। আপনি যত বেশি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানবেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট-প্লেসে আপনার চাহিদা তত বেশি থাকবে।
এবার মূল কথায় আসা যাক, সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন এবং আয়ের কাজ প্রোগ্রামিং। কিন্তু, প্রোগ্রামিং বেশ কঠিন একটি বিষয়। তাই, আপনার ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করার ক্ষমতা না থাকলে এই দিকে না আসাই ভাল।
২. ডিজাইন
সৃজনশীল একটি পেশা ডিজাইন। ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক বিস্তৃত। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল –
- ইউআই/ইউএক্স
- লোগো ডিজাইন
- ইলাস্ট্রেশন
- প্রোডাক্ট প্যাকেজিং
- ফটো এডিটিং
- মার্কেটিং ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন
পৃথিবীতে কেউ সৃজনশীল হয়ে জন্ম নেয় না। অনুশীলন আর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ সৃজনশীল হয়ে উঠে। আপনার মধ্যে যদি ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে এই স্কিল আপনার জন্য। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে আয় করার অনেক উপায় রয়েছে। সুতরাং, শুরু করুন আজই।
৩. ভিডিও এডিটিং
ইউটিউব আর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রভাবে ভিডিও এডিটিং এখন অনেক জনপ্রিয় স্কিল। সময়ের সাথে সাথে ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটরের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানি তাদের ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির জন্য ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করে থাকে।
শুধু মাত্র আমেরিকাতে একজন ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটরের প্রতি বছরের আয় প্রায় ৭২ হাজার ডলার। অপরদিকে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে এর পরিমাণ হবে প্রায় ১.২ লক্ষ ডলারের বেশি।
৪. মার্কেটিং
মার্কেটিং মানে দোকানে দোকানে গিয়ে পণ্য বিক্রি করা নয়। এটা মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হল –
- এসইও
- স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- ইউটিউব মার্কেটিং
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- ব্রান্ড স্ট্রাটেজি
- মার্কেটিং কনসালটেন্ট
মার্কেটিং প্রোগ্রামিংয়ের মত কঠিন কোন বিষয় নয়। মার্কেটিংয়ের চাহিদা অনেক বেশি। কেননা প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন মার্কেটিং এক্সপার্ট লাগে। তাই, এই সেক্টরে কাজের চাহিদা অনেক বেশি।
৫. রাইটিং
রাইটিং শব্দ শুনে নাক সেঁটকানোর কিছু নেই। নিয়ম মাফিক এটাকে ১ নাম্বারে দেয়া উচিত ছিল। রাইটিং মানে কেবল লেখালিখি নয়। একেকটা আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড রিসার্চ থেকে শুরু করে পাঠকের চাহিদার দিকগুলো বিবেচনায় রাখতে হয়। এছাড়া, কোম্পানির ব্রান্ডিং এবং লেখাকে এসইও ফ্রেন্ডলি করতে হয়।
যদিও বর্তমানে রাইটিংয়ের উপর ফ্রিল্যান্সিং জব পাওয়া কিছুটা কঠিন। তবে, ভাল লেখক হলে আপনাকে জব লেস থাকতে হবে না। আপনি চাইলে নিজস্ব ব্লগে লিখেও মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করতে পারবেন।
রাইটিংয়ের আরেকটি বিভাগ হল কপিরাইট রাইটার। এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পেজ, ডিসক্রিপশন, প্রোডাক্ট, সার্ভিসের লেখাগুলো লিখে থাকে। এদের প্রতি ঘণ্টার রেট প্রায় ২০০ ডলার। আপওয়ার্কে এরকম সেরা অনেক কপিরাইটার রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন, এদের প্রতি ঘণ্টার রেট সর্বনিম্ন ১৫ ডলার এবং সর্বোচ্চ প্রায় ১৫০ ডলার।
৬. ভয়েস প্রদান
আপনার গলার কণ্ঠ যদি শ্রুতিমধুর হয়, তাহলে এই কাজটি আপনার জন্য। ভিডিও কন্টেন্টের মত অডিও কন্টেন্ট বেশ চাহিদা সম্পন্ন। বেশ কিছু সেক্টরে ভয়েসের প্রয়োজন হয়। যেমন –
- রেডিও বিজ্ঞাপন
- পডকাস্ট
- অডিও বুকস
- টেলিভিশন / চলচ্চিত্র / শর্ট ফিল্মের চরিত্রে
- গেম
- ইভেন্টের ধারাভাষ্য
একজন ভাল মানের ভয়েস প্রদানকারী ব্যক্তি প্রায় ১ হাজার ডলার চার্জ করে থাকে প্রতি ঘণ্টার জন্য। এই খাতে আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ক্লায়েন্টের কাজ করেন, তাহলেও আপনি প্রতিমাসে প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন।
এই সেক্টরে কাজ করতে হলে প্রথম দিকে আপনাকে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। প্রধানত খুব ভাল মানের রেকর্ডিং স্টুডিও এবং ট্রেনিং।
৭. কোচিং
কোচিং ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ের আরেকটি মাধ্যম। আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, সে বিষয়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে পারেন। শেখানোর বিষয় অনেক কিছু হতে পারে। যেমন –
- স্কাইপের মাধ্যমে গান শেখানো।
- বিভিন্ন বিদেশী ভাষা শেখানো।
- ডায়েট কন্ট্রোল ও নিউট্রেশন প্লান।
- ক্লাসের হোম-ওয়ার্ক সমাধান ইত্যাদি।
আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট-প্লেসগুলো দেখলেই বুঝবেন, মানুষ কি চাচ্ছে। এমনকি অনলাইনে উপরে উল্লেখিত স্কিলগুলো শেখাতে পারবেন আপনি।
শেষ কথা
অনলাইনে অর্থ উপার্জন শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করাও রয়েছে অসংখ্য উপায় যেখান থেকে ৭টি নিয়ে আলোচনা করলাম। সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন এবং সহজ কাজগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এখন আপনার দায়িত্ব এখান থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নির্বচন করা।
Leave a Reply