চাকরির বদলে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করাকে বেশী পছন্দ করেন। আর পছন্দ করার অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে একটা কম্পিউটার, নেট কানেকশন আর কোন একটি বিষয়ে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় মাত্র। শখের বসে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে অনেকেই পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়ে নেয়। আর যখন আপনি ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসাবে নিয়ে নিবেন, তখন আপনার বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন হবে।
আপনার ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে কিভাবে আরও বেশী সামনে এগিয়ে নিবেন কিংবা ফ্রিল্যান্সিং করেও কিভাবে ঝুঁকি মুক্ত জীবন যাপন করবেন, এসব বিষয় সম্পর্কে জানাটা অধিক জরুরি। অনেককেই দেখা যায় প্রথম দিকে খুব সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে কিন্তু পরবর্তীতে ব্যর্থতা আর হতাশার গ্লানি দিয়ে জীবনে আচ্ছাদিত করে ফেলে।
ফ্রিল্যান্সিং করে ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ হল ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো আপনি জানেন না। অথবা জানলেও নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করেননি। যাইহোক আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে আপনার যে ১০টি জিনিস দরকার তা নিয়ে আলোচনা করবো। আর এগুলো জানার পর আপনি এই সেরা ৪টি ওয়েবসাইট থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে পারবেন
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে যা কিছু দরকার
১. পরিকল্পনা
যে কোনো কাজে সফল হওয়ার প্রধান নিয়ামক হল সঠিক পরিকল্পনা। কেননা, পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজে সফল হওয়া যায় না। ফ্রিল্যান্সিংয়েও আপনার পরিকল্পনা করতে হবে। আপনার কোন ধরণের স্কিল আছে এবং আপনি কোন ধরণের মার্কেট-প্লেসে কাজ করতে চান সেটা ঠিক করতে হবে।
যেমন থিমফরেস্ট বা গ্রাফিক রিভারের মত মার্কেট-প্লেসে ওয়েবসাইট বা ডিজাইন বিক্রি হয়, আবার আপওয়ার্ক বা ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে ঘণ্টা, বিড কিংবা কন্টেস্ট ভিত্তিক কাজ হয়ে থাকে। এখন কোনটি কাজ করতে চান, এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা করুন। মোট কথা ফ্রিল্যান্সিং করার পূর্বে কিছু বিষয় নিয়ে আপনাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। যেমন:
- আপনার কি ধরণের স্কিল রয়েছে?
- ভাষা গত দক্ষতা বা কোমিউনিকেশন স্কিল কেমন আছে?
- কাজ করার জন্য যদি কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়, তবে সেটা আছে কিনা?
- কোন ধরণের মার্কেট-প্লেসে কাজ করতে চান?
২. আইডিয়া
আপনি কিসের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন, সেই বিষয়ে যদি আপনার কোন আইডিয়া না থাকে, তবে তো আপনার ফ্রিল্যান্সিং পেশার ষোল আনাই বৃথা। সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে আপনার স্কিল এবং কাজ করার মার্কেট-প্লেস সম্পর্কে পূর্ণ আইডিয়া থাকতে হবে।
যেমন, আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তবে আপনার অবশ্যই এই আইডিয়া থাকতে হবে যে কোন কোন ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিক্রি করা যায়। কিংবা, গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে আয় করার নানা রকম উপায় সম্পর্কেও আপনার আইডিয়া থাকা উচিৎ।
একইভাবে আপনি যে সেক্টরেই ফ্রিল্যান্সিং করতে চান না কেন, আপনাকে অবশ্যই সে সেক্টর সম্পর্কে পর্যাপ্ত আইডিয়া নিয়ে রাখতে হবে। আর কোন বিষয়ে আইডিয়া বা নলেজ অর্জণ করার উপায় হচ্ছে সে বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ রিসার্স করা, স্টাডি করা, নোট করা, বিষয়গুলো বারবার দেখা।
৩. মূল্য নির্ধারণ
মূল্য নির্ধারণ ফ্রিল্যান্সিংয়ের অন্যতম ধাপ। আপনি যে ধরণের ফ্রিল্যান্সিং করেন না কেন, সঠিক মূল্য নির্ধারণ না করতে পারলে আপনি কাজ হারাবেন। যেমন ঘণ্টা ভিত্তিক জবে যদি সঠিক রেট না দেন, তবে ক্লায়েন্ট হারাবেন। এছাড়া বিড করার সময়েও যদি আবোল তাবোল রেট দেন, তবে কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
অপরদিকে আপনি যদি ইনভাটো টাইপের মার্কেট-প্লেসে কাজ করেন, তবে আপনার পণ্যের যদি সঠিক মূল্য না দিতে পারেন, তবে তো আপনার পণ্য বিক্রিই হবে না। কাজেই, বুঝতেই পারছেন যে আপনার কাজের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সেটা করতে হবে অনেক ভেবে-চিন্তে ও সঠিকভাবে।
আপনি যদি যে কোন কাজে একদম নতুন হয়ে থাকেন এবং আপওয়ার্ক কিংবা ফ্রিল্যান্সারের মতো মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করে থাকেন, তবে আপনি আপনার কাজের ঘন্টা রেট দিতে পারেন সাধারণ মূল্যে। অর্থাৎ, ৫ থেকে ১০ ডলার। বিগিনার লেভেলে যদি আপনি এর থেকে বেশি রেট নির্ধারণ করেন, তবে কাজের জন্যে কেউ হায়ার করতে চাইবে না।
আবার আপনি যদি একটা কাজে এক্সপার্ট হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে একটু বেশি রেট নির্ধারণ করতে হবে। নৈলে আপনি দুই দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এক, আপনার আয় কম হবে। দুই, আপনাকে হায়ার করতে গিয়ে ক্লায়েন্ট দ্বিধান্বিত হবে। কাজেই, আপনার কাজের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করুন।
৪. সঞ্চয়
ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা আর তাই এখানে সঞ্চয় বাধ্যতামূলক বলা যায়। কারণ, সামনে আপনি কাজ পাবেন কিনা এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আর আপনি যদি টাকা পাওয়ার সাথে সাথে সব টাকা খরচ করে ফেলেন, তবে তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে। তাই ব্যয়ের খাত পরিমাপ করে একটি নির্দিষ্ট অংশ সঞ্চয় করে ফেলতে হবে।
৫. ক্লায়েন্ট ধরে রাখা
যারা ক্লায়েন্ট ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদের জন্য ক্লায়েন্ট হৃদপিন্ড স্বরূপ। তাই প্রত্যেক ক্লায়েন্ট ধরে রাখার চেষ্টা করুন। ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার পাশাপাশি, সব সময় কাজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করুন। ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে যেসব কাজ করতে পারেন:
- ক্লায়েন্টের চাহিদাকে গুরুত্ব দিন।
- কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা আনুন।
- সঠিক সময় কাজ ডেলিভারি দিন।
- অতিরিক্ত কোন সেবা দেয়ার চেষ্টা করুন।
- কাজ না বুঝলে প্রশ্ন করুন।
৬. শৃঙ্খলা
ফ্রিল্যান্সিং যেহেতু স্বাধীন পেশা তাই অনেকেই এই পেশায় আসলে অনেকটা বাউণ্ডুলে এবং শৃঙ্খালাবিহীন জীবন যাপন করেন। এটা খুব খারাপ অভ্যাস। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে শৃঙ্খলা খুব দরকারি। এতে করে আপনি ক্লায়েন্টও ধরে রাখতে পারবেন, আবার আপনার জীবনও সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখতে পারবেন।
৭. অধ্যবসায়
অধ্যবসায় ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং অসম্ভব। পৃথিবীর সব বিখ্যাত এবং সফল ফ্রিল্যান্সারদের সফলতার কথা জিজ্ঞাসা করলে প্রথমেই তারা অধ্যবসায়ের কথা বলবে। ক্লায়েন্ট না পাওয়া কিংবা কাজে বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও তারা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে অবশ্যই আপনার অধ্যবসায় থাকতে হবে।
৮. পোর্টফলিও
আপনি যদি নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই পোর্টফলিও থাকতে হবে। নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে তারা আপনাকে এই পোর্টফলিও দেখেই যাচাই করবে। আপনার মুখের কথায় তো আর তারা বুঝতে পারবে না আপনি কতটুকু অভিজ্ঞ। তাই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইলে নিজের কাজের একটি পোর্টফলিও তৈরি করে ফেলুন।
৯. রিসার্চ
রিসার্চ তথা গবেষণা করার অর্থ হল নিজেকে আপডেট রাখা এবং বর্তমানে কিসের চাহিদা কেমন সে সম্পর্কে অবগত থাকা। মার্কেট রিসার্চ করুন, বর্তমানে কোন কাজের চাহিদা বেশী তা অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। নিজের দুর্বলতা গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সফল ফ্রিল্যান্সারদের গুন এবং কাজের ধরণগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন।
১০. সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা
ভাল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তবে সমালোচনা সহ্য করে বসে থাকলে হবে না। আপনার নিজেকে সে বিষয়ে সংশোধন করতে হবে। ক্লায়েন্টের সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে সে বিষয়ে নিজেকে শুধরে নিন।
শেষ কথা
এই ছিল ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে আপনার যে জিনিস থাকা দরকার তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আসলে ফ্রিল্যান্সিং করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে এগুলোর কোন বিকল্প নেই। তাই নিজের মধ্যে এসব বিষয় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতে থাকুন।
Leave a Reply