সোশ্যাল মার্কেটিংয়ে যারা নতুন, তাদের অধিকাংশই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক মার্কেটিং টিপস্ সার্চ করে থাকেন। কারণ ফেসবুকের বিশাল ইউজারবেসকে কাজে লাগিয়ে যে কোন ব্যবসাকেই একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ফেসবুক মার্কেটিং কি আর কেন প্রয়োজন তা যারা জানেন, তারা এই সুযোগটি কখনোই হাতছাড়া করতে চাইবেন না।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও ফেসবুকের প্রতি চরমভাবে আসক্ত। এমন দিন খুব কমই রয়েছে যেদিন আমি একবারও ফেসবুকে লগইন করিনি। আর এমন কিন্তু আমি একা নই। DMR এর দেয়া তথ্য মতে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ৬৫ ভাগই প্রতিদিন লগ-ইন করে থাকেন।
আর এই বিশাল সংখ্যক ইউজারদেরকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিংয়ে সফলতা পাওয়া যায় তা নিয়ে আজকের পোষ্টে থাকছে কিছু দুর্দান্ত টিপস্।
ফেসবুক মার্কেটিং টিপস্
আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, শত শত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম থাকা স্বত্বেও কেন আজও ফেসবুককে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। উত্তরটা খুবই সোজা। আপনি যদি অন্যান্য সব সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে ফেসবুককে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, ফেসবুক এদের সবার থেকে বড়।
- প্রতি মাসে ফেসবুকে ২ বিলিয়নেরও বেশি ইউজার সক্রিয় থাকে এবং ১ বিলিয়নেরও বেশি ইউজার প্রতিদিন ফেসবুকে স্বক্রিয় থাকেন। আর এই পরিমাণ ইউজার অর্জণ করতে ফেসবুকের সময় লেগেছে ১৩ বছর।
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ায়িং সোশ্যাল প্লাটফর্ম ইউটিউবের রয়েছে ১.৫ বিলিয়নের মত মাসিক স্বক্রিয় ইউজার।
- উইচ্যাট এর মাসিক স্বক্রিয় ইউজার সংখ্যা ৮৮৯ মিলিয়ন।
- মাসিক ইন্সটাগ্রাম ইউজার ৭০০ মিলিয়ন।
- টুইটারের আছে ৩২৮ মিলিয়ন মাসিক স্বক্রিয় ইউজার।
- ন্স্যাপচ্যাট এ পর্যন্ত ২৫৫ মিলিয়নের মত মাসিক স্বক্রিয় ইউজার তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।
ইউটিউব এবং ইন্সটাগ্রাম প্রচুর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ফেসবুক এখনো তার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। ৯৩% মার্কেটারের মতে ফেসবুক মার্কেটিংয়ে যে ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়, তা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিই ফেসবুক মার্কেটিংয়ের জন্য কিছু স্মার্ট টিপস্।
সঠিক ক্যাটাগরী নির্বাচন:
পেজ তৈরীর জন্য ফেসবুকের ৬টি ক্যাটাগরী বিদ্যমান রয়েছে-
- লোকাল বিজনেস অর প্লেস: লোকাল এসইও কি ও কেন করবেন তা নিয়ে এর আগে একটি পোষ্টে আমরা আলোচনা করেছি। আপনার যদি কোন দোকান বা অফিস থাকেন, তাহলে সেটির লোকাল এসইও করার ক্ষেত্রে এ ধরনের পেজ নির্বাচন করতে হয়। আবার কোন নির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে পেজ তৈরীর ক্ষেত্রেও এ ধরনের ক্যাটাগরী নির্বাচন করা হয়।
- কোম্পানী, অর্গানাইজেশন, ইন্সটিটিউশন: কোন একটি নির্দিষ্ট কোম্পানী বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য পেজ তৈরীর ক্ষেত্রেও এ ধরনের ক্যাটাগরী নির্বাচন করা হয়।
- ব্র্যান্ড অর প্রোডাক্ট: ব্র্যান্ডিং করার জন্য এই ক্যাটাগরিটি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। বিভিন্ন কোম্পানী তাদের নিজস্ব পেজ পরিচালনার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডকে সোশ্যাল মিডিয়াতে উপস্থাপনের জন্য এই ক্যাটাগরীতে পেজ তৈরী করে থাকে।
- আর্টিস্ট, ব্যান্ড অর পাবলিক ফিগার: গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, লেখক, কবিসহ অন্যান্য সেলিব্রিটিরা তাদের জন্য এই ক্যাটাগরীতে পেজ তৈরী করে থাকেন।
- এন্টারটেইনমেন্ট: নিউজ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি বিষয়ে পেজ তৈরীর জন্য এই ক্যাটাগরিটা বেস্ট।
- কজ অর কমিউনিটি: লেখক, গেমার, আর্টিস্টসহ কোন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এই ক্যাটাগরীর পেজ ব্যবহার করা হয়।
পেজ ইউআরএল তৈরীতে সতর্ক থাকুন:
ফেসবুক পেজের ইউআরএল তৈরীর ক্ষেত্রে অবশ্যই যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য এবং বিষয় সম্পৃক্ত ইউআরএল নির্বাচন করতে হয়। আপনার যদি কোন ওয়েবসাইট থেকে থাকে, তাহলে সেটির সাথে মিল রেখেও ইউআরএল তৈরী করাটা ভালো হবে। উদাহরণ স্বরুপ hoicoibangla.com এর ফেসবুক ইউআরএল হলো: www.facebook.com/hoicoidotcom
প্রোফাইল এবং কভার ফটো অপটিমাইজ করুন:
একটি পেজে একজন ভিজিটর সর্ব প্রথম যা দেখে তা হলো পেজটির প্রোফাইল এবং কভার ফটো। এই দুইটি জিনিসকে যদি খুব সুন্দর এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন না করা হয়, তবে ভিজিটরের পেজ থেকে চলে যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি থাকে। প্রোফাইল পিকচারের ক্ষেত্রে কোম্পানীর লোগো ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। অন্যদিকে কভার ফটোর জন্য ইনফোগ্রাফিক্স, কল-টু-অ্যাকশন বা সিটিএ ইমেজ ব্যবহার করা উচিৎ।
সঠিক সিটিএ বাটন ও কাস্টমাইজ ট্যাব নির্বাচন:
প্রতিটি ফেসবুক পেজেই কল-টু-অ্যাকশন বাটন ও ডান পাশের ট্যাব কাস্টমাইজ করার সুবিধা থাকে। এটির মাধ্যমে আপনার পেজের ভিজিটর আপনার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পায়। ফেসবুকে ৮ ধরনের সিটিএ বাটন রয়েছে-
- বুক নাউ
- কন্ট্যাক্ট আস
- ইউজ অ্যাপ
- প্লে গেমস
- শপ নাউ
- সাইন আপ
- ওয়াচ ভিডিও
- সেন্ড ম্যাসেজ
উপরের বাটনগুলো থেকে যেটি আপনার পেজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সেটি বেছে নিতে হবে।
৭০-২০-১০ রুল:
একবার আপনার পেজ অপটিমাইজ করা হয়ে গেলে এবার আসে কন্টেন্ট তৈরীর পালা। কন্টেন্ট তৈরীর ব্যাপারে অবশ্যই আপনাকে কৌশলী হতে হবে। আপনার যদি এ ব্যাপারে বুঝতে কোন সমস্যা থাকে, তাহলে ৭০-২০-১০ রুল ফলো করা শুরু করুন-
- ৭০% সময় অরিজিনাল কন্টেন্ট পোষ্ট করুন।
- আপনার ফলোয়ারগণ যে বিষয়ে আগ্রহী তা নিয়ে ২০% পোষ্ট করুন।
- নিজস্ব প্রোমোশনমূলক ১০% পোষ্ট করুন।
একজন মার্কেটার হিসেবে আমি জানি যে, একটি ফেসবুক পেজকে প্রতিষ্ঠিত করা কতটা কঠিন। কিন্তু একই সাথে এটাও আমাদের সবার জানা যে, এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব কোন কাজ নয়। তথ্য নির্ভর কন্টেন্ট, সঠিক অডিয়েন্স টার্গেট করা, কন্টেন্ট পোষ্টিংয়ের জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করাসহ কিছু ছোট ছোট বিষয়ে একটু কৌশলী হলেই ফেসবুক মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া সম্ভব। ফেসবুক মার্কেটিং টিপস্ নিয়ে আমাদের আজকের পোষ্টটি আপনাদের কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
Leave a Reply