আমরা প্রতিদিন যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি তার চেয়ে একটু অন্যরকম করে ব্যবহার করলেই কিন্তু ফেসবুক আমাদের জন্য বয়ে আনতে পারে বিশাল এক সাফল্য। প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে? উত্তর হলো- ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
আসলে ফেসবুক এখন যে শুধু সবচেয়ে বড় সোশাল মিডিয়া, তাই কিন্তু নয়। বরং অন্যতম একটি অনলাইন মার্কেট।
হ্যাঁ, চ্যাটের বাইরেও এর রয়েছে এক বিশাল গণ্ডি যেখানে খুব ভালো প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে পেতে পারেন মার্কেটিং সফলতা। আর এই প্রচার প্রচারণারই একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভিডিও মার্কেটিং।
হ্যাঁ, আমাদের আজকের আলোচনা ফেসবুকে ভিডিও প্রচার বা মার্কেটিং নিয়েই থাকছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন ফেসবুক মার্কেটিং কি ও কেন প্রয়োজন আর ভিডিও মার্কেটিং তারই একটা অংশ।
ফেসবুকের বিকল্প ব্যবহার শুধু যে আপনার পণ্যের প্রচারণাই করবে, তা কিন্তু নয়। বরং বেশির চেয়েও বেশি কাস্টমার পেতে সাহায্য করবে। যার মাধ্যমে কয়েকদিনেই নিজের ব্যবসাকে নিয়ে যেতে পারেন অন্যতম একটি পর্যায়ে। তবে জিনিসটি সম্পর্কে একটি পূর্ণাংগ জ্ঞান থাকা কিন্তু আবশ্যক।
চলুন তবে জেনে আসি সেই বিকল্প ব্যবহার ও কর্মমুখী পরিকল্পনা নিয়ে-
ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিং কী?
মার্কেটিং ব্যবসা ক্ষেত্রের মূল মন্ত্র। ব্যবসা ক্ষেত্রে লাভজনক ফলাফলের পূর্ব শর্তই হলো মার্কেটিং। মূলত, মার্কেটিং বলতে বুঝায় কোনো একটি প্রোডাক্ট এর যথাযথ প্রচার-প্রচারণা। একটি প্রোডাক্টকে যখন তার প্রডিউসার যথাযথভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরতে পারবে, ঠিক ততই প্রোডাক্টির গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। আর লোকসম্মুখে জনপ্রিয়তা তুলে ধরার পেছনে যেটি কাজ করে সেটিই হলো ‘মার্কেটিং’।
আর যখন এই জনপ্রিয়তা লাভের উদ্দেশ্যে প্রচার কাজে ব্যবহার করা হয় ‘ফেসবুক’ নামের এই শ্রেষ্ঠ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্ম, তখনই সেটিকে বলা হয় ‘ফেসবুক মার্কেটিং ‘। অর্থাৎ, ফেসবুককে কেন্দ্র করে প্রোডাক্ট এর প্রচার প্রচারণা ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রচার বা মার্কেটিং কাজে ব্যবহৃত হয় একটি গুণগত ও মানসম্পন্ন ভিডিও। কেননা এটি অনেকাংশেই উপভোগ্য। তাই, এটি ‘ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিং’ হিসেবে বহুল প্রচলিত।
“ভিডিও মার্কেটিং” ফেসবুকের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মার্কেটিং প্লাটফর্ম। কারণ, যেহেতু ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাই, অনেকেই এই যোগাযোগ মাধ্যমকেই মার্কেটিং প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।
তবে, অনেকেই সঠিকভাবে জানে না কীভাবে তার প্রোডাক্টকে ভিডিও মার্কেটিং এর মাধ্যমে জনপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরা যায়। এর মূল কারণ হলো প্রচার বা ভিডিও মার্কেটিং এর সঠিক উপায় না জানা। যার ফলে, তার প্রোডাক্ট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আশাতীত ভিউ, অ্যাংগেজমেন্ট কিংবা বেশি বেশি শেয়ার হয় না। যার সর্বশেষ রূপ ধারণ করে তার ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিং এর যথাযথ জনপ্রিয়তা না পাওয়া। জনপ্রিয়তা পেতে, এক্সপার্টদের দেয়া কিছু ফেসবুক মার্কেটিং টিপস্ ফলো করতে পারেন।
ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিং করবেন কিভাবে?
তো কীভাবে ফেসবুকে আপনার পোস্ট করা ভিডিওতে বেশি বেশি ভিউ, অ্যাংগেজমেন্ট কিংবা শেয়ার পাওয়া যায় তার কিছু নিয়ম এবং পন্থাবলি উল্লেখ করা হলো।
সংক্ষিপ্ত ভিডিও
ফেসবুক ভিডিও মার্কেটিংয়ের জন্য যে ভিডিওটি করা হবে তা যথাসম্ভব একটি লিমিট এর মধ্যে রাখতে হবে।
আজ এই ব্যস্তবহুল সমাজে আমরা কেউই ধৈর্য নিয়ে বেশিরভাগ থাকতে পারি না। শহর কিংবা গ্রামে, যে যেখানেই থাকুক, সবাই নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত। আমরা হয়ত ফেসবুকে থাকিই কিছু অবসর সময় কাটানোর জন্য, যা আমাদের এই জীবনের শুধু সাময়িক ফুরসত মাত্র।
তাই, আপনার যদি ভিডিও মার্কেটিং থেকে ভাল ফলাফল উদ্দেশ্য থাকে, চেষ্টা করুন ভিডিওটিকে সংক্ষিপ্ত রাখার। মোটামুটি ১৫ থেকে ৯০ সেকেন্ড এর মাঝে রাখাটা সব থেকে ভালো। কেননা, আমরা সকলেই শর্টকাট রাস্তা খুঁজে বেড়াই যেন আমাদের কাজগুলো সোজা হয়ে যায়। আর তাই, সংক্ষিপ্ত ভিডিও ইউজারদেরকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে আপনি বেশি বেশি ভিউ পেতে পারেন।
ফোকাস টু মেইন পয়েন্ট
অযথা কথা না বাড়িয়ে আপনি সরাসরি আপনার মার্কেটিং এর মেইন পয়েন্টে ফোকাস করুন। আপনার প্রোডাক্ট এর উপকারী দিকগুলি তুলে ধরুন এবং কেন তারা এই প্রোডাক্ট ব্যবহার করবে সে বিষয়ে তাদের সরাসরি অবগত করুন।
কেননা, ভাব মানুষের উচ্ছ্বাসকে প্রগাঢ়িত করে। তাই, যখন আপনি মূল কথা না বলে অহেতুক কথা বাড়াবেন, তখন তাদের ভাবকে যথাযথ জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন না এবং হতে পারে তারা আপনার মার্কেটিং ভিডিওটি সাচ্ছন্দ্যে এড়িয়ে যাবে।
যথাযথ ‘থাম্বস নেইল’ এর ব্যবহার
আপনার ভিডিওটি যখন দেখতে নরমাল, সাদামাটা কিংবা সাধারণ মনে হবে, তখন অনেকেই হয়ত এটি এড়িয়ে যাবে। তাই, আপনার মার্কেটিং ভিডিওটিকে রসপূর্ণ করার জন্য এডিটিং এর মাধ্যমে কিছু থাম্বস নেইল যোগ করুন। কেননা, এর মাধ্যমে আপনার ভিউয়ার্সকে আপনি আকৃষ্ট করতে পারবেন।
আপনার থাম্বস নেইলটি যত বেশি ইউনিক এবং ইন্টারেস্টিং বানাতে পারবেন, তত বেশি এর আকৃষ্টটা বেড়ে যাবে। আর যার ফল স্বরূপ আপনি পাবেন উল্লেখযোগ্য ভিউ এবং অ্যাংগেজমেন্ট।
ফেসবুক মার্কেটিং পেইজ এর প্রবহমানতা
আপনি যেই পেইজে আপনার ফেসবুক মার্কেটিং ভিডিওটি আপলোড করবেন, সেটির যথাযথ প্রবহমানতা বজায় রাখুন। অর্থাৎ, পেজটিকে নানা রকম আকর্ষণীয় পোস্টের দ্বারা অ্যাক্টিভ রাখুন। আপনি যদি আপনার মার্কেটিং পেইজ এর প্রবহমানতা বজায় না রাখতে পারেন, তাহলে আপনি আশাতীত ফলোয়ার পাবেন না।
এমনকি, আপনি ভিডিওটি আকর্ষণীয় বানানো সত্ত্বেও আপনার ফেসবুক পেইজের প্রবহমানতা না থাকায় যথেষ্ট ভিউ পাবেন না। তাই, যথাসম্ভব আপনার পেইজকে সকলের সামনে তুলে ধরুন এবং প্রবহমানতা বজায় রাখুন।
ক্যাপশনের ব্যবহার
আপনার ভিডিওটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বানাতে পারেন একটি সুন্দর ক্যাপশন। আর অতি অল্প কথায় আপনার ভিডিওর মূল বিষয়াবলি তুলে ধরুন ক্যাপশনের মাধ্যমে। তবে, কখনোই সম্পূর্ণ বিষয় তুলে ধরবেন না । কেননা, এতে আপনার ভিডিও দেখা ছাড়াই তারা এড়িয়ে যেতে পারেন।
আমাদের অনেকেই এমন আছে যে কোনো কিছু দেখার আগে তা সম্পর্কে হালকা পড়ে জেনে নিতে ভালোবাসি। তাই, যখন আপনি ক্যাপশনের মাধ্যমে বিষয়াবলিকে তুলে ধরবেন, তখন বেশ তূলনামূলক ভিউয়ার আকৃষ্ট হতে পারবে।
তাই ব্যবহার করুন একটি মানসম্মত ক্যাপশন।
কিছু ভিডিও কন্টেন্ট যোগ করা
আপনার মার্কেটিং ভিডিওর মধ্যে অন্যান্য কিছু ভিডিও কন্টন্ট যোগ করুন, যা অবশ্যই আপনার ভিডিও এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
এক্ষেত্রে, হতে পারে আপনার প্রোডাক্ট এর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার কিংবা তার উপকারিতা নিয়ে একটি কন্টেন্ট ভিডিও। যার ফলে এক দিক দিয়ে এটি হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পাশাপাশি ভিডিওটি হবে আকর্ষণীয় ।
ভিডিওটির যথাযথ বিস্তার
আপনার ভিডিওটি যখন তৈরি হয়ে যাবে, আপনার পরবর্তী কাজ হলো একে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। তাই, প্রথমে আপনাকে নিজেই এর বিস্তার লাভের জন্য চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হবে আপনার ভিডিও এর পরিচিতি লাভ।
আর যখন এর পরিচিতি চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে, তখন এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং আপনি পেতে পারেন বেশি বেশি শেয়ার এবং ফলোয়ার। পাশাপাশি আপনার মার্কেটিং ভিডিও এর যথাযথ ফলাফল লাভ করতে পারবেন।
মেট্রিকস্ চেকিং
পরিশেষে সর্বশেষ কাজ, যখন আপনি আপনার ফেসবুক মার্কেটিং ভিডিওটি হাতে পাবেন এবং পেইজে আপলোড এর জন্য প্রস্তুত, ঠিক তখনি আপলোডের পূর্বে আপনার ভিডিও এর মেট্রিক্স চেক করে নিন। এতে আপনি যদি কোনো ত্রুটি রেখে থাকেন, তাহলে সেটি চোখে পড়বে এবং ত্রুটিগুলি সম্পন্ন করে সম্পূর্ণ ফ্রেশ ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
যার ফলে আপনার মার্কেটিং করা ভিডিওর ফলস্বরূপ লাভ পেতে সক্ষম হবেন।
আপনার ভিডিও কেন দেখবে?
এখন আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করি, প্রশ্নটি হলো ভিউয়ার আপনার ভিডিও কেন দেখবে? তার তো কোনো কারণ থাকতে হবে, তাই না?
আর সে জন্যই আপনি যথাযথভাবে নিজের উদ্দেশ্যকে লাভজনক উপায়ে তুলে ধরুন। এতে করে ভিউয়ারদের কৌতুহলকে আপনি জাগিয়ে তুলতে পারেন। তাদেরকে এমনভাবে আপনাকে আয়ত্তে আনতে হবে যেন তারা আপনার ভিডিওর প্রতি যথেষ্ট কৌতুহলী হয়ে যায়। তাই, তাদেরকে জানিয়ে দিন কেন আপনার এই প্রোডাক্ট কিংবা আপনার এই ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ।
আবার অনেকেই আছেন যারা অযথা কোনো ভিডিও চালু করতে চান না। তাই, যখন তারা জানতে পারবেন, আপনার ভিডিও এর প্রাণবন্ত উদ্দেশ্য নিয়ে, তখন তারা কৌতুহল ছাড়াও দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সর্বোপরি এসবের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন বেশি ভিউ, অ্যাংগেজমেন্ট এবং শেয়ার। তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার আশাতীত ফলাফলের পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করা যায়, সাফল্য আপনারই দ্বারপ্রান্তে!
এক্ষেত্রে, আপনি যদি কোনো সমস্যায় পড়ে যান যে, কোন ভিডিও এডিটর ব্যবহার করে ভিডিও এডিট করবেন, তাহলে দেখে আসতে পারেন আমাদের-ফেসবুক ভিডিও ইডিটর।
Leave a Reply