ফেসবুক হচ্ছে পৃথিবীর ১ নম্বর সোশ্যাল বিজনেস প্লাটফর্ম। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ফেসবুক বিজনেস পেজ রয়েছে। ফেসবুকে প্রতি মাসে ২ বিলিয়নেরও বেশি অ্যাক্টিভ ইউজার থাকে। আর এ কারণেই লক্ষ লক্ষ ছোট-বড় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ফেসবুককে তাদের কাস্টামারদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, একজন ব্যবহারকারী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৫ মিনিট ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকেন। এই ৫৫ মিনিট সময় তারা নিজস্ব নিউজ ফিডসহ বিভিন্ন পেজের কন্টেন্ট দেখে থাকেন। এ থেকে সহজেই ফেসবুক পেজের কার্যকরীতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ফেসবুক পেজ সম্পর্কে যদি আপনার বিস্তারিত ধারণা না থেকে থাকে বা আপনি যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেসবুক পেজ খুলতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে ফেসবুক মার্কেটিং কি ও কেন করবেন তা আপনার অবশ্যই জানা উচিত।
ফেসবুক বিজনেস পেজ
ফেসবুক তাদের ইউজারদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেজ তৈরীর সুবিধা দিয়ে থাকে। ফেসবুক বিজনেস পেজ হচ্ছে এমন একটি সুযোগ যেটিকে কাজে লাগিয়ে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধিসহ ফেসবুক ভিত্তিক সেল জেনারেট করতে পারে। ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার ৭টি সাধারণ উপায় আছে। আসুন, তবে পেজ তৈরির লাভ জানি।
ফেসবুক পেজ তৈরী করা খুবই সহজ-
- আপনাকে শুধুমাত্র আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে লগ-ইন করতে হবে।
- এরপর ড্রপ ডাউন মেনু থেকে “Create a Page” অপশন এ কিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পেজ তৈরী করতে হবে।
- সর্বশেষে পেজের জন্য একটি প্রোফাইল পিকচার ও একটি কভার ফটো আপলোড করতে হবে।
ফেসবুক বিজনেস পেজ ব্যবহারের লাভ
ফেসবুক তৈরীর বিষয়টি সহজ হলেও সঠিকভাবে পেজ সেটআপ করা একটু চ্যালেঞ্জিং। তবে নিশ্চিতভাবে এটা বলা যায় যে সঠিকভাবে ফেসবুক বিজনেস পেজ পরিচালনা ও মার্কেটিং করা হলে অবশ্যই সেটা থেকে অনেক ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
কোন সীমাবদ্ধতা নেই:
আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করেন। আপাতদৃষ্টিতে এটি কোন সমস্যা মনে না হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
আপনি চাইলেই যাকে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন না। আর যদি এমনটা বার বার করেন, তাহলে আপনার প্রোফাইল ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পেজের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা কখনই হয় না। এখানে ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা বন্ধুদের ইনভাইট করার সুবিধা থাকার পাশাপাশি, বিশ্বের যে কোন প্রান্তের ইউজার চাইলেই আপনার পেজে লাইক দিতে পারে।
আবার একটি ব্যাক্তিগত প্রোফাইলে ৫ হাজারের বেশি বন্ধু যোগ করা সম্ভব নয়। অথচ ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রে এমন কোন সীমাবদ্ধতা নেই অর্থাৎ যতখুশি তত মানুষকে আপনি আপনার পেজের সাথে সংযুক্ত করতে পারবেন।
ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরীর সুবিধা:
ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীক কন্টেন্ট পাবলিশ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও বা স্ট্যাটাসও শেয়ার করে থাকে। এর ফলে কখনোই আপনার পণ্যের কোন ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী হয় না। ফেসবুক পেজ আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ীক দিকগুলিকে একই জায়গায় প্রকাশ করার ঝামেলা থেকে মুক্ত করে। যার ফলে আপনার পণ্যের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী হয়।
বিজ্ঞাপনের সুবিধা:
ফেসবুক তার বিজনেজ পেজ ব্যবহারকারীদেরকে পোস্ট বুস্ট করার সুযোগ দিয়ে থাকে যা ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে কখনোই সম্ভব নয়। এই ফিচার ব্যবহার করে একজন পেজ ব্যবহারকারী তার যে কোন পোস্টকে বিজ্ঞাপন আকারে টার্গেটেড অডিয়েন্সের সামনে তুলে ধরতে পারে। পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্যে বিজ্ঞাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। আর ফেসবুকে রয়েছে বিজ্ঞাপন সুবিধা যা ব্যবহার করে সেবা ও বিক্রি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এসইও এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ:
ফেসবুক এবং সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যকার সর্ম্পক নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক জরিপ হয়েছে। ব্যবসায়ীক ওয়েবসাইট ফেসবুক পেজের কারণে দ্রুত সময়ে সার্চ রেজাল্টে র্যাংক লাভ করে। আবার ওয়েবসাইট না থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিষয় সম্পৃক্ত সার্চ রেজাল্টে গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলি ফেসবুক পেজের লিংক প্রদর্শন করে থাকে।
আপনার বিজনেসের জন্যে যদি একটি পেজ থাকে, তবে সেটি আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইও’র কাজ করবে। সুতরাং, বুজতেই পারছেন এসইওর ক্ষেত্রে ফেসবুক বিজনেস পেজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল ফ্রেন্ডলি:
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করে থাকে। ফেসবুকও তার ব্যতিক্রম নয়। ওয়েবসাইট তৈরীর ক্ষেত্রে সেটিকে কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার জন্য আলাদাভাবে প্রোগ্রামিং করতে হয়। কিন্তু ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই কম্পিউটার ও মোবাইল ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট পাবলিশ করা সম্ভব হয়।
প্রতিদ্বন্দী কোম্পানী সম্পর্কে জানা:
প্রতিটি ফেসবুক পেজেই “Pages to watch” নামে একটি বিল্ট-ইন ফিচার থাকে। এটি ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার প্রতিদ্বন্দী কোম্পানী সম্পর্কে বিভিন্ন আপডেট পেতে পারেন। এ ধরনের ফিচারের কারণে নতুন নতুন কৌশল তৈরীর মাধ্যমে খুব সহজেই প্রতিদ্বন্দী কোম্পানীর চাইতে ভালো ফলাফল অর্জণ করা সম্ভব হয়।
থার্ড পার্টি টুল ব্যবহারের সুবিধা:
ফেসবুকে আপনার ব্যবসাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু থার্ড পার্টি টুলস রয়েছে। এসব টুলস আপনাকে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট, অ্যানালিটিকস প্ল্যাানিং, অ্যাডভার্টাইজিংসহ অন্যান্য প্রমোশনাল কাজে সহায়তা করে থাকে। আমার দেখা এ ধরনের একটি চমৎকার টুলস হচ্ছে AgoraPulse যা ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার পেজকে প্রফেশনালভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
অ্যাডমিন রোল সুবিধা:
একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনার জন্য একাধিক ব্যক্তির মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া যায়। পেজের অ্যাডমিন চাইলে নিচের অ্যাডমিন রোলগুলির মাধ্যমে একাধিক ইউজারকে পেজ পরিচালনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দিতে পারেন।
- ইনসাইট অ্যানালিস্ট: শুধুমাত্র পেজের ইনসাইট দেখতে পারবে।
- অ্যাডভার্টাইজার: ইনসাইট দেখতে পারবে এবং অ্যাড ক্রিয়েট করতে পারবে।
- মডারেটর: উপরের ২টি কাজসহ ম্যাসেজ সেন্ড করতে পারবে, পেজে আসা কমেন্ট এর রিপ্লাই দিতে পারবে এবং কমেন্ট ডিলিট করতে পারবে।
- কন্টেন্ট ক্রিয়েটর: উপরের ৩টি কাজসহ পেজের পোষ্ট তৈরী, পেজ এডিট এবং অ্যাপ যোগ করতে পারবে।
- ম্যানেজার: উপরের সবগুলি সহ অন্যান্য অ্যাডমিন রোল ম্যানেজ করতে পারবে।
ফেসবুক বিজনেস পেজ ব্যবহারের আরো অনেক উপকারী দিক রয়েছে। অন্তত আজকের দিনে ফেসবুক পেজ ছাড়া কোন ব্যবসা পরিচালনার কথা ভাবা যেন অসম্ভব। তাই, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যে আজই ফেসবুকে একটি পেজ খুলুন। আর ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানোর নানা উপায় জেনে নিয়ে পেজটিকে ইফেক্টিভলি ব্যবহার করুন।
আজ এ পর্যন্তই, ফেসবুক পেজ নিয়ে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
Md mostakim says
আমি তো জানি না আমি কি ব্যবসা করবো। কেননা, আমি তো আর ব্যবসায়িক না, তাহলে আমাকে কেন ব্যবসার কথা বলা হচ্ছে?
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ, মোস্তাকিম ভাই। যারা এখন ব্যবসা করছে, তাদের কেউ-ই আগে থেকে ব্যবসায়িক ছিল না, ব্যবসা করতে করতেই সবকিছু শিখে নিয়েছে। আপনিও তাই করতে পারেন।
Md nazmul molla says
আমার একাউন্ট লক, ফেসবুক. 01984980486 please number sir please