অনেকেই ফেসবুক পেজের জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অটোলাইক নিয়ে থাকেন। কিন্তু জানেন না যে ফেসবুক অটো লাইক এর অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা কখনো কখনো পেজের জন্যে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
এটা সত্যি যে, একটা পেজের জন্যে লাইকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ, আপনার পেজে যদি লাইকই না থাকে, তবে পেজ খোলার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়।
সাধারনত, কমিউনিটি বিল্ড আপ কিংবা বিজনেস পারপাসে আমরা ফেসবুক পেজ খুলে থাকি। বিশেষ করে, বিজনেস রিলেটেড যে কোনও প্রয়োজনে ফেসবুক পেজের গুরুত্ব অপরিসিম।
আপনি হয়তো জানেন যে, ফেসবুক বিজনেস পেজের ৮টি অসাধারণ লাভ রয়েছে। কিন্তু যদি সেই পেজে মানুষ লাইক না দেয়, তবে পেজের ভিজিবিলিটি থাকবে না। অর্থাৎ, এই পেজটির পোস্টগুলো মানুষের কাছে পৌঁছোবে না।
আর যদি মানুষের না পৌঁছাতে পারেন, তবে আপনার পোস্টগুলো বৃথা যাবে। এতে করে যে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আপনি পেজ খুলেছেন, সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। ফলে, আপনার ব্যবসাও হবে না। সুতরাং, ফেসবুক পেজ অধিক হারে ভিজিবল করা, লাইক বাড়ানো, পোস্টের সঙ্গে ইউজার অ্যাংগেজমেন্ট তৈরি করার ব্যাপারে আপনাকে সিরিয়াস হতে হবে।
আপনি যদি আপনার ফেসবুক পেজটি মানুষের কাছে ভিজিবল করতে চান, যদি পেজের পোস্টগুলো অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান, সর্বোপরি ফেসবুক পেজ থেকে নানা উপায়ে আয় করতে চান, তবে আপনার প্রচুর লাইক প্রয়োজন।
কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, সেই লাইক যেন ন্যাচারাল উপায়ে হয়। কোনও রকম স্প্যামি পদ্ধতির ব্যবহার যেন না হয়। অটো লাইক একই সঙ্গে ইল্লিগ্যাল, স্প্যামি এবং ক্ষতিকর। তাই, সুদূর প্রসারি লাভের জন্যে আপনাকে অটো লাইক নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, অটো লাইকের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
ফেসবুক অটো লাইক এর ক্ষতিকর দিক
পেজের প্রাইভেসি থাকে না
সব ধরণের অটো লাইকার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনেরই সেটিংস্ রিকোয়্যারমেন্ট রয়েছে। আর এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রিকোয়্যারমেন্ট হচ্ছে প্রাইভেসি সেটিংস্ পাবলিক। অর্থাৎ, আপনার পেজের প্রাইভেসিকে পাবলিক করে দিতে হবে।
এই রিকোয়্যারমেন্টের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আপনার পেজের অ্যাক্সেস নেয়া। বেশিরভাগ অ্যাপ বা ওয়েবসাইট এটা করে আপনার পেজে স্পন্সর অ্যাড শো করার জন্যে। আপনাকে যে তারা অটো লাইকের ব্যবস্থা করে দেবে, এতে তাদের লাভ কি। স্পন্সর অ্যাড দিয়েই তারা লাভবান হয়ে থাকে।
কিন্তু এসব অ্যাডের মধ্যে এমন কিছু অ্যাড থাকে যেগুলো দৃষ্টিকটু এবং আপনার ইমেজের সঙ্গে যায় না। যেমন,
- Sex pills
- Sex partners
- Hot girls
- Huge Boobs
ভাবুন, আপনার প্রোপাইল কিংবা পেজে ঢুকে কেউ এ ধরণের অ্যাড দেখলো, তখন আপনার সম্পর্কে তার কেমন ধারণা হবে!
আবার, কিছু অ্যাপ্লিকেশন এই অ্যাক্সেস আদায় করে নেয় অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে। নানা উপায়ে তারা আপনার পেজ হ্যাক করার চেষ্টা করে থাকে। এমনকি, অটো লাইকের ফাঁদে পড়ে হ্যাকিংয়ের স্বীকার হয়েছেন, এ-রকম উদাহরণ অনেক আছে।
আপনার অ্যাকাউন্ট থেকেও শত শত পেজে লাইক যাচ্ছে
বর্তমান দুনিয়া নিউটনের থার্ড ল’ এর উপর নির্ভরশীল।
To Every Action there Is Equal & Opposite Reaction.
ফেসবুক অটো লাইকারস্ আপনার পেজে হাজার হাজার লাইক এনে দিচ্ছে আর বিনিময়ে আপনাকেও কিছু দিতে হবে। সেটার জন্যে তারা টোকেন রিকোয়্যার করে থাকে।
টোকেনের ব্যবহার করা মানেই হচ্ছে, অটো লাইকার ওয়েবসাইটগুলো বিশেষ একটা স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে পেজের সকল অ্যাডমিন, এডিটর, মডারেটরসহ সবার পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট থেকেই তাদের নেটওয়ার্কে থাকা সকল পেজে লাইক দিয়ে নিচ্ছে।
প্রথমত, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে র্যান্ডমলি লাইক যাওয়ার কারণে অ্যাকাউন্টটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ফেসবুকের কাছে আপনার প্রোপাইলটি ধীরে ধীরে স্প্যামি অ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ফলে, কখনো যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়, তবে আপনি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের রিকোয়েস্ট পাঠালে কাজ হবে না।
দ্বিতীয়ত, যে-সব পেজে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক যাচ্ছে, সেগুলোর মাঝে অসংখ্য মানি লন্ডারিং, জুয়া-বাজি এবং পর্ণ পেজ রয়েছে। আপনি যখন কোনও পেজে লাইক দেন, তখন আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা অনেকেই সেটি দেখতে পায়, জানতে পারে।
এখন চিন্তা করুন, আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজন দেখছে যে, আপনি বিভিন্ন পর্ণ সাইটে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকছেন। তাহলে, তাদের কাছে আপনার কেমন ইমেজ দাঁড়াবে! মোদ্দা কথা, সোশ্যাল কমিউনিটিতে আপনি আর ভদ্র ইমেজ নিয়ে থাকতে পারবেন না, সিল পড়ে যাবে।
তৃতীয়ত, আপনি যখন টোকেন নাম্বারের জন্যে তাদের সাইট বা অ্যাপে রিকোয়েস্ট দেবেন, এটি আপনাকে ফেসবুকে রিডাইরেক্ট করে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনি আপনি একটি সাক্সেস ম্যাসেজ দেখতে পাবেন। কিন্তু তার নিচেই ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেম থেকে আসা একটি সতর্ক বার্তা দেখতে পাবেন।
আপনি কি মনে করেন, এটা আপনার জন্যে ভাল কিছু বয়ে আনছে। মোটেই না, বরং ফেসবুক তাদের সিকিউরিটির জন্যে এক সময় হয় আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্যানড্ করে দিতে পারে।
অ্যাকাউন্ড ব্যানড্ খাওয়ার সমূহ সম্ভাবণা
অটো লাইকার ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই আপনি অসংখ্য মিস-লিডিং ম্যাটেরিয়ালসে লাইক দিচ্ছেন এবং ফেসবুকের পলিসি ব্রেক করছেন। এমনকি, র্যান্ডম লাইকের মাধ্যমে আপনি স্প্যামারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন, যেটা আপনি নিজেও জানেন না। কাজেই, ফেসবুক কতৃপক্ষ যে কোনও সময় আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্যানড্ করে দিতে পারে কিংবা আপনার বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত অ্যাকশনগুলো নিতে পারে-
- সাময়িক সময়ের জন্যে আপনার অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস অফ করে দিতে পারে।
- নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্যে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যানড্ করা হতে পারে।
- কিছু পেজ বা গ্রুপে আপনার কন্টেন্ট শেয়ার বন্ধ করে দিতে পারে।
- কিছু কমিউনিটিতে আপনার লাইক, কমেন্ট অপশন বন্ধ করে দিতে পারে।
শেষ কথা, উপরোক্ত সকল সম্ভাবণা থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট রক্ষা করার জন্যে আপনার অবশ্যই ফেসবুক অটো লাইক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। যেখানে ন্যাচারাল উপায়ে ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানোর ১২ উপায় আছে, সেখানে কেন আপনি ফেক লাইক ইউজ করবেন?
অনেকেই না জেনে, না বুঝে অটো লাইক নিয়ে থাকেন আর নিজের পেজটাকে স্প্যামি করে তোলেন। আশা করি, এ লেখাটি পড়ার পর কেউ আর অটো লাইকের চিন্তাই করবেন না।
আমিও আমার বিজনেস পেজের জন্যে অটো লাইকের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু, এই লেখাটি পড়ার পর অটো লাইকের চিন্তা বাদ দিলাম। লাভের চেয়ে ক্ষতিই যেখানে বেশি, সেখানে তো না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।