এখন আমাদের কারোর কাছেই অজানা নয় যে, ফেসবুক ভিডিওর মাধ্যমে মুহুর্তেই পৌছে যাওয়া যায় হাজারো মানুষের কাছে। আর এই পৌছে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই আপনি যখন ফেসবুকে ভিডিও বানান এবং আপলোড করেন, তখন উদ্দেশ্য একটাই থাকে যে কিভাবে হাজার হাজার লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পাওয়া যায়, তাই না?
কিন্তু একটা বিষয় কি জানেন Ben Aronson, Adams & Knight এর একজন সোশাল ডিরেক্টর, এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন যে একটা ভিডিও একজন ভিউয়ার যেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখে তার উপর নজর দেয়া উচিত। বেশি বেশি শেয়ার কিংবা লাইক নয়।
অর্থাৎ, তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে আপনার ভিডিও হাজার হাজার শেয়ার পাওয়ার পরও যদি ভিউয়ার শুধু মাত্র শুরুর কয় সেকেন্ড দেখেই চলে যান, তাহলে কোনো লাভ নেই। কারণ, আপনার মেসেজ তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আর আপনার ভিডিওর সার্থকতাও সেখানে নষ্ট হয়ে যায়।
ফেসবুকে বাংলাদেশ থেকে ভিডিও পোস্ট করে আয় করার উপায় আছে, এটা অনেকেই জানেন। পাশাপাশি এটাও নিশ্চয়ই জানা আছে যে সেই ভিডিও যদি কেউ না দেখে, তবে সার্থকতা নেই এবং আয়ও নেই। তাই, আপনার ভিডিওতে এমন কিছু থাকতে হবে যা ভিউয়ারকে আকৃষ্ট করবে, এমন মেসেজ থাকা প্রয়োজন যা যে কাউকে শেয়ার করতে বাধ্য করবে।
আপনার মেসেজ যদি খুব ছোট হয়, সেক্ষেত্রে ছোট ভিডিও তৈরি করুন। আর বেশি বড় হলে ভিডিওটি এমনভাবে বানান যাতে অ্যাংগেজমেন্ট থেকে শুরু করে ভিউ শেয়ার সবই বাড়ে।
কিন্তু, এত কিছু করবেন কিভাবে, তাই না? আপনার মনে হতেই পারে কোনো মেসেজ পৌঁছানোর জন্য এমন এংগেজিং ভিডিও বানানো তো প্রায় অসম্ভব। তবে, আপনাকে জানাতে চাই বিষয়টা মোটেও অসম্ভব নয়। আর, ফেসবুক ভিডিও বানানোর দিক নির্দেশনা মেনে এবং কিছু টিপস্ খাটানোর মাধ্যমে আপনার ভিডিওকে এক অনন্যতার অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ফেসবুক ভিডিওকে কিভাবে এই অনন্যতার অবস্থানে নেবেন এবং বাদ বাকি করণীয়গুলোকে মাথায় রেখেই আজকের আলোচনাটি সাজানো হয়েছে। হ্যা, আজকে আমরা জানব ফেসবুকের উদ্দেশ্যে ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে যা করা উচিত এবং যা করা উচিত নয়।
ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে যা যা করবেন ও যা যা করবেন না
আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা যে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চলেছি তা হলো একটি ফেসবুক ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেয়া উচিত এবং যে বিষয়গুলোকে বর্জন করা উচিত সেই সম্পর্কে। চলুন জেনে আসি-
মানসম্মত ভিডিও তৈরির চেষ্টা
প্রথমত, আপনাকে আপনার ভিডিওর কোয়ালিটি বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ, মানসম্মত ভিডিও তৈরির চেষ্টা করতে হবে। একটা কোয়ালিফাইড ভিডিও তৈরির জন্য আপনাকে যে অনেক অর্থ খরচ করতে হবে, এমনটা নয়। ছোটখাটো বিষয়ে লক্ষ্য রাখলেই একটা মানসম্মত ভিডিও তৈরি করা সম্ভব।
প্রথমত, ভিডিওটির সাউন্ড কোয়ালিটি, দ্বিতীয়ত ভিডিওটির চিত্রাবলি (imagery) যাতে হাই রেজোল্যুশন এর হয় এই দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। ভিডিওটির শুটিং আপনি নিজে করতে চাইলে ভিডিও তৈরির যথাযথ সরঞ্জাম ক্রয় বা যোগাড়ের চেষ্টা করবেন। অথবা, প্রোফেশনাল কাউকে হায়ার করুন। এর মাধ্যমেই আপনি একটি মানসম্মত ভিডিও বানাতে পারবেন।
ভিডিওটি বেশি বড় হওয়া যাবে না
একটি মানসম্মত ভিডিওর জন্য ভিডিও কন্টেন্ট অবশ্যই সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় হতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, নির্ধারিত অডিয়েন্সকে আকর্ষিত করার বা লোভ দেখানোর জন্য শুধু মাত্র ১০ সেকেন্ড পাওয়া যায় এবং তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ অডিয়েন্স চলে যায় ভিডিওটি যদি দুই মিনিট বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে।
তার মানে আপনাকে একটা চমক বা আকর্ষণ দিয়ে ভিডিও শুরু করতে হবে এবং এক ভিডিও স্লটে অনেক বেশি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। আর, আপনার কাছে একটি ইম্প্রেশন তৈরি করার জন্য মাত্র ১০ সেকেন্ড থাকছে। তাই, শুরুতেই একটা চমৎকার ইন্ট্রোডাকশন এবং সাথে সাথেই মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে আপনার দিকে অডিয়েন্সের আকর্ষণ এবং মনোযোগ সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক।
ভিডিও প্রতিনিয়তই আপডেট করতে হবে
ভিডিও আপডেট বলতে বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন কিছু নিয়ে ভিডিও বানানোকে বোঝানো হয়। এ বিষয়টির প্রতি অর্থাৎ ট্রেন্ডি টপিকের আপনার জোর নজর দিতে হবে।
ট্রেন্ডি জিনিস নিয়ে ভিডিও বানালে শুধু একটি ভিডিওতে যে আপনি ভিউয়ারদের চোখে পড়বেন তা কিন্তু নয়, বরং তখনই তারা বুঝতে পারবে যে আপনি সব সময় আপডেটেড বা ট্রেন্ডি বিষয় নিয়েই ভিডিও তৈরি করে থাকেন। ফলে আপনিও এক স্থায়ী ভিউয়ার কমিউনিটি পেয়ে যাবেন।
অডিয়েন্সকে ঠিকভাবে টার্গেট করতে হবে
ফেসবুক ভিডিও তৈরির জন্য আপনাকে একটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতেই হবে। আর তা হলো, কাদের জন্য ভিডিও বানাচ্ছেন তাদের নির্বাচন করা অর্থাৎ আপনার অডিয়েন্সকে টার্গেট করা। আপনার অডিয়েন্সকে টার্গেট করতে আপনি টার্গেটিং টুলটি ব্যবহার করে অডিয়েন্সের একটি মানদন্ড নির্বাচন করুন। এ মানদন্ডটি ঠিক করে নিতে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো-
- Settings এ চলে যান।
- এরপর Post Targeting and Privacy অপশনটি নির্বাচন করে আপনি বিভিন্ন বিষয় যেমন অডিয়েন্সের বয়স, লোকেশন কিংবা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস এগুলো ঠিক করে নিতে পারেন।
আর এর মাধ্যমে যে কাজটি হবে তা হলো, আপনি তাদেরকেই নির্বাচন করলেন যারা আপনার ভিডিওটি দেখতে উৎসুক বা আগ্রহী।
বর্তমান সময়ের অন্যতম ও সেরা একটি মাধ্যম হলো ফেসবুক ভিডিও যার মাধ্যমে সেকেন্ডেই লাখ লাখ জনতার কাছে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। আর সেটিকে যদি আপনি ব্যবসা কিংবা প্রোফেশনালভাবে নিয়ে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু কথা হলো, আপনার তৈরি সব ভিডিও যে মানুষ দেখবে তার কি কোনো নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন?
অবশ্যই, না।
তবে উপরোক্ত পন্থাগুলো অবলম্বন করলে আপনার বেশিরবভাগ ভিডিওই মানুষের মনযোগ কাড়তে সক্ষম হবে। আর, এভাবেই নিজের সার্ভিস কিংবা ব্যবসাকে পৌঁছে দিতে পারেন সবার কাছে।
ভিডিও বানানোর পরবর্তী পদক্ষেপে আপনি যদি ঘাবড়ে না যান ভিউ কিংবা শেয়ার না বাড়ার কারণে, তাহলে জেনে নিন, কিভাবে ফেসবুক ভিডিওর ভিউ ও শেয়ার বাড়াবেন। আশা করি, ভিউ বাড়ানোর এ উপায়গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে, আপনার ভিডিও মানুষ মনোযোগ দিয়ে দেখবে, আপনার ফলোয়ার বাড়বে এবং আপনি কাংখিত জনপ্রিয়তা পাবেন।
Leave a Reply