আপনার কাছে যদি বেশি টাকা-পয়সা না থাকে, তবে অল্প পুঁজিতে শুরু করার জন্যে কিছু ফুড বিজনেস আইডিয়া কাজে লাগাতে পারেন। যে কোনও ব্যবসার প্রথমেই প্রয়োজন ব্রেন স্টোর্মিং আইডিয়া, তারপর প্রপার প্ল্যান এবং সবশেষে সফল বাস্তবায়ন।
আসলে, পুঁজি অল্প হোক আর বেশি হোক, সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে যে কোন ব্যবসাতেই লাভ করা সম্ভব। এমনকি, ছোট আকারে শুরু করেও ধীরে ধীরে যে কোনও ব্যবসাকে বড় করা যায়। আর খাদ্য কিংবা খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা বড় করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
সত্যি বলতে কি, যে ৫টি ব্যবসা কখনো ফ্লপ খায় না, তার প্রথমেই রয়েছে ফুড বা খাদ্য। সুতরাং, আপনি যদি ব্যবসায় ফ্লপ খেতে না চান, ব্যবসা শুরু করে কিছু দিনের মাঝেই পুঁজি হারাতে না চান, তবে ফুড ব্যবসা বেছে নেয়াই আপনার জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, ফুড বিজনেস রানিং বিজনেস। তবে, এর ধরণ রয়েছে। আসুন, ফুড বিজনেসের ধরণ বা ক্যাটেগরি সম্পর্কে জানা যাক।
১০টি দারুণ ফুড বিজনেস আইডিয়া
১. রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
ফুড ব্যবসার প্রথমেই রাখছি রেস্টুরেন্টকে। কারণ, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন, এ-রকম কয়েকজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। রেস্টুরেন্টে বিক্রির বিশাল একটি অংশ প্রপিট হিসেবে থেকে যায়। আমার পরিচিত কারো কারো মতে, ৫০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট লাভ থাকে।
এ ব্যবসার জন্যে আপনার দরকার একটি উপযুক্ত প্লেস যেখানে লোক সমাগম বেশি, সেই সাথে দরকার অত্যন্ত ভাল মানের বাবুচি। আর সেই সাথে থাকা চাই, নতুন নতুন খাবারের আইটেম। আর আইটেমগুলো মানুষের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্যে দরকার আকর্ষণীয় ফুড শপ ব্রুশিয়ার।
২. বেকারি ব্যবসা
ফুডের মধ্যে বেকারি ব্যবসা অনেক স্মার্ট। আর বেকারিকে বড় করার অনেক স্কোপ আছে। শুরুতে লোকাল এরিয়ার জন্যেই আপনি বেকারি সেট-আপ করতে পারেন। পরে সুবিধা মতো বাইরের এলাকায় সাপ্লাই দিতে পারেন। ক্রমান্বয়ে আপনার আশে-পাশের সমস্ত এলাকাই ধরে ফেলতে পারেন।
তবে, বেকারির জন্যে বিশেষ কিছু যোগ্যতা লাগবে। যেমন, ব্রেড বা বিস্কিট তৈরির নতুন নতুন রেসিপি শিখতে হবে। বিস্কিট ও ব্রেডসহ সকল আইটেমেই অন্যদের থেকে আলাদা স্বাদ দিতে হবে। যদি বিভিন্ন দেশের ব্রেড ও বিস্কিট বানাতে পারেন, তবে বেকারি ব্যবসায় আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
বিভিন্ন দেশের বিস্কিট বানানোর জন্যে সে দেশের নাম লিখে সার্চ দিন। যেমন, canadian biscuits recipes, canadian biscuits recipes ইত্যাদি।
বেকারি সেট-আপকে ঝামেলা মনে হলে শুধু বেকারি শপ দিতে পারেন যেখানে আপনি অন্য বেকারির আইটেম বিক্রি করবেন।
৩. চকলেট ব্যবসা
ছেলেবেলায় কি পরিমাণ চকলেট খেয়েছেন, বলুন! আর এখনকার বাচ্চারা চকলেটের জন্যে কতটা পাগল! হুম, বাচ্চা এবং বড়দের জন্যে চকলেট তৈরি করতে পারেন। ছোট একটি চকলেট তৈরির ফ্যাক্টরি চালু করতে পারেন, কিংবা নিজের বাসাতেই শুরু করতে পারেন।
অনলাইনে চকলেট তৈরির প্রচুর রেসিপি পাবেন। এমনকি, বিশ্ব বিখ্যাত যে চকলেট কোম্পানীগুলো আছে, সেগুলোর তৈরি জনপ্রিয় চকলেটের রেসিপিও পেয়ে যাবেন।
আর যদি নিজে চকলেট বানাতে না চান, তবে বিভিন্ন দেশের চকলেট ইমপোর্ট করে হোল সেল সাপ্লাই দিতে পারেন।
৪. ক্যাটারিং ব্যবসা
আপনার আত্মীয়-স্বজন, আত্মীয়দের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত সার্কেলে প্রায়ই কোন না কোন অনুষ্ঠান হয়। কর্পোরেট পার্টি, হোস্টিং পার্টিসহ আরো অনেক অনুষ্ঠান থাকে। এসব অনুষ্ঠান বা পার্টিতে ফুড সাপ্লাই দিতে পারেন যেটাকে ক্যাটারিং বলা হয়।
ক্যাটারিং ব্যবসার জন্যে আপনাকে ভাল একজন কুক বা শেপ হতে হবে। সেই সাথে ভাল পরিকল্পণা এবং মানুষ হ্যান্ডেল করার মতো কোয়ালিটি থাকতে হবে। ক্যাটারিং বিজনেসকে শুরুতে অনেক কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি অনেক সহজ ও মজার ব্যবসা হয়ে উঠবে।
৫. সুইট শপ
মিষ্টির দোকান দিয়ে ধরা খেয়েছেন এমন ব্যবসায়ী খুঁজে পাবেন না। মিষ্টি একটি চলমান খাদ্য যা প্রায় সবসময়ই দরকার হয়। যদি সুস্বাধু আর ব্যতিক্রমী মিষ্টি বানানোর মতো ভাল কোনও কারিগর পান, তবে মিষ্টির দোকান দিতে পারেন।
কাউকে না পেলে নিজেই নেট ঘেঁটে দেশী এবং বিদেশী মিষ্টি বানানোর রেসিপি নিয়ে শুরু করে দিতে পারেন। যদি অ্যামেরিকান মিষ্টি বানাতে চান, তবে american sweet recipe লিখে গুগলে সার্চ দিন। যদি অস্ট্রেলিয়ার মিষ্টি বানাতে চান, তবে australian sweet recipes লিখে সার্চ করুন।
৬. ফ্লোয়েটিং ফুড বিজনেস
ভাসমান ফুড ব্যবসা এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান বা পার্কের আশে-পাশে মোবাইল ফুড শপ দিতে পারেন। সাধারণত এসব স্থানের আশে-পাশে হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থাকে না।
দর্শনার্থীদের জন্যে যদি খাবারের ব্যবস্থা করা যায়, তবে একদিকে তারা যেমন উপকৃত হবে, অন্যদিকে আপনারও ভাল ব্যবসা হবে।
৭. আইসক্রিম শপ
গরমে আমাদের চরম স্বস্তিদায়ক একটি খাবার হচ্ছে আইসক্রিম। ঠান্ডার সময় একটু ঢিলেঢালা হলেও গরম এবং স্বাভাবিক আবহাওয়ায় আইসক্রিমের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়।
তবে, এর জন্যে চলমান লোকেশন লাগবে। শপিং মলের সামনে কিংবা যে কোনও বড় মার্কেটের কাছাকাছি যদি আইসক্রিম শপ দিতে পারেন, তবে অবশ্যই ভাল ব্যবসা করতে পারবেন।
৮. জুস শপ
আমার এক বন্ধুর “মাটির ঘর” নামে পূবাইলে একটি ফুড শপ আছে যার ভেতর জুস পার্লার নামে আলাদা একটি সেক্টর রয়েছে। এই সেক্টরে তার প্রতি মাসে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার জুস সেল হয়। আর এতে তার কত লাভ থাকে জানেন? কমপক্ষে আশি হাজার।
নিশ্চয়ই আপনাকে জুস শপ বিজনেস সম্পর্কে আর কিছু বলতে হবে না। হাই প্রপিটেবল এই ব্যবসাটি আপনি কোনও জনবহুল এলাকায় শুরু করতে পারেন। শপিং মলের ভেতরও জুস শপ দিতে পারেন। আবার, চাইলে আপনি আইসক্রিম ও জুস শপ একত্র করেও ব্যবসা করতে পারেন।
৯. কপি শপ
খুবই সাধারণ একটি ব্যবসা আইডিয়া কিন্তু চাইলে আপনি এটিকে অসাধারণ করে তুলতে পারেন। বিভিন্ন টাইপের কপি, চা এবং সেই সাথে স্ন্যাকস্ নিয়ে চালু করতে পারেন একটি অন্যরকম কপি শপ।
১০. ফাস্টফুড শপ
যদিও আমাদের চারপাশে ফাস্ট ফুড দোকানের অভাব নেই, তবু অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা হওয়ায় আপনিও এ জাতীয় একটি ফুড শপ দিতে পারেন। আমাদের দেশের টিনেজাররা ফাস্টফুডের মূল গ্রাহক হলেও, সব ধরণের মানুষই কম/বেশি এ ধরণের খাবার খেয়ে থাকেন। তাই, যদি ভাল কোনও লোকেশনে ফাস্টফুডের দোকান দিতে পারেন, তবে অবশ্যই ভাল ব্যবসা করতে পারবেন।
পৃথিবীতে খাদ্যের চাহিদা কোনদিন ফুরোবে না। মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত মানুষ খাবার খাবে। তাই, খাবারের ব্যবসাও কোনদিন শেষ হবে না। আপনি যদি সবসময় চলমান কোনও ব্যবসা করতে চান, তবে উপরোক্ত ১০টি ফুড বিজনেস আইডিয়া থেকে যে কোন একটি নিয়ে নেমে পড়ুন।
Leave a Reply