ফুটবল নিয়েই আজকের লেখা কিন্তু লেখাটি একটু ব্যতিক্রম। কারণ আজকে আমি মেসি কিংবা নেইমারের বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে আসিনি। আজকে আমি এমন কিছু প্রতিভাবান, মেধাবী নারীদের কথা বলব যারা নিজেরদের দক্ষতা আর পরিশ্রম দিয়ে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন, ফুটবলে নারী রেফারি হিসেবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বের সেরা রেফারিদের নাম জানি। তাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন পুরুষ রেফারির পাশাপাশি নারীরাও এখন এই কাজে দ্বায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করছে। তারাও এখন পিছিয়ে নেই। ফুটবলে নারী রেফারিরাও সম্মানের সাথেই কাজ করছেন। কেবল মহিলাদের ফুটবল খেলাতেই নয়, এদের অনেকেই পুরুষের ফুটবল ম্যাচেও রেফারি হিসাবে ছিলেন।
ফুটবলে নারী রেফারি
ফুটবলের সুন্দরী নারীদের রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু হয় বহু আগেই। আর নারী রেফারিং আমেরিকার হাত ধরে শুরু হলেও, সবচেয়ে বেশি নারী রেফারি দেখা যায় ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে।
ব্রাজিলের নারী ফুটবল দলে যেমন নারী রেফারি রয়েছে, তেমনি পুরুষ ফুটবল দলেও রয়েছে নারী রেফারি। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের সেরা ১১ জন ফুটবল নারী রেফারি সম্পর্কে।
AURELIA SARA BOLLIER
তিনি সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা। অয়ামেটিয়র লীগ নামের একটি সুইস টিমের রেফারি হিসাবে কাজ করেন। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি নিজেকে বিভিন্ন টেটোর মাধ্যমে শো অফ করতে পছন্দ করেন। এছাড়াও তিনি গৃহপালিত পশু রাখতেও ভালবাসেন। সুইস মিডিয়ার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, তিনি নিজেকে কখনো প্রফেশনাল রেফারি হিসাবে ভাবেননি।
LAUREN HOLTKAMP
খেলার সময় সুপারস্টার চেরিস পল একটি টেকনিকাল ফাইল করেন। যে কারনে রাতারাতিই এনবিএ অফিসিয়াল অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে এই খবর অনেকেই জানেন। কিন্তু এর পেছনে থাকা মানুষটি যিনি এই ডিসিশনটি নিয়েছিলেন তার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তিনি লরেন হটক্যাম্প। বেশিরভাগ ছবিতেই তাকে রেফারিং করা অবস্থায় দেখা যায়। কারণ তিনি তার ৩৭ বছর জীবনে কাজের প্রতি সব সময় সচেতন ছিলেন।
MICHAELA TABB
এক সময় মাইকেলা ছিলেন প্রফেশনাল স্নোকার এবং পুল রেফারি। মিডিয়ায় এক সময়ের পরিচিত মানুষগুলোর মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। ৯০ এর দশকে তিনি রেফারি হিসাবে কাজ করেছেন। যখন তার টুইটারে ফলোয়ার ছিল প্রায় ৪৭ হাজার। এই সংখ্যাটি অনেক বেশি ছিল। কারণ এই খেলাটি অন্য সব খেলার তুলনায় তেমন একটা জনপ্রিয় ছিল না।
FERNANDA COLOMBO ULIANA
আমরা সবাই জানি ব্রাজিল সবার কাছে ফুটবলের জন্যই অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু এটাও সত্য যে ব্রাজিল তাদের সাহসী মহিলাদের জন্যেও অধিক পরিচিত যা আমাদের অনেকেই জানি না। ২০১৪ সালের যে সময় ইন্টারনেট জুড়ে নিউক্লিয়ার বোম নিয়ে তোলপাড় চলছে সে সময় কলম্বো ইউলিয়েনা সাও পাওলোতে অনুষ্টিত কোপা ডো ব্রাজিল বনাম সিয়ারবির ম্যাচে তিনি রেফারি হিসাবে কাজ করেন।
দুই বছর আগেও তিনি ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন থেকে রেফারি হিসাবে নিয়োগ না পেয়ে বিজনেজ করার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। তার কাজ এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যেই মেইল ডোমিনেট ইন্ড্রাস্ট্রিতে নিজের জায়গা বানিয়ে নিয়েছেন।
SARAH THOMAS
২০১৫ সালে তিনিই প্রথম যিনি এনএফএলের ফুল টাইম রেফারি হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিল। কিন্তু আপনি কি জানেন তিনিই প্রথম মহিলা যিনি কলেজ বউল গেইমে রেফারিং করেছিলেন। একদিকে যেমন তিনি সুন্দরী, অন্যদিকে তিনি তিন সন্তানের মা। এটাই প্রমাণ করে একজন নারী চাইলে সবকিছুই মেইনটেইন করতে পারে।
এমনকি তিনি প্রতি সোমবারের রাতের পিটসবার্গ বনাম ডিয়াগো চার্জারের খেলায় ও তার সন্তানদের সাথে কথা বলতে ভুলেন না। কিন্তু তার মুখে আপনি সব সময় হাসি দেখবেন। কারণ তার হাসি কাউকে নিজের ট্র্যাক থেকে বিচ্ছুত করবে না।
ELENA TAMBINI
যদিও তিনি একজন পার্টটাইম মডেল কিন্তু তিনি ইতালির লীগে ফুল টাইম রেফারি হিসাবে কাজ করেন। তার টুইটারে ফলোয়ার সংখ্যা ৮৪৪৩ জন, তিনি টিভি রিপোর্টার হিসাবেও কাজ করেছেন।
JOSEFIN DAHLBACK
টেনিসের রেফারি হিসাবে জসেফিন ডেলব্যাক বেশি পরিচিতি। তবে অনিয়মিত হলেও, ফুটবলেও একজন জনপ্রিয় রেফারি তিনি। যারা টেনিস খেলা নিয়মিত দেখেন তারা হয়তো তাকে দেখে থাকবেন। তিনি বিভিন্ন টিভি প্রগ্রামেও কাজ করেছিলেন। এছাড়াও তার অসামান্য প্রতিভার কারণে তিনি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
MAIA CHAKA
তিনি হলেন প্রথম নিগ্র মহিলা যিনি এনএফএল এর রেফারি। ২০১৪ সালের মৌসুম পূর্ব খেলায় পিলাডেলপিয়া ঈগল বনাম নিউ ইংল্যান্ড পেট্রিওটের খেলায় তিনি জার্জ হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি মূলত স্কুল জীবন থেকেই রেফারিং শুরু করেন পরে তিনি আমেরিকান কনফারেন্স গেমেও কাজ করেছেন। কলেজিয়েট লেভেলের কাজ শেষে তিনি এনএফএলের একটি এডভান্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে অংশ নেন যেখানে মূলত এমন রেফারিদের নেয়া হয়েছিল যারা এই কাজে পারদর্শী ।
CHELSEA GURR
নিউজিল্যান্ডের একজন জিনপ্রিয় রেফারি সেলসি গুর যিনি রাগবির হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল করেছেন। তিনি তার পিতার থেকেই দীক্ষা লাভ করেন, যিনি নিজেও একজন রাগবি রেফারি এবং কোর্চ। তার ব্যাপারে সবচেয়ে মজার তথ্যটি হল তিন কেবল মহিলাদের রাগবি খেলাতেই রেফারি ছিলেন না বরং তিনি ম্যানস সিনিয়র লীগেও রেফারি হিসাবে ছিলেন। যেটি নিউজিল্যান্ডেই অনুষ্ঠিত হয়।একজন সত্যিকারের কমিউনিটি মেম্বার হিসাবে তিনি ফুলটন হোগান আর্থ কোয়াক রিবুল্ট টিমের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি একজন অ্যাথলেটিক হিসাবেও কাজ করেছেন।
SIAN MASSEY ELLIS
দেখতে অনেক সুন্দর এই মহিলার জন্ম ইংল্যান্ডে। তিনিও সেলসির মত কেবল মহিলাদের ফুটবল গেইমের রেফারিংই করেন না বরং তিনি অনেকবার ম্যানস প্রফেশনাল গেমগুলোতেও রেফারিং করেছেন। তিনি কেবল তার দেশেই সুনাম অর্জন করেন নি, তিনি নিজের দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। তিনি ইউইএফএ ওমেনস চ্যাম্পিয়ন লীগ এবং ফিফা ওমেনস ওয়াল্ড কাপের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডেও রেফারিং করেছেন। তার ট্যালেন্ট এবং দক্ষতা দিয়ে তিনি আগামী বছরগুলোতে রেফারি হিসাবে থাকবেন।
CLAUDIA ROMANI
তার ক্যারিয়ারে তিনি জিকিউ এবং ম্যাক্সিম পাবলিকেশনের মত অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে ভিএইচ কনটেস্টে তিনি ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি তার ক্যারিয়ারে গতি পাল্টিয়ে রেফারি হিসাবে যোগ দেন। এজন্য থাকে বিভিন এক্সামে কোয়ালিফাই হতে হয়। তিনি এসি মিলানের সাথে এক বিতর্কে জড়িয়ে যান। এই কারণে তার নামে অনেকেই অভিযোগ করে যে তিনি মাঠে কখনো নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না।
ফুটবল রেফারিংয়ে নারীরাও আজ পিছিয়ে নেই, পুরুষের পাশাপাশি তারাও দখল করেছে রেফারিংয়ে বড় জায়গা। ফুটবলে নারী রেফারি নিয়ে আমার লেখাটি আপনাদের ভাল লেগেছে বলে আশা করছি। আপনারা কমেন্ট করে জানাবেন এই ১১ জন্য ফুটবলের নারী রেফারির মধ্যে কার ব্যক্তিত্ব আপনার ভাল লেগেছে।
Leave a Reply