প্রিন্টিং করার জন্য প্রিন্টারের প্রয়োজন হয়। আগে হয়তো ব্যবসায়িক বা অফিসের কাজে প্রিন্টার ব্যবহার হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাসা বাড়িতে নিজের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রিন্টারের প্রয়োজন হয়। ফলে বাজারে এখন অনেক ধরণের প্রিন্টার পাওয়া যাচ্ছে। তবে, প্রিন্টার কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা চাই।
কম্পিউটার কেনার আগে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মাথায় রাখা জরুরী, তেমনই প্রিন্টারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে কেনার আগে যেগুলো বিবেচনায় রাখা দরকার। প্রিন্টারের বিভিন্নতার কারণে অনেকেই কোন ধরণের প্রিন্টার কিনবেন কিংবা কি কি বিষয় মাথায় রাখবেন এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। তাদের চিন্তাকে কিছুটা হ্রাস করার জন্য আজকে আমাদের এই আর্টিকেল যা পড়ে আপনি প্রিন্টার পছন্দ করার একটি সঠিক গাইডলাইন পাবেন।
কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ
প্রিন্টার কেনার আগে প্রথমেই দেখতে হবে আপনি কোন কাজের জন্য প্রিন্টার কিনবেন। কেননা আপনি যদি ছোট খাট কাজের জন্য বিশাল বাজেটের প্রিন্টার কিনেন, তবে এটা হবে নিছক অর্থ অপচয়। তাই সবার আগে নির্ধারণ করুন আপনি কোন কাজের জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করবেন। প্রয়োজন ভেদে প্রিন্টার সাধারণত ৩ ধরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যথা:
১. ঘরোয়া কাজের জন্য – ঘরোয়া কাজ বলতে সাধারণত ছোট খাট কোন কাজের জন্য প্রিন্ট করা বোঝায়। ঘরোয়া কাজ সাধারণত ব্যক্তিগত কাজ হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ প্রিন্ট, পড়া লেখার ক্ষেত্রে হোম ওয়ার্ক, নোট, শিট কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট প্রিন্ট করা। তাই এসব ক্ষেত্রে প্রিন্টিং স্পিড, মাল্টি ফাংশনাল কিংবা হাই কনফিগারের প্রিন্টার প্রয়োজন হয় না। আর সাধারণত তুলনামূলক সস্তা বাজেটের মধ্যে ঘরোয়া কাজের জন্য প্রিন্টার পাওয়া যায়।
২. অফিসিয়াল বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য – অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রিন্টার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। প্রথমত এসব কাজে দীর্ঘক্ষণ প্রিন্টার চালু রাখা এবং অধিক সংখ্যক প্রিন্ট করতে হয়। অনেক সময় ফটোকপি বা স্ক্যান করারও প্রয়োজন হয়। যেহেতু বহুমুখী কাজ করার প্রয়োজন হয়, তাই প্রিন্টার কেনার ক্ষেত্রেও বহুমুখী চিন্তা করতে হয়।
৩. প্রফেশনাল কাজের জন্য – প্রফেশনাল বলতে যারা মূলত প্রিন্টিং, গ্রাফিক্স, ফটোগ্রাফি রিলেটেড কিংবা হাই রেজুলেশনের ডিজাইন প্রিন্ট করার কাজ করে। এসব ক্ষেত্রে প্রিন্টার কিনার জন্য বাজেট বৃদ্ধি করা জরুরি।
প্রিন্টার কেনার আগে করণীয়
মোবাইল কেনার আগে যেমন কিছু বিষয় আপনার জানা উচিৎ, তেমনই প্রিন্টার কেনার ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রিন্টার একটি প্রয়োজনীয় কম্পিউটার পেরিপেরাল। আর এটি কেনার আগে উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো মাথায় রাখা জরুরী।
১. বাজেট
পূর্বেই প্রিন্টার কেনার জন্য ৩টি ক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে। তাই আপনি যদি ঘরোয়া কাজের জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করতে চান, তবে তার বাজেট হবে কম। অপরদিকে অফিসিয়াল বা প্রফেশনাল কাজের জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করতে চান, তবে তা হবে হাই বাজেটের।
তাই, প্রথমে মাথায় রাখতে হবে আপনি কোন কাজের জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করবেন। তবে, যে কাজের জন্যেই কিনুন না কেন, বাজারে সবসময়ই কম দামে ভাল মানের কিছু প্রিন্টার পাওয়া যায় যেগুলো থেকে বাছাই করে নিতে পারেন।
প্রিন্টার ক্রয় করার পর কিন্তু খরচ শেষ হয় না। বরং প্রিন্টার ক্রয়ের পরে তার পরিচালনার জন্যও খরচ হয়ে থাকে। প্রিন্টার ক্রয়ের পর কার্তুজ, কালি প্রভৃতি খাতে অর্থ খরচ করতে হয়। তাই প্রিন্টার কেনার আগে এসব বিষয়ও মাথায় রাখা জরুরি।
২. ইমেজ কোয়ালিটি
দাম এবং মডেল ভেদে প্রিন্টারের প্রিন্ট করা ছবির মান আলাদা হয়ে থাকে। ইমেজ কোয়ালিটি কেমন হতে পারে তার জন্য নিচের বিষয় গুলো মাথায় রাখা জরুরি যথা:
রেজুলেশন – ফটোগ্রাফি কিংবা নিখুঁত প্রিন্টের জন্য কমপক্ষে ১২০০ ডিপিআই (ডট পার ইঞ্চ) প্রয়োজন। প্রায় সকল প্রিন্টারের আলাদা আলাদা রেজুলেশন রয়েছে। ডিপিআই যত বেশী হবে প্রিন্ট তত নিখুঁত হবে। তাই ইমেজ কোয়ালিটি ভাল পেতে হলে রেজুলেশন বেশী থাকতে হবে।
ইঙ্ক ড্রপলেট সাইজ – বাজারে থাকা প্রিন্টার গুলো সাধারণত 4 – 12pl এর হয়ে থাকে। ড্রপলেট যত কম হবে প্রিন্ট তত শার্প হবে।
ইঙ্ক কনফিগারেশন – প্রিন্টার সাধারণত ৪, ৬, ৮ এবং ১২ কালারের হয়ে থাকে। তাই ভাল ইমেজ কোয়ালিটি পেতে কালার কনফিগারেশন দেখতে হবে।
৩. সাইজ এবং স্পিড
সাইজের দিক দিয়ে প্রিন্টার ছোট, মাঝারি থেকে বড় সাইজের হয়ে থাকে। আপনি যদি ছোট সাইজের তথা A4, letter, legal সাইজের পেজ প্রিন্ট করতে চান তবে ছোট কিংবা মাঝারি সাইজের প্রিন্টার ক্রয় করতে পারেন। আর আপনার যদি বড় সাইজের পেজ প্রিন্ট করতে চান তবে আপনাকে বড় সাইজের প্রিন্টার ক্রয় করতে হবে।
ঘরোয়া কাজের জন্য স্পিড খুব বেশী জরুরি নয়। কিন্তু অফিসিয়াল কিংবা ব্যবসায়িক কাজের জন্য স্পিড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে অনেক পেজ প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে প্রিন্টারের স্পিড বেশী থাকা জরুরি তা না হলে দেখা যাবে আপনার জীবন এবং কাজ দুটাই কচ্ছপ গতি হয়ে গেছে। প্রিন্টারের গতি নির্ধারণ করা হয় PPM দিয়ে। PPM অর্থ পেজ পার মিনিট। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে কতটি পেজ প্রিন্ট করতে পারে। সাধারণত বাজারে 5-25PPM পর্যন্ত প্রিন্টার পাওয়া যায়।
৪. পেপার হ্যান্ডলিং এবং ব্যবহার স্বচ্ছন্দতা
একটি প্রিন্টার একসাথে কতগুলো পেজ ধারণ করতে পারে তাই প্রিন্টারের পেপার হ্যান্ডলিং। প্রিন্টারের ট্রেতে সাধারণত ১০০ থাকলেই ঘরোয়া কাজের জন্য উপযোগী। তবে বড় মাপের কাজের জন্য বেশী পেজ ধারণ করতে পারে এমন প্রিন্টার ক্রয় করা জরুরি।
ব্যবহারের স্বচ্ছন্দতা বলতে মূলত আপনি কতটা সহজে প্রিন্টার ব্যবহার করতে পারেন। একটি প্রিন্টারের পরিচালনা কতটা সহজ তা কিছু প্রশ্ন করলেই বোঝা যায় যথা:
- কতটা সহজে প্রিন্টারে মিডিয়া লোড বা আনলোড করা যায়।
- কন্ট্রোল প্যানেল কতটা সহজ।
- ড্রাইবার সেটআপ করা কতটা সহজ।
- কি পরিমাণ কাস্টম সেটিংস পরির্বতণ করা যায়।
৫. বিক্রয় পরবর্তী সেবা
বিক্রয় পরবর্তী সেবা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেকোন সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে আপনি কত দিনের ওয়ারেন্টি পাচ্ছেন তা দেখে নেয়া জরুরি। এছাড়া তারা প্রিন্টার নষ্ট হওয়ার পর কত দিনের মধ্যে মেরামত করে দেয়, কোন সমস্যা হলে তারা কতটা দ্রুত সেবা দেয় ইত্যাদি।
৬. কানেক্টিভটি
বর্তমান সময় প্রিন্টার কানেক্টিভটি বেশ জরুরি। ওয়্যারলেস, ইথারনেট কিংবা ইউএসবি বিভিন্ন রকমের প্রিন্টার পাওয়া যায়। মোবাইলের মাধ্যমে কিংবা অফিশিয়াল কাজের ক্ষেত্রে প্রিন্টারের মধ্যে ওয়াইফাই কানেকশন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ইঙ্কজেট নাকি লেজার
ইঙ্কজেট নাকি লেজার প্রিন্টার কোনটা ভাল? এরকম প্রশ্ন নিশ্চই আপনার মাথায় খাচ্ছে!
ইঙ্কজেট – ইঙ্কজেট প্রিন্টারের দাম বেশী। ইঙ্কজেট প্রিন্টার ভাল মানের ছবি প্রদানে সক্ষম। সাধারণত ঘরোয়া কাজের জন্য এই প্রিন্টার উপযোগী নয়।
লেজার – খুব দ্রুত প্রিন্ট করতে সক্ষম এবং দামও অনেক কম। ঘরোয়া কাজের জন্য এই প্রিন্টার উপযোগী।
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত বিষয় সূমহ মাথায় রাখলে আপনি খুব ভাল মানের একটি প্রিন্টার কিনতে পারবেন। আর প্রিন্টার নিয়ে যদি আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Tanvir says
২/৩ হাজারের মধ্যে ভাল কোন প্রিন্টার পাওয়া যাবে? বাসায় নর্মাল লেখা প্রিন্ট করার জন্যে…কালারফুল লেখা প্রিন্টিং এর জন্যে?
টি আই অন্তর says
কেন পাওয়া যাবে না? অবশ্যই পাওয়া যাবে। কম দামে এই ১০টি ভাল প্রিন্টার থেকে আপনার প্রয়োজনীয়টি খুঁজে নিন।
Faisal says
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে 3-4 হাজার টাকার মধ্যে কোন প্রিন্টারটা কিনতে পারি?সে ক্ষেত্রে কোন ইন্টারমিডিয়েটে ডিভাইসের প্রয়োজন হবে কিনা?
টি আই অন্তর says
ধন্যবাদ, ফয়সাল। বর্তমানে যে কোনও প্রিন্টারের মাধ্যমেই মোবাইল থেকে প্রিন্ট দেয়া যায়। ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার ১০টি প্রিন্টার থেকে আপনার পছন্দেরটি বেছে নিন। আর প্রিন্টারের সাথে মোবাইল কানেক্ট করার জন্যে কিছু মোবাইলে বিল্ট-ইন ফিচার থাকে। যেগুলোতে থাকে না, সেগুলোতে প্রিন্টিং অ্যাপস্ ব্যবহার করতে হয়। আশা করি, এ ধরণের অ্যাপস্ নিয়ে আরেকটি পোস্ট প্রকাশিত হবে, ইনশাল্লাহ্।